- 19 June, 2025
- 0 Comment(s)
- 92 view(s)
- লিখেছেন : সরিতা আহমেদ
-" জানিস তো ছেলেরা একটু ইমম্যাচিওর হয়। ৩০বছরে দুই সন্তানের বাপ হলেও উনি নিজেই একটা বাচ্চা ওনাকে সামলাতেও কম খাটনি নেই। কিচ্ছু পারে না, জানিস! এক্কেবারে ছেলেমানুষ।"
-"আমার বর রান্না করতে ভালবাসে। কিন্তু আমিই ওকে রান্না করতে দিই না। নইলে ছেলেমানুষের মত এমন নোংরা করবে সেই আমাকেই পরিষ্কার করতে হবে। কী দরকার! কালেভদ্রে স্পেশাল ডিশ নিজে বানিয়ে নিতে পারে- এই ঢের ।"
এসব মুখোরোচক খবর ভাসে বাতাসের খেয়ালি খামে। বাসে, স্কুলের স্টাফরুম কেচ্ছায়, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার গসিপে। আপনারাও পান নিশ্চয়। আশেপাশে কানখোলা রাখলে এমন কথারা এমনি ভেসে বেড়ায়। গর্বিত স্ত্রী, মায়েরা তাদের বাড়ির কর্তাটির ‘ছেলেমানুষি’ প্রমাণে ব্যস্ত থাকেন।
আমি একবার সরল মনে বলেছিলাম, ‘যেসব ছেলেমানুষ মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে বৌ পেটায় তারাও কি এই দলে? বা যারা নিছক ছেলেমানুষি করে একের পর এক বাচ্চার বাবা হয় অথচ সংসারের হাঁড়ির হালের খবর রাখে না, তারাও ?’
তাতে উত্তর পেয়েছি, ‘ওসব হল বজ্জাত শ্রেণি। আমাদের কর্তারা আর ওরা এক হল?’
আমি ভালো শ্রোতার ভুমিকায় থেকে যাই। কারণ জীবন শিখিয়েছে বোবার শত্রু নেই।
রাজা থেকে প্রজা সবাই যখন এক কথা বলে, তখন ছেলেমানুষি নিয়ে প্রশ্ন না তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
রাজনীতির ময়দান হোক, নেতা নেত্রীর কোঁদল হোক বা ধর্মের দালানকোঠা- ছেলে নামক শ্রেণিটা বেশ একটা ‘দায়িত্বহীন ক্ষমতা’ ভোগ করে ।
এই যে কামদুনী, মধ্যমগ্রাম, পার্ক স্ট্রিট, সালকিয়া, নদীয়া সবেতেই ‘ছেলেমানুষি’ করে তারা দিব্যি নেত্রীর গুডবুকে নাম তুলছে ।
-"ওই মেয়েই নিশ্চয় প্ররোচনা দিয়েছিল। ছেলেমানুষি যায়নি এখনো, তাই করে ফেলেছে। ছেড়ে দিন।"
-'আরে রেপ আবার কী! ও তো জাস্ট মজা করা ! আর মেয়েটির দোষও কি কম! অত সুনসান জায়গায় ভরদুপুরে কী করতে গিয়েছিল? আরও মেয়েরা কাজ করে ,কই তাদের সঙ্গে তো এমন হয় না!"
-"তাপস পাল নাহয় একটা ফিল্মি ডায়লগ মেরে ছেলেমানুষের মত বক্তৃতা দিয়েছিল। তো কী চান, ওকে মেরে ফেলব! বলল তো ‘ভুল করেছে’, ক্ষমা করে দিন ।"
“অনুব্রত বাচ্চা ছেলে, মাথায় অক্সিজেন কম ওঠে। ওসব কথা ধরতে নেই!”
