- 23 February, 2021
- 0 Comment(s)
- 548 view(s)
- লিখেছেন : শতরূপা সিংহ
লকডাউনের পর থেকে ত্রিনয়নার কেরিয়ারের গ্রাফটা একেবারে ধসে পড়েছে। তার সৌভাগ্যের চাকা এতদিন পর্যন্ত রাস্তার মাঝে কখনো দাঁড়িয়ে যায়নি কিন্তু করনার ছোবলে সে এখন এতটাই কাবু হয়ে গেছে যে আর এক পাও নড়তে পারছে না। ‘রিয়েল ডান্সার ২০১৭’ রিয়েলিটি শো-এর ফার্স্ট রানার অফ-এর শিরোপা পাওয়ার পর থেকে নৃত্যশিল্পী হিসাবে ত্রিনয়নার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাংলা জুড়ে। এখন প্রায় দশ মাস ঘরে বসে, হাতে কোনো প্রোগ্রাম নেই। উৎসব-অনুষ্ঠান সব কিছুই যেন জ্বর-বিকার গ্রস্থ রোগীর মতো হাঁটু গেঁড়ে বসে ঝিমোচ্ছে। মাঝেমধ্যে সরকারি নিয়মের শক্ত আগল একটু হালকা হতেই যাও বা আশার আলো দেখা যায় তারপর আবার যেই কে সেই। ঘরে বসে থেকে লাইভ পারফরম্যান্স করার কনফিডেন্সও তার ক্ষয়ে যাচ্ছে অল্প অল্প করে। শিল্পের ইতিহাসে এ যেন এক মাৎস্যন্যায়ের যুগ। যেটুকুও সুযোগ আসে তাকেও তাবড় তাবড় শিল্পীরা রইরই করে গিলতে ছুটে আসে আর ছোটোখাটো শিল্পীদের হাত ওঠে মাথায়। ত্রিনয়নার ফ্যান্সরা হয়তো ভেবে নিয়েছেন যে, সে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছে কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বিষয়টি ঘটেছে ঠিক তার উল্টো। শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফ্যান্সদের সামনে আসার সুযোগটাই সে পায়নি। দিন দিন শিল্পীমহলেও যেন পপুলেশন বেড়েই চলেছে। ত্রিনয়না তার নাচকে পাগলের মতো ভালোবাসে। মুম্বইয়ে খ্যাতি অর্জনের স্বপ্ন সত্যি না হওয়া পর্যন্ত মনের ভিতরকার এই জেদের আগুন কোনোদিন নিভবে না। তাই হাল ছাড়েনি সে, নিজে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে নিজের নাচের কিছু ভিডিও আপলোডও করেছে। লকডাউনে ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম ইউটিউবে অনেক ফলোয়ারস্ও বেড়েছে তার। এক্ষেত্রে তিন বছর ব্যাপি বড় বড় ডান্স কোরিওগ্রাফারদের সান্নিধ্য লাভের জমানো পুঁজিই তার একমাত্র ভরসা। এই দুর্দিনের আরও একটি সহায় তার আছে অবশ্য, তার বন্ধু সুমন্ত। সুমন্তের সাথে ত্রিনয়নার পরিচয় হয় ‘রিয়েল ডান্সার’-এর মঞ্চে উঠেই। তারপর থেকে দুজনের বন্ধুত্বটা ধীরে ধীরে গভীর হয়ে ওঠে। প্রতিদিনের মতো আজও সুমন্তের ফোন এল ত্রিনয়নার কাছে। ফোন ধরে ত্রিনয়না বুঝতে পারলো সুমন্ত অন্যদিনের চেয়ে আজ একটু বেশি উত্তেজিত। সুমন্ত বললো, ‘তৃণা শোনো তোমার জন্য একটা ভালো খবর আছে।’
—‘কোনো প্রোগ্রামের খবর পেয়েছো অথবা কোনো সোর্স?’
