- 27 July, 2021
- 0 Comment(s)
- 520 view(s)
- লিখেছেন : চন্দন আঢ্য
ইরোটিক অভিজ্ঞতাকে ‘বিবাহ রাত্রি’ এমন এক অগ্নিপরীক্ষায় রূপান্তরিত করে যার ফলে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ভীত হয়ে পড়েন, যেহেতু তাঁরা জানেন না কেমন করে সেই পরীক্ষায় পাশ করবেন। প্রত্যেকেই তাঁদের নিজের নিজের সমস্যাতে এমনই জর্জরিত যে, উদার মনে অন্যের কথা ভাবার অবসরও তাঁদের নেই। এই পরীক্ষা বিবাহিত মহিলার ওপর এমন গৌরব প্রদান করে যা তাঁকেই ভীত করে তোলে। ফলত, বিস্ময়ের নয় যে, প্রায়শই, সেই মহিলা চিরকালের জন্য নিরুৎসাহী হিমশীতল হয়ে পড়েন। আবার স্বামীদের পক্ষে কঠিন সমস্যাটি হল : যদি তিনি তাঁর স্ত্রীকে “খুব যৌন-চাহিদার সঙ্গে সুড়সুড়ি দেন”, স্ত্রী তাহলে কলঙ্কিত এবং ক্ষুব্ধ হতে পারেন। মনে হয়, এই ভয়ই মার্কিন স্বামীদের পঙ্গু করে দিয়েছে, বিশেষ করে সেই সব দম্পতিদের যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়-স্তরের পড়াশোনা করেছেন—এমনই রিপোর্ট দিয়েছেন কিনসে। কারণ মহিলারা যেহেতু নিজেদের প্রতি বেশিমাত্রায় সচেতন, তাই তাঁদের বাধা বা প্রতিবন্ধকতাও গভীর। যদিও, কোনো পুরুষ যদি কোনো মহিলাকে সম্মান জানান, তাহলে তিনি নিজের যৌনতা জাগাতে ব্যর্থ হন। মেয়েলি মনোভাবের অস্পষ্টতাই এই দ্বিধা তৈরি করে। যুবতী মহিলারা একইসঙ্গে আনন্দ-উপভোগ ও প্রত্যাখ্যান করতে চান। মহিলারা দাবি করেন নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছা। আর এ কারণেই ভুগতে হয় তাঁদের। ব্যতিক্রমী আনন্দবোধ ছাড়া, স্বামী উপস্থাপিত হন লম্পট অথবা আনাড়ী হিসাবে। আর এটাও বিস্ময়ের নয় যে, ‘যুগল কর্তব্য’ একজন মহিলার কাছে প্রায়শই একটি বিরক্তিকর কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
দিদেরো জানিয়েছেন, যে প্রভু তাঁকে আনন্দ দেয় না, তাঁর কাছে নিজের আনুগত্য প্রদান করা হল নির্যাতন। একজন সৎ মহিলাকে আমি দেখেছি যিনি স্বামীর কাছে যাওয়ার সময় ভয়ে কাঁপতেন। স্নানের সময় তিনি জলে ডুবে থাকতেন। কখনোই তাঁর বিশ্বাস হত না যে তিনি যথেষ্ট পরিমাণ কর্তব্যের কলঙ্ক ধুতে পেরেছেন। এই ধরনের ঘৃণা বা অরুচি আমাদের প্রায়ই অজানা। আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনেক বেশি প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। চরমতম আনন্দ উপলব্ধি না করেই অনেক মহিলা মারা যান। আনন্দের সঙ্গেই এই অনুভূতিকে আমি দেখবো ক্ষণিক অপস্মারের মতো। মহিলাদের কাছে এই অনুভূতি বেশ বিরল এবং আমরা যখন তাঁদের আহ্বান করি তখন তা অবশ্যই ঘটে থাকে। যে পুরুষের বাহু তাঁরা পছন্দ করেন, সেই পুরুষের বাহুতেই সার্বভৌম সুখ তাঁদের উড়িয়ে নিয়ে যায়। যে প্রসন্ন বা আত্মতুষ্ট মহিলাকে আমরা অপছন্দ করি, সেই মহিলার পাশেই আমরা সেই সার্বভৌম সুখকে খুঁজে পাই। আমাদের থেকে নিজেদের ইন্দ্রিয় সম্পর্কেতাঁরা কম সচেতন। তাঁদের পুরষ্কারলাভ কম দ্রুত এবং কম সুনিশ্চিত। একশোবার তাঁদের প্রত্যাশা প্রতারিত হয়।
