- 19 June, 2020
- 0 Comment(s)
- 1846 view(s)
- লিখেছেন : সিউ প্রতিবেদক
১। মুসলিম ধর্মীয় আইন অনুসারে ছেলে ও মেয়ে পিতা-মাতার সম্পত্তি সমপরিমাণ পাবে না। পরিবর্তিত সমাজ প্রেক্ষাপটে যেখানে ছেলে ও মেয়েরা সমানভাবে শিক্ষা, উপার্জন, পরিবার পালন, সমাজ গঠন, দেশ পরিচালন ইত্যাদি দায়িত্বপূর্ণ কাজের শরিক হয়ে উঠছে সেই রকম অবস্থানে দাঁড়িয়ে এই আইন চালু রাখা বাধ্যতামূলক?
২। পিতা বেঁচে থাকা অবস্থায় কোনো সন্তান মারা গেলে, মৃতের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানরা মৃতের বাবার সম্পত্তি কিছুই পাবে না আইন অনুসারে (দয়া করে কেউ দিতে পারে। সেটা দান। অধিকার না।) অথচ সেই মৃত সন্তানের সম্পত্তিতে পিতার অংশ বর্তাবে। ভারতে এই আইন এখনও চালু। এই আইনের মধ্যে ধর্ম ও মানবিকতার দিক যদি ব্যাখ্যা করেন।
৩। কোনো পিতা-মাতার যদি শুধু কন্যা সন্তান থাকে তাহলে সেই পিতা-মাতার অবর্তমানে তাদের আত্মীয়রা কিছুটা সম্পত্তির অংশীদার হয়। অথচ কন্যা সন্তানের সঙ্গে যদি পুত্র সন্তান থাকে বা শুধু পুত্র থাকে তাহলে সম্পত্তিতে আর আত্মীয়দের অংশ বর্তায় না।— এই বণ্টন ব্যবস্থাকে আজকের দৃষ্টিতে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন? মুসলিম মেয়ের বঞ্চনা ও অসম্মানের প্রশ্ন যেখানে জড়িয়ে।
৪। স্বামী মারা গেলে তার স্ত্রী মৃত স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ পাবে। আর স্ত্রী মারা গেলে তার স্বামী মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে। এই বৈষম্যের কারণ কী? আধুনিক যুক্তিবাদী সমাজ গঠনে এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত?
৫। আপনার যদি ছেলে এবং মেয়ে সন্তান থাকে, আর আপনি যদি ধর্মপ্রাণ মুসলিম হন তাহলে দুজনকে সমানভাবে সম্পত্তি দেওয়ার কথা ভাবেন? যদি ভাবেন সেখানে কোনো ধর্মীয় অনুশাসন আপনার মানসিক ইচ্ছাকে প্রতিরোধ করতে পারে কি? কোন যুক্তিতে সম-ভাগ করবেন?
৬। আপনাদের যদি শুধু মেয়ে সন্তান থাকে, আর আপনি ধর্মপ্রাণ মুসলিম হন তাহলে আপনাদের অবর্তমানে আত্মীয়রা সম্পত্তির শরিক হবে। মেয়ে পুরোটা পাবে না। এটাকে কীভাবে মেনে নেবেন? মেয়ের অমর্যাদা ও বঞ্চনার দিকটি আপনাকে ব্যথিত করবে কি?
৭। আজকের সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তব অবস্থানে আপনি ধর্মীয় নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারছেন? পিএফ-এ টাকা জমিয়ে সুদ, ব্যাঙ্কের জমা টাকার সুদ, জীবনবিমার সুদ নেন কি? অথবা গৃহঋণ নিয়ে সুদসমেত ফেরত দেন কি? যদি নেন তাহলে এই নেওয়া ও দেওয়া ধর্মগ্রাহ্য মনে করেন? যদি ধর্মগ্রাহ্য না হয় তবু নিতে হচ্ছে কেন? এই নেওয়াতে যদি অভ্যস্ত হই এবং মুসলিম সমাজ মান্যতা দেয় তাহলে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সম-অধিকার আইন চাইতে এর পরেও কি আপত্তি থাকার কোনো যুক্তি আছে?