—‘হ্যাঁ একটা ভালো অপারচুনিটি এসেছে। তোমার পক্ষে সুইটেবল্। রুকু দিদির এক বন্ধুর ওয়েডিং পার্টিতে পারফর্ম করতে হবে।’
—‘আমার সময় হবে না। করতে পারবো না।’
—‘আরে যা তা প্রোগ্রাম নয়। ‘হটলুক’ কোম্পানির ম্যানেজারের মেয়ের ওয়েডিং পার্টি। বহু কষ্টে তোমাকে একটা সুযোগ করে দিয়েছি। না নিলে পুরো মিস্।’
—‘সত্যি নাকি?’
—‘নয় তো কি, নিজে গিয়েই যাচাই করে দেখে নিও। অনেক ফেমাস আর্টিস্টদের সাথে পারফর্ম করার সুযোগ পাবে। তোমার ফেভারিট সিঙ্গার রোহিত শেট্টির আসার কথাও শুনেছিলাম মনে হয়। যদিও বা আমি এ বিষয়ে পুরো সিওর নই। কাল তুমি বাড়ি থাকবে তো? আমি সাড়ে বারোটা নাগাদ তোমার বাড়ি গিয়ে বাকিটা ডিটেলে জানাবো।’
ত্রিনয়না সুমন্তকে আর কিছু এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেল না। পরের দিন ঠিক দুপুর সাড়ে বারোটায় ত্রিনয়নার বাড়িতে সুমন্ত এসে উপস্থিত হল। ত্রিনয়না তখন সবে স্নান সেরে বাথরুম থেকে বেরিয়েছে। সুমন্তের বসবার সময় ছিল না। সে ত্রিনয়নাকে দেখেই প্রোগ্রামের গোটা ব্যাপারটা গুছিয়ে বলতে আরম্ভ করলো—‘স্থান লেকটাউনের ড্রিমল্যান্ড রিসর্ট, সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টার মধ্যে একেবারে রেডি হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতে হবে, প্রোগ্রাম শুরু হবে সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে, তোমার সিংগেল ডান্স পারফরম্যান্স, নেক্সট বুধবারই প্রোগ্রাম।’
ত্রিনয়নাকে একটু উত্তেজিত করে তোলার জন্য সুমন্ত এর সঙ্গে জুড়ে দিল, ‘রোহিত শেট্টির আসার চান্স নাইনটি নাইন পয়েন্ট নাইন পার্সেন্ট।’
ফেভারিট সিঙ্গারের আসার কথা শোনার পর থেকে ত্রিনয়না এই প্রোগ্রামটার ব্যাপারে একটু বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। প্রোগ্রামের দিন এগিয়ে আসতেই ত্রিনয়নার টেনশনও বাড়তে আরম্ভ করলো। সুমন্ত এবং ত্রিনয়না উভয়েই এতদিন নিজেদের কেরিয়ারের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতার প্রকাশ দেখিয়েছে। ওদের দুজনের সম্পর্কটার কথা দুই পক্ষের পরিবারের সকলেই জানেন। ইতিমধ্যে দুই পরিবারের মধ্যে একটা সুসম্পর্কও স্থাপিত হয়ে গেছে প্রায়। কিন্তু ত্রিনয়না সুমন্তের সাথে বিয়ের প্রস্তাবে সহজে রাজি হতে পারছে না। ত্রিনয়নার মনের কোনো এক অজ্ঞাত গভীর স্থানে এই বাধার মূল কারনটি হয়তো লুকিয়ে আছে। সুমন্তের ওর প্রতি এই অগাধ পক্ষপাত প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলেই মনে হয়। তবুও সুমন্তকে বিশ্বাস করা ওর অভ্যাস তাই এবারেও অবিশ্বাস করলো না।
সুমন্তের প্রতিটি কথায় সত্যি। অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ত্রিনয়নাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে প্রোগ্রামের জন্য এবং রিহার্সালের জন্য অনুরোধও করেছে। সেই সপ্তাহেই ত্রিনয়না রিহার্সাল দিয়ে এসেছে রিসর্টের সামনের গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা স্টেজটার ওপর। মঙ্গলবার রাতে ত্রিনয়নার মা ওর ঘরে এসে বললেন, ‘তৃণা এই প্রোগ্রামটাতে তুই কি সত্যিই অ্যাটেন্ড করবি?’
