দিগন্ত-জল

  • 09 June, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 508 view(s)
  • লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
“উপকূল অঞ্চল থেকে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ চলে আসছে এই ঢাকা শহরে। এরা একসময় কৃষক ছিল, তন্তুবায় ছিল, হয়তো বা মাছ ধরত। কিন্তু নদী বা সমুদ্র এদের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। এরা পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে চলে আসছে এই ঢাকা শহরে। এদেরকেই আপনারা আবহাওয়া শরণার্থী বলেন। এদের সঙ্গে দেখা করলে আপনার একটা হ্যান্ডস অন আইডিয়া হয়ে যাবে যে এরা ঠিক কেমন ভাবে রয়েছে। আপনি এদেরকে নিয়েই একটা এক্সক্লুসিভ স্টোরি করতে পারেন,” ... আবহাওয়া শরণার্থীদেরকে নিয়ে, আবারও সত্য ঘটনা অবলম্বনে।

 

[১]

ঢাকা শহরে কলকাতার মতো ঠাণ্ডা পড়ে না। তার কারণ বোধহয় পরিবেশ। এই শহরে এসে ইস্তক শাওনের মনে হচ্ছিল কেমন যেন একটা দমচাপা ভাব তার বুকের উপরে চেপে বসতে চাইছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ বিষয়ক বোর্ডের সদস্যেরা এমনি এমনি যে পৃথিবীর কুড়িটা সবচাইতে বাসের অযোগ্য শহরের মধ্যে ঢাকাকে ফেলেনি, সেটা শাওন নিজেকে দিয়েই বুঝতে পারছিল। যদিও ট্যাক্সিটা এয়ারকন্ডিশন্ড, বাইরের শহরে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। ঘিঞ্জি, কোলাহল। শাওন ড্রাইভারকে ঠিকানাটা বলে দিল। গুলশন এলাকাতে, প্যালেস কন্টিনেন্টাল হোটেল। ঢাকা শহরের সবচাইতে ধনী এলাকাগুলির মধ্যে গুলশন অন্যতম। এছাড়া আছে বনানী, ধানমণ্ডি, বারিধারা, উত্তরা। কলকাতা ছাড়ার আগে শাওনকে ব্যুরো চিফ ঢাকার ব্যাপারে কিছুটা হোমটাস্ক করে নিতে বলেছিলেন। যদিও ওর যা এ্যাসাইনমেন্ট তাতে এই সমস্ত খবরে যে ওর খুব একটা কিছু কাজের সুবিধে হবে তা নয়। তবুও শাওন পড়াশোনা করে এসেছে। এবিএন নিউজ নেটওয়ার্কের সাউথ এসিয়ান ডিভিশনে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরে এটাই ওর প্রথম ওভারসিজ এ্যাসাইনমেন্ট। এয়ারপোর্ট থেকে শহরে ঢুকতে ঢুকতে শাওনের ওর বাবার কথা মনে পড়ছিল। ১৯৭১এর যুদ্ধের সময় ওর বাবাকে কোলে নিয়ে ওর ঠাকুর্দা আর ঠাকুরমা যখন দেশ ছেড়েছিলেন তখন ওর বাবার বয়স তিন। তারপর কলকাতার রিফিউজি কলোনিতে বড় হওয়া। ফিজিক্সে ফার্স্ট ক্লাস গ্র্যাজুয়েট। বিদেশে পাড়ি। শাওনের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেই অর্থে ও নিজেকে বাংলাদেশি বলে দাবি করতে পারে না। সাউথ এসিয়ান ডিভিশনে কাজ নিয়েছে শুনে প্রথমটায় ওর বাবা বেশ একটু ভুরু কুঁচকে ছিলেন। তারপর বলেছিলেন, “বেশ তো, ছিঁড়ে আসা শেকড়ের দেশ থেকেই জীবনটা শুরু হচ্ছে যখন - হলে হোক না। ক্ষতি তো নেই।” শাওনের ঠাকুর্দা, ঠাকুরমারা কেউই আর বেঁচে নেই। বাংলাদেশকে আপন বলে ভাবতে চেষ্টা করছিল শাওন। পারছিল না কোনও ভাবেই।

