- 08 April, 2022
- 0 Comment(s)
- 406 view(s)
- লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
[কোনওকিছুকেই মনে পড়ছে না। জ্যানেট সমস্ত সময়কে পেরিয়ে এসেছে ... ওদের জন্য স্বগতোক্তি থাকুক। প্রার্থনা থাকুক, কেবল নীরবতায় ...]
লাইনে দাঁড়িয়েও যে এভাবে, এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হয় জ্যানেটের তা জানা ছিল না। এর আগে কখনও সে এভাবে লাইনে দাঁড়ায়নি। প্রয়োজন পড়েনি দাঁড়ানোর। এর আগে লাইনে দাঁড়ানো বলতে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ক্যাশ কাউন্টারগুলোতে দু’মিনিট, পাঁচ মিনিট। ক্রিসমাসের সময়ে ভিড় বেশি হতো। তাও কখনও দশ মিনিট কি পনেরো মিনিটের চেয়েও বেশি দাঁড়াতে হয়েছে বলে তো মনে পড়ে না। এখানে প্রায় একঘণ্টা হয়ে গেল। কাগজপত্র পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। সঠিক সমস্ত কাগজ দেখাতে না পারলে, এদেশে থাকার জন্য ছাড়পত্র পাওয়া যাবে না। পলা একবার মায়ের হাত ধরে টানল। ওর মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। জ্যানেট ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
-“বাবা কবে আসবে মা?” পলা জিজ্ঞেস করে। জ্যানেট অস্ফূটে কিই বা উত্তর দিল, সে নিজেই ভালো করে শুনতে পেল না। তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এসেছে।
রাত্তিরে ট্রেনে করে এসে যেদিন ওরা প্রথম সীমান্তে নেমেছিল, তার কথা মনে করলে এখনও জ্যানেটের হাড় হিম হয়ে আসে। প্রবল ঠাণ্ডা আর সেই সঙ্গে ঝিরিঝিরি বরফ ক্রমাগত পড়েই চলেছে। চোখ ঝলসানো একেকটা সার্চলাইট। পুলিশ কুকুরের চিৎকার। আসবার সময় জ্যানেট মিখাইলের হাতটা অবধি একবার ভালো করে ছুঁয়ে আসতে পারেনি, ঠোঁটের স্পর্শ নিয়ে আসতে পারেনি। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছিল। মিখাইল জানলার পাশ থেকে সরে গিয়েছিল। সরে সে যেতে চায়নি, কিন্তু স্টেশন জুড়ে অত মানুষের ভিড় আর দাপাদাপি। যে কোনও একটা কামরাতে, এতটুকু একেকটা দেহকে কোনওমতে পুরে দেওয়ার মতো একেকটা পরিসর – সেদিন প্রত্যেক মানুষের চাহিদা ছিল কেবল ওইটুকুই। তাও তো কতজন ট্রেনে উঠতেই পেল না। পলাকে তখন বুকের কাছে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল জ্যানেট। ওর খুব কান্না পাচ্ছিল।
