- 23 January, 2022
- 0 Comment(s)
- 602 view(s)
- লিখেছেন : চন্দন আনোয়ার
[১৬]
ঘরে-বাইরে সর্বনাশের আলামত : রিমা
কলিং বেল বাজলে দরজা খুলে দিল রিমা। এ তোমার এক ঘণ্টা? রাত এখন নয়টা বাজে।
ত্রস্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে সুমন। রিমা প্রত্যাশা করেছিল, সুমনের মধ্যে অনুশোচনা দেখতে পাবে। কিন্তু হতাশ হয় নিদারুণভাবে। কোন বিকার চোখে না পড়ায় ভেতরে ভেতরে ফুঁসে ওঠে। এবং খুন করতে বলাটাও যে অনিচ্ছাকৃত নয় সেটা বিশ্বাস করতেও হোঁচট খেতে হয়। ধীরে ধীরে আতঙ্ক পাকিয়ে উঠছে রিমার বুকের মধ্যে। সুমন কি সত্যি খুন করবে আমাকে? হতেও পারে। নিজেকেই নিজে ধিক্কার দেয়, ছি! কী সব অবান্তর বিষয় নিয়ে মগজে সাপ-লুডু খেলছি?
শার্ট-গেঞ্জি যেন টেনেছিঁড়ে খুলছে সুমন। এমন তড়িঘড়ি ভাব। রিমা বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, তোমার ভাবখানা দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি ট্রেন ছাড়ল! কায়মনে বুক পেট উদোম করে খ্যাচ করে পেন্টের চেইন খোলে। আলগোছে নিচে নেমে আসে প্যান্ট। আন্ডারওয়ার পরিহিত একহারা গড়নের সুমনের দিকে চোখ করে রিমা মিটমিট করে হাসে, লুঙ্গি পরো জলদি, আতেল আতেল লাগছে। লুঙ্গি পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে এমন শক্তভাবে আন্ধাগিঁট দিল যে, যেন কেউ খুলে নেবে ওর লুঙ্গি। রিমার কাছে বিস্ময় ঠেকল। সব কাজ যেন নতুন করছে। আর এত তাড়াহুড়া কেন? ঢাকা থেকে ফেরার পরেই রিমা লক্ষ করে, সুমনের হাত কাঁপে সবসময়। চোখ তো লাল হয়েই থাকে। কথা বলতে শুরু করলে এক নিশ্বাসে কথা বলে।
লুঙ্গি পরেই যেন হাঁপিয়ে উঠেছে সুমন। হেইয়্যা বলে ভয়াবহ শব্দ করে বসে গেল খালি ফ্লোরেই। ডাইনিংটেবিলে বসে খায় না। মাটিতে লেপটে বসে লুঙ্গি কাছিয়ে হাঁটু উদোম করে তবে খায়। মাঠের কামলার মতো খাওয়ার এই অদিম স্টাইলটাই নাকি আয়েশ করে খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। রিমাও অভ্যস্ত করে নিয়েছে নিজেকে। নিঃশব্দে উঠে গিয়ে খাবার আনল। সুমনের একার খাবার।
একার কেন? খাবে না তুমি? হাঁটুর লুঙ্গি কাছাতে কাছাতে বলে সুমন। এতটাই নির্বিকার কণ্ঠে বলে যে, হতাশ হয় রিমা। মুখ নামিয়ে বলে, না, ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া ক্ষিধেও নেই।
খেলার সাথীরা দাঁড়িয়ে থাকলে বালক যেভাবে নাকেমুখে ভাত গোঁজে, এমন করে সুমন গোগ্রাসে নাকেমুখে ভাত ঢোকাচ্ছে, গিলছে আর গ্লাসের পর গ্লাস পানি খাচ্ছে। হতবাক রিমা। তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক চোখে। ও তো এমন অস্থির কখনই ছিল না।
মুখভর্তি ভাত নিয়ে মুখ হা করে দু’বার কিছু একটা বলে সুমন। ধরে উঠতে পারে না রিমা। রাগত কণ্ঠে বলে, কী বলছো ছাই! খেয়ে বলো। তৃতীয় দফায় রিমা বুঝল, সুমন কবিরাজ কবিরাজ বলছে।
কিসের কবিরাজ? রিমা বিস্ময় প্রকাশ করে।
আমাদের জুনিয়র কলিগ আরেফিন সাহেব এক কবিরাজের সন্ধান দিলেন। উনি নাকি তাবিজ দিলে ছেলে বাচ্চা কনফার্ম।
বিস্মিত রিমা। কিছুটা উত্তেজিত কণ্ঠেই বলে, এসব ফালতু আইডিয়া কোত্থেকে জোগাড় করো? তুমি না নিজেকে রিয়ালিস্টিক বলে প্রচার করো?