-“অনেক কষ্টে এ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেছে,” রিসেপশনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে শাওনকে বলছিল হিরণ। ঢাকা শহরে ওর লোকাল কনট্যাক্ট। এখানকারই দৈনিক বার্তা কাগজের সাংবাদিক। এবিএন গ্রুপের সঙ্গে সম্প্রতি গাঁটছড়া বেঁধেছে দৈনিক বার্তা। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের খবরকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দেওয়া, বিনিময়ে আন্তর্জাতিক এক্সক্লুসিভ খবরগুলো অন্যান্য বাংলাদেশি কাগজ পাওয়ার আগেই এবিএন গ্রুপের কাছ থেকে সংগ্রহ করা। জার্নালিজম এখন একটা ব্যবসা। শাওনের মাঝে মাঝে জেমস বণ্ড সিরিজের ‘টুমরো নেভার ডাইজ’ সিনেমাটাকে মনে পড়ে। দিব্যি লাগে ওর সিনেমাটা। বিজনেস টাইকুন শব্দটা যে এখন জার্নালিজমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য সে আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না।

ঢাকা শহরে পরিবেশ পরিবর্তন নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে। মূলত সেটাকে কভার করতেই শাওনের এই ঢাকা সফর। তারই সঙ্গে বিশেষ করে ওর যেটা উদ্দেশ্য ছিল, সেটা হলো এদেশের অন্যতম বিশিষ্ট একজন মানুষ, শিল্পপতি আহমেদ মুস্তাক ফণীকে ইন্টারভিউ করা। ফণী সাহেব একজন সফল ব্যবসায়ী এবং বিশেষ ভাবে বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনকারীদের কাছে পরিচিত মুখ। কারণ সদ্য ছাড়পত্র পাওয়া গাইবান্ধা পরমাণু কেন্দ্রের পিছনে বাংলাদেশের যে সংস্থাটি সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করতে চলেছে, এই ফণী সাহেব তারই কর্ণধার। কাজেই বাংলাদেশের পরিবেশপ্রেমীরা যে তাঁকে নিয়ে একেবারেই খুশি নয় সে বলাই যায়। বরং বেশ কয়েকবার এই ফণী সাহেবকে পরিবেশ আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। এদিকে পরিবেশ বিষয়ক যে আন্তর্জাতিক সম্মেলনটাকে শাওন, বা তারই মতো দেশবিদেশের আরও কয়েকশো সাংবাদিক কভার করতে এসেছে – সেই সম্মেলনেরও অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষক এই ফণী সাহেব। কাজেই সব মিলিয়ে ব্যাপারটা যে ঠিক কিরকম হতে চলেছে তা বোঝাই যায়। গত পাঁচ-সাত বছর ধরে বিভিন্ন কাগজে পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন খবরের জন্য ফ্রিলান্সিং করে আসা শাওনের মোটামুটি এই সমস্ত সম্মেলন ইত্যাদিকে নিয়ে বেশ একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে গেছে। কাজেই সে আন্দাজ করতে পারছিল ফণী সাহেবের সঙ্গে তার মুখোমুখি হওয়াটা ঠিক কিরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে।

-“সকাল সাতটায় এ্যাপয়েন্টমেন্ট,” হিরণ বেরুবার সময় মনে করিয়ে দিল, “আমি রিসেপশনে বলে দিয়েছি ঠিক ছটায় আপনাকে ডেকে দেবে। স্যুইট নম্বর ১০১। আপনার ঠিক উপরের তলাতেই। অসুবিধে হবে না,” মিষ্টি করে হাসে হিরণ। শাওনের ওকে বেশ ভালো লাগছে। বেশ উদ্যমী ছেলে। এইরকম ছেলেপুলেরাই কত আশা নিয়ে সাংবাদিকতার পেশায় আসে। যেমনটা শাওনও এসেছে। কিন্তু তারপরেই ... শাওনের আর ওসব ভাবতে ভালো লাগে না। আজ রাতটুকু সে ভালো করে ঘুমোতে চায়। মনে মনে সে তথ্যগুলোকে মাথার মধ্যে একটিবার ঝালিয়ে নিচ্ছিল। এবিএন গ্রুপ এই ব্যাপারে তাকে অন্তত কিছুটা স্বাধীনতা দিয়েছে। কলকাতা ছাড়ার আগে ব্যুরো চিফ বলে দিয়েছেন, “শাওন, ইউ শ্যুড আস্ক টাফ কোয়েশ্চেনস। গুড লাক!” কথাগুলো শাওনের মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তেরোতলার জানালা দিয়ে শাওন বাইরের ধোঁয়াশাটাকে দেখছিল। শহরের উপরে জমাট বেঁধে রয়েছে। এই হোটেলের সব ঘরগুলোতেই অবশ্য এয়ার পিউরিফায়ার লাগানো। শাওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে এবার।

