মুক্তিযোদ্ধা

  • 06 February, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 159 view(s)
  • লিখেছেন : শতরূপা সিংহ
দিদি তখন বলেছিল, ‘কাজেই মানুষের মুক্তি। তোকে তাল তাল সোনার মধ্যে যদি কোনো দিন বসিয়ে দিয়ে আসতে পারি, সেদিন বুঝবি, তোর ঠিক “রক্তকরবী”র রাজার মতোই অবস্থা হবে। যদি মনে শান্তি পেতে চাস তবে তোকেও মাঠে নামতে হবে হাওয়া খেতে। একবার কর্মক্ষেত্রে নেমে দেখ তখন উপভোগ করতে পারবি সেই আনন্দটা।

রাত এগারোটা। হেমন্তের মাঝামাঝি, এখন রাতের দিকে হালকা মেজাজে হিমেল হাওয়া বয়। পাশের ঘরে বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়েছেন সেটা অনুভব করে নিশা। ওর ঘরের জানলার পর্দাগুলো সব সরানো আছে। বন্ধ কাঁচের পাল্লার ওপাশে ঘরের ভেতরের আলো দেখে মাঝেমধ্যে একটা আধটা শ্যামাপোকা টোকা মেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছে। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয় নিশা। মাথার ওপর পাখাটা ঘুরছে দুই পয়েন্টে, ঢক ঢক আওয়াজ করে। এখন চারপাশটা বেশ নিঝুম, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন আর শঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। নিশা ভাবছে একটা মৃত্যু মানুষের জীবনকে কত রকম ভাবে বদলে দেয়। একটা সাধারণ মৃত্যু। তাতে দেশের লোকের কিছু যায় আসে না, রাজ্যের লোকেরও ঘুম ওড়ে না। কিন্তু যে মরেছে তার পরিবারের পরিবর্তনটা সকলেরই মোটামুটি চোখে পড়ে। নিশার দিদি আটকেছে। তবুও কতটুকুই বা আর কাজ করতে পেরেছে? সময়ের কাছে শেষ পর্যন্ত হেরে যেতে হল দিদিকে। সব দায়িত্ব ফেলে রেখে সে পাড়ি দিয়েছে
অজানার উদ্দেশ্যে। সেখানেও নিশ্চয় তার জন্য অন্য কোনও যুদ্ধ অপেক্ষা করছে, নিশার অন্তত তাই মনে হয়। জন্মের পূর্ব থেকে মৃত্যুর পরে মারা গেছে একবছর হল। ২৯/১০/২০২০ ঠিক বেলা ৩ টে বেজে ৫০মিনিটে আর জি কর থেকে ফোন এল দিদি মারা গেছে। পরবর্তী কোভিড জটিলতার এক সমস্যা থেকে আর
মুক্তি মেলেনি তার। সত্যিই কি মেলেনি? জীবন থেকেই তো মুক্তি পেয়ে গেল ও। নিশার দিদি ছিল একজন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট। কত কাজই না সে করে গেছে চুপিসারে, লোকচক্ষুর আড়ালে। কলেজের গুটিকয়েক বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে মেতে উঠেছিল সমাজ সেবার খেলায়। কত মেয়েকে ও বাঁচিয়েছে লকডাউনে বাল্যবিবাহের
হাত থেকে, কত মেয়ের স্কুলছুট হওয়ার পর থেকে যুদ্ধ চলে এবং তা চলবেও। এটাই স্বাভাবিক। এ যুদ্ধ মুক্তির যুদ্ধ, অধিকার প্রতিষ্ঠার, অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ। কিন্তু দিদি মারা যাওয়ার
পর থেকে সত্যিই নিশার পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্য কেমন যেন বদলে গেছে। নিশাকে দিদি কত বলেছে ওর এই সমাজ সেবার কাজে হাত লাগাতে কিন্তু নিশা ওদের দলে নাম লেখায়নি। কারণ নিশার তখন মনে হত ওকে টাকা করতে হবে অনেক টাকা। তবে তো স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটাতে পারবে। নিশা জানে পৃথিবীটা অর্থের দাস। যার অর্থ নেই তার কিচ্ছু নেই। দিদিকেও কতবার বুঝিয়েছে সেই কথা, ‘এসব সমাজ- টমাজ সেবা করে কিচ্ছু হবেনা। জীবনে কিছু করতে চাস তো কেরিয়ার তৈরি কর। টাকা উপার্জন করতে শেখ।’