মেয়ে হলে ওর বিয়ে দেবো কী করে? তখন তো বিপদ। ছেলেদের সমাজ প্রিফার করে। তাছাড়া আমার দরকার ছেলে বাচ্চার।
গাঢ় নিশ্বাস ফেলে রিমা। বেদম পাক খেয়ে খেয়ে অস্থির ফ্যানের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে উদাস কণ্ঠে বলে, চলে যাব কোথাও। শুনেছি আফ্রিকার কোনদেশে নাকি মানুষ এখনো আদিম-ই আছে। ধর্ম-সমাজ-রাষ্ট্র এসব কিছুই বোঝে না। সক্রেটিস-প্লেটো-মার্কস-হিটলার-বুশ-সাদ্দাম এদের নামও জানে না। কোনো অবতার আসেনি। সেখানেই যাবো।
রিমার শেষের কথাগুলো শোনেনি সুমন। খাবার ফেলে সটান দাঁড়িয়ে পড়ল। আচমকা সুমনের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আতঙ্ক। এ সামান্য কথায় এত রিঅ্যাক্ট করলে কেন সুমন? রিমা তাজ্জব! আমি কি সত্যি করে বললাম নাকি? আস্তো পাগল! আধা-খাওয়া করে উঠলে অমঙ্গল হবে। রিমা অনুরোধ করে।
অনুরোধ না শোনার ভান করে সুমন। ঘোড়ার মতো টক টক শব্দে পা ফেলে দৌড়ে চলে গেল।
রিমা বসে রইল থ মেরে।
ড্রইং রুম হতে সুমনের হিস্হিসানি কানে আসছে। হিস্হিসানির শব্দ ভয়ানক ও অস্বাভাবিক ঠেকলে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ায় রিমা। মৃগীরোগীর মতো থরথর করে কাঁপছে সুমন। তীব্র আক্রোশে রি রি করছে। বাজে সিচুয়েশন ক্রিয়েট করতে পারে ভেবে সুমনের হাত ধরে সোফায় বসাল। মাথার চুলে বিলি কেটে বুকের উপরে মাথা টানতে টানতে সোহাগভরা কণ্ঠে বলে রিমা, আমার সোনা যাদুর রাগ হইছে, গাল ফুলেছে, ভাত না খেয়ে উঠে এসেছে! সরি, আমি তো জাস্ট হেঁয়ালি করলাম সোনা। আমি আর কোথায় পালাব, বলো? তামাম পৃথিবী চষে ফেললেও তো আমার এই শরীর ঢাকবার জন্যে এক ইঞ্চি জায়গা মিলবে না।
পাগলের মতো হাত-পা ছুঁড়ে চিৎকার করে সুমন—আমি সব বুঝি, আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই এখন। মানুষের অন্তরের সবকিছু আয়নার ছবির মতো দেখতে পাই। আমার দিব্যদৃষ্টি আছে। কেউ কিছু লুকাতে পারবে না। এই লোকটার মনের গোপন খবর আমি আগেই জেনেছি। সর্বনাশ না করে ক্ষমতা ছাড়বে না। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করেনি।
