- 17 March, 2021
- 0 Comment(s)
- 823 view(s)
- লিখেছেন : তামান্না
মনে হয় এর চেয়ে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া ভালো।
এইখানে
পৃথিবীর এই ক্লান্ত এ অশান্ত কিনারার দেশে
এখানে আশ্চর্য সব মানুষ রয়েছে। (এই সব দিনরাত্রি, জীবনানন্দ দাশ)
বহুজাতিক সংস্থার আতিশয্যে নারীদিবস বলতেই যদি প্রসাধন সামগ্রীর মূল্যে ৫০ শতাংশ ছাড়, ২৫ শতাংশ ছাড় বুঝি, ফুল-কেক-চকলেট-কার্ড-ওয়াইন-এলাহি নৈশভোজ দিয়ে বিশেষ এই দিনটি উদযাপন করে, হাহাহিহি, গড়াগড়ি করে গাহি সাম্যের গান গুনগুন করতে করতে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে আবার যদি বিড়বিড় করে নারী দিবসের কোন প্রয়োজন নেই বলে ডিগবাজি খেয়ে চার পা তুলে হট্টমূলার গাছে ঝুলতে থাকি, তাহলে সত্যিকার অর্থে আমাদের মস্তিষ্ক বিহ্বল, দিশেহারা হয়ে পড়া ছাড়া আর কি বা করতে পারে? প্রায় প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখ আসার সন্ধিক্ষণে বহুল তর্কবিতর্ক শুরু হয় আদতে নারীদিবসের প্রয়োজন আছে কি না! বিশেষ এই দিনকে ঘিরেই বিস্তর কাটাছেঁড়া চলতে থাকে। এই কারণে মনে হয়, এখনকার প্রজন্ম নারীদিবস বলতে কী বোঝে তাদেরও কি মনে হয় নারীদিবসের কোন প্রয়োজন নেই, তারা কি ভাবছে জানার জন্য প্রাথমিক স্তরে একটা সমীক্ষা করার আবশ্যিকতা উপলব্ধি করি। সমীক্ষার ফলাফল দেখে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে, তিনটি বেলা উপোস করে, ছেঁচকি শাকের ঘন্ট বেটে মাথায় মেখে, শক্ত ইঁটের তপ্ত ঝামা নাকে ঘষে, গেলুম গেলুম আমায় ধরে তোল বলে হাক ছেড়ে কোনও প্রকারে এ যাত্রায় উঠে দাঁড়ালুম!
সমীক্ষার প্রশ্ন ছিল— নারী দিবসের প্রয়োজন আছে? আপনার মতামত জানতে চাই। প্রথমেই বলে রাখি, পুরুষেরা এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে, অদ্ভুত নির্লিপ্ততা বজায় রেখে আমাদের চলার পথকে কুসুমাস্তীর্ণ করে তুলেছেন! অন্যদিকে ৮০ শতাংশ নারী নেতিবাচক মতামত দিয়েছেন, ২০ শতাংশ নারী ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন। যাই হোক নারীদিবস নিয়ে স্বচ্ছ ধারনা বেশিরভাগ শিক্ষিত নারীদের নেই, তাঁরা দীর্ঘ এই লড়াইয়ের ইতিহাস জানেন না! পরিশ্রম করে তাঁরা এই বিষয়ে জানার চেষ্টা করেননি। এই সুদীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস একবার ফিরে দেখা যাক। আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারী-পুরুষ বৈষম্য, নারীদের দাসত্ব প্রথা শুরু হয়েছিল সেই পাঁচ হাজার বছর আগে। অবদমিত নারীরা দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করে গেছেন। ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাহীনতার বিরুদ্ধে নারীরা সোচ্চার হন, যদিও নারীরা শ্রমের বাজারে সস্তা শ্রমিক ছিলেন তবুও পারিবারিক দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে এসে অনেক নারী পরিত্রাণ পেয়েছিলেন। ১৬৬২ সালে নারীদের অধিকার অর্জনের দাবিতে মার্গারেট লুকাস ‘ফিমেল ওরেশনস’ শীর্ষক প্রবন্ধে নারীর অধিকারের দুর্দশা ও বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছিলেন। বিশ্বের নারী জাগরণের ইতিহাসে নারীর পরাধীনতা ও অসম অধিকারের বিষয়ে প্রথম লিখিত তথ্য হিসাবে এই প্রবন্ধটি পরিচিত। ১৭৮৯ সালে অক্টোবর মাসে নারীরা জাতীয় পরিষদের কাছে আবেদন করেন নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, শ্রমের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে। কিন্তু সংবিধান সভা যখন মানুষের অধিকারের সনদ ঘোষণা করল সেখানে নারীদের অধিকারের কোনও কথা ঘোষণা করা হয়নি। এরফলে মাদাম অলিম্বো ডিগিজো তীব্র প্রতিবাদ করেন। এরফলে তাঁকে ফরাসি সরকার গিলেটিনে মৃত্যুদণ্ড দেন। প্রতিবাদ করার জন্য ডিগিজো ছাড়াও অসংখ্য নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফরাসি সরকার।