—‘কেন বলো তো মা তোমার কি কিছুতে খটকা লাগছে?’
—‘না সেটা না। তোর বন্ধু, তোর প্রোগ্রাম, তোর ব্যাপার কিন্তু তবুও একটু সাবধানে চলিস। এক লাফে গাছে ওঠার চেষ্টা করলে মুখ থুবড়ে পড়ার সম্ভাবনাটাও তত বেড়ে যায়।’
—‘সুমন্ত যখন এত পীড়াপীড়ি করছে তখন একবার গিয়েই দেখবো কি হয়।’
বুধবার ত্রিনয়না অ্যাপস্ ক্যাবে চড়ে গ্রাউন্ডে পৌঁছে গেল সাড়ে ছ’টার কিছু আগেই। পার্টি অল্প অল্প করে জমে উঠছে। নিমন্ত্রিত বিশেষ অতিথিরা কেউ কেউ এসে উপস্থিত হয়েছেন। রোহিত শেট্টির আসার কথা সেই রাত ন’টায়। তার আগে ত্রিনয়নাদের ছোটোখাটো প্রোগ্রামগুলো সারা হয়ে যাবে। বর-বধূ বিয়ের সমস্ত নিয়ম-কানুন পালন করছে রিসর্টের ভিতর। সন্ধ্যে লগ্নেই বিয়ে। আলোর রোশনাইয়ে চোখ ঝলসে যাওয়ার উপক্রম। গাড়ি থেকে নেমে ত্রিনয়নার কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হতে লাগলো। অচেনা পরিবেশে মনটাকে শক্ত করে নিল সে। গ্রাউন্ডের একটা দিকে বসেছে অনেক রকমের স্ন্যাকস্ হার্ডড্রিঙ্কস্ সফটড্রিঙ্কসের বুফে। তার পাশেই করা হয়েছে অনুষ্ঠানের স্টেজ। গোটা মাঠটা সুন্দর করে সাজানো ফুল আর রঙিন কাপড় দিয়ে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ যেন ত্রিনয়নার কাঁধে হাত রাখলো। চমকে উঠে পিছন ঘুরতেই দেখতে পেল সুমন্ত এসেছে। তার সাথে আছে ওরই সমবয়সি কিংবা বয়সে সামান্য বড় একটা ছেলে। সামান্য একটু হেসে সুমন্ত বললো, ‘তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিই, এ আমার দূরসম্পর্কের এক কাকার ছেলে। বহুদিন পর দেখা হল তাই তোমার সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে এলাম।’ ছেলেটাকে সুমন্ত বললো, ‘মন্টু, দিস ইজ তৃণা, যার কথা তোকে বলছিলাম।’
ছেলেটা হ্যান্ডশেকের ভঙ্গিমায় হাত বাড়িয়ে দিল ত্রিনয়নার দিকে। একটু সরে এসে ত্রিনয়না নমস্কার করেই তাকে অভিবাদন জানালো। ছেলেটা একটু সরতেই ত্রিনয়না সুমন্তকে বললো, ‘তুমি নিজে এই অপারচুনিটিটা না নিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলে কেন?’
—‘কেন ছাড়লাম সেটা যখন এই তিন বছরেও বোঝোনি তখন আর কোনোদিন বুঝবেও না। স্ন্যাকস্ খেয়েছো কিছু?’