টিভি স্ক্রিনে চোখ ফেলেই লাফিয়ে উঠে রিমা। সটান দাঁড়িয়ে টিভির স্ক্রিনের কাছে চোখ নিয়ে একের পর এক চ্যানেল পাল্টিয়ে দেখে, সব চ্যানেলে একই ব্রেকিংনিউজ। বড় বড় লাল রেখায় ভেসে উঠছে দেশে ইমারজেন্সি ডিক্লেয়ারের নিউজ। প্রফেসর ইয়াজউদ্দিনের কেয়ারটেকার সরকার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মৌলিক অধিকার খর্ব থাকবে অনির্দিষ্ট কাল। কিছুটা দ্বিধা, কিছুটা শঙ্কা নিয়ে সোফায় মাথা হেলিয়ে চুপ করে বসে ভাবছে রিমা। দেশটার কী ভাগ্য কে জানে! সুমনের সাথে যে শেয়ার করবে, এ বিষয়ে ওর নিজেরই তাল ঠিক নেই। ইদানিং সুমন খুববেশি রিঅ্যাক্ট করে যে কোন বিষয়ে। তারপরেই ঝিমিয়ে যায়। আগ্রহ দেখায় না সে বিষয়ে।
রিমা ঘামছে ভীষণ। দেশটা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে শেষমেষ? দিনেদুপুরে রাস্তায় শিয়াল কুকুরের মতো পিটিয়ে না হয় গুলি করে লাশ ফেলে। সেই লাশ নিয়ে মিছিল হৈ হুল্লোড় চলে। কী ভয়ানক ব্যাপার! পৃথিবীর কোন স্বাধীন দেশে এমন হয় নাকি? এত তাজা প্রাণ, এত নারী সম্ভ্রম বিলিয়ে, সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে যে দেশটির জন্ম, সে দেশের এ কী হাল! দেশের মুক্তিযোদ্ধারা তো সব মরে যায়নি এখনো। তারা কি ভুলে গেছে অস্ত্র চালাতে? কেন তারা নীরব? আজ রাতেই নেমে পড়ে না কেন রাস্তায়? একাত্তরের চাইতে দেশের মানুষ আরও বেশি আগ্রহ নিয়ে মুখিয়ে আছে যুদ্ধে নামতে? কে দেবে ডাক? সকলেই তো ক্ষমতার রঙিন চশমা পরে আছে চোখে। রিমার এসব ভাবনার মধ্যেই বুক কাঁপিয়ে বেজে ওঠে মোবাইল।
অয়নদা, আমি রিমা বলছি। কী খবর ঢাকার?
খবর তো এতক্ষণে পেয়ে গেছেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণ শোনেননি?
না, শুনিনি। তবে ব্রেকিং নিউজ দেখে বুঝতে পারছি, ইমারজেন্সি...
সুমন কী করছে?
আপনার বন্ধু তো ফিট।
ফিট মানে?
রিমা নড়ে বসে। সুমনের দিকে চোখ ফিরিয়ে স্মিত হেসে বলে, জানেন না আপনার বন্ধুর ব্যাপার স্যাপার? টিভি খুলে দেখেই কিছুক্ষণ লম্ফঝম্ফ করল। এখন দুম মেরে বসে আছে। গালে হাত দিয়ে টম এন্ড জেরি দেখছে। ওর নাকি দিব্যজ্ঞান হয়েছে! সবকিছু আগে থেকেই বোঝে!