চারিদিকে এমন অনেক ছেলেমানুষ চোখে পড়ে। বেশ মজার ব্যাপার। সমাজে একটা শ্রেণি ১৮ এ সাবালকত্ব পায়, ভোটাধিকার পায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিয়ের লাইসেন্স পায় এবং স্বাধীন নাগরিক হিসেবে গণ্য হয়।
কিন্তু ৪১-এ পৌঁছেও তার ‘ছেলেমানুষি’ ঘোচে না ।
কিন্তু মেয়েমানুষির জন্য এমন কমপ্লিমেন্ট দিতে আজও কাউকে দেখি না ।
ছোটবেলায় ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়ে উচ্চস্বরে হাসার জন্য বাবার কাছে কষে থাপ্পর খেয়ছিলাম 'বেহায়া'র হাসি বলে!
জীবনের প্রথম সরকারি চাকরিটা পেয়েও পরিস্থিতির চাপে ছেড়ে দিয়েছিলাম বলে বাবা বলেছিলেন,"আজ যে ছেলেমানুষি করলে, খুব পস্তাবে।"
পরে যখন সেই একই চাকরি পেয়ে যোগ দিলাম তখন ছেলেমানুষি করে একবছর বাড়ি যাইনি । এই জেদ আমায় নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। কাছে টানেনি।
আশ্চর্য হইনা যখন আমার মেয়েমানুষির জন্য স্বজনদের বিব্রত হতে দেখি, আহ্লাদিত নয়। আমার এক দাদা ডিউটি সেরে বাড়িতে ঘুমায়, সাংসারিক দায়িত্ব এড়িয়ে নেশার ঘোরে টিভিতে মশগুল থাকে সারাদিন। তার ছেলেমানুষি আস্কারা পায়।
আমায় কিন্তু ‘পাগলা দাশু’ পড়ার জন্য শুনতে হয়েছে "বিয়ের বয়স পার হচ্ছে, এবার খুকুমি ছাড়।"
সত্যিই তো !
'ছেলেমানুষি' একটা রাশভারি গুণ। মেয়েরা সে যতই শিক্ষিত হোক ওজিনিস নিয়ে জন্মায়নি ।
*ইভ টিজ করো : ছেলেমানুষি বলে থানা অভিযোগ নেবে না ।
*রেপ করো : প্ররোচনার দ্বারা কৃত ছেলেমানুষি বলে তাবত অভিযোগ 'সাজানো ঘটনা' বলে প্রমানিত হবে।
*প্রেমিকা সুইসাইড করেছে : এত সিরিয়াস হলে হয়! জাস্ট ছেলেমানুষি করে ঝগড়া হয়েছিল তো !
*বৌকে তিন তালাক দাও : মদের ঘোরে ছেলেমানুষি করে বলে ফেলেছে বলে সরি চাইবে ।
*ঘরে ঢুকে রেপ করে দেবার হুমকি দিয়েছ : ও কিছু না, ছেলেমানুষি করে অমন কথা বলাই যায়।
* ফোনে অশ্লীল মেসেজ, ছবি আসছে: আরে ইগনর কর, ছেলেমানুষির কাণ্ড!
ইত্যাদি।
এরা সত্যিই ভাবাত না। কিন্তু যখন দেখি ছেলেমানুষির সব আফটার এফেক্ট মেয়েমানুষদেরই ভুগতে হয়; 'ছেলেমানুষি' হাসতে হাসতে মানুষ খুন করে, আর মেয়েমানুষের হাসি বেহায়ার , বেশরমের দোষে দুষ্ট হয় -তখন, শরমের অণ্ডোকোষে লাথি মেরে জানতে ইচ্ছে হয়, ফ্রীর ‘ছেলেমানুষির’ মধ্যে ‘মানুষ’ কতটা আছে?
প্রতিদিন 'ছেলে' আর 'মানুষি'-র দূরত্ব বাড়তে দেখি। তাতে অবশ্য কারুর শরমের কিছু দেখি না ।
0 Comments
Post Comment