- 24 September, 2021
- 0 Comment(s)
- 533 view(s)
- লিখেছেন : সিউ প্রতিবেদক
বাংলাদেশের হিন্দু মেয়েরা আজও পৈতৃক সম্পত্তির অধিকারী নন। মেয়ে জন্মের পরই বুঝে নেন বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত বাবার বাড়ি তিনি খাওয়া পরার অধিকার পাবেন। বিয়ের পর জন্মভিটেয় বা বাবার সম্পত্তিতে তাঁর একছটাকও হক্ থাকবে না। স্বামী অত্যাচারী হলেও সেখানেই মানিয়ে নিয়ে থাকো, নই নিজের অর্জনে বাঁচো। বাবার বসতভিটে বা কৃষিজমি তাঁদের জন্য নয়। পৈতৃক সম্পত্তিতে পুরো অধিকার ছেলেদের। যদি শুধু মেয়ে সন্তান থাকে তবে বাবা সেই মেয়েকেই সম্পত্তির ভাগ দেবেন যে মেয়ের পুত্র সন্তান রয়েছে। মেয়েদের হাতে কোনভাবেই সরাসরি সম্পত্তির অধিকার এখনও পৌঁছায়নি। অথচ মেয়েদের অর্জিত সম্পদে ছেলেদের অধিকার রয়েছে। সম্পত্তিতে হিন্দু মেয়েদের সমান অধিকারের দাবি বহুদিনের। অধিকাংশ হিন্দু পুরুষ সম্পত্তিতে মেয়েদের হক্ মানতে এতদিন রাজি হননি। তবে সম্প্রতি হিন্দু উত্তরাধিকার আইন-খসড়া তৈরি হয়েছে।
১৯৫৬ সালে ভারত ‘হিন্দু সাকসেশন অ্যাক্ট’ পাশ করে, এই আইনের মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে হিন্দু নারী-পুরুষের সমান ভাগ দিয়েছে। ক্রমশ এই আইনকে আরও সংশোধন করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের হিন্দু মেয়েরা এতদিনেও পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার পাননি। ১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন মেনেই বাংলাদেশের হিন্দুরা চলেন। তবে সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে স্বামীর কৃষিজমিতে বিধবা স্ত্রীর ভাগ পাওয়ার রায় দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে হিন্দু বিধবারা স্বামীর বসত ভিটের শুধু অধিকার পেত। অন্য সম্পদে অধিকার ছিল না। খুলনার গৌরদাসী মৃত স্বামীর কৃষিজমির অধিকার দাবি করেন তাঁর দেবরের কাছে। ১৯৯৬ সাল থেকে সেই জমি সংক্রান্ত বিবাদ আদালতে চলে। ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে স্বামীর সব সম্পত্তিতেই হিন্দু বিধবার হক্ বর্তাবে। তবে এই সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না, শুধু জীবিতকালে সম্পত্তিটা ভোগ করার অধিকার পেলেন। প্রকৃত অর্থে সম্পত্তির মালিক কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দু বিধবারা হলেন না। তবু এই অধিকারটুকু আদালতের রায় মোতাবেক এ পর্যন্ত হিন্দু নারীদের প্রাপ্তি।
এখন বিভিন্ন সংগঠন থেকে হিন্দু মেয়েদের সম্পত্তিতে অধিকারের দাবি উঠেছে। ২০২১ সালের ৩০ মার্চ হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে একটি আলোচনাসভা করেছেন সে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদস্যগণ সেই আলোচনায় অংশ নেন। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের খসড়াও সেই সভায় পাঠ করা হয়। এবং খসড়া আইন জমা দেওয়া হয় আইন পরিষদে। এই খসড়া আইনে হিন্দু নারী-পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গদের সম্পত্তিতে সমান অধিকার দেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু কোন ব্যক্তি ধর্মান্তরিত হলে পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার হারাবেন। অনেকে মনে করছেন এটা বাস্তবায়িত হবে কেবল মেয়েদের ওপর। অহিন্দুকে বিয়ে করলে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হবে। লিঙ্গসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেও গবেষক মৃন্ময়ী মৈত্রী বললেন, 'তবু এটা আইনে পরিণত হোক। সংস্কার তো চলতেই থাকবে।'
0 Comments
Post Comment