 


দিদি তখন বলেছিল, ‘কাজেই মানুষের মুক্তি। তোকে তাল তাল সোনার মধ্যে যদি কোনো দিন বসিয়ে দিয়ে আসতে পারি দেখবি, তোর ঠিক “রক্তকরবী”র রাজার মতোই অবস্থা হবে। যদি মনে শান্তি পেতে চাস তবে তোকেও মাঠে নামতে হবে হাওয়া খেতে। একবার কর্মক্ষেত্রে নেমে দেখ তখন উপভোগ করতে পারবি সেই
আনন্দটা।

 

নিশা চোখের সামনে কতগুলো ছবি পরপর দেখতে পাচ্ছে।
এখন যেটা দেখছে সেটা ওর ছোটবেলা। কত ভালোই না ছিল সে দিনগুলো। কত মজা কত আনন্দ। চোখ ভরা কত স্বপ্ন, বুক ভরা কত আশা-আকাঙ্ক্ষা। কোন কিছুতেই তখন বাধাবাধি নেই, কোন সঙ্কোচ নেই। ঠিক যেন একটা বন্য হরিণ শাবকের মতোই সব কিছু কত স্বাভাবিক। খুব চঞ্চল একটা জীবন। মা-বাবাও কত ভাল ছিলেন। কিন্তু এখন, না এখন তাঁরা আর ভাল নেই। দিদির মৃত্যুর জন্য নাকি নিশার বয়সটা বাড়ার জন্য সেটা সে ঠিক জানে না। প্রতিটা দিন নিশার কাছে দুর্বিষহ বলে মনে হয়। সে কলেজে থার্ড ইয়ার পাশ করে এখন দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোর গোড়ায়। মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হতে আর কটা মাত্র দিন বাকি। তার মধ্যে বাবা নিশার পাত্র খোঁজা শুরু করে দিয়েছেন। উঠতে- বসতে, খেতে- শুতে একই গঞ্জনা, ‘এত বড় হলি এবার বিয়েটা করে ফেল। চাকরি- বাকরি কিছু তো পেলি না, কতদিন আর পড়াশোনা চালিয়ে যাবি? বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলে আর সুপাত্র মিলবে না। বুড়ো ধাড়ি হয়ে বাপের টাকায় বসে বসে খেতে লজ্জা করে
না?’

 