[২]

-“মিস্টার ফণী, আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে নদী ভাঙনের কারণে গাইবান্ধা অঞ্চলে গত পাঁচ বছরে কত মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে ? কতগুলো স্কুলবাড়ি নদীর গর্ভে চলে গেছে ? তথ্য বলছে ১৯৭৩ সাল থেকে আজ অবধি অন্ততপক্ষে ১,৬৩,০০০ হেক্টর পরিমাণ জমি পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনার গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। বগুড়া, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ সমস্ত জায়গা থেকে নদীভাঙনের খবর এসেছে। এমন একটা ভূমিরূপের উপরে দাঁড়িয়ে আপনারা কি করে পরমাণু কেন্দ্র বানানোর কথা ভাবেন ?”

ফণী সাহেব পকেট থেকে সুগন্ধি রুমালটা বের করে নিয়ে কপাল মুছলেন। রিপোর্টারদের কড়া কড়া প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে তিনি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, কিন্তু তাই বলে হাঁটুর বয়সী এই মেয়েটার কাছেও – তিনি সরাসরি মেয়েটার দিকে তাকান। সুন্দরী। বেশ সুন্দরীই বলা চলে। ফণী সাহেব মিটিমিটি হাসেন।

-“দেখুন এইসব কেতাবি ভাষণ কেতাবে পড়তেই ভালো লাগে, বুঝলেন কি না,” ফণী সাহেব জবাব দেন, “এখন যদি আমি ঘরের এয়ারকন্ডিশনটাকে বন্ধ করে দিই, জানালাগুলোকে সব খুলিয়ে দিই – ভালো লাগবে আপনার ?” তিনি পালটা জিজ্ঞেস করেন।

-“এই অবস্থার জন্য তো আপনারাই দায়ী। পৃথিবীর উষ্ণতা তো একদিনে এই জায়গাতে এসে পৌঁছয়নি। এখন বাড়তে বাড়তে এমন একটা জায়গাতে এনে আপনারা পৃথিবীকে দাঁড় করিয়েছেন যে, হিমবাহের বরফ অবধি গলতে শুরু করেছে। সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে।”

ফণী সাহেব ঝাঁঝটাকে বুঝে নিতে চেষ্টা করেন। নতুন কাজে ঢুকেছে মনে হয়। বেশি ওস্তাদি মারছে তাই। অবশ্য বিদেশী কাগজ। বুঝেশুনে কথা বলতে হবে।

-“দেখুন উপকূল এলাকাতে কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তো শুনেছি। কিন্তু তাদের আসল সংখ্যা কত ? ওর চেয়ে অনেক বেশি শরণার্থী আমরা পাই রাজনৈতিক কারণে,” ফণী সাহেব কথাটা শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই শাওন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে।

-“তথ্য বলছে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কুড়ি কোটির কাছাকাছি। সেই জনসংখ্যার মধ্যে অন্তত এক কোটি মানুষ রাষ্ট্রপুঞ্জের সংজ্ঞা অনুযায়ী আবহাওয়া-শরণার্থী হিসেবে গণ্য হয়েছেন। এই মুহূর্তে যদি পরিবেশ পরিবর্তনকে রোখা না যায় তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অন্তত ১৭% পরিমাণ জমিই নদী বা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। অন্তত আরও দু’কোটি মানুষ গৃহহীন হবেন। আপনারা কি তাই চান ?” শাওনের বুক ঢিপঢিপ করছে। বড্ড জোরালো ভাবেই সে প্রশ্নটাকে ছুঁড়ে দিয়েছে বোধহয়।

-“আপনি কাকে দোষ দিচ্ছেন ম্যাডাম,” ফণী সাহেবের গলাটা নেমে এসেছে, “এবারে তাহলে আমিও কিছু তথ্য দিই আপনাকে,” তিনি সামনে রাখা কাচের গেলাসটা থেকে অল্প একটু জল খেলেন, “পৃথিবীর মোট কার্বন উৎপাদন, বা কার্বন নিঃসরণের ২৮%এর জন্যই দায়ী চীন। ১৬%এর জন্য দায়ী আপনাদের আমেরিকা। ৩.৭%এর জন্য দায়ী জাপান। বাংলাদেশের ভাগ কতখানি ? ০.৩৬%! আপনারা আমাদের উপরে কেন চোখ রাঙান ?”

