মায়া অ্যাঞ্জেলো

  • 29 May, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 72 view(s)
  • লিখেছেন : শাম্মা বিশ্বাস
মায়া অ্যাঞ্জেলো ২৮ মে ২০১৪ সালে প্রয়াত হন। লেখিকা, কবি, নৃত্যশিল্পী, গায়িকা এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী ছিলেন তিনি। ১৯২৮ সালের ৪ এপ্রিল অ্যাঞ্জেলো তার প্রথম জীবনের উপর একটি আত্মজীবনী "আই নো হোয়াই দ্য কেজড বার্ড সিংস" লেখেন। শৈশবের মানসিক আঘাত এবং বর্ণবাদের মধ্যে তার ব্যক্তিগত শক্তির গল্প পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় হয় এবং জাতীয় গ্রন্থ পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়।

মায়া অ্যাঞ্জেলো (জন্ম ৪ এপ্রিল ১৯২৮-- মৃত্যু ২৮ মে ২০১৪) ছিলেন একজন লেখিকা, কবি, নৃত্যশিল্পী, গায়িকা এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী। তিনি ১৯২৮ সালের ৪ এপ্রিল সেইন্ট লুইস মিসৌরিতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে তাঁর নাম মার্গারেট অ্যানি জনসন থাকলেও তাঁর ভাই বেইলী তাঁকে "মায়া" বলে ডাকতেন। তাঁর বাবা-মায়ের অস্থির দাম্পত্য জীবন এবং পরবর্তী বিবাহবিচ্ছেদের কারণে, অ্যাঞ্জেলো অল্প বয়সেই ভাইয়ের সঙ্গে আরকানসাসের স্ট্যাম্পসে তার ঠাকুরমার কাছে চলে যান। এরপর চার বছর বাদে তাঁর বাবা হঠাৎই তাদের মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেখানে অ্যাঞ্জেলো তার মায়ের প্রেমিক ফ্রিম্যান দ্বারা ধর্ষিত হন। পরে ফ্রিম্যানকে জেলে পাঠানো হয় এবং জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি খুন হন। এই ঘটনার পর প্রায় চারবছর অ্যাঞ্জেলো মৌনব্রত ধারণ করেন। তিনি উল্লেখ করেছেন,"আমার বিশ্বাস, আমার কথার জন্য ফ্রিম্যান খুন হয়েছেন; আমি তাকে খুন করেছি, কারণ আমি তার নাম বলেছি। এরপর ভাবলাম আমার আর কথা বলাই উচিত নয় কারণ আমার কথার জন্য কেউ মারা যেতে পারে।” অ্যাঞ্জেলোর জীবনীকার মার্সিয়া অ্যান গিলেস্পি ও তার সহযোগীদের মতে, সেই মৌনব্রত ধারণের দিনগুলোতেই অ্যাঞ্জেলোর অসাধারণ স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটে। সেই সময় বই তথা সাহিত্যের প্রতি অ্যাঞ্জেলোর ভালবাসা জন্ম নেয়। এরপর তিনি আবার তার ঠাকুরমার কাছে ফিরে যান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আবার তিনি মায়ের কাছে যান। তখন তাঁর মা ক্যালিফোর্নিয়ায় ছিলেন, সেখানে অ্যাঞ্জেলো ক্যালিফোর্নিয়া লেবার স্কুলে ভর্তি হন। ষোল বছর বয়সে তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে সান ফ্রান্সিস্কোতে ক্যাবল কার কন্ডাক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ সালে তিনি হাই স্কুল থেকে স্নাতক হন এবং তাঁর একমাত্র সন্তান ক্লাইড বেইলি জনসনের (গাই )জন্ম দেন। অ্যাঞ্জেলো ১৯৫১ সালে টোস অ্যাঞ্জেলোস নামে একজনকে বিয়ে করেন, যিনি ছিলেন একজন গ্রিক ইলেকট্রেশিয়ান, প্রাক্তন নাবিক এবং অ্যাসপিরিং মিউজিসিয়ান। এই সময় তিনি আধুনিক নৃত্যের তালিম নেয়া শুরু করেন।

 