প্রথমত, নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে নিশা একদমই বিয়ে করতে চায় না। দ্বিতীয়ত, চাকরি কি গাছে ফলে? হাত বাড়ালেই কি তা মুঠোর মধ্যে চলে আসে? তৃতীয়ত, নিশা যদি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায় তাতে কার কী ক্ষতিটা হচ্ছে? চতুর্থত, বাবা যদি সন্তানের ভরণপোষণ নাই করতে পারেন তবে সন্তান আনলেন কেন?
যাক, এত চিন্তাতে নিশার কাজ নেই। সে এখন নিজেকে প্রায়ই ঘর বন্দি করে রাখতে চায়। ওদের বাড়ি থেকে বড় রাস্তায় যাওয়ার গলিটা ভীষণ অপরিষ্কার, চারদিকে কুকুর- বিড়ালের বিষ্ঠা ছড়ানো। মাঝেমধ্যে ধুপধাপ করে পড়ে থাকা গৃহস্থের আবর্জনার প্যাকেট। সে প্যাকেট ফেটে বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তা জুড়ে।
দুর্গন্ধে গলিতে পা ফেলা দায়। নিশার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে তার বাড়ির বাইরের পরিবেশটাও। যে ছেলেগুলোর সাথে কত ক্রিকেট খেলেছে ছোটবেলায়, তারা এখন রোয়াকে বসে আড্ডা দেয় আর নিশাকে যেতে দেখলেই পিছন থেকে শিস দেয় কিংবা কখনও গুনগুন করে ফিল্মি গান গেয়ে ওঠে। কখনও বা বিকৃত চাহনিতে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করতে থাকে। যে প্রতিবেশীদের এতদিন নিশা সম্মান করত, যাদের অনেক ভালবাসা সে কুড়িয়েছে তাদের দৃষ্টিগুলোও বড় অদ্ভুত ভাবে বদলে গেছে এখন। সে দৃষ্টির একদম শেষ তল পর্যন্ত পড়ে ফেলে নিশা, ‘এত বড় মেয়ে না বিয়ে করছে আর না কোন কাজকর্ম করে, কতদিন এভাবে বসিয়ে খাওয়াবে? এর বাবা-মা পারেও বটে।’

 


এতকিছু বুঝতে পারার ক্ষমতা নিশার ছিল না। সে এগুলো শিখেছে তার মা-বাবার কাছ থেকেই। হ্যাঁ, বাবাই তো সেদিন বলছিলেন না নিশার পাত্র ঠিক হয়ে গেছে? পাত্রটাকে নিশা চেনে পর্যন্ত না। এখন ওর চোখের সামনে আবার একটা ছবি ফুটে উঠছে- বিকট দর্শন এক পাত্র। নিশা কাঁদছে বিয়ে করবেনা বলে। মা ওকে খুব করে বোঝাচ্ছেন, ‘তোর জন্যে কি রাজপুত্তুর আসবে?’

 


নিশা দেখতে পায় যে টাকাটা পাত্রপক্ষ চেয়ে ছিল সেটাকে জোগাড় করতে বাবা হাঁসফাঁস করে এখানে ওখানে দৌড়াচ্ছেন। এর কাছে ওর কাছে হাত পাতছেন ভিখিরির মতো কিন্তু কিছুতেই জোগাড় করতে পারছেন না। কালঘাম ছুটে যাচ্ছে তাঁর। গলা অবধি ঋণের বোঝা আর তারপর, বাবার নিথর দেহ ঝুলে পড়লো ফ্যান থেকে। নিশা চমকে ওঠে। না, বাবা তো সুইসাইড করেননি, তিনি তো এখনো বেঁচে আছেন। নিশা কতবার তাঁকে বলেছে, ‘বিয়েতে পণ নেওয়া বেআইনি। তুমি এই বিয়েটা ক্যান্সেল করে দাও।’

 


বাবা বলেছিলেন, ‘হুঁ, বললেই হল? অমন সম্বন্ধ আর দ্বিতীয়টি জুটবে না। আর এখানে আইনের কথা বলে কোন লাভ নেই। আইন আইনের মত বইয়ের পাতার তলায় চাপা থাকে আর সমাজ সমাজের নিয়মে চলে। বিয়েতে পণ নেওয়াটাই প্রথাগত লোকাচার।’

 


মা চিন্তায় রাতে ঠিক মত ঘুমোতেও পারেন না। আরও একটি ছবি দেখতে পায় নিশা। শ্বশুরবাড়িতে প্রচণ্ড অত্যাচার ও গালিগালাজ  সহ্য করতে পারছে না বলে কেউ ওর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কুশ পুতুলের মত দাউ দাউ করে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে সব। না, আগুনটা ও নিজে ধরায়নি এটা একেবারে পরিষ্কার নিশার কাছে। আচ্ছা, কেন এই ছবিগুলো বারবার ভেসে উঠছে ওর সামনে? ওর তো এখনো বিয়েই হয়নি। আচ্ছা, এই পনেরো লাখের পর ওরা আর কিছু চেয়ে পাঠাবে না তো? মায়ের শরীরটা খুব রুগ্ন দেখায়। শরীরে কোন রোগ বাসা বাঁধেনি তো? কে দেখবে বাবা-মা কে ওর বিয়ে হয়ে গেলে? দিদি তো ঐ আকাশের তারা হয়ে গেছে।

