ধর্মের আইন ও  নারী সমাজ

  • 30 July, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 173 view(s)
  • লিখেছেন : সরিতা আহমেদ
৩০ জুলাই ২০১৯ ভারতে একটি ঐতিহাসিক বিল পাশ হয়েছিল। নাম – ‘প্রটেকশান অফ রাইটস অন ম্যারেজ ট্যু উইমেন বিল’ সংক্ষেপে ‘তিন তালাক (তালাক-এ-বিদ্দত) বিল ২০১৯’। এই বিল উত্থাপনের জন্য ভোটাভুটিতে ৯৯টি ভোট পড়ে এই বিলের পক্ষে, ৮৬ টি ভোট পড়ে বিপক্ষে। বিপক্ষের সংখ্যাটি নেহাত কম নয়, বিতর্ক ঘনায় টিভি চ্যানেলের টক্‌ শো’এ। পরিচিত মহলেও সেই বিষয়ে কাজিয়ার শুরুটা হয়েছিল - "মুসলিমদের মধ্যে বিয়ের সময় "কবুল, কবুল, কবুল" বলাটা যদি হবু স্ত্রীর অধিকারে থাকে, তবে "তালাক তালাক তালাক" বলার অধিকার একা স্বামীর থাকবে কেন ?"

৩০ জুলাই ২০১৯ ভারতে একটি ঐতিহাসিক বিল পাশ হয়েছিল। নাম – ‘প্রটেকশান অফ রাইটস অন ম্যারেজ ট্যু উইমেন বিল’ সংক্ষেপে ‘তিন তালাক (তালাক-এ-বিদ্দত) বিল ২০১৯’। যে দেশে হিন্দুত্ববাদীদের সাথে ছদ্ম সেকুলারদের এত রমরমা সেখানে এই বিল উত্থাপনের জন্য ভোটাভুটিতে ৯৯টি ভোট পড়ে এই বিলের পক্ষে, ৮৬ টি ভোট পড়ে বিপক্ষে। বিপক্ষের সংখ্যাটি নেহাত কম নয়, ফলে খুব স্পষ্টভাবেই বিতর্ক ঘনায় টিভি চ্যানেলের টক্‌ শো’এ, চায়ের ঠেকে অথবা মধ্যবিত্তের বাড়ির ডাইনিং টেবিলে। পরিচিত মহলেও সেই বিষয়ে কাজিয়ার শুরুটা হয়েছিল - "মুসলিমদের মধ্যে বিয়ের সময় "কবুল, কবুল, কবুল" বলাটা যদি হবু স্ত্রীর অধিকারে থাকে, তবে "তালাক তালাক তালাক" বলার অধিকার একা স্বামীর থাকবে কেন ?"

ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন, নিঃসন্দেহে ।
তাতে একজন বলে, ইসলামে তালাক দেওয়ার অধিকার কেবল স্বামীকেই দেওয়া হয়েছে, স্ত্রীর হাতে তা দেওয়া হয়নি। কেননা নারীদের স্বভাবে সাধারণত তাড়াহুড়ো করার প্রবণতাটা বেশি। বড্ড ইম্পালসিভ! তাই তাদের তালাকের ক্ষমতা দিলে ছোটখাটো বিষয়েও তাড়াহুড়ো করে তালাক দিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা বেশি। সুতরাং অধিক পরিমাণে বিবাহবিচ্ছেদ রোধেই ইসলাম নারীদের তালাকের ক্ষমতা দেয়নি।

 

বহিরাগত হিসেবে আমি মনে মনে রিভাইস করছিলাম ইসলাম শাস্ত্রে তালাকপ্রাপ্ত নারীদের সম্মান নিয়ে কী বলা রয়েছে।