১৯৫৪ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের পর অ্যাঞ্জেলো একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে পেশা শুরু করেন। অ্যাঞ্জেলো একজন গায়িকা এবং নৃত্যশিল্পী হিসেবে তার প্রতিভার জন্যও বিখ্যাত ছিলেন, বিশেষ করে ক্যালিপসো এবং ক্যাবারে শৈলীতে। এরপর অ্যাঞ্জেলো ঘানা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন এবং প্রবাসী আফ্রিকান-আমেরিকানদের সংগঠনের সাথে যুক্ত হন।  তিনি দ্যা আফ্রিকান রিভিউ পত্রিকার ফিচার সম্পাদক ও গার্ডিয়ান টাইমসে ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে কাজ করেন। লেখক ও প্রচার কাজের জন্য যুক্ত হন রেডিও ঘানাতে এবং অভিনয় করেন ঘানার জাতীয় থিয়েটারে। ১৯৬৯ সালে, অ্যাঞ্জেলো তার প্রথম জীবনের উপর একটি আত্মজীবনী "আই নো হোয়াই দ্য কেজড বার্ড সিংস" লেখেন। শৈশবের মানসিক আঘাত এবং বর্ণবাদের মধ্যে তার ব্যক্তিগত শক্তির গল্প পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় হয় এবং জাতীয় গ্রন্থ পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়।  এরপর অ্যাঞ্জেলো আরও ছ’টি  আত্মজীবনী প্রকাশ করেন, তাঁর শেষ আত্মজীবনী বই হল "মম অ্যান্ড মি অ্যান্ড মম"। অ্যাঞ্জেলোর লেখা চিত্রনাট্য অবলম্বনে, একটি সুইডিস সিনেমা কোম্পানি দ্বারা প্রযোজিত সিনেমা জর্জিয়া সুইডেনে মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। এটি ছিল কোন কৃষ্ণাঙ্গ নারী দ্বারা লিখিত প্রথম চিত্রনাট্য। ১৯৯৩ সালে বিল ক্লিনটনের প্রথম অভিষেক অনুষ্ঠানে অ্যাঞ্জেলো তার কবিতা "অন দ্যা পালস অফ মর্নিং" আবৃত্তি করেন। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া ডাউন ইন দ্যা ডেল্টা সিনেমাটির মধ্য দিয়ে অ্যাঞ্জেলো প্রথম তাঁর সিনেমা পরিচালনা করেন। অ্যাঞ্জেলো ২০০৮ সালের "প্রেসিডেন্টশিয়াল প্রাইমেরীসে" ডেমোক্রেট দলের হয়ে প্রচারে নেমেছিলেন এবং হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করেছিলেন। অ্যাঞ্জেলো তাঁর লেখা সাতটি আত্মজীবনীর জন্য বেশি পরিচিত হলেও তিনি খুব ভালো এবং সফল একজন কবিও ছিলেন। তাকে বলা হতো “দ্যা ব্ল্যাক ওমেন’স পোয়েট লওরিয়েট”।

 

অ্যাঞ্জেলো পঞ্চাশটিরও অধিক সম্মানসূচক ডিগ্রিতে ভূষিত হন। তাঁর “জাস্ট গিভ মি এ কুল ড্রিংক অফ ওয়াটার ফর আই ডাই” কাব্যটি পুলিৎজার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। "লুক এওয়ে" নাটকে অভিনয়ের জন্য ১৯৭৩ সালে তিনি টনি অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তিনটি গ্র্যামী অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন "স্পোকেন ওয়ার্ড" অ্যালবামের জন্য। তিনি দুটি প্রেসিডেন্টশিয়াল কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ১৯৯৪ সালে স্পিনগার্ন পদক, ২০০০ সালে জাতীয় শিল্পী পদক ও ২০১১ সালে রাষ্ট্রপতি পদক লাভ করেন।

 

অ্যাঞ্জেলোর ২০১৪ সালের ২৮ মে ৮৬ বছর বয়সে নর্থ ক্যারোলিনাতে মৃত্যু ঘটে। তাঁর মৃত্যুতে ছেলে গাই বলেছেন, “তিনি কোন পাওয়া না পাওয়ার বেদনা ও কোন ধরনের ক্ষতির উপলব্ধি বোধ ছাড়াই এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।”

লেখক : সাংবাদিক, বাচিক শিল্পী 

ছবি : সংগৃহীত 

0 Comments

Post Comment