 


আচ্ছা, দিদিও কি এই অস্বস্তিতে পড়েছিল নিশার মত? সে কি এই নির্মম অত্যাচারের থেকেই মুক্তি পাওয়ার কথা বলত বারবার? বোধহয় তাই আর ওদের যে ‘মুক্তিকামী’ দলটা ছিল সেটা কি দিদির চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মিলিয়ে গেল? আর দিদির বন্ধুগুলো তারাই বা কোথায় এখন? নিশা বুঝতে পারছে মাস্টার্সে পড়ার টাকা বাবা আর দেবেন না। তিনি এখন কন্যাপণের টাকা জোগাড় করতে ব্যস্ত। আবার একটা ছবি ভেসে এল নিশার চোখের সামনে। ছবিগুলো বড় অদ্ভুতুড়ে। ঘরের দেওয়াল ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে জানান দিচ্ছে এখন এগারোটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। 

 

শুনশান গলির মোড় থেকে হঠাৎই একটা কুকুর ‘ঘেউ-উ’ করে একবার মাত্র ডেকে উঠল। নিশার ইন্দ্রিয়গুলো যেন একটু একটু করে অবশ হয়ে আসছে। নিস্তব্ধ ঘরের স্তব্ধতা ভঙ্গকারী ঘড়ির আওয়াজ, পাখার শব্দ কিছুই তার কানে ঢুকছে না। চোখের সামনের পরিচিত দৃশ্যগুলো আবছা হতে হতে ধীরে ধীরে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। আর সেই ছবি গুলো ভৌতিক ভাবে নিশার চোখের সামনে কাঁচের স্লাইডারের মত একটার পর
একটা ভেসে উঠছে আবার আস্তে আস্তে সরে গিয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে। ছবিগুলির মধ্যেকার ব্যক্তিগুলি নিশার খুবই চেনা তা সত্ত্বেও তারা যেন ওর কাছে একেবারেই অপরিচিত। ইতিপূর্বে এদের ও কোনদিন দেখেনি। আর দেখতে চায়ও না। কিন্তু এবার যে ছবিটা ফুটে উঠেছে সেটা আরও ভয়ানক। নিশা
নিজেকে দেখছে ঐ ফ্যানটা থেকে ঝুলতে! দিদির প্রিয় জরির কাজ করা বেগুনি রঙের যে ওড়নাটা ছিল, সেটা ওর গলায় ফাঁস হয়ে আটকে রয়েছে। নিশার ঠাণ্ডা নিথর দেহের ভারে পাখার একটা ব্লেড একটু বেঁকে গেছে। বিছানার ওপর প্লাস্টিকের টুলটা উল্টে পড়ে আছে। ওর চোখগুলো অক্ষিকোটর থেকে যেন বেরিয়ে  আসতে চাইছে। নিশা আবারও চমকে ওঠে। সত্যিই তো কী মূল্য আছে ওর জীবনের? না লেখাপড়া করতে পেরেছে, না কোন চাকরি-বাকরি। না কোন বয়ফ্রেন্ড পাতাতে পেরেছে যে তার সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বাঁচবে আর না ই কোন সুপাত্রকে ভাগ্যের জোরে টেনে আনতে পেরেছে। কিচ্ছু পারেনি ও কিচ্ছু না। পুরোপুরি ব্যর্থ একটা জীবন। কোন স্বপ্ন, কোন আকাঙ্ক্ষাই তার পূর্ণ হয়নি। কেউ ভালবাসে না ওকে, কারোর কাছে মূল্যবান নয় ও। তাহলে নিশার বেঁচে থেকে কী লাভ? বিয়ের পরে জ্যান্ত লাশ হয়ে ঘুরে বেড়ানোর পরিবর্তে ও বরং এখনই মরে যাক। পৃথিবীর ভার কিছুটা কমুক। নিশা এবার সত্যিই গলায় দড়ি দেবে। ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বিছানার ধার ঘেঁষে ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো সে। এখন বুঝতে পারছে এই ছবিগুলো মিথ্যে নয়, ওরা বাস্তবেরই প্রতিবিম্ব। এবার এই সত্যিগুলো একে একে ঘটবে। নিশা আলমারি থেকে দিদির সেই জরির কাজ করা বেগুনি ওড়নাটা টেনে বের করে আনল। একটা ফাঁসও তৈরি করল, ঘরের কোণা থেকে প্লাস্টিকের টুলটাকে নিয়ে এসে বিছানার উপর তুলল। এবার নিজের ওঠার পালা। কিন্তু হঠাৎই একটা অজানা ভয় নিশার বুকটা চেপে ধরছে। চারপাশ থেকে একটা জমাট বাঁধা অন্ধকার আশঙ্কার মত ছুটে এসে ঘিরে ফেলছে ওকে চারিদিক থেকে। নিজের মৃত্যুটাও যে এতটা কঠিন তা জানা ছিল না নিশার। অথচ বাইরে থেকে দেখলে মরে যাওয়াটাকে কত সহজ বলেই না মনে হয়। এখন নিশার আবার মনে হচ্ছে বেঁচে থাকাটাই বোধহয় সহজ ছিল। না, আর বসে থাকলে চলবে না। চোখের জল, নাকের জল এক টানে হাত দিয়ে মুছে ফেলল নিশা। এবার একটা উপায় করতেই হবে। দিদি ঠিকই বলত, অপরের জন্য কাজ করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না, বরং নিজেকে কর্ম স্রোতে ভাসিয়ে দেওয়ার একটা অদ্ভুত উচ্ছ্বাস অনুভব করা যায়। কত কাজ করা এখনও বাকি রয়েছে নিশার। এখন কি ওর মরার মত সময় আছে? আবারও একটা ছবি চোখের সামনে দেখতে পায় নিশা। মাস্টার্সটা কমপ্লিট করেছে ও। একটা স্টুডেন্স ক্রেডিট কার্ড করে নিয়েছে। ভাল একটা বড় মাপের চাকরিও জোগাড় করে ফেলেছে নিজের চেষ্টায়। সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করে ঢেলেছে ওদের ফাউন্ডেশনটার পিছনে। নিশা অনেক বড় করেছে ‘মুক্তিকামী’কে। ওর দিদি যতটুকু করে গেছে, তার চাইতেও অনেক বড়। নিশার ভাগ্যের অমানিশা বোধহয় এবার একটু একটু করে কাটতে শুরু করেছে। আর কিছুকে তোয়াক্কা করবে না সে। নিশা ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে গিয়ে দিদির ফোনটাকে খুঁজে নিয়ে এল। দিদির ফোন থেকে ‘মুক্তিকামী’ হোয়্যাটস আপ গ্রুপটা খুলে টাইপ করে লিখল, ‘কাল তোমরা সবাই, যে যেখানেই থাক না কেন সকাল দশটার সময় কফি
হাউসে পৌঁছে যাবে। আমরা নিজেদের মধ্যে একটা মিটিং সেরে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার কাজ আরম্ভ করতে চায়।’

 


এরপর দুই লাইন স্পেস দিয়ে আবার লিখল, ‘আমি স্বর্গীয় ইশা দিদির বোন নিশা ঘোষ বলছি।’

লেখক : শিক্ষার্থী 

ছবি : সংগৃহীত

0 Comments

Post Comment