৮। কোনো সমাজ বা সম্প্রদায়ের উন্নয়নে নারী ও পুরুষ উভয়ের ভূমিকা জরুরি বলে কি আপনি মনে করেন? যদি মনে করেন তবে লিঙ্গবৈষম্য সেই সমাজ-অগ্রগতির প্রতিবন্ধক নয় কি? যদি প্রতিবন্ধক হয় তা দূর করার পথ?
৯। লিঙ্গসাম্য আনতে গেলে পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর বদল দরকার। নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক নয় কি উত্তরাধিকার সম্পত্তির সমান অংশ পাওয়া?
সাহানা খান, সমাজকর্মী
ধর্ম সম্বন্ধে আমার খুব জ্ঞান আছে বা অনেক পড়াশোনা করেছি তেমন নয়। তবে চারপাশে যেটুকু দেখেছি, জেনেছি তাতে মনে হয়েছে পৃথিবীর কোনো ধর্মই নারীর প্রতি সুবিচার করেনি। ইসলামও তার ব্যতিক্রম নয়। সেইজন্য একজন মানুষ হিসাবে ইসলাম ধর্মে শরিয়তি নিয়মের যে বৈষম্য লাগু আছে নারীর উপর, তা নিয়ে আমি নিজস্ব কিছু মতামত জানাতে চাই, যা আমার জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও পথ চলার মধ্য দিয়ে পাওয়া। যে কয়েকটা নিয়মের আশু পরিবর্তন দরকার বলে মনে হয়েছে, আমি শুধু সেগুলির উপরই আমার মত ব্যক্ত করছি।
১। সম্পত্তির অসম বণ্টন : শরিয়তি আইনে নারী পিতা ও স্বামীর যে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়েছে তাতে তার অংশ সর্বক্ষেত্রেই অর্ধেক। অথচ শরিয়ত নরনারীকে সমানাধিকার দিয়েছে। তাহলে সম্পত্তির বেলায় সমানাধিকার রক্ষিত হবে না কেন? কেন হবে এই অসম বণ্টন? নারী–পুরুষ নির্বিশেষে যেন সম্পত্তির সমান ভাগীদার হয়, এই প্রস্তাব থাকলো।
২। বাবা বর্তমানকালীন পুত্রের মৃত্যুতে তার পরিবারের অসহায়ত্ব : বাবা জীবিত থাকাকালীন পুত্রের মৃত্যু হলে তার জীবিত স্ত্রী ও সন্তান–সন্ততিদের (স্বামী/বাবা) সম্পত্তির উপর কোনো অধিকার থাকে না। ফলস্বরূপ মৃতের বিধবা স্ত্রী সন্তানসহ সম্পূর্ণ আশ্রয়হীন হয়ে পথে দাঁড়ায়। যে ধর্ম অনাথ, আর্তদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে, সেই ধর্মই আবার সম্পত্তির অধিকারের বেলায় অসহায় বিধবাকে পথে দঁাড়াবার নির্দেশ দেয়। কেন? কী কারণে? আমরা কি একবারও ভাববো না কোথায় যাবে তঁারা? কীভাবে বঁাচবে? এটা তো মানবিকতারও প্রশ্ন। ধর্ম কখনোই মানবিকতার ঊর্ধ্বে নয়। মানুষের বেঁচে থাকাটাই যখন প্রশ্নের সম্মুখীন তখন সরকার কি এমন আইনের পক্ষে? তুলে দেওয়া হোক এমন আইন।
৩। দত্তক সংক্রান্ত আইন : সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে, শরিয়তি আইনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হওয়া আবশ্যক। দত্তক আইন চালু হলে কত নিঃসন্তান দম্পতি সন্তান পাবে, আবার কত অসহায়, অনাথ শিশু পরিবার পাবে। লেখাপড়া শিখে এক সুষ্ঠু, সুন্দর জীবনযাপন করতে পারবে। সেটাও তো ভেবে দেখার বিষয়। সমাজের একজন অংশীদার হিসাবে আমাদের কি দায় বর্তায় না ওই বাচ্চাদের এক সুস্থ, সুন্দর পরিবেশে বড়ো হয়ে ওঠার সুযোগ দেওয়ার? সে দায়িত্ব কি আমরা এড়িয়ে যেতে পারি এই ভেবে যে কি দরকার ওইসব ঝামেলায় জড়াবার। আমরা তো বেশ আছি। এটা এক ধরনের স্বার্থপর মানসিকতা। সেইজন্যই বলছি দত্তক নেওয়ার আইনের নিষেধের বেড়াজাল তুলে বরং দত্তকের পক্ষে আইনটাই বহাল হোক।
