- 11 May, 2025
- 0 Comment(s)
- 103 view(s)
- লিখেছেন : শাম্মা বিশ্বাস
সিলভিয়া প্যাঙ্কহার্স্ট (৫মে ১৮৮২- ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬০) ছিলেন একজন ইংরেজ নারীবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী এবং লেখিকা। সিলভিয়া ১৮৮২ সালের ৫ মে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড,ম্যানচেস্টারে এমেলিন প্যাঙ্কহার্স্ট এবং ডঃ রিচার্ড প্যাঙ্কহার্স্টের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। সিলভিয়ার পরিবারও লন্ডনের সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৮৮৫ সালে তাঁরা ম্যানচেস্টার থেকে চলে এসেছিলেন এবং নারী অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ছোটবেলায় সিলভিয়া বাড়িতেই পড়াশোনা করতেন, অল্প কিছু বছর তিনি ম্যানচেস্টার হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। ছোটবেলা থেকে তিনি প্রায়ই বাবা মায়ের রাজনৈতিক সভায় যোগ দিতেন। যখন তাঁর মাত্র ১৬ বছর তখন তাঁর বাবা মারা যান। সেইসময় তিনি তাঁর মাকে তাঁর বাবার ঋণ পরিশোধ করার জন্য কাজ করতে থাকেন। ১৮৯৮ থেকে ১৯০৩ সাল পর্যন্ত সিলভিয়া শিল্পকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি ভেনিসে মোজাইক শিল্পকলা পড়ার জন্য একটি বৃত্তি ও লন্ডনে রয়্যাল কলেজ অফ আর্টে পড়ার জন্য একটি বৃত্তি লাভ করেন। এইসময় তিনি ম্যানচেস্টারের প্যাঙ্কহার্স্ট হলের ভিতর কাজ করেন।
সিলভিয়া ILP(ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি) তে যোগদান করেন। ১৯০৩ সালে তিনি মহিলা সামাজিক ও রাজনৈতিক ইউনিয়নে (WPSU) যোগ দেন। ১৯০৬ সালে শিল্পকলা পেশা ত্যাগ করেন, এবং মা ও বোনের সঙ্গে WSPU তে পূর্ণকালীন কাজ শুরু করেন। লোগো,ব্যানার, পোস্টার ইত্যাদি তৈরি করা, সভাকক্ষের সাজসজ্জা করা এইসব কাজ তিনি করতেন WSPU তে। ১৯০৬ সালে ভোটাধিকার বিক্ষোভের অংশ হিসেবে তাঁকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়, এবং দুই সপ্তাহের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর বহুবার অনশন ধর্মঘট করেন। তাঁকে অনেকবার গ্রেপ্তার করা হয়, এমনকি জোর করে খাওয়ানো হয়। সিলভিয়া WSPU এর সংবাদপত্রে "votes for women" এ নিবন্ধ লিখেছিলেন এবং ১৯১১ সালে তিনি WSPU-এর প্রচারণার একটি প্রচারমূলক ইতিহাস, " The Suffragette: The History of the Women's Militant Suffrage Movement" প্রকাশ করেছিলেন । এতে ১৮ নভেম্বর ১৯১০ সালের ব্ল্যাক ফ্রাইডে -এর সাক্ষীর বিবরণ অন্তর্ভুক্ত ছিল , যেখানে ৩০০ জন মহিলা সমঝোতা বিলের অধীনে ভোটাধিকারের দাবিতে তাদের প্রচারণার অংশ হিসেবে সংসদ ভবনে মিছিল করেছিলেন এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং পুরুষ দর্শকদের কাছ থেকে সহিংসতার সম্মুখীন হন, যার মধ্যে কিছু যৌন নির্যাতনের শিকার হন ।
ভোটাধিকার আন্দোলনে তিনি তাঁর বোন ক্রিস্টাবেলের মত তাঁর মায়ের সঙ্গে কখনোই খুব বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন না। বরং তিনি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, এবং শ্রমিক শ্রেণীর নারীদের অংশগ্রহণে বেশি আগ্রহী ছিলেন। লন্ডনের পূর্ব প্রান্তে ভোটাধিকার আন্দোলনে সিলভিয়া শ্রমিক শ্রেণীর নারীদের আন্দোলনে অনড় সুযোগ দেখেছিলেন। এই সময় তাঁকে বারবার গ্রেপ্তার করা হয়। সিলভিয়া ডাবলিন ধর্মঘটের সমর্থনেও কাজ করেছিলেন এর ফলে তাঁর মা ও বোনের সঙ্গে আরো দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। ১৯১৪ সালে যুদ্ধ শুরু হলে সিলভিয়া শান্তিবাদীদের সঙ্গে যোগ দেন, অপর দিকে তাঁর মা ও বোন যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে ভিন্ন অবস্থান নেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সিলভিয়া এবং সিলভিও ইরাসমাস কোরিওর মধ্যে সম্পর্ক শুরু হয়। তাঁরা লন্ডনে গিয়ে একটি ক্যাফে খোলেন। সিলভিয়ার যখন ৪৫ বছর বয়স তখন তিনি তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। তিনি সাংস্কৃতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। সিলভিয়া বিবাহ করেননি এবং সন্তানের পিতা কে তা প্রকাশ্যে স্বীকারও করেননি। ১৯৩০ সালের দিকে সিলভিয়া ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য আরো সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৩৬ সালে ইতালীয় ফ্যাসীবাদীরা ইথিওপিয়া দখল করে। সিলভিয়া ইথিওপিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন।
সিলভিয়া বেশ কিছু বই লেখেন। সেভ দ্য মাদার্স: ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে প্রায় ৩০০০ সন্তান জন্মদানকারী মা এবং ২০,০০০ শিশুর জীবন এবং অন্যান্য দেশে একই রকম ভয়াবহ অপচয় রোধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন (১৯৩০)। তার মূলত আত্মজীবনীমূলক বিবরণ, দ্য সাফ্রেগেট মুভমেন্ট (১৯৩১) এবং দ্য হোম ফ্রন্ট (১৯৩২); এবং তার মায়ের জীবনী, দ্য লাইফ অফ এম্মেলিন প্যাঙ্কহার্স্ট (১৯৩৫) ইত্যাদি।
সিলভিয়া ১৯৬০ সালে ৭৮ বছর বয়সে আদ্দিস আবাবায় মারা যান, এবং তাঁকে পূর্ন রাষ্ট্রীয় সমাধিতে "সম্মানসূচক ইথিওপিয়ান" হিসেবে ঘোষণা করা হয়। লন্ডনের ওল্ড ভিক থিয়েটার ২০২৩ এর ২৫ জানুয়ারী সিলভিয়ার ওপর নির্মিত হিপহপ সঙ্গীত "সিলভিয়া" এর বিশ্ব প্রিমিয়ার ঘোষণা করে।
0 Comments
Post Comment