'তালাক' শব্দটি নাকি অত্যন্ত ঘৃণ্য। আল-কোরআন জানাচ্ছে – ‘কোনও লোক এই শব্দ উচ্চারণ করলে তাতে নাকি "আল্লার সিংহাসন কেঁপে ওঠে ।" -এটা জ্ঞান হওয়ার পর থেকে নিজের বাপ-চাচা, পাড়ার মোল্লা, মাস্তান, হাজি এবং পাজি সকল শ্রেণির মুসলমানদের মুখেই শুনেছি ।
তা এমন কাঁপাকাঁপি বাচক ঘৃণ্য শব্দ আল্লাহ্‌ তাঁর বইয়ে স্থান দেন কেন? বললেই তো পারতেন , ‘বিয়ের ঝামেলা কাঁধে বেশীদিন বইতে না পারলে নিজ নিজ সম্মান নিয়ে নাগরিক দেশের আইন অনুযায়ী স্বাধীন ভাবে বাঁচাই শ্রেয়।’ এতই যদি ‘তালাক’ শব্দে আল্লার চেয়ার টলমল করে তবে দুনিয়াজুড়ে যে হারে ফোনের এসএমএসে, হোয়াটস্যাপে, চিরকুটে, মেসেঞ্জারে, টিস্যু পেপারে পুরুষরা তালাক দিচ্ছে, তাতে তো তাঁর চেয়ারচ্যুত হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার কথা! 

প্রশ্নটি মুমীনদের করলে রে রে করে তেড়ে আসে, ‘ইসলাম বাঁচাও!’ স্লোগান তুলে। মজার বিষয় হল, তালাকপন্থী মুমীনরা যেটা না বোঝার ভান করে ধর্মান্ধ সেজে থাকে তা হল- যে আল্লাহ্‌ তাঁর সিংহাসন টলিয়ে দেওয়ার মত তালাকপ্রাথার হক্‌ দেন শুধু পুরুষের হাতে, সেই একই আল্লাহ্‌ নাকি নারীদের দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান। সেটা কেমন, তালাক নিয়ে কোরান  কী বলছে একটু দেখে নিই –

“তুমি যদি স্ত্রীর অবাধ্যতা কিংবা আনুগত্যের কিছু অভাব অনুভব কর ,তবে
(ক) সর্বপ্রথম সবর কর এবং তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মানসিক ভাবে তাকে সংশোধন কর। এতে যদি কাজ হয়ে যায় তাহলে বিষয়টি এখানেই মিটে গেল ।
(খ) আর যদি এতে কাজ না হয় তাহলে তাকে সতর্ক করার জন্য এবং নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে একই ঘরে পৃথক বিছানায় শয়ন করবে।
(গ) আর যদি এটাতেও কাজ না হয় তাহলে তৃতীয় পর্যায়ে স্ত্রীকে প্রহার কর । "

 

উল্লেখ্য এখানে, " তুমি" হচ্ছে মানুষ, অর্থাৎ পুরুষ । ইসলামে কোরআন সম্মত ‘মানুষ’ হল একমাত্র ‘পুরুষলোক', মহিলারা সেই 'তুমি'দের সম্পত্তি ।

ইসলামের নবীরা তাই নারীদের উদ্ধার এবং সম্মান প্রদানের জন্য কেবল বিয়ের পথই বেছে নিয়েছিলেন। অন্য কোনওভাবে স্ত্রীজাতির উদ্ধারের (!) কথা মনে আসেনি তাদের। মগজাস্ত্রে শান দিয়ে পড়লে দেখা যাবে ধর্মীয় কেতাবে ছড়িয়ে রয়েছে কীভাবে আল্লাহকে শিখণ্ডী খাড়া করে, তাঁর বানীকে সুবিধা মতো স্থানে ব্যবহার করে নবীরা ৬ থেকে ৫৬ অবধি সব বয়সী মেয়েদের যত্রতত্র বিয়ে করে তাদের ‘উদ্ধারের’ জন্য সারা জীবন নানা ধর্মীয় বাণী  কপচে 'জাহান্নামের আগুন' থেকে সতর্ক করেছেন,আল্লাহ্‌ নামক জুজুর ভয়ে তাদের সম্পত্তি হাতিয়েছেন, 
অথবা মারধর করে 'উচিত শিক্ষা দিয়েছেন। যেহেতু ধর্মটির উৎস নানাবিধ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এবং দু’খানা বিশ্বযুদ্ধ ও অগুনতি গৃহযুদ্ধ পরবর্তী কালেও আজকের ভোগবাদী বিশ্বায়নের প্লাস্টিক যুগেও এটির তেমন  কোন সংস্কার হয় নি, তাই আজকের একবিংশ শতকেও ধর্মান্ধ মুমীনরা বিগত দেড় হাজার বছর ধরে মেয়েদের নিজেদের সম্পত্তিই মনে করে। 

