ইসলামে দেনমোহর ও সম্পত্তির অধিকারে মহিলাদের প্রতি লিঙ্গরাজনীতি

  • 01 May, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 231 view(s)
  • লিখেছেন : গোলাপসা খাতুন
উনবিংশ শতকের শেষ দিকে বহু মুসলিম মহিলা উত্তরাধিকার নিয়ে নিজেদের দাবি তুলেছিলেন। এর আগেও নাদুরা বেগম তার স্বামীর সম্পত্তির সমগ্র উত্তরাধিকার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন। মুন্নজান বেগম প্রকৃত মালিক ছিলেন তাঁর পূর্বসূরিদের সম্পত্তির। তিনি তার প্রাপ্ত জমিদারীর প্রশাসন সুন্দরভাবে চালিয়েছিলেন এবং উইলের দ্বারা তার ভাইকে সম্পত্তি প্রদান করেছিলেন এই শর্তে যে, আদায়কৃত রাজস্ব লাভ জনক খাতায় জমা পড়বে।

 মুসলিম সম্প্রদায়ে দেখা যায় বিবাহের সময় সাক্ষীর উপস্থিতিতে এই দেনমোহর –এর পরিমাণ জানিয়ে বর ও  কনের কাছে বিবাহের প্রস্তাব পাঠানো হয়, পরে তা স্বীকার করে উভয়েই। লিখিত এই চুক্তিপত্রকে কাবিলনামা বলা হয়। পূর্বের তুলনায় কম হলেও গ্রামে গঞ্জে এখনও মৌখিকভাবে বিবাহ হতে দেখা যায়। বিয়ের ক্ষেত্রেই কনের উপস্থিতি ও তার অনুমতি নেওয়া হয়। এমনকি বিয়ের সময়েই দম্পতির উপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু তালাকের সময় স্ত্রীর অনুমতির প্রয়োজন হয়না বলেই মহিলাদের চরম লাঞ্ছনার এবং দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মুসলিম সমাজে বিবাহের সময় ছেলে পক্ষ থেকে মেয়েকে ‘দেনমোহর’ অর্থাৎ কিছু অর্থ দেওয়ার কথা বলা হয় বা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করা হয়। যদিও ইসলামি আইন একজন পুরুষকে বিয়ের সময় তার স্ত্রীকে নগদ বা অন্য কোনো মূল্যবান জিনিসপত্র দেওয়ার জন্য ‘দাওয়ার’ (মোহর) দিতে বাধ্য করে। প্রতিটি বিবাহের চুক্তিপত্রে বা কাবিলনামাতে যেটি রেকর্ড করতে হয়। তবে তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রদানের দরকার বা প্রয়োজন পড়ে না। ভারতে এর অর্থ প্রদান অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়ে যায় একথা বলা যেতেই পারে। বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্বামী মারা গেলে এই মোহর নীড়ের ডিমের মতো করে একজন মেয়ের জীবনে যা দিয়ে সে নতুন জীবন শুরু করতে পারে। তবে এর অর্থ প্রদান কার্যকর করার কোনো আইনি ব্যবস্থা না থাকার জন্য খুব কম মহিলাই ভোগ করতে পারেন। ইসলামিক নারীবাদীরা মনে করেন যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুর পর যদি শ্বশুরবাড়ির লোকেদের কাছে কোনও মহিলা দেনমোহর বা তার প্রাপ্য সম্পত্তির অধিকার দাবি করেন তাহলে তাকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বিশ্বাস করিয়ে দেয় যে, এই দেনমোহর চাওয়াটা পাপ কাজ। এসব চাইলে স্বামীর আত্মা কষ্ট পাবে। এসব শুনে বেশিরভাগ মহিলারাই আর নিজেদের অধিকার দাবি করে না। আবার অনেকে তো ভয়েতে সমাজে টিকে থাকার জন্য বলতেই পারেন না তাদের অধিকারের কথা। তবে কিছু আলেমগণ আছেন যারা স্বাচ্ছন্দে স্বীকার করেন যে, প্রতিটি স্ত্রীই তার মোহরের অধিকারী। বিয়ের সময় যদি তা না দেওয়া হয় তাহলে তা অবশ্যই বিবাহ বিচ্ছেদের পর বা বিধবা হওয়ার পরে তাদের অধিকার মিটিয়ে দেওয়ায় কর্তব্য এবং উচিত কর্ম। কেও কেও আবার বিধবাদের বিশ্বাস করায় যে, তারা যদি এই অধিকার ভোগ করেন তাহলে তারা পাপের ভাগী হবেন। “সামাজিক ও আইনের দৃষ্টিতে স্ত্রীকে দেনমোহর নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। বিয়ের সময় শ্বশুরবাড়ির ও বাবারবাড়ির লোকজন এবং আত্মীয়স্বজনরা নবদম্পতিকে যে সমস্ত উপহার দিয়ে থাকেন তাকে ‘স্ত্রীধন’ বলে গণ্য করা হয়। সেই স্ত্রীধন একান্তভাবে একজন নারীর, তাতে কেবল তারই অধিকার থাকে। কিন্তু সেই সমস্ত কিছুই শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই নিয়ে নেয়। যার ফলে তার নিজের বলতে আর কিছুই থাকে না। প্রাচীন আরব সমাজে এই দেনমোহর কন্যাপণ হিসাবে প্রচলিত ছিল”। দেনমোহরের স্বরূপ প্রসঙ্গে নিচে আলোচনা করা হল-

