- 13 December, 2024
- 0 Comment(s)
- 175 view(s)
- লিখেছেন : আরমিন খাতুন
"পণ দেব না পণ নেবনা, পণপ্রথা কু প্রথা" জনস্বার্থে প্রচারিত এই শব্দগুলো খুবই পরিচিত সমাজে। যৌতুকের প্রসঙ্গ বলতে সবার আগে আমাদের বিয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানা দরকার যৌতুকটা আসলে কি? কারণ বিয়ে থেকেই পণ প্রথার উদ্ভব ও বিয়ের সঙ্গেই পণপ্রথা যুক্ত। নৃতত্ত্ববিদদের মতে অনুসন্ধান ও গবেষণায় আদি মানব সম্পর্কে জানা যায় যে তারা ছিল গোষ্ঠীবদ্ধ এবং যাযাবর সেই যুগের তথ্যে বিয়ের খবর নেই। সভ্যতার সূচনাকালে একজন নারী সঙ্গীকে ঘরে ঢুকিয়ে পুরুষসঙ্গী নিজের বংশানুক্রমিক নিশ্চিত করতে পরিবার গড়ে তুলতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই যুগে বিয়ের বিধি চালু ছিল না।' তবে নৃতাত্ত্বিক তথ্য থেকে জানা যায়, সে যুগে আদিমতম পরিবারে স্ত্রী নারীর একজন পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। স্বামী পুরুষের বহু নরনারী সঙ্গ, সমাজে অনুমোদিত হয়েছিল। নারীকে সম্পত্তি হিসেবেই গণ্য করা হয়। এবং নারীর উপর আধিপত্যের প্রভাব খাটাবার শুরু সে যুগ থেকেই। প্রাসঙ্গিক লিপিবদ্ধ উপকরণের অভাবে বাঙালি জীবনে বিয়ের প্রারম্ভিক ইতিহাস এখনো অজানা রয়ে গেছে। প্রাগৈতিহাসিক মানুষের সমাজ, জীবন চর্চার আচার, নীতির লিখিত তথ্য নেই।" বরপণ প্রথা, বর্তমানে মহিলাদের অত্যাচারের অন্যতম ইস্যু হয়ে গেছে প্রায় দিনই খবরের কাগজে বরপণ, কন্যাদায় যে কোনরূপে মেয়েদের হত্যার নৃশংস অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আভিধানিক অর্থে শ্বশুর শাশুড়ি কর্তৃক প্রদত্ত উপহার কে যৌতুক বলা হয়েছে। প্রাচীনকালের সাহিত্যে ব্যবহৃত 'জউতুক' থেকে জুতক, পরে বিবর্তিত হয়ে সেটা যৌতক' এবং যৌতুক শব্দে পরিণত হয়েছে। যদিও ভারতে পণপ্রথা নিবারক আইন ১৯৬১ দ্বারা নিষিদ্ধ হয়েছে তা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ভারতীয় বিয়েতে যৌতুক এর বিনিময় হয়। একটি মেয়ে এবং মেয়েটির পরিবার সেই মেয়েটির বিয়ে দেওয়ার জন্য বরপক্ষ এবং তার পরিবারের কাছে নিজের সম্পত্তি হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা করে যা প্রায়শ একটি সাজানো বিয়ের প্রেক্ষাপট। যৌতুকের পরিমাণ নিয়ে অসন্তুষ্টির ফলে অনেক মেয়ের পরিবারকে গালিগালাজ, চরম ক্ষেত্রে যৌতুক এর দাবি না মেটাতে পারার ফলে নববধূকে হত্যাও করে তার স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
