অমরা- একটি একমুখী আলাপচারিতা

  • 23 December, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 738 view(s)
  • লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
গত সপ্তাহে যে আমরা নিজেদের মৃত্যুর মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছিলাম। খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম প্রকৃতির সামনে আজও, এখনও মানুষ কতখানি অসহায়। কতখানি একা। আজ আমার নবাগত শৈশবের যে শারীরিক অবস্থা – তার জন্যও কি ... ? আমি দুঃস্বপ্ন থেকে ধড়মড় করে জেগে উঠেছিলাম। আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। পরিবেশ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে, সত্য ঘটনা অবলম্বনে একটি একমুখী আলাপচারিতা।

অমরা (ইংরেজিতে প্লাসেন্টা) – যে বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে মাতৃ-জরায়ুতে ক্রমবর্ধমান ভ্রূণ এবং মাতৃ-জরায়ু কলার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাকে অমরা বলে।

[১]

৩১শে ডিসেম্বর, ২০১৯, সিডনি, রাত আড়াইটে

আমার তখন সবেমাত্র জ্ঞান ফিরেছে। উইলকে দেখলাম খাটের পাশে দাঁড়িয়ে। ওর চোখের তলায় ঘন হয়ে কালি পড়েছে। তবু সে হাসছিল। শেষ কয়েকটা সপ্তাহ যা গিয়েছে। ওর ক্লান্ত হয়ে পড়াটা স্বাভাবিক। উইল হাসছিল। ও আমার হাতটাকে আলতো করে নিজের মুঠিতে নিল। “জেসমিন, তোমার দেওয়া নামটাই থাকবে,” উইলের চোখে কি জল ? আমার শরীরটা তখনও কেমন জানি অবশ হয়ে রয়েছে। তবু আমি আলতো করে উঠে বসতে চেষ্টা করছিলাম। আমাদের জীবনের অন্যতম সুন্দর এই মুহূর্ত। আমি ফিসফিস করে আবারও একবার সেই নামটাকে উচ্চারণ করতে চাইলাম। “জেসমিন – জেসমিন ...” আমার চোখে কি জল ? বড্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। হয়েই চলেছে। আমি একটু ঘুমোতে চাই। পৃথিবীর সব মায়েদেরই কি এরকমটা কষ্ট পেতে হয় ? প্রতিটা জন্মের পর ? প্রতিটা দিন ...

নার্স এসেছে। সে কেমন একটা অদ্ভুৎ চোখে আমার দিকে তাকাল। “আপনারা সত্যিই কেয়ারলেস!” খটাস করে কথাটা আমার কানে এসে লাগল। এরকমটা বলার কি কারণ ? উইল রেগে উঠতে যাচ্ছিল। কিন্তু তারপরেই নার্স যে কথাটা বলল, আমাদের দুজনেরই মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল। “বেবিকে আমরা ইনকিউবেটরে দিয়েছি। প্রায় এক মাসের প্রিম্যাচিওর বেবি, ১কেজি ৭০০গ্রামেরও কম ওজন। ওর শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে। এখন এভাবেই রাখতে হবে। কিছু করার নেই।” জানালা দিয়ে আমরা তখন সিডনি হারবারের উপর বর্ষবরণের জমকালো সমস্ত আতসবাজিগুলোকে সশব্দে একের পর এক ফাটতে দেখছিলাম।

নার্স আবারও বলল, “স্মোকিং করেন সেটা বুঝি, কিন্তু তাই বলে প্রেগন্যান্সির সময়েও সেটাকে একটু কমানো গেল না ? এতে তো শুধু আপনার নয়, আপনার বাচ্চারও তো ক্ষতি। এই সামান্য ব্যাপারটাকে কেন যে আপনারা বোঝেন না ?” সে হাত নেড়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে আবারও ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আমি উইলের দিকে তাকালাম। জীবনে কোনোদিন সিগারেট বা তামাকজাত কোনও দ্রব্যের দিকেই তো আমি ফিরে তাকাইনি। সেই আমি – আমাকেও কি না শেষে এইরকমটা শুনতে হল। উইল আমার হাতটার উপরে একটু জোর দেয়, “আমি কালই ডক্টরের সঙ্গে কথা বলব। কোথাও নিশ্চয়ই কিছু ভুল হচ্ছে। সব ঠিক হয়ে যাবে ডার্লিং। চিন্তা কোরো না। জেসমিনের আমি কিচ্ছুটি হতে দেব না,” উইল আমার কপালে চুমু খেল। আমার সত্যিই তখন খুব ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছিল। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর এক ঘুমের পৃথিবীতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি আবারও ঘুমিয়ে পড়লাম, আর সেই কোয়ালাটা আবারও আমার স্বপ্নে ফিরে এল।