১৭৯২ সালে মেরি ওলস্টোনক্রাফট নারীশিক্ষা ও মেয়েদের গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে ‘A Vindication of the Rights of Women’ বই লেখেন। আবার ১৮৫১ সালে হ্যারিয়েট টেইলর মিল ‘Enfranchisement of Women’ বইয়ে নারীদের আইনের বিরোধিতা করে, রাজনৈতিক নিয়মের পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন। নারীদের ভোটাধিকারের দাবিতে কয়েক দশক সংগ্রাম করতে হয়েছে। উনিশ শতকের শেষে আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে নারীরা ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ইংল্যান্ডে ভোটাধিকার আন্দোলন ‘পেটিকোট রিবেলিয়ান’ নামে বিখ্যাত। দাসত্ব প্রথার বিরুদ্ধে আমেরিকায় নারী আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এই আন্দোলনে নারীরা যোগ দিয়ে বুঝেছিলেন তারা কেবল মালিকের দাস নয়, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীরা আসলে পুরুষদের জন্য দাসত্ব করেন। আমেরিকায় ১৮৪৮ সালে ‘সেনেকা ফলস ডিক্লেয়ারেশন অব সেন্টিমেন্টস’ নামে একটি ইস্তেহার রচনা করেন এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যান্টন ও লুক্রেসিয়া মট। এই ইস্তেহারে শিক্ষার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, নারীদের ভোটাধিকারের দাবি জানানো হয়। এলিজাবেথ ১৮৪০ সালে ‘নারীর অধিকার’ নিয়ে সেনেকা ফলস গ্রামে একটি বক্তৃতা প্রদান করেন। প্রসঙ্গত, সেই উল্লেখযোগ্য বক্তৃতায় তিনি কি বলেছিলেন দেখে নেওয়া যাক-
এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যান্টন
নারীর কন্ঠে আজ তাই একটি কথাই সোচ্চার হয়ে উঠেছে—'অধিকার।'
যখন দাসত্ব প্রথার বিরুদ্ধে ইউরোপে আন্দোলন চলছিল সেই সময় নিউ ইয়র্কের সেনেকা ফলস গ্রামে আধুনিক নারী অধিকার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই সময় এলিজাবেথ পড়াশোনার অনুমতি পেয়েছিলেন। রক্ষণশীল পরিবারে বড় হলেও তিনি ছেলেদের স্কুলে গণিতশাস্ত্র ও ধ্রুপদী সাহিত্য পড়তেন। তাঁর বাবার আইন সংক্রান্ত ফাইলগুলোই তিনি সেইসময় পড়তেন। তাঁর বাবার আইনের বই পড়ে, এবং তার বাবার কাছে আইনি পরামর্শ নিতে যে নারীরা আসতেন তাদের অভিযোগ শুনে, এলিজাবেথ সমাজে মেয়েদের দুরবস্থার কথা জানতে পারেন। আইনের বই ব্ল্যাকস্টোন তিনি মন দিয়ে পড়েন। এই বইটি পড়ে তিনি বুঝতে পারেন, বিবাহ বন্ধনের ফলে স্বামী-স্ত্রী আইনত একটি সত্তায় পরিণত হয়। স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে চলতে হয়, মহিলাদের স্বাধীন সত্তা বলে কিছু থাকে না। এলিজাবেথের স্বামী দাসত্বপ্রথা উচ্ছেদের একজন সমর্থক ছিলেন। এলিজাবেথ একবার তাঁর স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে অনুষ্ঠিত দাসত্বপ্রথা বিলোপ সাধনের একটি সম্মেলনে যান। সেখানে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করেন সেই সম্মেলনে মেয়েদের কোনও স্থান নেই! এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত কোয়েকার প্রচারক লুক্রেসিয়া মট। এই দুজন নারীর পক্ষে সেদিনের সম্মেলনের বৈষম্য মেনে নেওয়া কষ্টকর হয়েছিল। এই অপমান তাদেরকে মহৎ এক কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল। নারীর অধিকার নিয়ে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। ১৮৪০ সালের জুলাই মাসে তাঁরা সেনেকা ফলস গ্রামে একটি সম্মেলন করেন। মাত্র দুশো জন সাহসী নারী ও পুরুষ উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সেই সম্মেলনে এলিজাবেথ 'নারীর অধিকার' নিয়ে একটি বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি জানান, আমাদের সামজিক জীবনে অনেক সমস্যা রয়েছে, আমাদের রাজনৈতিক অধিকার নেই! পুরুষদের মতো আমরা আইনসভায় আবেদন করতে পারিনা। আমরা স্বাধীন হতে চাই। তিনি এই বক্তৃতায় মূলত