"ভারতের বেশিরভাগ বিয়েই সাজানো" বল্ল ভানেনি মন্তব্য করেন (১৯৯৮)।' একটি সমীক্ষায় তেজ ১৯৯৩ সালে দেখিয়েছেন যে কর্মক্ষেত্রে ৯০.৬৭ শতাংশ বেকার মহিলাদের বিয়ে তাদের পিতা মাতার দ্বারাই সাজানো হয়। সাধারণত এই সমস্ত সাজানো বিয়ের বা একটা মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিয়েতে কোনরূপ পুলিশে রিপোর্ট করা হয় না। এক্ষেত্রে মেয়েটির পরিবার মেয়েটির বিয়ে যে কোন উপায়ে দেয়ার জন্য, বিয়েতে পাত্রপক্ষ যদি মোটা বরপণ দাবি করে সে ক্ষেত্রে পণ এর শিকার হয়ে যেকোনো পাত্রের হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দেয়। পরিণতি গিয়ে দাঁড়ায় চরম নির্যাতনে। ইসলামী বিবাহ কিন্তু বরপণপ্রথার প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেয়না তাই অনুমান করা হয় যে মুসলমানরা এটি পালন করে না। কিন্তু না এই অনুমানের বিপরীতে মুসলিম মহিলারা বরপণ প্রথার স্বীকার। সার্বজনীন ভারতীয় মুসলমানরা তাদের সামাজিক জীবনে ইসলামিক আদর্শকে একেবারে অনুসরণ করে না তাদের রীতিনীতি, ঐতিহ্য এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রকৃতপক্ষে ইসলামিক এর চেয়ে বেশি ভারতীয় আদর্শ পরিলক্ষিত। পণপ্রথা তাদের কাছে নতুন কিছুই নয়, তাতো যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। "মুসলিম সম্প্রদায়ের বিয়ে তো চুক্তি দ্বারা সম্পাদিত হয়" বলে বেগম মালেকা মন্তব্য করেছেন তার যৌতুক প্রথার বঙ্গীয় পটভূমিতে। এই বিয়ের চুক্তিতে বরপক্ষ থেকে সবার প্রথমেই চুক্তির প্রথম শর্ত আসে কেমন দেনা পাওনা দিতে পারবে অথচ ইসলামে বরপণ প্রথা হারাম। কুরআন ও ধর্মীয় নিয়ম নীতিবনাম মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে পণপ্রথা কে নিয়ে ঢেকাটা বিস্তর ফারাক দেখা যায়। নেই পমচ্ছে ঘোরি রেকছেন একজন ইসলামপন্থী যিনি দহেজকে দুটো বিভাগে শ্রেণী বদ্ধ করেছেন। প্রথমটি তিনি বলেন "এই প্রকার দহেজ কনের পোশাক, তার মধ্যে থাকে দাম্পত্য জীবনের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। দহেজের অন্য শ্রেণীর মধ্যে মূল্যবান জিনিসপত্র, জামাকাপড়, দর কষাকষির পরে মীমাংসা কৃত পনের অর্থের পরিমাণ, জমকানো খাবার এবং বারাতের জন্য বিভিন্ন ধরনের আতিথিয়তা দ্বারা সম্পন্ন"।" ঘোরি মন্তব্য করেন "প্রথম ধরনের দহেজ ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে একটি খুব পুরানো এবং প্রতিষ্ঠিত প্রথা" যদিও মুসলমান উলামারা এ ধরনের দহেজের অনুমতি দিয়েছেন। তবে তারা মুসলমানদের একটি সীমা অতিক্রম না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