এবার শাওনের নিঃস্তব্ধ হওয়ার পালা। এই প্রশ্নটা যে আসতে পারে সে আন্দাজ করেছিল। সে একটু থেমে পালটা জিজ্ঞেস করে, “কিন্তু তাই বলে শক্তিসংকট মেটানোর জন্য আপনারা মান্ধাতার আমলের রুশ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে পরমাণু কেন্দ্র বানাবেন ? তার আনুষঙ্গিক বিপদগুলি যে কি হতে পারে, আপনারা কখনও ভেবে দেখেছেন ?”

-“আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেলেন মিস,” ফণী সাহেব হাসেন, “আসলে আমরা কেউই বোধহয় শক্ত প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তেমনটা স্বস্তি বোধ করি না।”

-“কিন্তু পরিবেশের আজ যা অবস্থা তাতে পরস্পরের দিকে প্রশ্ন না ছুঁড়ে একসাথে কাজ করলেই কি ভালো হয় না ?” শাওন একটা শেষ চেষ্টা করে। হাওয়া খারাপ সে বুঝতে পেরেছে।

-“সেই জন্যেই তো এই সম্মেলন। বেশ, ঠিক আছে। এবারে আপনি উঠুন। আমার আরও কয়েকটা ইন্টারভিউ রয়েছে,” ফণী সাহেব হাত নেড়ে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের দুজনকে ইশারা করেন। মেয়ে বাউন্সারটি ইশারা পাওয়া মাত্রই অলস ভঙ্গিতে হাঁটতে হাঁটতে শাওনের পাশে এসে দাঁড়ায়। ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। শাওন হাতের ফাইলটাকে গুছিয়ে নেয়। এই সামান্য কয়েকটা বাক্যের জন্য এতদূর উড়ে আসা। ওর নিজের উপরই একটু হতাশ লাগছিল। আরেকটু প্রস্তুতি থাকলে, লোকটাকে যদি আরেকটু উত্তেজিত করে দেওয়া যেত। শাওন বুঝেছে লোকটা ধুরন্ধর। এমন লোকেদের পকেটেই টাকা আসে। পরিবেশ-টরিবেশ নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। এরাই হয়তো বুদ্ধিমান। শাওনের খুব ফ্রাস্ট্রেটিং লাগছিল নিজের উপর।

[৩]

-“ভালো লাগছে না ম্যাডাম ?” হিরণ ওর দিকে জলের গেলাসটা এগিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে। প্যালেস কন্টিনেন্টাল হোটেলের পার্ল ডায়নিং রুমের একদিককার টেবলে ওরা বসেছিল। লাঞ্চ চলছে। সকাল থেকে এখনও অবধি শাওন একটাও কথা বলেনি। শুধু হুঁ হাঁ করে জবাব দিয়ে গেছে। কনফারেন্সের বেশ কয়েকটা সেশন তারা দুজনে এ্যাটেন্ড করেছে। সেই একই চর্বিতচর্বণ, সুন্দর সুললিত ইংরেজিতে প্রতিশ্রুতির বন্যা, হাসি হাসি মুখে ছবি তোলা। শাওনের রীতিমতো বিরক্ত লাগছিল। পেশাগত কারণেও এমন ম্যাড়মেড়ে একটা অভিজ্ঞতা তার পছন্দ হচ্ছিল না। যদিও সে জানত যে এরকমটাই হতে চলেছে। তবুও শেষ পর্যন্ত এখানে এসে পৌঁছিয়েও সে যে অন্তত দারুণ একটা কিছু স্কুপ করে ফেলতে পারবে, বা এক্সক্লুসিভ কোনও খবর জোগাড় করে ফেলতে পারবে – এমন একটা চাপা এক্সপেক্টেশন তার ছিলই। হয়তো বা সেসবকিছুই বোকা বোকা শোনাচ্ছে এখন। ফণীর ইন্টারভিউটা নিতে গিয়েও সে ছড়ালো। শাওন জবাব দিল না।

-“আপনাকে একটা জায়গাতে নিয়ে যেতে পারি। যাবেন ? স্কুপ থাকতে পারে আপনার জন্য ?” হিরণ আবারও হেসে শাওনের দিকে তাকায়। শাওন চোখ তোলে। “যাবেন ?” হিরণ আবারও জিজ্ঞেস করে। “কোথায় ?” শাওন পালটা জিজ্ঞেস করে।