নিশ্চিত দেনমোহরঃ বিবাহের সময় কন্যা পক্ষ ও বর পক্ষ উভয়ের সম্মতি নিয়েই এই ধরনের দেনমোহর ধার্য বা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে মূলত দুই পক্ষের সামাজিক মর্যাদাকে মাথায় রেখে।

উচিত দেনমোহরঃ এই ধরনের দেনমোহর আদালত ধার্য করেন। যদি কোনো বিয়ের সময় দেখা যায় দেনমোহর নিশ্চিত করা হয়নি তাহলে আদালত বর ও তার পিতার আর্থিক অবস্থা দেখে দেনমোহর নিশ্চিত করেন। এটি সাধারণত বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। 

সত্বর দেনমোহরঃ এইরূপ দেনমোহর মূলত স্ত্রী দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে তাকে তার স্বামী প্রদান করেন। এটি বিয়ের সময় হতে পারে আবার বিয়ের পরও হতে পারে। 

স্থগিত দেনমোহরঃ এই প্রকার দেনমোহরের প্রচলন সব চেয়ে বেশি দেখা যায়। কোনো একপক্ষের মৃত্যুর পর এই প্রকার দেনমোহর বাতিল হয়ে যায়। বিবাহ সমাপ্ত হওয়ার পরই এই দেনমোহর দিতে হয় কিন্তু বর পক্ষ বিয়ের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা দেয় না। 