আরবিয়ানদের মধ্যে দহেজ প্রথার প্রচলন এর কোন প্রমাণ আমাদের কাছে নেই, নবী মুহাম্মদ (সা:) তিনি তার কন্যাদের বিয়েতে সবথেকে ছোট কন্যা ফাতিমাকে নবী মুহাম্মদ নিজের ছোট চাচাতো ভাই আলির সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন এবং তার সেই বিয়েতে যে সমস্ত উপস্থাপনের কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন তা ফতেমার দহেজ বা দেহেজি ফাতিমা নামে পরিচিত। খুব সাধারণ উপস্থাপনের সমন্বয়ে গঠিত যেমন পাটের সূতলি দিয়ে বোনা একটি খাট, তুলোর পরিবর্তে খেজুরের পাতা দিয়ে ভরা একটি চামড়ার গদি, একটি ময়দা পেষকানো, দুটি কলস সেই সাথে জল বহনের জন্য ব্যবহৃত একটি চামড়ার ব্যাগ। সম্ভবত দুটি প্রধান কারণে নবী তার কনিষ্ঠ কন্যা ফাতিমাকে এই সমস্ত সামগ্রী উপস্থাপন করতে বাধ্য হয়েছিল।"
প্রথমত হযরত আলী চার বছর বয়স থেকেই নবীর সাথে বসবাস করত তাই নবী কেবল তার বড় চাচাতো ভাই ছিল না তার অভিভাবকও ছিলেন। মোহাম্মদ নিজের মেয়ে ফাতিমার সাথে যখন আলীর বিয়ে দিয়েছিল তখন আলী কোনকিছু সম্পত্তিরও মালিক ছিল না। খুবই গরীব ছিল। এভাবে নবীর এক সাহাবী আরিস বিন নোমান হযরত আলীকে একটি ঘর উপহার দেন এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নবী তার কন্যাকে দাম্পত্য জীবন শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী উপস্থাপন করেছিলেন। এখানে দহেজের অনুশীলনকে এবং দহেজের কোনরূপ অনুশীলন প্রতিষ্ঠা, বৈধ করার উদ্দেশ্য কিন্তু ছিল না। তাই সমসাময়িক মুসলমান সমাজের মধ্যে প্রচলিত দহেজ প্রথাকে ন্যায় করার জন্য এটিকে যদি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় তা একেবারেই অইসলামিক হবে।
মুসলমানদের মধ্যে বিবাহ সূত্রে দহেজ প্রথা দিনের দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলায় দহেজ প্রথা খুব চরম পর্যায়ে ঘটেই চলছে। এর সাথে কিন্তু ইসলামের কোনরূপ সম্পর্ক নেই এবং বিশ্বের কোথাও কোন মুসলিম সমাজে দহেজের উদ্ভব হয়নি। এটি সম্পূর্ণ ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে পাওয়া একটি হিন্দু প্রথা। দহেজ নিয়ে কিছু ঘটনাবলীর উদ্বেগুলিকে আমি আমার গবেষণায় গ্রহণ করেছি। আরামবাগ তথা গোটা পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান আর ইসলামিক মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে যৌতুকের চিত্রটা ভিন্ন। যেমন ২০১৪ সালে মায়াপুরের সাবিনা বেগমের বিয়ে হয় তার নিকট আত্মীয়র সাথে, বিয়েতে সাবিনার শ্বশুর বাড়ির লোক যতটা পরিমাণ গহনার দাবী করেছিল তা পূরণ করতে অক্ষম হয় সাবিনার পরিবার। তার জন্য বিগত চার বছর বাপের বাড়িতে আসতে বাধা দিয়েছিল সাবিনা শ্বশুরবাড়ির লোকজন এমনকি তার স্বামী পর্যন্ত। নিজের ভাইয়ের বিয়েতে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হয় সাবিনাকে। সাবিনার ভাই বোনের করুন পরিস্থিতিতে আর চুপ থাকতে না পেরে শেষমেষ বর পোশাকে সাবিনাকে আনতে গেলেও তাকেও ফিরিয়ে দেয় সাবিনার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