-“যাবেন কি না আগে সেটা বলুন, কথা দিচ্ছি যে সময় নষ্ট হবে না।” হিরণের চোখেমুখে হাসি ফুটে রয়েছে। শাওন ঘাড় নেড়ে সায় দিল, “কনফারেন্সটা শেষ হোক, আজকে তো পাঁচটায় শেষ ? তারপরে যাওয়া যাবে নাহয় ?” –“তারপরেই তো যাবো, ডিনারের মধ্যে ফিরে আসতে পারব।” আশ্বস্ত করে হিরণ। শাওন রাজি হয়ে গেল। প্লেটে খাবার এসে গিয়েছে।

“আশ্চর্য হলেও এ কথা সত্যি যে বর্তমানে ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার ৪০%ই বস্তিবাসী, এবং এই সংখ্যাটা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। কারণটা ওই, আপনি যেটা বললেন – আবহাওয়া শরণার্থী,” গাড়িতে যেতে যেতে হিরণ শাওনকে বলছিল, “উপকূল অঞ্চল থেকে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ চলে আসছে এই ঢাকা শহরে। জমি হারানোর কারণে, কখনও বা জমি নোনা হয়ে যাওয়ার কারণে। এরা একসময় কৃষক ছিল, তন্তুবায় ছিল, হয়তো বা মাছ ধরত। কিন্তু নদী বা সমুদ্র এদের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। এরা পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে চলে আসছে এই ঢাকা শহরে। এদেরকেই আপনারা আবহাওয়া শরণার্থী বলেন। এদের সঙ্গে দেখা করলে আপনার একটা হ্যান্ডস অন আইডিয়া হয়ে যাবে যে এরা ঠিক কেমন ভাবে রয়েছে। আপনি এদেরকে নিয়েই একটা এক্সক্লুসিভ স্টোরি করতে পারেন,” হিরণ থামল। “আমরা যার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি, সেও কি তাহলে আবহাওয়া শরণার্থী ?” শাওন জিজ্ঞেস করে। “হ্যাঁ ম্যাডাম, তাই বলতে পারেন,” হিরণ জবাব দেয়, “আমরা এখন যাচ্ছি সিটি পল্লীতে। ঢাকা দক্ষিণে। নূরেদের বাসা ওইখানেই।”

[৪]

ছয়তলার একটা এ্যাপার্টমেন্ট। খুপরি খুপরি পায়রার খোপের মতো একেকটা ফ্ল্যাট। একেকটা তলায় পাঁচটা – না, ছটা করে, শাওন গুনলো। প্রতিটা ফ্ল্যাটে দুটো করে ঘর। বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। প্রতিটা তলায় একটা করে বাথরুম। প্রতি ঘরের মাপ দশফুট বাই দশফুট। প্রতিটা ঘরে মানুষ থাকে অন্তত আট থেকে বারো জন। আটশোর কাছাকাছি বাসিন্দা এই এ্যাপার্টমেন্টে, তাদের জন্য বরাদ্দ মোট ছ’টা বাথরুম। সেগুলোতে জল আসে দিনে দুবার। তাও সিরসির করে পড়ে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই বোঁটকা গন্ধে শাওনের গা গুলিয়ে উঠছিল। তিনতলার একটা ফ্ল্যাটের দরজাতে গিয়ে ধাক্কা দিল হিরণ। ভেতর থেকে গলা পাওয়া গেল, “কে ওখানে ?” –“জনাব আমি হিরণ, রিপোর্টার,” হিরণ জবাব দেয়। ভিতর থেকে একটা চাপা হাসির হররা উঠল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মেয়েটা ঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল।

“কি ব্যাপার ? বলেছি না নীচে থেকে ফোন করবে। উপরে উঠে এলে কেন ?” মেয়েটা ধমকিয়ে ওঠে। শাওন মেয়েটাকে ভালো করে নজর করে। দোহারা চেহারা। শ্যামলা রঙ। মাথার উপরে ওড়না চাপানো। হিরণ বলে, “কেন রে ? পিন্টু ঘরে আছে নাকি ? এত তাড়াতাড়ি কাজ থেকে ছুটি পেল ?” “সে খবরে তোমার কি দরকার ?” মেয়েটা ঝামটে ওঠে আবার, “যা বলার বলে ফেল তাড়াতাড়ি। আমাকে আবার সাতটার সময়ে বেরুতে হবে, আজ ডার্করুমে ডাক পেয়েছি। তিনঘন্টার প্রোগ্রাম। বাইশশো দেবে বলেছে।” হিরণ শাওনের দিকে তাকায়। গলা তুলে বলে, “আলাপ করিয়ে দিই ম্যাডাম, এই হল নূর। বারো ক্লাস অবধি পড়েছে। হুমায়ূন আহমেদ ওর প্রিয় লেখক।” মেয়েটা শাওনের দিকে তাকায়। লজ্জায় মেয়েটা কথা হারিয়ে ফেলেছে।

[৫]

আমি নূর ...