অনেক ক্ষেত্রে এই দেনমোহরে টাকার পরিবর্তে সেই মূল্যের জমি বা গহনা ইত্যাদিও ধার্য করা হয়। দেনমোহরের পরিমাণ তবে খুব সামান্য হওয়াও উচিত নয়। বর্তমানে বাড়ির রীতি অনুসারেও দেনমোহর ধার্য হতে দেখা যায়। যেমন- পরিবারে হয়তো ৫০০ টাকা দেনমোহর আছে তবে সেটা কয়েক পুরুষের নিয়ম মেনে একশ বছর আগে দেওয়া হত। ২০০৮-২০০৯ সালেও ৫০০ টাকাই দেওয়া হয় এমনকি এখনও দেওয়া হয় সেই ৫০০ টাকা। ফলে দ্বিতীয় বিয়ে করার আগে প্রথম স্ত্রীকে সেই দেনমোহরের টাকা মিটিয়ে দিতে কোনও অসুবিধা হয়না। এই নগণ্য পরিমাণ টাকা তখন আর রক্ষাকবজ থাকে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে চোখে পড়ে অনেকে প্রচুর টাকা লোক দেখানোর জন্য ধার্য করে থাকেন। তবে সেটিও উচিত নয় কারণ পরে তা দিতে পারেন না। সেটা তার সামর্থ্যের অতীত। এই শরিয়তের বিধান মেনেই ধর্মীয় বিধান তাই ধর্মের সঙ্গে জড়িত কোনও বিষয়ে তারা কোর্টের রায় মানতে রাজি নয়। বিয়ে স্ত্রীকে খোরপোশের অধিকার দেয়। ভরণপোষণের দায়িত্ব যেহেতু একজন স্বামীর হাতেই দেওয়া থাকে তাই স্ত্রীকে স্বামীর কথা মতোই চলতে হবে, তাকে হতে হবে স্বামীভক্ত। স্বামীর নির্দেশ মেনেই স্বামী যেখানে থাকবে সেখানে তাকে থাকতে হবে। আবার স্বামী যখন ইচ্ছে তালাক দিলে তাকে সেটাই তাকে মেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি শাহবানু বেগমের কথা। “১৯২৩ সালে শাহবানু বেগমের সঙ্গে মধ্য প্রদেশের ইন্দরের আইনজীবী মোহম্মদ আহমেদ খানের বিবাহ হয়। তাদের তিন পুত্র ও দুই কন্যাও ছিল। এইমতাবস্থায় আহমেদ খান এক কমবয়সী যুবতীকে বিয়ে করেন। চল্লিশ বছর ধরে সংসার করে ৬২ বছর বয়সে শাহবানুকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করেছিলেন। তখন শাহবানু শরিয়া আইনকে লঙ্ঘন করে আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে নভেম্বর মাসে স্বামী আহমেদ খান তালাক দিয়েছিলেন। তালাকের পর প্রতিমাসে ২০০ টাকা শাহবানুকে খোরপোশের জন্য দিতেন। ১৯৭৫ সালে স্বামী তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। ১৯৭৮ সালে নভেম্বর মাসে সেই টাকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য শাহবানু মধ্য প্রদেশের ইন্দরের এক্তি স্থানীয় আদালতে ফৌজদারির কার্যবিধির ধারা ১২৫-এ একটি মামলা করেন। সেখানে আহমেদ খানকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২৫ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই টাকার পরিমাণ এতটাই কম যে তিনি সেটি বাড়ানোর জন্য মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট এই আবেদনটি পুনর্বিবেচনা করে প্রতিমাসে ১৭৯.২০ রুপি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়”। তখনও তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যান। সেখানে মামলাটি ওঠে এবং সেখানে আহমেদ খান জানায় যে, শাহবানু আর তার দায়িত্বে নেই। ইসলাম শরিয়া মতে সে দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন। ১৯৮৫ সালে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় রঙ্গনাথ মিশ্রা, ডি এ দেশা ও চিন্নাপ্পা রেদ্দি এবং ই এস ভেঙ্কটর মিকাহ গঠিত পাঁচ বিচারক বেঞ্চ দ্বারা বিষয়টি শুনানি হয়। ১৯৮৫সালে ২৩ শে এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়। সুপ্রিমকোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়েছিল । তখন আহমেদ খান শরিয়া আইনের প্রসঙ্গ তোলেন এবং জানান যে, সেখানে খোরপোশ কেবলমাত্র ৩ মাস ইদ্দত পালন কাল পর্যন্তই দেওয়ার নির্দেশ আছে। এটির সাথে মুসলিম সম্প্রদায় সুপ্রিমকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খেপে ওঠেন। ঠিক তখন ১২৫ নং ধারার ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে যে কোনও সম্প্রদায়ের মানুষ ভরণপোষণের দাবি করতে পারে। এদের মধ্যে আছে মা, বাবা, স্ত্রী, নাবালক পুত্র, পুত্র যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়, কন্যা যতদিন তার বিয়ে হচ্ছে। এই আইন অনুসারে বিবাহ বিচ্ছেদ স্ত্রীরও ভরণপোষণের অধিকার থাকবে। যতদিন না সে পুনর্বিবাহ করছেন। এটি মেনে শাহবানু মামলাটি করেছিলেন যদিও তবু রাজিব গান্ধী মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক এর কথা মাথায় রেখে তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলাদের রক্ষার জন্য ১৯৮৬ সালে একটি আইন পাশ করে। সেটি ছিল মুসলিম ওমেন প্রটেকশন অফ রাইট্‌স অন ডিভরস অ্যাক্ট। কিন্তু তাতে মুসলিমদের খোরপোশ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান হয়নি। এখানে বলা হয়েছিল ইদ্দতকাল পর্যন্ত খোরপোশ পাওয়ার কথা। এই সময় যদি স্ত্রী গর্ভধারণ করছে কি না তা স্থির হয় এবং এই সময় পর্যন্তই স্বামী খোরপোশ দেবে। তারপর মেয়েটির দায়িত্ব নেবে তার বাবা, ভাই বা আত্মীয়রা। না হলে ওয়াকফ বোর্ড। যদিও আমাদের রাজ্যে ওয়াকফ বোর্ড কোনও খোরপোশ দেননি। 