ক) স্বাধীনতা খ) সাম্যতা গ) মর্যাদা ঘ) ভোটাধিকার ঙ) সমানাধিকার কথা বলেছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় তার বক্তৃতায় জানিয়েছিলেন— নারীকে তার চিরন্তন অধিকার থেকে কিছুতেই কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না। নারীর কণ্ঠে আজ তাই একটি কথাই সোচ্চার হয়ে উঠেছে—'অধিকার।'
নারীদের ভোটাধিকারের দাবিতে সুজান বি. অ্যান্থনি সোচ্চার হয়েছিলেন। ১৮৭৩ সালে সুজান ঐতিহাসিক এই বক্তৃতাটি প্রদান করেন—
কেবল পুরুষ নয়
সুজান বি. অ্যান্থনি
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে সুজান বি. অ্যান্থনি বেড়ে উঠেছেন। নিউ ইয়র্কের রচেস্টারে তিনি শিক্ষকতা করতেন। সেইসময় তিনি অবাক হয়ে যান একটি বিষয় লক্ষ্য করে। পুরুষ শিক্ষকরা প্রতি মাসে ১০ ডলার আয় করেন। অপরদিকে নারীদের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২ দশমিক ৫০ ডলার। সেই সময় থেকে সুজান নারীর অধিকার নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠেন। তিনি ১৮৫৩ সালে উইমেন্স প্রোপার্টি রাইট বা নারীর সম্পত্তির অধিকার নিয়ে একটি ক্যাম্পেইন করেন।
সুজান বুঝতে পেরেছিলেন, নারীদের ব্যাপারে শাসকরা কখনই সচেতন হবেন না। যদি নারীদের ভোটাধিকার প্রচলন হয়, তবেই শাসকরা নারীদের প্রতি নজর দেবেন।সেই কারণে নিজের এই ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে, রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি ও সম্মান পেতে নারীদের ভোটাধিকার নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। তিনি ১৮৬৯ সালে জাতীয় নারী ভোটাধিকার সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭২ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিয়ম অমান্য করে সুজান এবং তাঁর তিন বোন প্রথম নারী হিসেবে ভোট দেন। এর ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে তাকে ১০০ ডলার জরিমানা করা হলে তিনি জরিমানা দিতে অস্বীকার করেন। ১৮৭৩ সালে তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমি শুধু আমার অধিকার প্রয়োগ করেছি।’ সেই বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র পুরুষেরা যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেনি, আমরা সমস্ত মানুষ মিলে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি। শুধুমাত্র অর্ধেক জনগোষ্ঠী কিংবা অর্ধেক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। নারী-পুরুষ সকলের জন্য গড়ে তুলেছি।’ প্রায় চার দশক পর সুজানের ভোটাধিকারের দাবি সফল হয়। ১৯২০ সালের ২ নভেম্বর মার্কিন নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি ভোট দেওয়ার অধিকার পান। সেই বছর প্রায় আট মিলিয়ন নারী ভোট দেন। এই ভোটাধিকার সংশোধনী নামকরণ করা হয়েছে সুজান বি. অ্যান্থনি সংশোধনী।
১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নিউ ইয়র্কের সুতো কারোখানার প্রায় পনেরো হাজার নারী শ্রমিক মজুরি বৈষম্য, কাজের সময় নির্ধারণ, কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ পরিবেশের প্রতিবাদ করে, রাস্তায় নামেন। সেই প্রতিবাদ মিছিলে নির্মম ভাবে সরকার বাহিনী অত্যাচার চালান। ১৯১০ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট ওমেন্স কনফারেন্স’-এ জার্মানি সমাজতান্ত্রিক কর্মী ক্লারা জেটকিন ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পালন করার প্রস্তাব দেন।
১৯৭৫ সালে, রাষ্ট্রসঙ্ঘ ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে ঘোষণা করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সংগ্রামী নারীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে আস্তে আস্তে নারীর অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্লাট ওয়াক, মি টু মুভমেন্ট করে নারীরা পুরো দুনিয়াকে বুঝিয়ে দিয়েছে চুপ করে মুখ বুঝে অত্যাচার সহ্য করার দিন শেষ হতে চলেছে!