শাওন লিখছিল।

নূরের কথার সমস্তটা সে গুছিয়ে ভালো করে লিখে উঠতে পারবে কি না, সে বুঝতে পারছিল না। তবুও সে লিখছিল।

আমাদের বাড়ি ছিল সমুদ্রের ধারেই। আমাদের জমি ছিল সমুদ্র থেকে কিছুটা ভিতরে। সেখানে বাবা জমি চাষ করত। সবজি হত সেই জমিতে। ধান করেছিল দুএকবার। এছাড়া সবজির মধ্যে কড়াইশুঁটি, পালং, শিম, বাঁধাকপি, সরষে। ছোটবেলা থেকে বাবাকে জমি চষতে দেখেছি ...

শাওন বাইরে তাকিয়ে দেখছিল ঢাকা শহরটা অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। কেবল হ্যালোজেনের বাতিগুলো ধোঁয়াশার মধ্যে কেমন যেন একটা ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। অনেক উপর থেকে দেখলে সমস্তটাকেই কেমন যেন ঝাপসা, আবছাটে বলে মনে হয়।

তারপর ঝড় এল। এক বছরের ঝড়ে আমাদের ঘরবাড়ির সমস্তটা ভেঙে গেল। নোনাজলে আমাদের জমি ডুবিয়ে দিল। তাও বাবা হাল ছাড়েনি। তিনবছর চারবছর বাদ আবারও সেই জমিতে অল্প অল্প করে ফসল হতে শুরু করল। আমার ক্লাস এইট তখন। আমার দাদার নাম পিন্টু। সে তখন সবেমাত্র গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। টিউশনি করতে শুরু করেছে। আমরা কোনওমতে চালিয়ে নিচ্ছিলাম। এই সময় একবার সদর শহরে বইমেলা হলো। হুমায়ূন আহমেদ স্যার এসেছিলেন। দাদা আমাকে সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে গিয়েছিল হুমায়ূন স্যারকে দেখাবে বলে। সেই বছরেই ঝড় এল আবার। নদীও ভেঙে এসে আমাদের সমস্ত জমিটাকে খেয়ে নিল। আমার বাবা অন্য জমি কিনতে চেষ্টা করবে ভেবেছিল। কিন্তু মহাজনের কাছে দেনার দায়। সেই দেনা শুধতে শুধতে একজন এসে বাবাকে বুদ্ধি দিল ঢাকাতে চলে আসতে। এখানে নাকি কাজের মেলা সুবিধে। আমরা ঢাকা শহরে এলাম।

তখন এই ফ্ল্যাটটাও ছিল না। একটা বিশাল হলঘরের মতো জায়গাতে আমরা দুশোজন, পাঁচশোজন একসাথে থাকতাম। তিনটে মোটে বাথরুম ছিল সেখানে। ছোটবেলা থেকেই আমার মা নেই। আমি বাবা আর পিন্টু। আমাদের এই কজনের সংসার। বাবার বুকে জল জমেছিল। বছর না ঘুরতেই ...

শাওন কলমটা নামিয়ে রাখে। একটু জল খায়। রাত অনেক।

পিন্টু আর আমি ছাড়া আমাদের ঘরে আরও দুটো পরিবার থাকে। তাদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে আমাদের খুব একটা অসুবিধে হয় না। অভ্যাস হয়ে গেছে। আগে যেখানে থাকতাম, একদিন রাত্তিরে উঠে বাথরুমে যেতে গিয়ে আমি পুরুষমানুষ চিনে গিয়েছিলাম। বুঝেছিলাম আমার শরীরের দাম আছে। ঘরে ফিরে এসে আমার কামিজের পকেটে একটা দু’টাকার দুমড়োনো নোট খুঁজে পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি সস্তায় পড়ে বেশ্যা হয়ে যেতে চাইনি। বরং সেই তুলনাতে বার ডান্সিংয়ে আয় সামান্য কম হলেও সিকিউরিটি বেশি। কিছুদূর পড়াশোনা করেছিলাম বলে বেশ একটা পালিশ থেকে গেছে আমার। নাচ শিখে নিয়ে কাজ পেতে আমার ততটাও অসুবিধে হয়নি। পিন্টু এদিকে একটা রঙ কারখানায় কাজ করে। বারো ঘন্টা ডিউটি। শরীর দেয় না। আমিও আর ক’বছরে রোজগারটা আরও একটু বাড়িয়ে নিতে পারলে ...