আরেফার ঘটনাটা কিন্তু অন্যরকম এখানে বিয়ের পরেও তাকে পণের জন্য বাপের বাড়িতেই বসে থাকতে হয়। ২০১৬ সালে আইনগতভাবে আরেফার সঙ্গে হুগলির খানাকুল এর বাসিন্দা শেখ নুরুদ্দিন ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের দেড় বছর পরেও আরেফাকে শ্বশুরবাড়িতে গ্রহণ করতে অসম্মতি জানায়। শুধুমাত্র পণের টাকা মেটাতে পারছিল না বলে। তাদের এও দাবি ছিল নগদ টাকা, গহনা আর জামাকাপড় এগুলো দিতেই হবে। আরেফের বাবা অনেক ছোটবেলাতেই মারা যায় সেক্ষেত্রে তার অভিভাবক বলতে দুটো দাদা। তারাই আরেফার শ্বশুর বাড়ির পণের দাবি মেটাতে টাকা যোগাড় করে। সেই টাকা আরেফার শ্বশুরের হাতে তুলে দেয়, নগদ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিল। ২০১৮ সালে আরেফাকে তার শ্বশুরবাড়ির লোক তিন ভরি মত গহনা দামি দামি আসবাবপত্র, ও জামা কাপড়ের সাথে ঘরে বৌমা রূপে তোলে। সমস্যা হচ্ছে বিগত ৮ মাস ধরে আরেফার স্বামী তার শ্বশুর-শাশুড়ির কথাই আবার একটা মহিলাকে নাকি গোপনে বিয়ে করেছে বলে আরেফা দাবী করে। সেই মহিলা নাকি আগে থেকেই বিবাহিত তাসত্বেও আরেফার স্বামীকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়েই গোপনে বিয়ে করেছে সেই লোভের ভাগিদার তার শ্বশুর শাশুড়ি, এবং তার স্বামী নিজেই। দিনের পর দিন আরেফার উপর অত্যাচার করে করে যাচ্ছে, লাথি, চড়, ঘুসি। ঠিকমতো খেতে পায় না কোনরকম ভরণপোষণ দিচ্ছে না ৮ মাস ধরে শাশুড়ি নাকি ১০০ টাকা দিয়েছে, সাথে ৫ কেজি রেশনের চাল ভরণপোষণের জন্য এবং টাকাটা হাতে দিয়ে বলে একমাস এটাতেই চালাও সংসারটা। আর নিজের স্বামীর চরম অন্যায়ের কথা কাউকে বলতে সাবধান করে দিয়েছে। একটা বাচ্চা আছে চার বছরের তার খাবারও ঠিক মতো যোগাড় করতে পারছে না আরেফা, সেদিকে তার স্বামীর বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। নতুন ওই মহিলাটার কাছেই দিনরাত ওঠাবসা করে এবং সে পুরোপুরি দাবি করে এতে তার শাশুড়ি এবং শ্বশুরের সম্পূর্ণ মদত আছে।
অপরদিকে মোহাম্মদ তারিকের পণের জন্য একাধিক বিয়ে করাটাও অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। ক্ষেত্র সমীক্ষা থেকে উঠে আসা তথ্য থেকে জেনেছি যে, তারিক তিনটে বিয়ে করেছে তার একটাই কারণ ছিল শুধুমাত্র পণের লোভে তার পরিবারের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে তারিক প্রথমে একটি মেয়েকে বিয়ে করে এবং সে মেয়েটির বাড়ি থেকে মোটা টাকা ইনকাম করে তারপর তাদের একটি মেয়েও হয়। বেশ কিছুদিন পর তারিক এবং তার স্ত্রীর সাথে ঝামেলা বাধে সে ঝামেলার পরই হঠাৎ তারকের স্ত্রী তার বাপের বাড়ি চলে যায়। তারপর তারিক তাকে আনতেও যায়নি। সে পুনরায় আবার একটা বিয়ে করে এবং সেখানে টোটাল তিন লাখ টাকা নগদ, বাইক, ফার্নিচার পণ স্বরূপ লাভ করে। তারিকের প্রথম স্ত্রী ও সন্তান থাকা সত্ত্বেও