- 05 March, 2023
- 0 Comment(s)
- 166 view(s)
- লিখেছেন : শাম্মা বিশ্বাস
রোসা লুক্সেমবার্গ বিশ্বের বিপ্লবী চিন্তাবিদদের মধ্যে অন্যতম পথিকৃৎ। বিশ্ববিপ্লবের তাত্ত্বিক হিসেবে তিনি অতি গুরুত্ত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। মেয়েদের জন্য প্রতিকূল এক পৃথিবীকে নিজের বক্তব্য শুনতে বাধ্য করেছিলেন এই পোলিশ মার্কসবাদী তাত্ত্বিক, সমাজ দার্শনিক ও বিপ্লবী। পোল্যান্ড সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তাত্ত্বিক রোসা লুক্সেমবার্গ পরে জার্মান সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে জড়িয়ে পড়েন।
রোসা লুক্সেমবার্গ ১৮৭১ সালের ৫ই মার্চ রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত পোল্যান্ডের সামোসক নামক স্থানে এক ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫-১৬ বছর বয়সে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নিষিদ্ধ ঘোষিত বামপন্থী দল প্রোলেতারিয়েতে যোগ দেন। দুই বছর পর গ্রেফতার এড়াতে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান এবং সেখানে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
দর্শনগত দিক থেকে বৈপ্লবিক মার্ক্সবাদী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন রোসা। প্রথম জীবনে তিনি এসপিডির রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু ১৮৯০ সালে বিসমার্ক যখন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন তখন থেকে এসপিডি আস্তে আস্তে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় আলাদা রাজনৈতিক প্লাটফর্মের কথা চিন্তা করতে থাকেন তিনি । এরই মধ্যে গুস্তাভ লোয়েবেক নামের একজনকে বিয়ে করে ১৮৯৮ সালে রোসা জার্মান নাগরিকত্ব পান,এবং এর পরেই রাজনৈতিক কর্মপন্থা নিয়ে এসপিডির উচ্চপর্যায়ের সাথে সরাসরি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর এই বিতর্ক বিরোধিতায় রূপ নেয়। রোসা ও তার সঙ্গীরা দলত্যাগ করেন যখন যুদ্ধের অর্থসংস্থানে এসপিডি ক্ষমতাসীনদের সমর্থন করতে শুরু করে । বিরুদ্ধ আচরণের দায়ে এরপর তাকে আড়াই বছরের কারাবাস দেয়া হয় । কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি,জেলে বসেই যুদ্ধরত সরকারের বিপক্ষে কলম চালাতে থাকেন।
এক উত্তাল সময়ে ৮ নভেম্বর জেল থেকে ছাড়া পান রোসা । তাঁর জেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় জার্মানির উত্তরের শহর কিল - এ এক গণ আন্দোলন গড়ে ওঠে। ৪ নভেম্বর ১৯১৮ তারিখে জার্মানির উত্তরাঞ্চল চল্লিশ হাজার সৈন্য ও আন্দোলনরত জনতারা দখল করে ফেলে। এইসময় রোসা জেল থেকে বের হয়েই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সমমনা সকল বামপন্থী দলগুলো নিয়ে গঠন করেন জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি । অধিকৃত অঞ্চলে ততকালীন সোভিয়েত আদলে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন তাঁরা। এদিকে সরকার বিদ্রোহীদের দমন করতে ফ্রাইকর্প নামে পরিচিত কট্টর জাতীয়তাবাদী মিলিশিয়াদের লেলিয়ে দেয়। তাদেরই হাতে ১৫ জানুয়ারি ১৯১৯ সালে রোসা লুক্সেমবার্গ সপরিবারে নিহত হন । মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেয়া হয় ।
বিপ্লবের পাশাপাশি রোসা ১৯১৮ সালের নভেম্বরে "ডি রোটে ফাহরে"(বাংলা - লাল পতাকা) পত্রিকা চালু করেন। জার্মানি তথা সারা বিশ্বের বাম রাজনীতিতে রোসা লুক্সেমবার্গ একটি স্মরনীয় নাম । জার্মানির বার্লিন শহরে তার একাধিক স্মৃতিসোধ ও রাজপথের নামকরণ করা হয়েছে । এছাড়াও শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি উ-বান (পাতাল রেল) স্টেশন তার নামে নামকরণ করা হয়েছে ।
এই মহীয়সী নারী শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্মেছিলেন ঠিকই কিন্তু সেটা তার জীবনে কোন প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি । রাজনীতির ইতিহাসে তাঁর সংগ্রামের কথা, বিপ্লবের কথা উজ্জ্বল হয়ে আছে।
লেখক : বাচিকশিল্পী
ছবি : সংগৃহীত
0 Comments
Post Comment