এই মামলায় নারীবাদীরা বলেছিলেন ১২৫ নং ফৌজদারি বিধি কোনো বিশেষ ধর্মীয় অনুশাসনের বিরোধিতা করতে নয় বরং নারী পুরুষের মধ্যে বৈষম্যমূলক সামাজিক প্রথার বিলোপ ঘটাতে পারে। ধর্মের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। আবার কিছু সংখ্যক নারীবাদীরা বলেছিলেন যে ভারতীয় সমাজে ব্যক্তিগত আইন এবং ফৌজদারি বিধি দুটি ই থাকা উচিত। এই দুটির মধ্যে মুসলিমরা যেকোনো একটি বেছে নেবে। যদিও ব্যক্তিগত আইন একটি ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কিন্তু ফৌজদারি বিধি সমস্ত ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের কথা বলে। তাই অনেকে ফৌজদারি বিধিটিকেই বেশি পছন্দ করেন। আবার কিছু নারীবাদীদের মতে মুসলিম শরিয়া আইন নারীদের ক্ষমতায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমনটা শাহবানুর ক্ষেত্রে ঘটেছে। “শরিয়ত আইন তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের তিনমাস (ইদ্দত কাল) পর্যন্ত খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেয়(বাকরাহঃ ২২৮)। এই ইদ্দত কাল পালনের কারণ হল মহিলাটি গর্ভবতী কিনা তা জানার জন্য। এই তিনমাসের মধ্যে মহিলাটি দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবেন না। গর্ভবতী হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত খোরপোশ পাওয়া যাবে। এই খোরপোশের মেয়াদ শেষ হলে মহিলাটির ভরণপোষণের যাবতীয় দায়িত্ব তার বাপের বাড়ির বা নিকট আত্মীয়দের”। আজকের দিনে ছেলেরা গর্ভধারিণী মায়ের দায়িত্বই সঠিকভাবে পালন করছেনা সেখানে আত্মীয়রা দায়িত্ব পালন করবে এই আশা করা যায় কি? স্ত্রী হিসাবে একজন মহিলা যতদিন পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকবেন ততদিনই তিনি সমাজে মর্যাদা পাবেন। কিন্তু যে  মহিলাটি তালাকপ্রাপ্ত হবেন বা বিধবা হবেন সেই মুহূর্তে তাকে ভিক্ষা করেই সংগ্রহ করতে হবে দুমুঠো অন্ন। ২০০১ সালে কলকাতার হাইকোর্টে একটি মামলার রায়দানকালে বিচারপতি অরুনাভ বড়ুয়া জানিয়েছিলেন যে, “ মুসলিম মহিলা হলেই তাকে মুসলিম উইমেন প্রোটেকশন অফ রাইটস অন ডিভোর্স অ্যাক্ট ১৯৮৬ সালের আইন মেনে মামলা করতে হবে এমন কোনও কথা নেই। যেকোনো ধারায় বিচার চাইতে পারেন তা তার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। সর্ব ধর্মের মহিলারাই সি আর পি –এর ১২৫ নং ধারায় বিচার চাইতে পারেন। এক্ষেত্রে মহিলাদের পক্ষ যদি সবদিক দিয়ে বলশালী হয় তবেই খোরপোষ আদায় সম্ভব হয় নচেৎ তিনমাসের খোরপোষের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বাস্তবে তাই ঘটে”। সাধারণত নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন পরিবারের যে সমস্ত মহিলারা গর্ভবতী অবস্থায় তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা হন তাঁদের সন্তানরা কেউ কেউ তাদের বাবাকে চোখেও দেখার সুযোগ পায় না। মা কষ্ট করে লালন পালনের দায়িত্ব পালন করে থাকে সেক্ষেত্রে। শরিয়তের বিধান অনুসারে মা কোনও অবস্থাতেই সন্তানের অভিভাবক হতে পারে না। মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো লিখিত আইন নেই। ১৯৩৭ সালের শরিয়ত আইন অনুযায়ী ইসলাম বিশ্বাসী মানুষ তাদের ব্যক্তিগত বিষয় যথা- “বিবাহ বিচ্ছেদ ,সন্তানের হেফাজত, হিবা(দানপত্র)এবং উত্তরাধিকারী ইত্যাদি বিষয়ে শরিয়তের বিধান মেনেই চলে। তবে ব্যক্তিগত বিষয়ের আওতায় এই কৃষিজমিকে বাদ রাখা হল”।  