পিন্টুর শরীর থেকে নতুন রঙের চড়া গন্ধ বের হচ্ছিল। চোখদুটো কোটরে বসা। বাইরে থেকে দেখে কেউ বলবে না ওর বয়স ত্রিশ। নূর আটটার সময় বেরুলো। এক ঘণ্টা সময় চেয়ে নিয়েছিল সে বারের লোকেদের থেকে। বদলে উলটো পিঠে একঘণ্টা বেশি থাকতে হবে, এই কড়ারে ম্যানেজার রাজি হয়েছিল। শাওন আর নূর অনেকক্ষণ ধরে কথা বলছিল। শাওন, ওর পৃথিবীর বাইরে - একটা নতুন পৃথিবীকে ওর সামনেটায় ফুটে উঠতে দেখছিল। ওর বইয়ের জগতের বাইরেকার পৃথিবী। সত্যিকারের এক বাস্তব। শাওন নূরের প্রাণশক্তিকে দেখে অবাক না হয়ে পারেনি। হিরণের চোখ ক্রমশ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছিল। গাড়িতে ফিরতে ফিরতে সে শাওনকে জিজ্ঞেস করেছিল, “মেয়েটা ভালো না ম্যাডাম ? আমারও হুমায়ূন আহমেদ পড়তে ভালো লাগে।” শাওন আড়চোখে তাকিয়ে তির্যক একটা হাসি হেসে শুধু বলেছিল, “বেশ মানাবে।” হিরণ আর বাকি রাস্তাতে একটাও কথা বলেনি। আবহাওয়া শরণার্থী মিছিল ...

সেদিন রাত্তিরে শাওন মনে মনে ওর স্টোরির শিরোনামটাকে সাজিয়ে নিতে চাইছিল। পাশাপাশি দুটো স্টোরি রাখবে সে। একদিকে ফণীর দায়সারা ইন্টারভিউ, অন্যদিকে নূরের গল্প। পাশাপাশি রাখলে কেমনটা দাঁড়াবে সে মনে মনে তাই ভাবছিল। কনট্রাস্টটা মোক্ষম বোঝা যাবে। ব্যুরো চিফকে শাওন হোয়াটস্যাপ করল, “স্যার আমার জন্য কুড়ি সেন্টিমিটার রাখুন প্লিজ। রাতের মধ্যেই পাঠাব।” জবাবে একটা বুড়ো আঙুল ঢুকল মেসেজে। শাওন ঝড়ের বেগে টাইপ করে চলে। কীবোর্ডে আঙুল পড়ার শব্দ ছাড়া হোটেলের ঘরে তখন দ্বিতীয় আর কোনও শব্দ নেই। অনেক রাত্তিরে মেইলটা করে দিয়ে শাওন যখন বিছানাতে গা এলিয়ে দিল তখন তার শরীরে আর এতটুকুও শক্তি নেই।

কিন্তু মিনিট দশেকের মধ্যেই মোবাইলে আলো জ্বলে উঠেছে। “শাওন, কালকে তোমার স্টোরিটা যাচ্ছে না। পরশু যাবে। তুমি প্লিজ নূরের একটা ছবি পাঠাও!” শাওন ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসল। ইস কি দারুণ বোকামিটাই না সে করেছে। নূরের অন্তত একটা ছবি নিয়ে আসা উচিত ছিল তার। হিরণকে কি সে হোয়াটস্যাপ করবে ? ফোনটা হাতে তুলতে না তুলতেই সে দেখল সবুজ রঙ। হিরণ কলিং ... এত রাত্তিরে হঠাৎ ?