অ্যা! এ কী বলছেন? আমার সন্দেহটাই কি...বাক্যটি অসমাপ্ত রেখেই অয়ন বলে, ওকে দিন মোবাইলটা দিন।
মোবাইল কানে নিয়েই সুমন এক নিশ্বাসে বকে চলছে। সুমনের কণ্ঠস্বর এখন ফ্যাসফ্যাসে। ভাঙা ভাঙা। বেশির ভাগ কথা-ই রিপিট করে। সেই দেশভাগ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, তারপর বাংলাদেশের তিন দশকের ইতিহাসের এলোপাতাড়ি ঝড় বয়ে যাচ্ছে মুখ দিয়ে। অবশেষে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ইয়াজউদ্দিনকে। রিমা কাছে বসেই ছিল নিশ্বাস আটকে। অয়নকে একটি বাক্য বলারও সুযোগ দেয়নি। নিজের কথা শেষ হলে কট করে কেটে দিল লাইন।
[১৭]
পাগল-ই হয়ে গেল স্যারটা : জয়নাল
পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যের রোদ এসে পড়েছে সুমনের টেবিলে। উঠতে তাড়া বোধ করছে না। কোলাহল নেই তেমন। এ সময়টা সাধারণত সুমন এনজয় করে। কিন্তু রাগে গিজগিজ করছে আজ। বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান সুমনের ডাইরেক্ট টিচার। বলা চলে তার নেকদৃষ্টির কারণেই আজকের পজিশন। তারপরেও মানুষের বিবেক বলে একটা বিষয় থাকা উচিত। গতকাল সবেমাত্র একটা কমিটির রিপোর্ট পেশ করেছে। একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই ফের একটি পরীক্ষার দায়িত্ব হাতে ধরিয়ে দিলেন আজ। যেন সুমন গাঙ্গুলিই একা টিচার ডিপার্টমেন্টে, অন্যদের চোখে পড়ে না তার। বাঘা বাঘা প্রফেসর একেক জন। সবাই নিজের ধান্ধার ফেরারি। ফাঁকিবাজদের এক এক করে নাম ধরে মনের সুখে গালিবর্ষণ করে।
জয়নাল প্রায়শ চটে থাকে সুমনের উপরে। হররোজ দেরি করে বাড়ি ফিরতে হয়। মানুষটা উঠতে চায় না। আবার ডেকে না পেলে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে ছাড়ে। বেলা বাজে চারটে। রাগে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করে জয়নাল। দেখি তো মানুষটা ঘুমিয়ে পড়ছে নাকি? দরজা ঠেলে ঢুকতেই শিউরে উঠল।
টেবিলে পা তুলে চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দোল খাচ্ছে সুমন গাঙ্গুলি। চোখ বুঁজে ঝিমুচ্ছে।
জয়নাল ভয়ে ভয়ে বলে, স্যার, আপনার কি অসুখ?
পা নাচিয়ে নাচিয়ে উত্তর দিল সুমন, না রে।
তবে স্যার! আমতা আমতা করে জয়নাল, আপনি এভাবে...!
তবে কি? তবে কি? খেঁকিয়ে উঠল সুমন।
সুমনের বদলে যাওয়াটা এখন শুধু জয়নাল একা না, ডিপার্টমেন্টের সবাই জানে। এমনকি ছাত্ররা পর্যন্ত হররোজ নালিশ করে স্যারের দুর্ব্যবহার নিয়ে। ছাত্রজীবন হতে জয়নাল দেখে আসছে সুমনকে। শান্ত ভদ্র অমায়িক এই মানুষটা ধীরে ধীরে কেমন বদলে বদলে যাচ্ছে। এখন কেমন রুক্ষ স্বভাবের হয়েছে। কথা বললেই খ্যাকখ্যাক করে পাগলা কুত্তার মতো তেড়ে ওঠে। জয়নালের মায়া হয় সুমনের জন্য। শেষমেষ না পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় মানুষটা!
এই সিগারেট নিয়ে আয়। সুমনের এমন আচানক চাওয়াতে কেঁপে ওঠে জয়নাল। বুকে থুথু ছিটায়। ঢেকুর গিলতে গিলতে বলে, কি চাইলেন স্যার!
সিগারেট।
জয়নালের মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। কনফার্ম হতে ফের জানতে চায়, স্যার কী চাইলেন যেন?