[২]

বুশফায়ারের মরসুম বড় ভয়ঙ্কর সময়। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বড় হয়েছে অথচ বুশফায়ারের কথা জানেনা বা শোনেনি, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। প্রায় প্রত্যেক মানুষেরই বংশের ইতিহাসে কোনও না কোনও সময় অস্ট্রেলিয়ান বুশফায়ারের কবলে পড়ে সর্বস্ব খোয়ানোর অতীত রয়েছে। তবু নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশের এই কোবার্গোতেও যে আমাদেরকে কোনওদিন বুশফায়ারের কবলে পড়তে হবে, এমনটা আমরা কখনও - কোনও দুঃস্বপ্নেও ভেবে উঠতে পারিনি। ২৪শে ডিসেম্বর, রাত তিনটের সময় উইল যখন আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে বলল, “আমাদেরকে এক্ষুণি বেরুতে হবে। আগুনের শিখা এখন কোবার্গো শহরের মূল প্রবেশতোরণের ২০০মিটারেরও বেশি কাছে চলে এসেছে,” আমি প্রথমটায় নির্বাক চেয়েছিলাম। আমাদের এই প্রদেশকে ঘিরে যে বনাঞ্চল, তার অধিকাংশই যে চিরহরিৎ অরণ্য! সেই ডায়নোসরদের আমল থেকে যে অরণ্যের সূত্রপাত। কোনওদিনও তো সেই বনাঞ্চলে আগুন লাগেনি। অস্ট্রেলিয়া দাবানল-প্রবণ দেশ হলেও, লাগেনি। পরের পর খরার বছরে, বিশ্ব-উষ্ণায়নের চরমতম ভ্রুকুটি যখন কার্যত দোরে এসে দাঁড়িয়ে কড়া নাড়তে শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছিল, তখনও লাগেনি। আমরা সকলেই তাই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের সপক্ষেই সগর্বে, উৎসাহ-সহকারে মত দিয়েছিলাম। আমরা জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহারকে বন্ধ করতে চাইনি। এমনকি আমাদের প্রতিবেশীর মেয়ে জিনা যখন তার স্কুলপড়ুয়া বন্ধুদের দ্বারা আয়োজিত একটি পরিবেশ-সংক্রান্ত প্যারেডে আমাকে এবং আমার স্বামীকে নেমন্তন্ন করতে এসেছিল – আমরা উলটে তাকে পড়াশুনোর দিকে মন দিতে বলেছিলাম। এমনকি মিসেস ফিগ (জিনা’র মা)কেও এই ব্যাপারে আমরা সতর্ক করে দিয়েছিলাম। জিনা বলেছিল, আমাদের মহাদেশ ক্রমশই শুষ্ক থেকে আরও শুষ্কতর হয়ে উঠতে শুরু করেছে। জীবাশ্ম জ্বালানির উপর আমাদের যে ভয়াবহ নির্ভরতা, এবং পরিবেশবান্ধব শক্তি-উৎসগুলিকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের যে চরম অনীহা – তাই আমাদের চরম বিপদকে টেনে আনছে। বিশ্ব-উষ্ণায়নের প্রভাব বাড়তে শুরু করলে অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের মতো উপকূলে ঘেরা এই সমস্ত দেশগুলিতেই নাকি সবচেয়ে বেশি করে তার প্রভাব পড়বে। আমরা কিঞ্চিৎ বিরক্তি নিয়েই ওর কথা শুনেছিলাম। মনে মনে বলেছিলাম, আজকালকার ছেলেমেয়েরা সব দুপাতা কোনওমতে পড়তে না পড়তেই নিজেদেরকে বিজ্ঞানী ভেবে ফেলেছে। আসলে আমরা বুঝিনি কি মারাত্মক সময় আসতে চলেছে। গত সপ্তাহে যে আমরা নিজেদের মৃত্যুর মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছিলাম। খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম প্রকৃতির সামনে আজও, এখনও মানুষ কতখানি অসহায়। কতখানি একা। আজ আমার নবাগত শৈশবের যে শারীরিক অবস্থা – তার জন্যও কি ... ? আমি দুঃস্বপ্ন থেকে ধড়মড় করে জেগে উঠেছিলাম। আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল।