পুনরায় আরেকটি মহিলার পরিবার তাকে এত পনের বিনিময়ে বিয়েতে রাজি হয়েছিল কারণ উত্তর দিনাজপুরে ইসলামপুরে মুসলিম মহিলাদের বিবাহের ক্ষেত্রে পনের চাহিদা এতটাই বেশি যে তিন লাখ টাকা নগদ আর আসবাবপত্রের পরিমাণ অন্যান্য ছেলের সাথে বিয়ে দেয়ার থেকে অনেকটাই কম বলে জানা যায় তাই গরীব পরিবারের ওই মেয়ের বিয়ে তারিকের সাথেই তারা দিতে বাধ্য হয়। তারিক কিন্তু সেই ভাবে কোন কাজ করতো না। তার সত্বেও আবার একটা বিয়ে করে এবং সেই মহিলাটির বয়স তারিকের থেকে বেশি ছিল কারণ মহিলাটির কোথাও বিয়ে হচ্ছিল না। সেই সুযোগটাকে একলাফে লুফে নেয় তারিক। দ্বিতীয় স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সেই বাড়িতে আবার ফার্নিচার বাইক সমেত নগদ টাকার বিনিময়ে তৃতীয় স্ত্রীকে ঘরে তোলে। এক্ষেত্রে কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রীর মতামত নেওয়ার কোনরূপ ইচ্ছায় প্রকাশ করেনি। তারিকের দ্বিতীয় স্ত্রীর কথার মাধ্যমে উঠে আসে যে তারিক যখন আবার একটা বিয়ে করে, তখন সে সব অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ তার কোথাও যাওয়ার কোন ঠাঁই ছিল না।
কোরাআনের সূরা নিসার চার ৪নম্বর আয়াতেঃ বর্ণনা করা আছে" নারীদেরকে সানন্দে তাদের মোহরানা (যৌতুক) দিয়ে দাও। তবে তারা যদি খুশি মনে তোমাদেরকে তার কিছু অংশ ছেড়ে দেয় তাহলে তোমরা তা সানন্দে ও প্রীতিপূর্ণভাবে ব্যবহার কর"। কিন্তু কোরআনে বর্ণিত কথা ও বাস্তবে তার প্রতিফলনের চরিত্রটা পুরোপুরি ভিন্ন। মুসলমান সমাজের মেকি ধর্মীয় ভাবধারার আদর্শ অনুপ্রাণিত সুপুরুষেরা বরপণের নামে মহিলাদের পরিবার থেকে বিবাহের পূর্বে এবং বিবাহের পরে নগদ অর্থ এবং বেশ ভালো মতন দামি দামি আসবাবপত্র নিতে বরাবরই এগিয়ে এবং মুসলমান সমাজে বিবাহের ক্ষেত্রে দেনমোহরকে উপেক্ষা করার ঘটনা দেখা যায়। মুসলমান সম্প্রদায়ে বরপণ বা দ্যাহেজ ইসলামী বিধান অনুসারে হারাম। অপরদিকে ইসলামে কোন নারীকে বিবাহ সূত্রে দেনমোহর দিতেই হবে। যদি বিবাহের সময় সেই দেনমোহর কোন মহিলার স্বামী পরিশোধ না করতে পারে সেক্ষেত্রে তাকে বিবাহের পরে অর্থাৎ মৃত্যুর আগে বা কোন কারণবশত বিচ্ছেদ বা তালাকের আগে পরিশোধ করতে হবে। কোন স্বামী তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর তা পরিশোধ করলে, বা স্বামীটি দেনমোহর পরিশোধ না করা অবস্থাতেই মৃত্যু হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ঐ স্ত্রীর কাছে তার দেনমোহর ঋণ রূপেই থেকে যায়। মুসলিম বিয়েতে দেনমোহর হল স্বামীর কাছে স্ত্রীর একপ্রকার বিশেষ অধিকার, যা স্বামীর কাছ থেকে পাওয়ার অধিকারী হয়। বিয়ের সময় ধার্য করা হয় দেনমোহরের পরিমাণ। একবার দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করা হলে এর পরিমাণ কমানো যায় না। তবে স্বামী নিজ উদ্যোগে তা বাড়াতে পারে। স্ত্রীদের একটি বিশেষ অধিকার এবং স্বামীর উপর আইনত আরোপিত একটি দায়।