প্রায় দেড়ঘণ্টা পেরিয়ে কাউন্টারের সামনেটায় পৌঁছল সে। ওপাশের মেয়েটি ভাবলেশহীন কন্ঠে বলল, “পাসপোর্ট?” জ্যানেট ওর আর ওর মেয়ের দুটো পাসপোর্ট ব্যাগ থেকে বের করে মেয়েটির হাতে তুলে দিল। “ফর্ম ৩৪সি ফিল আপ করেছেন ?” প্রশ্ন ধেয়ে এল আবার। “করেছি,” জ্যানেট জবাব দেয়। “বেশ, কিন্তু আপনি তো বিবাহিত। স্বামী কি ওদেশেই ?” প্রশ্ন করে মেয়েটি। যদিও তাদের দেশে এখন যুদ্ধ চলছে বলে দেশের কোনও সমর্থ পুরুষকেই আর দেশের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না; সেকথা এখন প্রতিবেশী দেশগুলির প্রায় সকলেই জেনে গিয়েছে - তবুও একবার জিজ্ঞেস করে নেওয়া। জ্যানেট চুপ করে থাকে। “বেশ,” ওপারের মেয়েটি জবাব দেয়, “কিন্তু আপনাকে তো ম্যারেড ইন্ডিভিজুয়ালসদের জন্য ফর্ম ৪১বি আর বাচ্চার জন্য ফর্ম ৫১এফ ফিল আপ করতে হবে। আপনি প্লিজ ১৪নম্বর কাউন্টার থেকে এই ফর্মদুটোকে তুলে নিয়ে ফিল আপ করে আনুন, তাহলেই আপনার বেসিক রিফিউজি স্টেটাস সার্টিফিকেট আর আপনাদের দুজনের জন্য সরকারি তরফে একমাসের ফ্রি ফুডকুপনও ইস্যুড হয়ে যাবে। শেল্টারের ঠিকানাটাও তখনই আপনাদেরকে দিয়ে দিতে পারব। পরের জন,” মেয়েটি সময় দেয় না আর।
জ্যানেট চিৎকার করতে পারে না। ওর সবটুকু শক্তি ফুরিয়ে এসেছে। পলার হাত ধরে ও কেবল কাউন্টার থেকে দূরে সরে আসে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে ১৪নম্বর কাউন্টারের সামনে এই কাউন্টারের চেয়েও প্রায় তিনগুণ লম্বা লাইন। ওর মাথাটা ঘুরে ওঠে কেবল।
এদেশ ঠাণ্ডা। এদেশ শীতের দেশ। এদেশে শুকনো ভাব বেশি। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শরীরে জলের অভাব ঘটেছে। মাথার উপরে একটা ছাউনি আছে বটে। ঢালাও জলের ব্যবস্থা, বাথরুমের ব্যবস্থাও রয়েছে। অস্থায়ী হলেও মোটামুটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। সীমান্তের কাছেই ৪৮ ঘণ্টা ধরে জ্যানেট আর পলার নতুন ঠিকানা এখন এই অস্থায়ী উদ্বাস্তু-নিবন্ধন কেন্দ্র। পরের পর ফোর্সড ইমিগ্রেশন কাউন্টার। তারা দেশ ছেড়ে চলে এসেছে, যুদ্ধের কারণে প্রিয়জনকে পিছনে ফেলে রেখে চলে এসেছে - এই বিষয়টাকে নিয়ে তলিয়ে ভাববার মতোও তারা সময় পায়নি। এই যুগ বিশ্বায়নের যুগ, এই যুগ গতিময়তার। জ্যানেট পলার হাত ধরে এগোয়।
কাজটা সেদিনেও শেষ হলো না। দুটো ফর্ম জ্যানেট হাতে পেল বটে, কিন্তু ততক্ষণে অন্যান্য কাউন্টারগুলোতে ঝাঁপ পড়ে গেছে। আবারও একটা রাত এই অস্থায়ী শেল্টারেই কাটাতে হবে। আরেকটু সন্ধ্যে নামলে পরে স্বেচ্ছাসেবকেরা হাঁক পেড়ে পেড়ে স্লিপিং ব্যাগ বিলি করতে শুরু করবে। ছাউনির বাইরেটায় টেবিল পেতে গরম স্যুপ আর পাউরুটি বিলি করা হবে। দু-একটুকরো বিস্কিট কিংবা চকোলেটও জুটে যেতে পারে। জ্যানেটের ওর বাড়ির কথা মনে পড়ছিল। