আমি দ্বীত্যা

  • 22 August, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 85 view(s)
  • লিখেছেন : মৌসুমী দাস
ঈশ্বর আমাকে একই অঙ্গে রাধা ও কৃষ্ণের রূপ দিয়েছে, একই অঙ্গে উভয় রূপ, এতে আমি কী করবো? আমি তোমাদের মধ্যে আমার প্রতি সহানুভূতি দেখানো, ঘৃণ্যতা, ভেদ, দূরে ঠেলে দেওয়া সব দেখেছি, কিন্তু আমার মা— পারেনি দূরে ঠেলে দিতে। দেখেছি অনেক মেয়ে তার প্রেমিক এর হাত ধরে হাঁটছে, ভালবাসছে, আবার দেখেছি কাঁদছে, হাসছে, উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখি, ইচ্ছে ছিল ভালোবাসিয়া এক চোট খুব কাঁদিয়া লইব, ভালোবাসার এই কাঁদাটার স্বাদ গ্রহণ করবো….. কিন্তু,.... দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছু নাই….

সকাল গড়াতেই দেখি, মা চেঁচামেচি শুরু করেছে, “কি যে করি, আমার হয়েছে কপাল, বাজার বাড়ন্ত, কি রান্না করি, ওদিকে মানুষটা পড়ে আছে,” আমি বাইরে বেরিয়ে এসে বলি, ‘মা…. কি হলো, বলো - বাজার যেতে হবে? আমি যাচ্ছি,” ‘আমি’ কে? তোমাদের বলাই তো হয়নি… আমি দ্বীত্যা। হ্যাঁ দ্বীত্যা রায়। “আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই—  ছেলে মেয়েগুলো কেমন যেন অবাক বিস্ময় ভরা চোখ দিয়ে আমাকে গিলে খায়। যেন আমি একটা অদ্ভুত জন্তু।”

আমি বলি অমন করে দেখার কি আছে গো!....

হ্যাঁ… হয়তো ঈশ্বর আমাকে একই অঙ্গে রাধা ও কৃষ্ণের রূপ দিয়েছে, একই অঙ্গে উভয় রূপ, এতে আমি কী করবো?

আমি তোমাদের মধ্যে আমার প্রতি সহানুভূতি দেখানো, ঘৃণ্যতা, ভেদ, দূরে ঠেলে দেওয়া সব দেখেছি, কিন্তু আমার মা— পারেনি দূরে ঠেলে দিতে, তবু অধম— এই স্বাদ কখনও পাইনি। আমি দ্বীত্যা, মায়ের চোখের আড়ালে হয়তো কখনো চোখের জল মুছেছি। দেখেছি অনেক মেয়ে তার প্রেমিক এর হাত ধরে হাঁটছে, ভালবাসছে, আবার দেখেছি কাঁদছে, হাসছে, উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখি, ইচ্ছে ছিল ভালোবাসিয়া এক চোট খুব কাঁদিয়া লইব, ভালোবাসার এই কাঁদাটার স্বাদ গ্রহণ করবো….. কিন্তু,.... দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছু নাই….

যাইহোক, হয়তো বুঝতে বাকি নেই আমি কে?

বাবার শরীরটা ভালো নেই, বাজার বাড়ন্ত, আমি মায়ের হাত থেকে থলেটা নিয়ে কি কি আনতে হবে জেনে নিয়ে বাজারের দিকে এগোলাম, জানি মা বাধ্য হয়ে আমাকে যেতে সম্মতি দিলো, বাজারে গিয়ে অনেকগুলো অস্বস্তিকর চাহনির সম্মুখীন হতে হবে, তবু জীবনে আশা করা, কারো প্রতি আস্থা রাখা, ও নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখা থামাতে পারিনি, কিছু খারাপ স্মৃতির জন্য এই জিনিসগুলো থেকে সরে থাকলে জীবনে সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না। আর এই দীর্ঘ জীবন কিছু লোভী, স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক মানুষগুলোর জন্য আপনজন যাদের জন্য এই পৃথিবীতে জন্মেছি তাদের ঠকিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে পালাতে পারবো না। নিজের পরিচয় তৈরি করার আমারও আছে অধিকার আমিও একা সম্পূর্ণ। হলাম‌ই বা একই অঙ্গে নারী পুরুষ।।

হঠাৎ অলক্ষে বিধাতা বুঝি তার লেখনীতে অন্য কাহিনি লিখলেন। বেশ তো চলছিলো, আমি একটা সরলরেখায় জীবনের চলার পথকে এঁকে নিয়েছিলাম, বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছিলাম একটি ছেলে আমার কম্পিউটার ক্লাস থেকে ফেরার পথে রোজ দাঁড়িয়ে থাকে। আজ হঠাৎ সে এগিয়ে আসে তার হাত বাড়িয়ে বলে হাই। আমি অদ্ভুত চোখে তার চোখের চাহনির দিকে তাকিয়ে সেই কথার অর্থ পড়তে চাইলাম। বেশ কিছুক্ষণ গত হলো, তারপর ধীর শান্ত গলায় বলিতে লাগিলো— “জানিনা আমার কি হইয়াছে, আমি তোমাকে অন্তরের সহিত ভালবাসার বন্ধনে বাঁধতে চাই, ভালো-মন্দ বা বোঝার বা বুঝিবার কোন ক্ষমতা আমাকে অতিক্রম করেছে, বলো তুমি আমার এই হাতটি কি ধরে সামনের ওই পথে চলতে চাও…? না শুনতে চায় না।”

আমি তো এইরকম কোন কথা শোনার আশা কোনদিন করিনি, তাই কিছুটা অপ্রস্তুত, বিহ্বল— ‘ও জানেতো আমাকে, জানলেও কতটুকু জানে…! সত্যি সবটা জানলে কি করে এই প্রস্তাব দেয়? কি জানি…. সংশয় মনে উঁকিঝুঁকি দেয়,....’

সংশয়ের নিরশন ও করলো। সে বলে ওঠে… আমি তোমার বিষয়ে সবটা জানি…. তুমিতো স্বয়ং সম্পূর্ণা, তোমার একই অঙ্গে দুই রূপ, তোমার সবটাই আমি ভালোবেসেছি, আমাকে ফিরিয়ো না….. ‘আর্তনাদ করে উঠতে ইচ্ছে হয়, আমাকেও ভালোবাসা যায়…? আমিও সমাজে ভালোবাসার যোগ্য হতে পারি?’

বুকের ভিতরটা চিন চিন করে ওঠে…., আমার অজান্তেই দুটো হাত বুকটাকে চেপে ধরি…. দুই চোখ দিয়ে শীতল অশ্রুধারা দুই গাল বেয়ে ঝরে পড়ে…, বুকের ভিতর একটা হাতুড়ি পিটার আওয়াজ …. তাহলে আমারও কি মন আছে, আজ সবার মত হৃদয়…. কিছু ভাবার আগেই একটা অদৃশ্য চুম্বকের আকর্ষণের মতো দুই হাত তার দিকে দিলাম বাড়িয়ে।”

আজ যেন অনেক দিন পরে পৃথিবীটাকে নতুন একটা জগৎ মনে হচ্ছে, পাখিদের ডাককে মনে হচ্ছে ভালোবাসার হাতছানি….,

 হ্যাঁ, আমি দ্বীত্যা…. আমারও আছে বাঁচার অধিকার, আছে ভালোবাসা পাবার অধিকার।”

 

লেখক : ছোটগল্পকার

ছবি : সংগৃহীত

0 Comments

Post Comment