মুসলিম সমাজে দেনমোহর ছাড়াও পণ নেওয়া বা দেওয়ার রীতি রয়েছে। যদিও পণ নেওয়া বা দেওয়া আইনত অপরাধ। আগে শুধুমাত্র কন্যাপণেরই উল্লেখ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সেটি উঠে গিয়ে বর পণের প্রথা চালু হয়েছে। শরিয়া আইনে এর কোনো উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে দেখা যায় সমস্ত সামাজেই কমবেশি হলেও পণ দেওয়ার বা নেওয়ার রীতি রয়েছে। এমনকি সামাজে এটি একটি নিয়ম হয়ে আজ দাঁড়িয়েছে। যে যত বেশি পণ দেবে সেই পণের ভিত্তিতেই পাত্র নির্ধারিত হবে অর্থাৎ চাকুরীজীবী বর পেতে হলে কন্যার পিতাকে মোটা পণের ব্যবস্থা করতে হবে সেক্ষেত্রে। বিয়ে ছাড়া কোনও সমাজেই যে নারীর গতি নেই। কথায় আছে-‘পতি ছাড়া নেই গতি’। তবে একজন পুরুষ বিয়ে না করেও সমাজে গৃহীত হয়ে থাকে সসম্মানের সঙ্গে। কিন্তু একজন নারী নয়। এই বিয়ের জন্য একটি পরিবার বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবার তার মেয়ের বিয়ের জন্য ধার করেও এমনকি নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন তো ভিক্ষা করেও পণের টাকা থেকে শুরু করে সমস্ত জিনিসপত্র জোগাড় করে থাকে। সেটা না দিলে যে পাত্র পক্ষ বিয়ে ভেঙ্গে দেবে। সেই কথা চিন্তা করে মেয়ের জন্মের পর থেকেই কন্যার পিতা মাতার  শুরু হয় মেয়ের বিয়ের চিন্তা। এই কারণেই প্রায় বেশির ভাগ সমাজেই এমনকি মুসলিম সমাজেও মনে করা হয় মেয়ে পড়ে লেখে করবে টা কি? সেই তার বিয়ে দিতে গেলে পণ তো লাগবেই তাই পড়া লেখার পিছনে খরচা করাটা কোনো মানে হয় না। অপরদিকে একজন পুত্রকে তার বাবা লেখাপড়া করিয়ে চাকুরীজীবী করে মোটা টাকা পণের দাবি করে থাকেন। এই বিয়েতে নিজের সর্বস্ব দিয়েও একজন কন্যার পিতা তার মেয়ের বিয়ে দিয়ে থাকেন। বিয়ের পর যেহেতু একজন মেয়ে তার শ্বশুরবাড়িতেই থাকে তাই সে তার কোনও অধিকার আর দাবি করতে তাদের কাছে পারে না। আবার বাবা যেহেতু তার বিয়েতে এতো খরচা করেছে সেকথা ভেবেও বাবার কাছেও কোনও দাবি করতে পারে না অনেক সময়ই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বামী মারা গেলে বা স্বামী তাদের তালাক দিলে ঠিক সেই মুহূর্তেই নেমে আসে তাদের জীবনে অন্ধকার। অনেক ক্ষেত্রে সেই সময় শ্বশুরবাড়িতে ঝি এর মতো তাদের জীবন কাটাতে হয়। আবার যদি নিজের বাবার বাড়ি ফিরেও যায় তাহলেও অনেক ক্ষেত্রে সেই তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা নারীর ভাইদের সংসারে কোনও জায়গা হয়না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। হলেও আবার সেখানে থাকতে গেলে শুনতে হয়য় তাকে- ‘অলক্ষ্মী’, ‘অশুভ’, ‘ডাইনি’, ‘কালসাপ’, ‘কুপয়া’ প্রভৃতি কথাবার্তা। এইসব শুনেই শেষ নয় আধপেটা খেয়ে ঝি এর মতো পড়ে থাকতে হয় তাদের। আবার বয়স্ক হলে তো অনেক সময় ভিক্ষাবৃত্তিকেই বেছে নিয়ে শেষ জীবনটা কোনও মাঝার শরীফেই আশ্রয় নেন। এইভাবেই সামজে বিয়ে, পণ ও বিধবা মহিলাদের অবস্থা একটার সাথে আরেকটা অঙ্গাঙ্গী ভাবে সম্পর্কিত। কাজী আবদুল ওদুদ কোরানের অনুবাদের সূরা আন্‌-নিসা মুখবন্ধে লেখেন, “ওহোদের যুদ্ধে ৭০০ মুসলমান যোদ্ধার মধ্যে ৭০ জন নিহত হয়। এর ফলে নারী আর অভিভাবকহীন ছেলে-মেয়ে একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। এই সূরায় বিবাহের বিধিনিষেধ সম্বন্ধে আর নারীদের ও অনাথদের সম্পত্তির অধিকার সম্বন্ধে অনেক কথা আছে”। সামাজিক প্রেক্ষাপটেই আইন তৈরি হয়েছে সেটা স্পষ্ট। মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পত্তির ভাগ হয় পবিত্র কোরানের নির্দেশ মেনে। যে যুগে নারী ও দাস ছিল পুরুষের সম্পত্তি, পবিত্র কোরান শরিফ নির্দেশ দিল, পিতা- মাতা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা- মাতা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে। ইহা অল্পই হোক বা বেশিই হোক তাঁদের জন্য নির্ধারিত অংশ। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে নারী- পুরুষের সমানাধিকার নেই। ইসলামি আইন মতে –কোনো নারী যদি একমাত্র সন্তান হন, তবে তিনি কখনো পুরো সম্পত্তির দাবিদার হতে পারেন না। একমাত্র মেয়ে হলে পুরো সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। যেসব পিতা-মাতার সবগুলিই কন্যা সন্তান তাঁদের দুশ্চিন্তায় কাটাতে হয়। কারণ তাঁদের সম্পত্তি নিকট আত্মীয়রাই পাবে ইসলামি আইন অনুসারে। “ইসলামে কন্যা পিতার সম্পত্তিতে ও স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে। কিন্তু তাঁদের অংশ খুবই কম। পিতার সম্পত্তিতে কন্যার সম্পত্তির অংশ এক ছেলে যা পাই মেয়ে তার অর্ধেক পাই”। অর্থাৎ এক ছেলে পাবে দুই মেয়ের অংশের সমান। সূরা নিসাতে বলা হয়েছে, “তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তমাদের নির্দেশ দিচ্ছেনঃ পুরুষদের অংশ দুজন মেয়ের সমান। যদি (যদি মৃতের ওয়ারিশ) দুইয়ের বেশি হয়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিনভাগের দু’ভাগ তাদের দাও। আর যদি একটি মেয়ে ওয়ারিশ হয়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক তার”। (সূরা নিসাঃ ১১-১৪)। আর যদি ছেলে না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে বাবার সম্পত্তির পুরোটাই মেয়ে পাই না। সেসব ক্ষেত্রে একটা বড়ো অংশ বাবার ভাই বা ভাইয়ের ছেলেরা পেয়ে থাকে। তাই অনেকে মৃত্যুর আগে সম্পত্তি মেয়েদের নামে করে দেন। পক্ষপাত দুষ্ট আইনে সম্পত্তি বাঁটোয়ারার সপক্ষে যুক্তি দেখানো হয় যে, ইসলামে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে করে ছেলে, মেয়ে নয়। ছেলের সম্পত্তির আয়ে পরিবারের প্রতিপালন হবে। অপরদিকে মেয়েদের সমস্ত আয় জমা থাকবে। পরিবারের জন্য তাঁদের ব্যয় করতে হবে না। আবার বাবা মারা যাওয়ার পরও ভাইদের কাছে সম্পত্তি চাইতে বোনেরা অনেক ক্ষেত্রেই আসে না। কারণ তাঁরা মনে করে থাকে বিয়েতে তাঁদের অংশটাই খরচ করা হয়ে থাকে বলে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভাইদের সাথে বিবাদের ভয়েতেও আর নিজেদের অংশ তাঁরা চায় না। অনেকক্ষেত্রে চাইলেও দেখা যায় ভাই ও ভাইদের স্ত্রীদের ঝামেলা করতে। অপরদিকে স্বামীর সম্পত্তিতেও স্ত্রীর ভাগে কম অংশই বরাদ্দ। অথচ স্বামী কিন্তু স্ত্রীর সম্পত্তির একটি বড়ো অংশ পায়। “তোমাদের স্ত্রী যা রেখে যায় তার অর্ধেক তোমরা পাবে, যদি তাদের একটি সন্তান থাকে তবে তোমরা পাবে তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ, তাদের অসিয়তের দাবি বা ঋণ পরিশোধের পরে। আর তারা পাবে তোমরা যা রেখে যাও তার চার ভাগের এক ভাগ যদি তোমাদের সন্তান না থাকে, কিন্তু যদি একটি সন্তান থাকে তবে যা রেখে যাও তার আট ভাগের এক ভাগ তারা পাবে, তোমাদের অসিয়তের দাবি বা ঋণ পরিশোধের পরে”। (সূরা নিসা) তবে এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির যদি একাধিক স্ত্রী থাকে সেক্ষেত্রে ওই আট ভাগের একভাগ সমানভাগে তাদের মধ্যে ভাগ হবে। “আবার কোনও ব্যক্তির আগে যদি তার সন্তানের মৃত্যু হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সন্তানের বিধবা ও তার ছেলেমেয়েরা দাদুর সম্পত্তিতে কোনো অধিকার পাবে না। এক্ষেত্রে দয়াবশত দাদু তার পুত্রের বিধবা ও তার মৃত পুত্রের ছেলেমেয়েদের আশ্রয় দিলেও দিতে পারে কিন্তু আইনগত কোনো অধিকার থাকে না। এই ভাবেই বিয়ে, পণ, ও দেনমোহর এবং সম্পত্তিতে অধিকার ও মুসলিম মহিলাদের অবস্থা একটার সাথে আরেকটা অঙ্গাঙ্গী ভাবে সম্পর্কিত। 