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। স্থানীয় ভাষায় ‘স্বাধীন’ (ইংরেজিতে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’) কাগজের দপ্তরে গ্রাফিক আর্টিস্ট হিসেবে ওর চাকরিটা প্রায় পাকা হয়ে এসেছিল। মিখাইলও সেই একই কাগজের প্রুফরিডিং সেকশনে মাস ছয়েক আগেই পার্মানেন্ট হয়েছিল। ফি শনিবারেই ওরা লেকের ধারে বেড়াতে চলে যেত। কাগজে মধ্যে মধ্যে যুদ্ধের হুমকি-টুমকির খবর শুনলেও মিখাইল বা জ্যানেট সেসবকে পাত্তা দেয়নি। সত্যি সত্যিই যে সেদেশে যুদ্ধ লেগে যাবে কেউ বিশ্বাস করেনি। এখন কেবল শরণার্থীর স্রোত বয়ে চলেছে। জ্যানেট মনে মনে ভাবছিল, পলার খিদে পেয়েছে। এর আগে কখনও সে খিদে কাকে বলে টের পায়নি। এই কদিনেই সে আস্তে আস্তে শিখে নিচ্ছে। চিনে নিতে চেষ্টা করছে এই দুনিয়ার প্রতিটি অন্ধকার, প্রতিটি আলোর উৎসকেও। যে মেয়ে আগে লজেন্স চকোলেট হাতে পেলেই একগাল হেসে কেবল তাকাতো, মিখাইলকে পাশ থেকে বলে দিতে হতো “মাম্মাম আমার, থ্যাঙ্কিউ বলতে হয় সোনা!” – সেই মেয়েও এখন রিফিউজি সেন্টারের স্বেচ্ছাসেবকেরা যখন হাতে করে জলের গেলাস এগিয়ে দিচ্ছে, অথবা হালকা হাতে তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আলতো করে ভিড়ের পথ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে, অস্ফূট কন্ঠে একবারের জন্যও সে ধন্যবাদ জানিয়ে দিতে ভুলছে না। মাত্র দুইরাত্তিরেই সে ‘রিফিউজি’ কথার ব্যঞ্জনাটাকে উপলব্ধি করে ফেলেছে। জ্যানেটের কষ্ট হয়।
অনেক রাত। মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে একা জেগেছিল জ্যানেট। গত দুরাত্তিরেও সে তেমন ভাবে ঘুমোতে পারেনি। এর আগে কেবলই টিভিতে, খবরের কাগজে সে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়া অথবা পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের বিষয়ে শুনেছে। জেনেছে। সেসব খবরের একাংশ থেকে তারও ধারণা হয়েছে উদ্বাস্তু মানেই অর্ধশিক্ষিত, প্রায় অসভ্য, বর্বর, ভয়ানক খোঁচা খাওয়া কোনও একপ্রকারের অতি-নৃশংস, নরমাংসলোভী জানোয়ার বিশেষ। মেয়েদেরকে দেখলেই যাদের মনের মধ্যেটায়, ধরে ধরে সেই মেয়েদেরকে ধর্ষণের সুপ্ত ইচ্ছেটুকুই কেবল জেগে উঠতে শুরু করে। পলার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় জ্যানেট। তার হাত কেঁপে ওঠে। জ্যানেটের কোনও দোষ নেই। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে এখনও এক মহাসমুদ্রের মতোই চওড়া, অলঙ্ঘ্যনীয় ব্যবধান রয়ে গিয়েছে। যেমনটা রয়ে গিয়েছে গ্রাম আর শহরের মধ্যেও। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদেরকেও সবসময়ে চিনে উঠতে পারি না। চেষ্টাও থাকে না আমাদের। জ্যানেট স্লিপিং ব্যাগের চেন সরিয়ে উঠে বসল। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। দমচাপা এই আতঙ্কের পরিবেশ, আর সে সইতে পারছে না।