বাস্তবিকই, এমন অনেক মহিলা আছেন যাঁরা মা বা ঠাকুমা-দিদিমা পর্যন্ত হয়ে যান কখনোই যৌনক্রিয়ার আনন্দের স্বরূপ না জেনে, এমনকি কোনো অসুবিধা বা সমস্যাও না জেনে। ডাক্তারি শংসাপত্র দেখিয়ে বা অন্য কোনো অজুহাতে ‘দায়িত্বের কলঙ্ক’ থেকে সরে পড়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিনসের রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকাতে, বিবাহিত মহিলাদের একটি বড়ো সংখ্যা “ঘোষণা করেছেন যে তাঁদের যৌন সংগমের হার ইতিমধ্যেই বেশি আর তাঁরা চান যে তাঁদের স্বামীরা যেন এত ঘন ঘন সঙ্গম চাহিদা করেন”। যদিও আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি যে, মহিলাদের ইরোটিক সম্ভাবনার প্রায় কোনো শেষ নেই। আর এই বৈপরীত্যই তুলে ধরে যে, মেয়েলি ইরোটিজমকে নিয়ন্ত্রণ করার নামে বিবাহ আসলে সেই ইরোটিজমকে হত্যা করে।
‘Thérèse Desqueyroux’ গ্রন্থে মোরিয়াক সাধারণভাবে বিবাহ, বিশেষভাবে যুগল কর্তব্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একজন যুক্তিসংগতভাবে বিবাহিত যুবতী নারীর প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করেছেন। এবার আরও একটু আঁকাড়া সাক্ষ্য দেখুন। স্বীকারোক্তিটি স্টেকেলের সংগৃহীত। এর মধ্য থেকে আমি কেবল সেই অনুচ্ছেদটিই উদ্ধৃত করবো যেখানে বিবাহিত জীবনের কথা আছে। অনুচ্ছেদটিতে রয়েছে ২৮ বছর বয়সি একজন মহিলার কথা, বেশ পরিশীলিত এবং সংস্কৃতিসম্পন্ন পরিবেশে যিনি বড়ো হয়ে উঠেছেন।
একজন সুখী বাগ্দত্তা ছিলাম আমি। মনে হত একটা আশ্রয়ের মধ্যে আছি। হঠাৎ করে আমি এমন একজন হয়ে উঠেছিলাম, যে মনোযোগ আকর্ষণ করে নিত। খুব প্রশ্রয় দেওয়া হত আমাকে। আমার প্রেমিক আমাকে খুব সম্মান করতেন। এই সব কিছুই ছিল আমার কাছে নতুন ... প্রেমিকের চুম্বন (এটা ছাড়া অন্য কোনোরূপ যত্ন প্রেমিক আমাকে করেনি) আমাকে এতটাই উদ্দীপিত করেছিল যে, বিয়ের দিনের জন্য আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না ... বিয়ের দিন সকালে প্রবল উত্তেজনায় মুহূর্তের মধ্যে আমার জামা ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে গিয়েছিল। এরকম ধারণা হয়েছিল, যাকে প্রবলভাবে চেয়েছি, সেই অপরিচিত পুরুষকেই অবশেষে জানতে চলেছি। আমার মধ্যে একটা শিশুসুলভ ধারণা ছিল যে, পুরুষকে অবশ্যই স্ত্রীযোনির মধ্যে প্রস্বাব করতে হবে ... আমাদের ঘরে, ইতিমধ্যেই একটা হতাশাজনক ঘটনা ঘটে যায় যখন স্বামী আমাকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি চলে যাবেন কি না। আমিই তাঁকে চলে যেতে বলেছিলাম, কারণ তাঁর সামনে আমি সত্যিই লজ্জা পেয়েছিলাম। পোশাক ত্যাগের দৃশ্য আমার কল্পনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আমি যখন বিছানায়, তখন অত্যন্ত বিব্রত হয়ে তিনি আবার ফিরে আসেন। পরে আমার কাছে স্বীকার করেছিলেন যে, আমার আচার-আচরণই তাঁকে ভীত করে তুলেছিল। উজ্জ্বল ও প্রত্যাশিত যৌবনের মূর্ত প্রতীক ছিলাম আমি। সবেমাত্র পোশাক খোলা শুরু করেছি, উনি আলো বন্ধ করে দেন। চুম্বনমাত্রেই উনি আমাকে দখল করে নেন। ভয় পেয়ে ওঁনাকে বলি আমাকে ছেড়ে দিতে। চাইছিলাম ওঁনার থেকে বেশ খানিকটা দূরে