উনবিংশ শতকের শেষ দিকে বহু মুসলিম মহিলা উত্তরাধিকার নিয়ে নিজেদের দাবি তুলেছিলেন। এর আগেও নাদুরা বেগম তার স্বামীর সম্পত্তির সমগ্র উত্তরাধিকার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন। মুন্নজান বেগম প্রকৃত মালিক ছিলেন তাঁর পূর্বসূরিদের সম্পত্তির। তিনি তার প্রাপ্ত জমিদারীর প্রশাসন সুন্দরভাবে চালিয়েছিলেন এবং উইলের দ্বারা তার ভাইকে সম্পত্তি প্রদান করেছিলেন এই শর্তে যে, আদায়কৃত রাজস্ব লাভ জনক খাতায় জমা পড়বে। নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ইসলামিক আইন অনুসারে সম্পত্তির অংশ পেয়েছিলেন। তাঁর ভাই পেয়েছিলেন বাকি অংশ। তবে জমিদারীর অংশ ছিল তাঁর বেশি। পুত্র সন্তান থাকা সত্ত্বেও মহিলারাই জমিদারীর অংশ পেয়েছিলেন এবং জমিদারী পরিচালনাও করতেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের অধিকার বঞ্চিত হতে। কারণ হল একটাই, সেটা হল সে একজন নারী। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় নুরুন্নেছা খাতুনের উপন্যাসের ‘আত্মদান’ –এর কথা। যেখানে তাঁর বাবার মৃত্যুর পর কিভাবে তাঁর মা স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। কারণ সে নারী আর নারীদের সম্পত্তির প্রয়োজন নেয়। পুরুষ যেহেতু সংসার চালায়, সমস্ত দায়িত্ব বহন করে তাই সম্পত্তির প্রয়োজন পুরুষের। এটাই পিতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণা। 