বাংলাদেশসহ বহু ইসলামিক রাষ্ট্রে মানবিক কারণেই শরিয়তি আইনের পরিবর্তন হয়েছে। আমরাই বা পিছিয়ে থাকবো কেন? শরিয়তি আইনের বদল ঘটিয়ে ওইসব দেশগুলো কি রসাতলে গিয়েছে না পৃথিবী থেকে তাদের অস্তিত্ব মুছে গিয়েছে? কোনোটাই হয়নি। বরং ওই সমস্ত দেশের অধিবাসীরা অনেক অনেক গুণ ভালো আছে। উন্নতিও হয়েছে/হচ্ছে। আমরা তো মানুষ হিসাবে উত্তরসূরিদের কাছে মুখ দেখানোর অধিকার হারাবো যদি না শরিয়তি আইন বদলানোর আওয়াজ তুলি। অতএব দাবি থাকলো মানুষের সুষ্ঠু জীবনের পরিপন্থী “শরিয়তি আইনগুলো বাতিল করা হোক”।
মুসলিম ব্যক্তিগত আইনে নারী–পুরুষ সম্পত্তির অসম বণ্টন বা বাবা বর্তমানকালীন পুত্রের মৃত্যুতে তার বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের জীবনে শরিয়তি বিধানের ফলে যে বিপর্যয় নেমে আসে তা নারীত্বের পক্ষে অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে— সর্বত্রই নারী–পুরুষ সমানভাবে পথ চলছে। তা হলে ধর্মের নামে কেন নারীরা তা সহ্য করবে? অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে প্রতিবাদ তো করবেই। হাজারেরও বেশি বছর আগে যে ধর্মীয় গ্রন্থ বা বিধানের সৃষ্টি তা তখনকার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তৈরি হয়েছে। এখনও সেই নিয়ম বজায় রাখা কতটা জরুরি, তা ভাবা দরকার আছে খুবই।
উম্মে সালেহা বেগম, সমাজকর্মী
মুসলিম ধর্মীয় আইন অনুসারে মুসলিম মেয়েরা বাবা–মায়ের সম্পত্তি ছেলেদের অংশের তুলনায় যে অর্ধেক পায়—আমার মনে হয় এটা সম্ভবত করা হয়েছিল এই ভেবে যে, মেয়েরা বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি চলে যায় আর ছেলেরা বার্ধক্যে পিতামাতার দেখভাল করে। মেয়েটির স্বামীর ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটে। সেই কারণেই হয়তো ছেলেরা মেয়েদের দ্বিগুণ সম্পত্তি পায়। কিন্তু বর্তমানে সবসময় এইরকম পরিস্থিতি থাকে না। অনেক সময় মেয়েরা ছেলেদের মতোই দ্বায়িত্ব পালন করে, কখনো বা তার চেয়ে বেশিও করে। আরও অবাক লাগে ওই অর্ধেক সম্পত্তি মেয়েদের না দেওয়ার জন্য বাবা–মা জীবদ্দশায় স্বেচ্ছায় বা ছেলেদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পুরো সম্পত্তি ছেলেদের নামে লিখে দেন। এইসব ক্ষেত্রে অনেক সময় ছেলেরা তাদের দায়িত্বও পালন করে না। তাই যখন ভাবি আইনের মাধ্যমে বাবা–মায়ের সম্পত্তি ছেলে–মেয়েদের ভাগে সমভাবে বণ্টন নিশ্চিত হোক তখন মনে হয় যারা অর্ধেক অংশই না দেওয়ার জন্য আগেই সম্পত্তি লিখে নেয়, তারা পুরো সমান অংশের ক্ষেত্রে কী করবে? আমার মনে হয় আইনের মাধ্যমে সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়েদের সম অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে বাবা–মায়ের দায়িত্ব সমভাবে পালনের দিকটা সুনিশ্চিত করা অতি আবশ্যক।
বাবার বর্তমানে কোনো সন্তান মারা গেলে মৃতের বিধবা স্ত্রী ও তার সন্তানরা তার বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। এটা খুব অমানবিক এবং এর বদল হওয়া প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়। বঞ্চিত হওয়ার অর্থই হল তাদেরকে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া।