থাকতে। কোনো পূর্ব-আদর ছাড়াই ওঁনার এই প্রচেষ্টায় আমি ভীত হয়ে পড়েছিলাম। ওঁনাকে আমার নিষ্ঠুর মনে হয়েছিল আর পরে প্রায়শই ওঁনাকে আমি এইজন্য তিরস্কারও করতাম। এই তিরস্কার অবশ্য নিষ্ঠুরতার জন্য নয়, তা আসলে ওঁনার অদক্ষতা, ইতস্ততবোধ আর সংবেদনশীলতার অভাবের জন্য। রাতের বেলা ওঁনার সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছিল। এইবার আমি বেশ অখুশি হতে শুরু করি। নিজের বোকামির জন্য নিজেই লজ্জা পেতাম। মনে হত, আমিই ভুল করেছি, আমিই বাজে ভাবে বড়ো হয়েছি ... অবশেষে, ওঁনার চুম্বনে আমি খুশি হয়ে উঠি। দশদিন পরে, তিনি আমার কৌমার্য হরণ করেন। কেবল কয়েক মুহূর্ত স্থায়ী হয়েছিল আমাদের সঙ্গম। একটু মৃদু ব্যথা ছাড়া আমি আর কিছুই অনুভব করিনি। বড়োই নৈরাশ্যজনক ঘটনা! এরপর সঙ্গমের সময় কিছুটা আনন্দানুভব করি, যদিও এই ব্যাপারে সাফল্য ছিল বেশ যন্ত্রণাদায়ক। নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য আমার স্বামী তখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রাগে, আমার অবিবাহিত দেওরের অ্যাপার্টমেন্টে, আমি কল্পনা করতাম আমার দেওরের শিহরণ যখন তিনি জানলেন যে আমি তাঁর খাটেই শুয়েছি। ওখানেই প্রথমবার আমার অর্গ্যাজম হয়, যা আমাকে প্রবল খুশি করেছিল। প্রথমদিকের সপ্তাহগুলোর প্রত্যেক দিন আমার স্বামী আমার সঙ্গে মিলিত হতেন। তখনও আমার অর্গ্যাজম হত, কিন্তু আমি সন্তুষ্ট হতাম না। কারণ খুব কম সময়ের জন্যই এটা ঘটতো। শৃঙ্গারের উত্তেজনায় আমি তখন প্রায় কাঁদার অবস্থায় চলে যেতাম ... দু-বার সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ... সঙ্গম ধীরে ধীরে কম তৃপ্তিদায়ক হয়ে পড়ে। সঙ্গমের পরিণতিস্বরূপ এখন খুব বিরল আমার অর্গ্যাজম হয়। আমার স্বামীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সব সময়ই আমার আগে হত। উদ্বেগের সঙ্গে, প্রত্যেকবারই বিষয়টি আমি খেয়াল রাখতাম (এটি আর কতক্ষণ চলবে?)। আমাকে মাঝপথে ছেড়ে দিয়েই যদি তিনি তৃপ্ত হয়ে যেতেন, তাহলে ওঁনাকে আমি ঘৃণা করতাম। সঙ্গমের সময় আমি কখনো-কখনো আমার কাজিন বা যে ডাক্তার আমার জন্ম দিয়েছেন, তাঁদের কল্পনা করতাম। নিজের আঙুল দিয়ে আমার স্বামী আমাকে শৃঙ্গারিত রাখতেন ... এটা নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত থাকলেও এই পদ্ধতি আমার কাছে একইসঙ্গে লজ্জাজনক এবং অস্বাভাবিক মনে হত। কোনো চরমানন্দই আমার হত না ... আমাদের বিবাহের কোনো মুহূর্তেই তিনি আমার শরীরের কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশে যত্ন নেননি। একদিন আমাকে বলেছিলেন, আমার সঙ্গে কোনো কিছু করার সাহস তাঁর ছিল না ... তিনি আমাকে কখনও নগ্ন দেখেননি, কারণ আমরা আমাদের পোশাক পরে থাকতাম। ফলত, রাতের বেলা কেবল সঙ্গম ছাড়া আর কিছুই তিনি করেননি।
প্রকৃত অর্থে, এই কামার্ত মহিলাই পরবর্তী সময়ে একজন প্রেমিকের বাহুতে যথার্থ খুশি ছিলেন।
ক্রমশ (আগামী পর্ব দ্বাদশ)
লেখক : অধ্যাপক ও সমাজকর্মী
ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
0 Comments
Post Comment