—‘না, আমি শুধু প্রোগ্রাম করবো আর চলে যাবো। কিন্তু তোমারও তো হাতে এখন কিছু টাকা পয়সার দরকার ছিল।’
—‘তোমার প্রোগ্রাম অনেক দেরি আছে। মন্টুর বাড়ি কাছেই, চলো আমরা সেখান থেকে পাঁচ মিনিট ঘুরে আসি।’
—‘তুমি যাও আমি যাবো না।’
কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর সুমন্ত একবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে ওর কপালে। ভেতরটা যেন থেকে থেকেই কেমন তোলপাড় করে উঠছে। সুমন্তের ভাবভঙ্গি দেখে ত্রিনয়নার কিছু সন্দেহ হল। সুমন্ত দেখলো গ্রাউন্ডের একটা কোণ থেকে মন্টু এগিয়ে আসছে ওদেরই দিকে। মন্টু এসে সুমন্তের হাতে ধরিয়ে দিল ক্লোরোফর্ম স্প্রে করা রুমালটা। চোখের ইশারা পাওয়া মাত্র সুমন্ত ত্রিনয়নার হাত দুটো পিছন থেকে চেপে ধরে নাকের সামনে চেপে ধরতে গেল রুমালটাকে। টেনশনে সুমন্তের হাত তখন ঘামে ভেজা। ত্রিনয়নার হাত দুটো জোর করে ছাড়িয়ে নিতে অসুবিধা হল না। মন্টু ত্রিনয়নাকে জাপটে ধরার আগেই সে সুমন্তের পেটে কনুই দিয়ে একটা গুঁতো মেরে প্রাণপণে ছুটে পালিয়ে গেল সেখান থেকে। সরু রাস্তাটা পার করে ত্রিনয়না বড় হাইওয়েতে উঠেও তার দৌড় থামালো না। যতক্ষণ না পর্যন্ত সে বাড়িতে পৌঁছনোর জন্য কোনো গাড়ি পেল ততক্ষণ বাড়ির দিকে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়াতে লাগলো। মন্টুর সাথে হয়তো আরও দু-তিনটে ছেলে ধাওয়া করেছিল ওকে সেটা পিছু না ফিরেই ত্রিনয়না আন্দাজ করতে পেরেছে। শেষমেশ মাঝরাস্তা থেকে একটা ট্যাক্সি পেয়ে যাওয়ায় ত্রিনয়না সেদিন ভাগ্যের জোরে বেঁচে যায়। বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার কথা ভেবে ত্রিনয়না সরাসরি মুখ ফুটে কিছু না বললেও তার উদ্বেগ মায়ের কাছে চাপা থাকলো না। রাতের বেলা ত্রিনয়নার শোবার ঘরে তার মা প্রবেশ করতেই সে দু’হাত দিয়ে চেপে জড়িয়ে ধরলো মাকে। মায়ের নরম গরম স্পর্শ ভুলিয়ে দিচ্ছে সমস্ত ক্লান্তির কথা। মা বললেন, ‘কি হয়েছে আমাকে বল, কিছু লুকিয়ে যাস না।’
মায়ের থেকে ত্রিনয়না ঘটনাটি আর লুকাতে পারলো না। বলে ফেললো সমস্ত কিছু। ত্রিনয়নার বাবার কানে কথাটি যেতেই তিনি একেবারে অগ্নিমূর্তি ধারণ করলেন। এমনকি সুমন্তের বাবা-মায়ের কান পর্যন্তও গড়িয়ে গেল কথাটা।