 

পুরুষের ব্যাভিচার নিয়ে কোনোদিন ধর্মীয় কেতাব কথা বলে না। অথচ ইতিহাস- হাদিস- পুরাণ সবাই সাক্ষী - পৃথিবীতে সবচেয়ে ব্যাভিচারি জাত – পুরুষ, সে সাধু বামুন হোক বা মুমীন। কিন্তু সব আইনের দণ্ডমুণ্ড পুরুষের হাতেই ন্যস্ত কেবল মেয়েদের শায়েস্তা করার জন্য! সেইজন্যই শত অত্যাচারেও মেয়েদের তালাকের অধিকার দেয় নি শরিয়ত। অধিকার দিলে দিনের পর দিন মেয়েদের জাহান্নামের আগুনের জুজু দেখিয়ে দমিয়ে, কাঁদিয়ে, পরাধীন করে রাখা যেত না। মিথ্যে সংসারকে টিকিয়ে রাখতে 'পাপ- পুণ্য - জান্নাত-জাহান্নাম ' ইত্যাদির জুজুতে মেয়েদের মুরগী করা যেত না। - এই হক কথাটা আল্লার সাচ্চা-বাচ্চারা জানে। তাই অশিক্ষিত দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণির মুসলিম নারীদের জন্য ইসলাম এক মোক্ষম আফিম শুঁকিয়েছে – জেনে রেখ ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান ।

 

১। শায়রা বানু (বিয়ের ১৫ বছর বাদে সামান্য ঝগড়ায় তিন তালাক দেওয়া চিরকুট চিঠি পেয়েছেন স্বামীর কাছে )

২। ইশরাত জাহান ( পরপর কন্যা সন্তান জন্মের খেসারত হিসেবে টেলিফোনে তিন তালাক পেয়েছেন)

৩। গুলশান পারভীন ( বনিবনা হচ্ছে না তাই হঠাৎ স্বামীর কাছ থেকে ১০টাকার স্ট্যাম্প পেপারে তিন তালাক পেয়েছেন )

৪। আফ্রীন রহমান ( ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইট ঘেঁটে বিয়ের পরে বছর ঘোরার পরেই অতিরিক্ত পণের ঝামেলায় স্পীড পোস্টে তিন তালাক পেয়েছেন )

৫। আতীয়া সাবরি ( কন্যা জন্মের খেসারতে চিরকুটে তিন তালাক পেয়ছেন হঠাতই )

এরাই সেই পাঁচজন সাহসিনী যাঁদের ইসলাম নাকি এভাবেই 'সর্বোচ্চ সম্মান' দিয়েছিল! তাঁদের দীর্ঘদিনের লড়াই, মামলা অবশেষে আদালত শুনেছে। কিন্তু পালটা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ‘মুসলিম ল' বোর্ড’ যে মুসলিম মহিলাদের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়, তা বোঝা যায় তাদের কিছু প্রতিনিধি যখন ‘পলিগ্যামী’ নিয়ে আম টিভিতে বলেন, "যাতে রাগের মাথায় বৌকে খুন না করে ফেলে তাই তো তালাক থাকার বিধান ! এটা তুলে দিলে মুসলিম সমাজ মেনে নেবে না ।" অথবা " তালাক ও চার বিবাহ মুসলিমদের সুন্নত, নইলে মেয়েরা রাস্তা ঘাটে সুরক্ষিত থাকত না। রেপ হত ! "-এমন অসুস্থ চিন্তাভাবনা ১৪০০ বছরের ধামাধরা আফিম-খোররাই করতে পারে ।
এদের কথাতেই স্পষ্ট মুসলিম বিবাহে তালাক দেওয়া মানে অন্য আরেকটি বিয়ে করার পথ সুগম করা। পুরুষের জন্যই এই ইন্সট্যান্ট তালাক দেওয়া ও কিছুদিনের মধ্যেই নতুন বিয়ে করাটা ধর্ম সম্মত।