সিগারেট।
কিন্তু আপনি তো সিগারেট খান না।
দাঁত কটমটিয়ে এমন বিস্ফোরিত চোখে তাকাল সুমন, জয়নালের আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। দরজা ঠেলে সিটকে বাইরে আসে। মানুষটার মাথার নাটবল্টু সব ঢিলা হয়ে গেছে বোধ হয়। এ তো পুরা পাগল দেখছি! চেহারাটাও কেমন হারগিলের মতো। চোখ দুটা পাকা তরমুজের মতো লাল হয়েই থাকে। নিজের পকেট হতে দশ টাকা ব্যয় করে একটা গোল্ডলিফ কেনে। একটা দিয়াশালাইও নিয়েছে এক টাকায়। সুমনের সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য দেখার বেজায় কৌতূহল ওর ভেতরে।
বুকে থু ফু দিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢোকে জয়নাল। পূর্ববৎ ঝিমুচ্ছে সুমন। টেবিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সিগারেট বাড়িয়ে দিল জয়নাল, স্যার সিগারেট।
শেয়ালের মোরগ ধরার মতো চোখের পলকে লাফিয়ে টেবিল টপকে জয়নালকে জাপটে ধরে সুমন। শার্টের কলার ধরে মুহুর্মুহু কিলঘুষি মারতে মারতে এত জোরে ধাক্কা মারল যে, ছিটকে গিয়ে দেয়ালে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা খেল। কপাল ফেটে সামান্য রক্ত বের হয়।
চেয়ারম্যান নিজেই এলেন সুমনের রুমে। সুমন ভীষণ শান্ত। চুপচাপ। উদাস মনে কলম নাড়ছে। তার পক্ষে পিয়নের গায়ে হাত তোলার মতো গর্হিত কাজ হতে পারে চেয়ারম্যানের বিশ্বাস হবার কথা না। যেহেতু এই মুহূর্তে সুমন ছাড়া কেউ নেই এ ভবনে। সুতরাং এ কাণ্ড সুমন-ই ঘটিয়েছে।
তুমি কি জয়নালের গায়ে হাত দিয়েছো? চেয়ারম্যান বলে।
জয়নালের দিকে স্বভাবসূলভ সরল ভঙ্গিতে তাকায় সুমন। চোখের ভাষায় বিস্ময় ও জিজ্ঞাসা মেশানো। কিন্তু চেয়ারম্যানের দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।
বাধ্য হয়ে জয়নালকে-ই বাঁধো বাঁধো কণ্ঠে বলতে হল, এই মানুষটা কিভাবে ওকে কিলঘুষি দিয়ে জখম করেছে।
সুমন নীরব থাকে। অর্থাৎ সম্মতি। চেয়ারম্যান বললেন, তোমার কী প্রবলেম সুমন? তুমি যে কারো সাথে গুড বিহেভ্ করছো না? একটু আগে আমার সাথে যে বিহেভ্ করেছো, ছেলের মতো ভালোবাসি তাই। সবাই যে তোমাকে এড়িয়ে চলে টের পাও? দিনে দিনে তুমি কেমন যেন...। নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখেছো?
ওকে বললাম পানি দে, ও কিনা দিল সিগারেট...
চেয়ারম্যান হুঁ বলে বেরিয়ে গেলেন। তার অর্থ সুমনের কথা তার বিশ্বাস হয়নি। সুমন এমন ভুলভাল হরহামেশাই বলে থাকে। জয়নাল খুব অনুগত। পানি চাইলে সিগারেট এনে দেবে এতটা সাহস পাবে না।
জয়নাল একটু পানি দে। মায়াভরা কণ্ঠ সুমনের।
জয়নালের মধ্যে এক ধরনের অপরাধবোধ জাগে। কেন চেয়ারম্যান স্যারকে বললাম? মানুষটা কত ভালো মানুষ!
[চলবে...]
0 Comments
Post Comment