পূর্বকথা- সমাজ-ধর্মে বিপরীত দুই তরুণ-তরুণী রিমা আর সুমনের মনোরাজ্যে প্রচণ্ড ঝড় উঠেছে। ‘আমি মানুষের পৃথিবী চাই, মানুষের উপরে আর কিছু মেনে নিতে আমি অস্বীকৃতি জানাই' প্রফেসর চৌধুরীর এই মন্ত্র ওদের মনে। প্রফেসর চৌধুরীর চেম্বারে ঘটনাটা ঘটে যাওয়ার পর সমস্ত শক্তি পায়ের উপরে চালান করে জোরে হাঁটে রিমা। ঘরে পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত একবারও পেছনে তাকায়নি। সুমনের ধাবমান পদশব্দ যেন ওকে আততায়ীর মতো তাড়া করে।

পূর্বকথা- রিমার বাবা শুনলেন তার মেয়ের বিয়ের খবর, সেদিন কোনো বাড়তি প্রতিক্রিয়াই দেখা যায়নি তার মধ্যে। তাতেই বোঝা গেল তীরটা বিঁধেছে কতটা গভীরে। মেয়ের মা কিন্তু কাঁদল ঘরদোর ফাটিয়ে। ভাইটা ঘর থেকে বের হয়নি। আশেপাশের গ্রাম রাষ্ট্র হয়েছে বিয়ের কথা। বাড়িতে হিড়িক পড়েছিল মেয়ের বাবাকে দেখতে। যে মেয়ে পরকাল বিশ্বাস করে না, আল্লাহ রসুল মানে না, কলমা না পড়েই বিয়ে করেছে, সেই মেয়ের বাপ তো গাঁয়েগঞ্জে ভুরি ভুরি মেলে না। মুসলিম মেয়ের হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করার কারণে নানান সামাজিক প্রতিক্রিয়া শুরু হলো।

পূর্বকথা- রিমা সুমনের নিশ্বাসের কাছাকাছি পৌঁছায়। বুকের উপরে মাথা ফেলে। দুই হাতে জাপটে ধরে সুমনকে। তোমাকে কথা দিয়েছি সুমন, তুমি বিশ্বাস রাখ, এবার আমি মা হব। এতকাল তোমাকে ঠকিয়েছি, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ঠকেছি আমি। সুমনের লোমশ বুকে উটপাখির মতো মুখগুঁজে বিলাপ করে রিমা। এখানেই আমার জীবন-মরণ, এখানেই আমি জমা রেখেছি আমার সমস্ত বিশ্বাস। আমি দিব্যি কেটে বলছি, এবার আমি মা হব সুমন, এবার আমি মা হব...

পূর্বকথা- চৈতির ভেতরে ভয় বরফ হয়ে ওঠে। চৈতি কী বলবে, কী করবে বুদ্ধিতে কুল পাচ্ছে না। জীবিত এক মানুষ নিজেই বলছে সে খুন হবে! সেটা আবার নিজের স্ত্রী-বন্ধুর হাতে, এ কি বিশ্বাস করা যায়? এত নির্লিপ্তভাবে কেউ কখনও কাউকে নিজের আসন্ন মৃত্যুর সংবাদ দিতে পারে নাকি? অবিশ্বাস-বিশ্বাসের দ্বন্দ্বে চৈতির মাথার ভেতরে বিপরীত চিন্তার কুরুক্ষেত্র চলছে। সুমনের একটি কথা মুহূর্তেই চৈতিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল অন্য দিগন্তে।