জমিয়তে হিন্দ হোক বা পার্সোনাল ল' - নিজেদের মত ইনিয়ে বিনিয়ে একটা বিষয়ই প্রতিষ্ঠা করছে যে,  'নিকাহ ' (হিল্লা বিবাহ ও মুতা বিবাহ সহ ) ব্যাপারটা মুসলিম পুরুষের বহুগামীতার ছাড়পত্র শরিয়ত নিয়মে।

শরিয়তপন্থী ও মোল্লাতন্ত্রের ধারকবাহকগন নিজেদের সুবিধাবাদী রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থানের জন্য তালাক ও নিকাহ হালালা-র সমর্থন করবেন সেটা সহজবোধ্য। তবে হাস্যকর অবস্থান শিল্পী-সাহিত্যিক শ্রেণির তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠির’। টক্‌-শোগুলোয় দেখেছি আরবী নামধারী স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী প্যানেলে যাঁরা বসেন, তাঁরা এটা প্রমাণেই ব্যস্ত থাকেন যে কীভাবে কোরানের  ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। মজার কথা হলো এঁরা কিন্তু কোনও দিন ভুল সংশোধনের দাবি তোলেন না বা উদ্যোগী হন না। উলটে প্রতিটি কথায় প্রাচীন ধর্মীয় পুস্তককে হাতিয়ার করে তাঁরা ঠিক-ভুলের ভুলভুলাইয়াতে নারী সম্মান/ অধিকারের আসল টপিক ভুলিয়ে দিয়ে মহিলাদের সমানাধিকার ও সুরক্ষা বিধির বিষয়টাই ভণ্ডুল করে দেন। যে বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী চাইলেই নানা যুক্তি বোধ দিয়ে তাঁদের শক্তিশালী কলম ও কথার মাধ্যমে আসল পয়েন্টে জোরদার সওয়াল করতে পারতেন, সেটা না করে তারা ‘সাপের মুখে চুমু আবার ব্যাঙের মুখেও চুমু খেয়ে’ দুকূল বাঁচানোর একটা নোংরা খেলা খেলেন, যাতে মূলত প্রচার পায় - ধর্মীয় বিধানগুলি আদপে ভাল, কট্টরপন্থীরাই খারাপ ব্যাখ্যা করে নাকি পিছিয়ে রাখছে আমাদের! নিঃসন্দেহে এরাই সমাজের সবচেয়ে ভয়ংকর শ্রেণি! নইলে তাঁরা মুসলিম ‘নিকাহ’ নিয়ে মুখ খোলেন না কেন?

নিকাহ হালালা, হিল্লা বিবাহ এবং মুতা বিবাহ - মুসলিম মেয়েদের ‘ধর্মসম্মত গনিকা’ বানানোর কোরানসিদ্ধ বিধান। এখনও দেশের নানা প্রান্তের অজ গ্রামের খাপ-পঞ্চায়েত বহু মেয়েদের জীবন শেষ করে দেয় এইসব বিধান দিয়ে। এ প্রসঙ্গে পাই –

মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন -- 
"... তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ্‌র হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। " ( সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২:২৩০। )

"এক স্বামী তার স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে তালাক দিয়েছে। সেই স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বিবাহ করল। সেই পুরুষ মহিলাকে তালাক দিয়ে দিল। মহিলাটির আগের স্বামী তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে কি না? বিবি আয়েশা উত্তর দিলেন ততক্ষণ হবে না যতক্ষণ না সে মহিলাটি ঐ পুরুষটির সাথে যৌন সঙ্গমের মিষ্টি স্বাদ উপভোগ করেছে।"

(মালিক মুয়াত্তাঃ হাদিস নম্বরঃ ২৮/৭/১৮। )