পরিশিষ্টঃ

স্কুপ নিউজেরও একটা সীমা থাকা উচিত। গত কয়েক ঘণ্টাতে শাওনের মধ্যেকার ‘পোড়খাওয়া সাংবাদিক’এর যে সত্তাটুকু এত বছর ধরে আস্তে আস্তে নিয়মিত ভাবে বেড়ে উঠতে চেষ্টা করেছিল, সেও এতক্ষণের পরে পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিয়েছে। মাঝরাত্তিরে আগুনের মতো একটা এমার্জেন্সি ঘটনাকে রিপোর্ট করতে যাওয়ার কোনও অভিজ্ঞতাই, সাংবাদিকতার এতগুলো বছরেও শাওনের ছিল না। কিন্তু কালকের বা আজকের এই অভিজ্ঞতাটুকু না হলেই বোধহয় তার পক্ষে ভালো হতো। হিরণও কেমন জানি নিস্পৃহ হয়ে তার পাশটিতে বসে রয়েছে। সেও একবারে অস্ফূটে বলতে চেষ্টা করল, ঢাকা শহরে এমনটা নাকি প্রায়ই হয়। ঠিক এই ভাবে গাদাগাদি করে লোক থাকে যে সমস্ত এ্যাপার্টমেন্টগুলোয়, তাদের অধিকাংশই নাকি আদতে বেআইনি। অগ্নিনির্বাপণেরও কোনও ব্যবস্থা থাকে না। কাজেই আগুন লাগলে পরে সেই আগুন জতুগৃহ হয়ে পড়তে বেশি সময় লাগে না। নূরেদের এ্যাপার্টমেন্টে কাল রাত্তিরে আগুন লেগেছিল। বিধ্বংসী সেই আগুনের মধ্যে নূরেরা কেউই বেরুতে পারেনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরনো মর্গের সামনেটায় এখন ওরা দুজনে দাঁড়িয়ে। ২০২১।

শাওনের মোবাইলে একটা মেসেজ ঢুকেছে। “সরি শাওন,” ব্যুরো চিফ জানাচ্ছেন, “আমরা ফণী সাহেবের ইন্টারভিউটা নিচ্ছি। শর্ট লেংথের একটা স্টোরি হবে। কিন্তু নূরেরটা বড্ড পার্সোনাল হয়ে যাচ্ছে। এডিটোরিয়াল বোর্ড এ্যাপ্রুভ করেনি। সেন্ড সামথিং এ্যাবস্ট্র্যাক্ট; আর কনফারেন্সের ক্লোজিং সেরিমনিটাকে নিয়েও অবশ্যই একটা স্টোরি করবে। ওতে দুএকজন মন্ত্রীও থাকবেন, কাপল অব ডিপ্লোম্যাটস। আজ রাতেই চাই কভারেজটা। আমরা অপেক্ষা করব। গুড রাইটিং!” শাওন ফোনটাকে বন্ধ করে পকেটে ঢুকিয়ে রাখল। হিরণ এগিয়ে আসছে।

-“ওরা ডিএনএ টেস্ট করবে বলছে। আসলে বডিগুলো এমন ভাবে পুড়ে গেছে যে চেনাই যাচ্ছে না। অন্তত ৫০জনের ক্যাজুয়ালটি।” হিরণের গলাটা আশ্চর্যরকমে কঠিন হয়ে গেছে।

-“নেক্সট অব কিন তো তুমি নও হিরণ। ওরা তো বডি তোমাকে দেবেনা!” শাওন অস্ফূটে বলতে চেষ্টা করে।

-“কিন্তু, তাই বলে নূরের বডিটা আনক্লেমড হয়ে থেকে যাবে ? বেওয়ারিশ,” হিরণ চুপ করে যায়।

-“আর কোনও উপায় আছে কি ?” শাওন ওর দিকে তাকায়।

ময়লা ফেজটুপি-পরা এক বৃদ্ধ ওদের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ওদের সব কথা শুনছিলেন। এই সময় এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যাঁ গো দিদিভাই, কতক্ষণ লাগবে কিছু বলেছে এইসব টেস্টের জন্য – কিছু জানো গো তোমরা ?” হিরণ বলল, “অন্তত আজকের দিনটা তো লাগবেই চাচা। আপনি কার জন্য অপেক্ষা করছেন।” বৃদ্ধ অস্ফূটে বলেন, “আমার নাতিটাও তো ছিল ওই ঘরের মধ্যে। ছ’বছর মাত্র বয়স, একটু দেখো না গো তোমরা - যদি একটু তাড়াতাড়ি কোনওভাবে ...” শাওনের চোখের সামনেটায় অন্ধকার নেমে আসছিল। কয়েকটা শব্দ ওর চোখের সামনেটায় ভেসে উঠতে চাইছিল।

একফালি সবুজ ক্ষেত ...

এক দিগন্ত গভীর জল ...

আমাদের বসুন্ধরা পৃথিবী ... নূর বলেছিল। বলেছিল এসব।

শাওন, হিরণের হাত ধরে মাটিতে বসে পড়ল। মৃত ও আহতদের পরিবারকে টোকেন দেওয়া শুরু হয়েছে।

পুনঃপ্রকাশ

লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক

অলঙ্করণ : সৃজীতা গুপ্ত

 

 

0 Comments

Post Comment