সবশেষে এটা বলতে পারি যে, ইসলাম নারীকে সামান্য কিছু অধিকার দিয়েছে ঠিকই কিন্তু কেড়ে নিয়েছে তাঁর কাছ থেকে মানুষ হওয়ার অধিকারটাই। আজও প্রায় কোনও সমাজেই মেয়েদের নিজের ঘর বলে কিছু হয়না। আজও একজন নারী বাবা, ভাই অথবা স্বামী ছাড়া অসহায় সমাজে। বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েদের কাছে একজন নারী তাঁর নিজের অধিকার নিয়ে মুখ খুলতে ভয় পাই। আর বলতে পারলেও সম্পর্কে ছেদ দেখা দেয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর আজও একজন নারীকে মূল্যহীন বস্তু রূপে সমাজে তাঁর বাকি জীবনটা কাটাতে হয়। অনেকসময় শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়ে থাকে। এমন কি স্বামীর কোনও সম্পত্তিতেও তাঁকে ভাগ দেওয়া হয়না। যদিও শরিয়া আইনে অধিকার দেওয়া হয়েছে নারীদের। কয়েকমাস আগে বীরভূমের বাসিন্দা আজমিরার কথায় বলতে পারি। প্রেম করে বিয়ে করে সুমন সেখকে। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। সুমনের বাড়ি আজমিরাকে মেনে নেয়নি। তাই আজমিরা বাবার বাড়িতেই থাকতো বিয়ের পর। আজমিরা পঞ্চায়েতে একটা কাজ করত। আর কিছু ছেলেমেয়েদের পড়াত। তাই দুজন মিলেই বিয়ের দুবছর পর কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে এবং আজমিরার মা বাবাও বিয়েতে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে তাদের একটা বাড়ি বানাতে সাহায্য করেছিল। দিনরাত এক করে তারা বাড়িটি তৈরি করে দুবরাজপুরেই। নতুন বাড়িতে প্রবেশ করার দশদিন আগে সুমন বাইক দুর্ঘটনায় মারা যায়। বাড়িটি ছিল সুমনের নামে। সুমন মারা যাওয়ার পর আজও সেই বাড়ির কোনও অধিকার আজমিরা পাইনি। এখন সুমনের বাবা মা সেখানে বসবাস করে। সে থানাতেও গেছিল কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। আজমিরা তার বাবা মায়ের বাড়িতেই থাকছে। এই হচ্ছে আমাদের মুসলিম সমাজ। আরও অনেক ঘটনায় রয়েছে তার মধ্যে নাইসার কথা বলা যেতে পারে, সে স্কুল টিচার। এক সন্তানের মা। স্বামী মারা যাওয়ার পর সেই বাড়িটি বিক্রি করতে চাইলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বিক্রি করা তো দূরের কথা তাঁকে সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আইনের আশ্রয় নিলেও ফল কিছুই হয়নি। এই হচ্ছে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের সমাজের তৈরি নিয়মনীতি যেখানে মহিলাদেরই মেনে নিতে বাধ্য করা হয় বার বার সেই নিয়ম। তাঁরাও মেনেই নেয়, কি আর করবে? কোথায়, কার কাছে যাবে? এইসব ভেবে। তবুও সমাজে অনেক পরিবর্তন নারীরা আজ নিয়ে এসেছে।   আরও পরিবর্তন আনার জন্য আন্দোলনও চলছে। মুসলিম মেয়েরা আজ আশাবাদী। পূর্ণ অধিকার আসবেই।

লেখক : অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক 

ছবি : সংগৃহীত 

 

 

 

0 Comments

Post Comment