কোনো পিতামাতার শুধু কন্যা সন্তান থাকলে পিতামাতার অবর্তমানে পিতা বা মাতার ভাই বোনেরা ওই সম্পত্তির অংশীদার হয়ে যায়। কিন্তু পুত্র সন্তান থাকলে আর এরকম ঘটে না।
আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এইরকম। আমার একটিই কন্যা সন্তান। আমার মনে হয় আমরা স্বামী–স্ত্রী মিলে যে সম্পত্তি করলাম তাতে অধিকার তো আমার সন্তানেরই থাকবে সে ছেলেই হোক বা মেয়েই হোক। শুধু মেয়ে বলে সে পুরোটা পাবে না, এটা খুব অপমানজনক। আমার স্বামী আর তার অন্যান্য ভাইবোনকে বঞ্চিত করে আমার ছোটো দেবর বসতবাড়ি সমেত জমি–জায়গা নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে। খুবই আশ্চর্যের বিষয় ওই দেবরও আমার স্বামীর নামের সম্পত্তির অংশীদার। এটা খুব দুঃখজনক। অনেক সময় ভাইবোনের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলে তারা ওই সম্পত্তির ভাগ নেয় না। অর্থাৎ তাদের অধিকারের অংশ সেই কন্যা সন্তান বা কন্যা সন্তানদের দান করে দেয়। সেটাও খুব অপমানজনক লাগে। শুধু মাত্র মেয়ে হওয়ার জন্য এরকমটি ঘটে।
মহসিনা খান, ছাত্রী
মুসলিম ব্যক্তিগত আইনে নারী–পুরুষ সম্পত্তির অসম বণ্টন বা বাবা বর্তমানকালীন পুত্রের মৃত্যুতে তার বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের জীবনে শরিয়তি বিধানের ফলে যে বিপর্যয় নেমে আসে তা নারীত্বের পক্ষে অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে সর্বত্রই নারী–পুরুষ সমানভাবে পথ চলছে। তা হলে ধর্মের নামে কেন নারীরা তা সহ্য করবে? অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে প্রতিবাদ তো করবেই। হাজারেরও বেশি বছর আগে যে ধর্মীয় গ্রন্থ বা বিধানের সৃষ্টি তা তখনকার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তৈরি হয়েছে। এখনও সেই নিয়ম বজায় রাখা কতটা জরুরি, তা ভাবা দরকার আছে খুবই।
আমার মতে পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যেই সম্পত্তির সমান বাঁটোয়ারা হওয়া উচিত। নারী–পুরুষের মধ্যে অসম বণ্টন হওয়া অনুচিত। কেনই–বা আমরা পুরুষের অর্ধেক পাব? ভাই, বোন যাই হোক না কেন সবাই তো আমরা একই বাবা–মায়ের সন্তান। আমাদের ছোটো নজরে দেখা আমাদের পক্ষে খুবই অপমানজনক। লেখাপড়া থেকে শুরু করে চাকরি–বাকরি সব জায়গাতেই আমরা পুরুষদের সঙ্গে সমকক্ষতার পরিচয় দিচ্ছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তো আবার এগিয়েও আছি। তাহলে আমরা কেন বাবার সম্পত্তির সমান অংশ দাবি করবো না? এ আমাদের ন্যায্য অধিকার। এমনকি বাবা বেঁচে থাকতে তার পুত্রের মৃত্যুতে যেভাবে তাঁর পরিবার (বিধবা স্ত্রী / সন্তান) শরিয়তি আইনের বলে সম্পত্তি (স্বামী / বাবা) থেকে শুরু করে সব অধিকার হারায়, তাও ভয়ংকর অন্যায়। এই কারণেই চাই শরিয়তি আইনের অবসান। যদি শুধু এক বা একাধিক কন্যা থাকে তাহলেও চাই বাবার সম্পত্তির সম্পূর্ণ অধিকার যেন সে বা তারা পায়। বাবার সন্তান হয়েও কেবল নারী বলে পূর্ণ অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে এটা কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না। এ আমাদের ন্যায্য অধিকার। আমাদের হক আমরা আদায় করবোই।
ছবি: প্রতীকী
0 Comments
Post Comment