আমার খালি খালি করে মনে পড়ছিল সেই সময়টা। সেই ভোররাত্তিরের গাঢ় অন্ধকার, আর দিগন্তজোড়া সেই আগুনের লেলিহান শিখার মাধ্যমে জ্বলে ওঠা লাল আকাশ। সেদিন কোনওভাবেই হাতে পালাবারও সময় ছিল না। কোনওমতে কিছু শুকনো খাবার, দরকারি ওষুধ আর ডাক্তারের কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে আমরা গাড়িতে চেপে বসেছিলাম। কোবার্গো থেকে সিডনির দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। কিন্তু গাড়ি নিয়ে এগুবই বা কিভাবে ? খানিকদূর যেতে না যেতেই শুনছি আগুনের ফলে অমুক হাইওয়ের উপরে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথবা দেখছি রাস্তাজুড়ে পুলিশ আর দমকলের এঞ্জিন দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর এগুনো যাবে না, তারই নির্দেশ সর্বত্র। সকাল হয়ে গেলেও আকাশটা যেন অদ্ভুৎ ভাবে এক গেরুয়া-কালো ধোঁয়াটে আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে রয়েছে। সে এক অদ্ভুৎ কাল। যে না দেখেছে সেই দৃশ্য, তাকে কেবল কথার মাধ্যমে সেই অবস্থাকে বোঝানো চলে না। তারপর হঠাৎই সমস্তটা অন্ধকার হয়ে এল। ছুটে এল প্রচণ্ড হাওয়া আর ছাইগুঁড়োর ঝড়। কোথাও কিচ্ছুটি দেখা যাচ্ছে না। আমি তখন আমার পেটের ভিতরকার পিণ্ডটাকে জড়িয়ে ধরে বসেছিলাম। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিলাম, যেন সে বেঁচে যায়। পাইরোস্টর্মের কথা এতদিন সিনেমা-টেলিভিশনেই দেখেছি। স্বচক্ষে কোনওদিন সেই ‘সায়ান্স-ফিকশন’কে বাস্তবরূপে সংঘটিত হতে দেখব তেমনটা ভাবিনি। প্রচণ্ড সেই আগুনে ঝড়ের মধ্যেই আমরা বিস্ফারিত চোখে দেখেছিলাম ছটফট করতে করতে ক্যাঙ্গারুরা আগুনের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে। আমরা চার-পাঁচটা পুলিশের গাড়ির পিছনে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেই সময়েই, আমি প্রথম সেই কান্নাটা শুনেছিলাম।

হুবহু মানুষের গলায়। হুবহু সেই একই আকুতি। আমি চোখ চেয়ে তাকাতে পারছিলাম না। অস্ফূটে উইলের হাতদুটোকে জড়িয়ে ধরে ওকে বলেছিলাম, “প্লিজ কিছু করো। প্লিজ ওকে থামাও।” আমরা এতটুকুও এগুতে পারছিলাম না। আমরা এতটুকুও পেছুতে পারছিলাম না। আমরা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিলাম আমাদের পৃথিবীকে আমরা ঠিক কোন জায়গাতে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়েছি।

সর্বাঙ্গ ঝলসে যাওয়া কোয়ালাশাবক একটি। হাইওয়ের উপরে এসে কোনওমতে বসে পড়েছে। এরপর আর এতটুকুও এগুবার শক্তি নেই। পুড়ে কাঠ হয়ে যাওয়া দুটি হাত আকাশের দিকে তুলে সে কাঁদতে চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড কষ্ট তার। উইল তাকে জল দিতে গেল। হাঁ করে সে জল খাচ্ছে। উইল হাত দিয়ে তাকে ছুঁতে চেষ্টা করল। সে চিৎকার করে কেঁদে উঠল আবার। একদম মানুষেরই মতো। যন্ত্রণায় সে পুড়ে যাচ্ছে। তাকে ছোঁয়া যাচ্ছে না। পুলিশদের মধ্যে দুজন কোত্থেকে যেন একটা নরম সাদা ভেজা তোয়ালে নিয়ে এসে, আলতো হাতে বাচ্চাটিকে জড়িয়ে নিল। পরিত্রাহি সেই কান্না আর চিৎকার। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন সেই কান্নার শব্দ আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে। আমি আর কারো কাছে ক্ষমা চাইতে পারব না।

আমরা আমাদের ঈশ্বরকে পুড়িয়েছি। আমরা আমাদের ধরিত্রীকে পুড়িয়েছি। আমরা সকলে ‘আমাদের’ এই পৃথিবীটাকে চিরতরে পুড়িয়ে শেষ করে ফেলতে অবদান রেখেছি। আমি আমার পেটের ভিতরকার বেড়ে উঠতে চাওয়া সজীব পিণ্ডটার উপরে আবারও হাত রাখি। এ কোন পৃথিবীতে আমি তাকে নিয়ে আসতে চলেছি। অনেকদূর থেকে আমি তখনও সেই কোয়ালাটার কান্নাকে শুনতে পাচ্ছিলাম। “আমাদের ঈশ্বরকে আমরা পুড়িয়েছি উইল, পুড়িয়ে শেষ করে ফেলেছি,” আমি ওর হাতটাকে নিজের হাতের ভিতরে নিতে নিতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলাম। উইল কোনওমতে আমাকে নিয়ে সিডনি পৌঁছল।