সেদিন ওয়েডিং পার্টি থেকে ভিতরে এবং বাইরে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিল সুমন্ত। সেদিন রাত থেকে বাড়ির কারোর সাথে আর কোনো কথা বলেনি। ঘরের সমস্ত দরজা-জানলা বন্ধ করে দু’হাতের তালুর ভেতর মুখ গুঁজে পড়ে থেকে থেকে ফুপিয়ে কেঁদে উঠেছিল। কথাটা সকলের জানাজানি হয়ে যেতেই সুমন্তের কাটা ঘায়ের ওপর পড়লো যেন নুনের ছিটে। তারই সামনে বাবা তার মাকে দোষারোপ করে বলেছিলেন, ‘এ কেমন একটা অমানুষকে জন্ম দিয়েছো তুমি? সমাজে মুখ দেখানোর মতো আর কোনো উপায় রইল না। বাড়িতে যদি ওঁরা পুলিশ নিয়ে আসতেন তখন কি করতে? এই ভাবে লোকের কাছে বেইজ্জত হতে হবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।’
মা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, ‘বল্ তুই কেন করলি এমন কাজ? আমি কি তোকে মেয়েদের সম্মান করতে শেখাইনি? আমি কি করে জানবো বলো যে ও কয়েকটা টাকার জন্য এই রকম একটা জঘন্য রাস্তা বেছে নেবে। সবটাই হয়তো আমারই দোষ, আমিই ওকে ঠিক করে মানুষ করতে পারিনি। তোর মতো ছেলে থাকার থেকে না থাকা অনেক ভালো ছিল।’
সুমন্ত বুঝতে পারছে তার কৃতকর্মের জন্য সে সবকিছু ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে। নিজের প্রেম, পরিবার, বিশ্বাস, সম্মান, কেরিয়ার সব কিছু। বাবা-মায়ের সঙ্গে একসাথে বসে রাতের খাবার খাওয়ার সাহসও তার নেই। সুমন্ত ঠিক করেছে আজ রাতেই ও নিজেকে পুরোপুরি শেষ করে ফেলবে। চলে যাবে সকলকে ছেড়ে অনেক দূরে। রাতের খাবারটা ঘরে নিয়ে এসে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিল সুমন্ত। মায়ের শাড়িটাকে পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে আটকে তৈরি করলো একটা ফাঁস। নিজের অপরাধের শাস্তি সে এখুনি নিজেকে দিতে চায়। একটা টুল বিছানার ওপর রেখে তার উপর দাঁড়াতেই সুমন্তের ফোন বেজে উঠলো। ত্রিনয়না ফোন করছে। সুমন্তের মায়ের পাওয়া ফোন থেকে কিছু একটা আন্দাজ করেছিল ত্রিনয়না। ধড়ফড় করে নিচে নেমে এসে ফোনটা রিসিভ করলো সুমন্ত। গম্ভীর গলায় ত্রিনয়না বলে উঠলো, ‘সুইসাইড করতে যাচ্ছো? এত সহজে অপরাধ থেকে মুক্তি পেতে চাও? ঘৃণিত মানুষকে এত সহজে মুক্তি দেওয়া যাবে না। ’
—‘কি শাস্তি দিতে চাও বলো।’
—‘চরম অন্যায় করেছো সেটা বুঝতে পারলে নিজেকে সংশোধন করো।’
—‘যা হারিয়েছি তার কিছুই হয়তো আর কোনোদিন ফিরে পাবো না।’
—‘হারিয়ে যাওয়া সম্পদ সব সময় ফিরে পাওয়া যায় না। কেনো হারালে এই গ্লানি নিয়ে বাঁচো। আর শুধরানোর চেষ্টা করো।’
—‘কি করতে হবে?’
—‘সভ্যতার হোমাগ্নিতে আহুতি দিতে হবে কলুষিত চিন্তাধারার। নিজেকেই দোষ কাটিয়ে শুদ্ধ হতে হবে সারা জীবনের মতো। বাইরের কারোর কথায় কিছুই হবে না যদি ভিতর থেকে বদলের জন্য কোনো বিপ্লব না জাগে। তবেই পূর্ণ হবে তোমার প্রায়শ্চিত্ত।’
ছবি : কম্পিউটার গ্রাফিক্স
লেখক : কলেজ ছাত্রী, গল্পলেখক।
0 Comments
Post Comment