জ্যানেটের চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে হয়। কেন! কেনই বা মেয়ে বলে তাদেরকে সীমান্ত পার হয়ে যেতে হবে ? কেনই বা শুধু পুরুষদের হাতেই দেশরক্ষার দায়িত্ব থাকবে ? নিষ্ফল আক্রোশে জ্যানেট গুমরিয়ে মরতে থাকে। পরক্ষণেই সে বুঝতে পারে, তার এই চলে আসা কেবল পলার মুখ চেয়ে। পলার ভবিষ্যতের কথা ভেবে। নয়তো কি সেও মাতৃভূমি রক্ষার্থে অস্ত্র হাতে তুলে নিত না ? বড় অদ্ভুৎ করে মেয়েদেরকে গড়েছেন ঈশ্বর। একদিকে দিয়েছেন প্রজননের ক্ষমতা, মাতৃত্বের আশীর্বাদ। অন্যদিকে সেই স্ত্রী-জননতন্ত্রই তাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে নেমে আসে। যুদ্ধে-বিগ্রহে তারাই হয়ে পড়ে আক্রমণ ও বীভৎসার সহজতর লক্ষ্য। কেনই বা অবিচার এমন! তার সমস্ত বিচার, বিবেচনা, চিন্তা, অথবা বোধশক্তিরও যেন বা অবলুপ্তি ঘটেছে বলে মনে হয়। তার মাথার ভিতরে কেবলই এমন সমস্ত প্রশ্নেরা ভিড় করে আসতে থাকে। কিন্তু সবকিছু শান্ত হয়ে গেলে পরে মনে হয়, সুবিধে বা খামতি আছে দুদিকের তরফেই। মেয়েদেরকে ভঙ্গুর করে দেখাটা আসলে সমাজেরই অভ্যাস। আশি বা নব্বইয়ের দশকে, আফগান গৃহযুদ্ধের সময় সোভিয়েত সৈন্যদের ব্যারাকে ব্যারাকে আফগান কিশোর বা যুবকদের উপরেও যে নারকীয় অত্যাচার চলেছিল, সেই খবর তো এতদিনেও সেভাবে প্রকাশ্যে আনেনি কেউ। কোনও এক বিদেশি বইয়ের সমালোচনা পড়তে গিয়েই নাকি মিখাইল জেনেছিল সেসব। অত্যাচার, ও নৃশংসতা দুপক্ষেই। দায়িত্ব পালনেও তো তাই দুপক্ষেরই অঙ্গীকার।
... ইমিগ্রেশন কাউন্টারের ঘন হয়ে নেমে আসতে থাকা ছায়ার অভ্যন্তরে দাঁড়িয়েই, এক সদ্য উদ্বাস্তু নারীর নিজের সঙ্গে নিজের কথোপকথন। জ্যানেটের মুখের উপরে একটা পেনসিল টর্চের আলো এসে পড়ে।
-“একি, তুমি ঘুমোওনি এখনও ?” প্রথম কাউন্টারের সেই মেয়েটি জ্যানেটের মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। “আপনিও তো ঘুমোননি,” বিস্ময়াবিষ্ট জ্যানেটের মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়, “সারাদিন কাউন্টার সামলিয়ে এখন আবার,” জ্যানেট কথাটা শেষ করতে পারে না। “ওটা আমার অফিশিয়াল ডিউটি যে,” মেয়েটি জবাব দেয়, “আর এটা আমাদের ভলান্টারি কাজ।” মেয়েটি হাঁটু মুড়ে জ্যানেটের পাশে বসে, “কষ্ট হচ্ছে তোমার ?” জ্যানেট কথা বলতে পারে না। কিন্তু তারপর হঠাৎ ...