এসব অসুস্থ প্রাগ-ঐতিহাসিক ধর্মীয় বিধান থেকেই স্পষ্ট, ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডে’র নামে এক সম্প্রদায়ের জন্য শরিয়তি নিয়ম প্যারালালি চালু রেখে এবং ভারতের মত সর্বধর্মের দেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের Article 25 (freedom of conscience and free profession, practice, and propagation of religion.) Article 26 (freedom to manage religious affairs.) এবং Article 29 (the protection of language, script, and culture of minorities.) কে ঢাল বানিয়ে আক্ষরিক ভাবেই Right to Equality (Articles 14-18)–র মত সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকারকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সংবিধান অবমাননাই শুধু না লঙ্ঘন করা হচ্ছে ।

মুসলিম পার্সোনাল ল’ –য়ের মতো শরিয়তি আইনব্যবস্থা চালু রাখা, উক্ত তিন প্রকার অমানুষিক বিয়ের চল এবং তিন তালাকের মত ঘৃণ্য বিধান চালু রাখা মোল্লাতন্ত্রের ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বাভাবিক। আল্লা এবং রসুলকে ঢাল এবং উদাহরণ বানিয়ে আদালতে মেয়েদের যোনী সর্বস্ব পরিচিতিকে খুলে আম প্রদর্শন করার জন্য ১৪০০ বছর আগে বানানো কিছু নিয়ম তুলে ধরাটা কতখানি অমর্যাদাকর ও অন্যায় তা আফগানিস্থানসহ তালিবান শাসিত দেশে দেখা যায় হামেশাই। কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের ক্ষেত্রে তা কাম্য নয় মোটেই। 

                এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, খুব ছোটবেলায় ১৯৯৬ -৯৭ সালের ঘটনা। বাবার গ্রামের এক মহিলার কথা।  সবেদাগাছের নিচে বিচার বসেছে। মহিলার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে স্রেফ এই সন্দেহে (অজুহাতে) যে তাদের কন্যা সন্তানটি আসলে তার ঔরসজাত নয়, স্বামীর মামার ঔরসজাত। এবার মুরুব্বিদের বিধানে সেই মহিলার নিকাহ হল মামাশ্বশুরের সাথে। বছর খানেকের একরত্তি শিশুমেয়ে একবার এ বাড়ি একবার ওবাড়ি করে দিন পার করছে। পরে প্রাক্তন স্বামীটি কোনো এক কারণে মারা যায় এবং মামাশ্বশুরের শারীরিক খিদে মেটার পর সেও তাকে তালাক দেয়। তদ্দিনে এই মহিলা দ্বিতীয়বার গর্ভবতী।
এবার প্রথম সন্তানের বাবা কে? প্রশ্নের সাথে আরেকটি জুড়ে যায়, দ্বিতীয় সন্তানের ভবিষ্যৎ কী ? -- এইসব বিষয়ে কাজিয়া উঠলে গাঁয়ের মুরুব্বিরা বিধান দেয় - ওই বাচ্চাটি যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হত তাহলেও উত্তরাধিকার সম্পত্তি আদায় নিয়ে ভাবনার অবকাশ ছিল । 
কিন্তু শরিয়ত মেয়েদের জন্য সেসব অধিকার রাখে নি ... ইত্যাদি ইত্যাদি ।
একজন নাবালিকা শিশু আর একজন অনাগত প্রাণের ভবিষ্যৎ সেদিন কী লেখা হয়েছিল তা জানার বা বোঝার ক্ষমতা আমার ছিল না ।
শুধু এটুকু খবর পেয়েছিলাম ওই মহিলাকে বাড়িছাড়া করা হয় এবং একদিন দূরের এক পুকুরে তার লাশ পাওয়া যায় ।

----'ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান'– এভাবেই নিরক্ষর অসহায় মেয়েদের লাশ বানিয়ে প্রমাণিত হয় বারবার, যুগের পর যুগ ধরে।

 

 (তালাক বিলের ৬ বছর পূর্তি-তে পুরনো প্রসঙ্গে আবারও লিখতে হলো) 

লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক 

ছবি : সংগৃহীত 

                                                          

0 Comments

Post Comment