[৩]

অমরা (ইংরেজিতে প্লাসেন্টা) – যে বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে মাতৃ-জরায়ুতে ক্রমবর্ধমান ভ্রূণ এবং মাতৃ-জরায়ু কলার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাকে অমরা বলে।

৩১শে ডিসেম্বর, ২০২০, কোবার্গো, নিউ সাউথ ওয়েলস

খবরে প্রকাশ, ২০১৯এর ভয়াবহ দাবানলের কারণে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের প্রায় ২১% সবুজ বনাঞ্চলই সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। প্রায় ইউরোপ মহাদেশের সমপরিমাণ এলাকার আকাশ জুড়ে সেই দাবানলের ধোঁয়া বিস্তৃত হয়েছে। এই আগুনের ফলে অন্তত ৩০০ কোটি – হ্যাঁ, অন্তত ৩০০ কোটি জীবজন্তু এই আগুনের ফলে মারা গিয়েছে।

সেই সময় যাঁরা সিডনিতে বসবাস করেছেন, দাবানলের ধোঁয়ার কারণে সিডনির আকাশের রঙ আরও অন্যান্য সমস্ত অঞ্চলের মতোই একেবারে পালটে গিয়েছিল। সেই আগুনবরণ আকাশের নীচে যাঁরা দিন কাটিয়েছেন, দাবানলের ধোঁয়ায় প্রতিদিন শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছেন – ডাক্তারি শাস্ত্র অনুযায়ী প্রতিদিন তাঁদের ফুসফুসে অন্ততপক্ষে ৩৭টি সিগারেটের সমপরিমাণ কার্বনজাত দূষিত পদার্থ প্রবেশ করেছে। তাই আমাদেরকেও নার্স প্রথমে ধূমপায়ী বলে সন্দেহ করেছিল। এক বছর আগে, আজকের দিনে আমার শরীরের ভিতর থেকে নাভিকুণ্ডলী-সহ যে প্লাসেন্টাটিকে বের করে আনা হয়েছিল, কালো নোংরা গুঁড়ো গুঁড়ো কার্বনে আচ্ছাদিত সেই জিনিসটিকে স্বচক্ষে দেখে নার্স ও ডাক্তারেরা প্রথমে বিশ্বাসই করে উঠতে পারেননি। তাঁদের গা ঘিনঘিন করে উঠেছিল। প্রায় তিন সপ্তাহ সময় আমাদের জেসমিনকে ইনকিউবেটরে থাকতে হয়েছিল। এখনও তার ওজন, গড় বাচ্চাদের তুলনায় অনেকটাই কম। দু’বছর পরেও যদি এই অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে ডাক্তার ওকে স্টেরয়েড বা হরমোনাল ইনজেকশন দেওয়ার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করবেন।

আমি সেদিন ছুটতে ছুটতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। সিডনির প্রত্যেকজন মানুষকে সেদিন হাতে-পায়ে ধরে বলতে চেয়েছিলাম এই দাবানলের আকাশে আতসবাজি না পোড়াতে। আমিও তো মা। আমি ... বোধহয় সেই ভিড়ের ভিতরে, সেই ঝলসিয়ে যাওয়া কোয়ালাশাবকটিকেও ... কোনওভাবে খুঁজে পেতে চেয়েছিলাম।

... নির্বোধের মতোই।

পরিশিষ্টঃ আমি আর উইল এখন নিয়মিত পরিবেশ আন্দোলনের সমাবেশগুলিতে অংশ নিয়ে থাকি। আমার মেয়ে যে কবে পরিপূর্ণ স্বাভাবিক হবে, বা আদৌ হবে কি না – সে খবর বলবে ভবিষ্যৎ। কিন্তু আমি কেবল এইটুকু জানি, যে আমি একা নই। আমরা বাকি মহাদেশগুলিতেও এই বিপর্যয়কে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করব।

... এক দুঃসহ অন্ধকার। এক আগুন থেকে মুক্তি।

[লেখকের কথাঃ তিনমাস পর কথকের শরীরে আবারও ছুরি চালাতে হয়েছিল। শরীরের ভিতরে পোড়া, কালো সেই অমরা-থলিটির বাকি থেকে যাওয়া অংশটুকুকে কেটে বের করার জন্য। একবারে সেই বিষ কথকের শরীর থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। পরিবেশমুক্তির দাবিতে, অরণ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনে, পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার্থে তাই, এই সময়ে দাঁড়িয়ে মেয়েদেরকে-মায়েদেরকেও সোচ্চার হতে হবে – সমস্ত রকম প্রচেষ্টায়।]

লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক

অলঙ্করণ : সৃজীতা গুপ্ত

 

0 Comments

Post Comment