অনেকক্ষণ ধরে জ্যানেটের পাশে বসে মেয়েটি তার কথা শোনে। পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। শেষমেশ তাকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে জ্যানেট। এমন বৃষ্টি আসাটাই দরকার ছিল বোধহয়। মেয়েটি তাকে নীরবে সান্ত্বনা দেয়। আশ্চর্য এক ক্লান্তিহীন ব্যক্তিত্ব তার। জ্যানেট সমস্ত শরীর দিয়ে মেয়েটির মনের উষ্ণতাকে অনুভব করে। শুষে, নিংড়ে নিতে চায়। এই মাটি বড় ঊষর, বড় তৃষ্ণার্ত আজ।
অবশেষঃ
যমুনা শুয়েছিল। আজ তার ঘুম আসছিল না। সারাদিন, সারারাত্তিরের পরিশ্রমের পরেও ঘুম আসছিল না। আজকের দিনটা অফ-ডে রয়েছে। কেবলই নতুন মেয়েটার মুখ তার চোখের সামনেটায় ভেসে উঠছে। যমুনা উদ্বাস্তু নয়। সে এদেশেরই মেয়ে। এদেশেই জন্ম, বেড়ে ওঠা। কিন্তু অনাথাশ্রমে। ওর বাবা মায়েরও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। জন্মের পরে পরেই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তাকে এখানকারই এক আশ্রমের সুমুখে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। অথচ এই নাম যমুনা, আশ্রমের দেওয়া নয়। এই নাম দিয়েছিল নাজিব। বালোচিস্তানের উদ্বাস্তু সে।
রিফিউজি সেন্টারেই যমুনার সঙ্গে আলাপ। অনাথাশ্রমের দেওয়া নাম ‘মরিয়ম’ মোটে পছন্দ হয়নি তার। মরিয়মকে ভালোবাসতে-বাসতেই, বলিউড-ললিউডের পোকা নাজিব, তার নাম দিয়েছিল যমুনা। ভারতবর্ষের কোনও এক নদীর নামেই নাকি সেই নাম। মরিয়ম ওরফে যমুনা ভালোবেসেছিল নাজিবকে, নাজিব ভালোবেসেছিল যমুনাকে। কোল আলো করে সন্তান এসেছিল। কিন্তু বাঁচেনি। হৃদযন্ত্রের কোন এক জটিলতায় তিন মাসও না কাটতেই সেই সন্তান চিরতরে চোখ বুজেছিল। সিংহহৃদয় নাজিবও এক সপ্তাহভর বাড়িতে নিশ্চুপ হয়ে বসেছিল। কেউ তাকে একটাও কথা বলতে শোনেনি। আজ, পলার চোখদুটোয় ... মানুষে মানুষে কি এভাবেই সেতু গড়ে ওঠে ?
শেষমেশ নাজিব আর যমুনার বাড়িতেই পলারা এসে উঠেছে। কাগজপত্র সামলাতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। নাজিবের ইলেকট্রিক ওয়্যারিংয়ের দোকান। অবসর সময়ে যমুনা সেলাই-ফোঁড়াই করে। কিছু সময় পেরলে জ্যানেটও সেই কাজে হাত লাগাবে। অথবা শিখে নেবে টুকিটাকি ওয়্যারিংয়েরও কাজ। যতদিন না মিখাইল ফিরে আসে।
[... রূপকথার মতোই শেষ হোক না সবকিছুর। উদ্বাস্তু জীবনেও নদীর এক পাড় ভাঙে যখন, অন্য পাড়ও কি তখন গড়ে উঠতে পারে না ? এই সব চরিত্র কাল্পনিক হলেও, সত্যিও তো হতে পারে কোথাও ...]
জ্যানেট আর যমুনা এখন পরস্পর পরস্পরকে তাদের ভাষা শেখাতে ব্যস্ত। পলাকে ইস্কুলে ভর্তি করতে হবে। নাজিব তার লোকাল গার্জিয়ান হিসেবে নাম সই করে দিয়েছে। আশায় আশায় একেকটা ভোর পেরিয়ে যায় ... যুদ্ধের খবরও এখন পলাকে নাড়াতে পারে না। মিখাইল একদিন ফিরে আসবে বলে, সেও অপেক্ষা করে থাকে। অনন্তকাল।
0 Comments
Post Comment