১৯২৯ সালে ভারতে মহিলা ভোটাধিকার প্রচলন হয়। তবে এই ভোটাধিকারের সঙ্গে কয়েকটি শর্ত আরোপিত ছিল— বিবাহিত নারী ভোট দিতে পারবেন, সম্পত্তির মালিকানা থাকতে হবে, শিক্ষিত হতে হবে। ১৯৫০ সাল থেকে সকল নারীরা ভোটাধিকার পান। ভারতে ‘গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধ আইন’ ও ‘হিন্দু মহিলাদের সম্পত্তির সম উত্তরাধিকার আইন’ ২০০৫ সালে প্রচলিত হয়। ২০১৩ সালে কর্মক্ষেত্রে ‘যৌন হয়রানি রোধ’ আইন লাগু হয়।
প্রত্যেক বছর বিভিন্ন থিমে নারীদিবস উদযাপন করা হয়। এই বছরের থিম ছিল- Women in leadership: an equal future in a COVID 19 World. এই থিমের উদ্দেশ্য মহিলাদের চেষ্টাকে গুরুত্ব দেওয়া। কোভিডের সময় নারীরা পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সেবিকা সবাই তাদের নিজস্ব ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। রাষ্ট্রসংঘের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে— সারা বিশ্ব জুড়ে প্রথম সারিতে কাজ করা নারীরা ১১ শতাংশ হারে কম বেতন পাচ্ছেন। বিশ্বে কেবলমাত্র তিনটি দেশের সংসদে ৫০ শতাংশ নারী রয়েছেন। ২২টি রাষ্ট্রে প্রধান পদে নারীরা নিযুক্ত আছেন। ১১৯ টি দেশে নারীরা রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্ব পাননি। রাষ্ট্রসংঘ হতাশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন— বর্তমান পরিস্থিতিতে উন্নয়নের হার, লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয় দেখে মনে হচ্ছে ২০৬৩ সালের আগে সংসদে নিজের আসন নারীরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন না। ২০২১ সালের ইউনাইটেড নেশনস ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম থেকে জানা গিয়েছে, ৪৩.৫ কোটি নারীরা দিনে ১৩৫ টাকার কম রোজগার করছেন। করোনার জন্য ৪.৭ কোটি নারী দারিদ্রের শিকার হয়েছেন। পুরুষদের তুলনায় নারীদের চাকরি ১৯ শতাংশ বেশী ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশ্ব ইকনমিক ফোরাম অনুযায়ী, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ নারী কাজ করেন, কিন্তু বিশ্বের ২৪.২ শতাংশ স্থানে একজন নারী স্বাস্থ্যমন্ত্রী হতে পারেন। (তথ্যসূত্রঃ হিন্দুস্থান টাইমস, ৭/৩/২০২১) কোভিড পরবর্তী সময়ে নারীদের উপরে যৌন নির্যাতন বেড়ে গেছে, গার্হস্থ্য হিংসা বেড়েছে। গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে— নারী আর পুরুষের মধ্যে গত ২৫ বছরে যতটুকু সমতা নিয়ে এসেছিল তা ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক গবেষণা আরো ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছে— আগামী এক শতাব্দীতে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পূর্ণ সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে না!
নারী পুরুষের বৈষম্য সৃষ্টি করতে নারী দিবস উদযাপন করা হয় না। নারীর প্রতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় নির্যাতন, পাশবিক আচরণ, অবদমনের প্রতিবাদ হিসাবে নারী দিবস উদযাপন করা হয়। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস, নারীর অধিকার আদায়ের ইতিহাসকে সম্মান জানানোর জন্য নারী দিবস উদযাপন করা হয়। নারী দিবসের প্রয়োজন আছে। কারণ যতদিন ঘরে বাইরে বৈষম্য চলবে, ঘরে বাইরে মানসিক-শারীরিক নির্যাতন চলবে, সাইবার বুলিং চলবে, ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, সফল নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, নিজের প্রাপ্য অধিকারের দাবিতে লড়তে হবে, ধর্মের জুজু দেখিয়ে পুত্র-কন্যার সম্পত্তি বণ্টন হবে ততদিন বিপ্লব চলবে। ন্যাকামি করে মুখ বেঁকিয়ে শিবের গীত গেয়ে দিন কাটানোর পালা এইবেলা শেষ করে, নেটফ্লিক্সিং শিকেয় তুলে, মাথার ফাঁপা ঘিলু যদি অবশিষ্ট থাকে তাতে ভালো করে শান দিয়ে সত্বর নারীর অধিকার, নারী বিপ্লব নিয়ে চর্চা শুরু করে দিন, জ্ঞানের পরিধি বিস্তার করুন, নইলে অগত্যা আবার পাছে কেউ আওড়িয়ে ওঠে—
‘আয় তোর মুণ্ডুটা দেখি, আয় দেখি ‘ফুটোস্কোপ’ দিয়ে,
দেখি কত ভেজালের মেকি আছে তোর মগজের ঘিয়ে। (বিজ্ঞান শিক্ষা, সুকুমার রায়)
লেখক: কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক
0 Comments
Post Comment