তালাকের পর দেনমোহর আদায় করা আইনগত অধিকার। কোন উপহার কিন্তু দেনমোহর নয়। যদি কোন উপহার দেওয়ার সময় দেনমোহর কথাটি লেখা থাকে তবেই তাকে দেনমোহর বলে বিবেচিত হয়। বিয়ের পরও বেশিরভাগ দম্পতি বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দেনমোহরকে তুচ্ছ বলে অসচেতন থাকায়, ওই সমস্ত মহিলারা নিজেদের সংসারটা টিকিয়ে রাখার ভয়ে ও স্বামীর মন জুগিয়ে রাখতে সামান্য ভরণপোষণে ইসলামিক অধিকার কে ভুলে যায় নাকি ভুলতে বাধ্য করে সমাজ? উদাহরণস্বরূপ বিয়ের দিন নবাব, কুলসুমাকে দেনমোহর মাফ করে দিতে অনুরোধ করল। সদ্য বিবাহিত কুলসুমা আবেগের বশে এবং লজ্জা বসত তা মাফ করে দিলে। এতে দেনমোহর কোনভাবেই মাপ হয় না। রেজাকের মৃত্যুর পরও বিধবা শোকরজান বিবির কাছে সবাই এসে বললো যে শোকরজান বিবি যেন রেজাকের দেনমোহর মাফ করে দেয়। কারণ দেনমোহর শোধ না হওয়ায় রেজাকের আত্মা কষ্ট পাবে। শোকে মূহ্য শোকরজান বিবি সাথে সাথে দেনমোহর (খালাস) মাফ করে দেয়। এক্ষেত্রেও দেনমোহর মাফ হয় না। কারণ দেনমোহর মাফ করার সময় স্ত্রীর পূর্ণ সম্মতি থাকতে হবে। একই সাথে তাকে স্বেচ্ছায় কোনো রকম প্ররোচনা ছাড়া মুক্তমনে দেনমোহর মাফ করতে হবে। প্রথমত কুলসুমা ও শোকরজান বিবি দুজনেই পারিপার্শ্বিক অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দেনমোহর মাফ করে কিন্তু এভাবে মাফ হয় না দেনমোহর।
দেনমোহরকে উপেক্ষা করার ঘটনা সর্বত্র। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান সমাজও এই অবৈধ ঘটনার ব্যতিক্রম নয়। সেক্ষেত্রে ভারতীয় ধর্মীয় গুরুদের কোন মাথাব্যথা নেই অথচ হারাম কাজটাকে হালালের নামে উৎসবে সামিল করে দিয়েছে। বরপণের নামে একটি মহিলার পরিবার এবং তার পরিবারের উপর যে কতটা নির্যাতন করা হচ্ছে সে সম্পর্কে মুসলমান সমাজ এবং সরকার উভয়কেই দায় নিতে হবে। যদিও ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে বরপণ প্রথার ফলে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে প্রয়াত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী (নদওয়াতুল উলুম, লক্ষৌ) একটি বিখ্যাত ইসলামিক মাদ্রাসার প্রাক্তন ডিরেক্টর এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সভাপতি মন্তব্য করেছেন "পণপ্রথা এক ধরনের ফিতনা (বিদ্রোহ) শোষণ"। কিন্তু বরপণ প্রথা নিয়ে এত কথা বলার পরও কেন মেয়েরাই আজও পণ্য বিক্রির মত দর কষাকষিতে উঠছে, সমাজ কবে মেয়েদের মেয়েমানুষ না ভেবে মেয়েরাও মানুষ ভাবতে শিখবে?
লেখক : শিক্ষার্থী।
ছবি : সংগৃহীত।
0 Comments
Post Comment