- 22 October, 2020
- 3 Comment(s)
- 1599 view(s)
- লিখেছেন : তামান্না
সাম্প্রতিককালে নানান ঘটনা দেখে আবার মগজের ভেতর উঁকিঝুঁকি মারে কিছু প্রশ্ন। এমনিতে নিরেট মস্তিক নিয়ে ফেসবুক কিংবা ইন্সট্রাগ্রামে বিভোর থাকতে পছন্দ করে আমাদের প্রজন্ম! মাথার ভেতরে প্রশ্ন টোকা মারলে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গিয়ে সটান ইউটিউবে- ডেইলি রুটিন ইন দা মাউন্টেইন, দিস ইজ ফ্রিডম, জাস্ট লিভিং ইন মাই ভ্যান ডাউন বাই দ্যা রিভার, প্রিটি গার্ল লিভস ইন দ্য মাউন্টেইনস: লাইক আ ফেয়ারিল্যান্ড অন আর্থ ভিডিও দেখতে দেখতে ইহারা কত স্বাধীন নারী ! নিজেদের মতো জীবন কাটাই, আহারে জীবন বলে খুব আক্ষেপ করে, এ জীবন লইয়া কী করিবো বলে দু:খ করতে করতে, হতাশ হতে হতে, আবার ভাবতে বসি আচ্ছা এই যে দিনের পর দিন লিঙ্গ বৈষম্য, মেয়েদের উপরে নানান নিষেধাজ্ঞা, ডাইনি আখ্যা, অত্যাচারের কাহিনি ; কী প্রমাণ করছে? এই যৌন মৌলবাদের চেতনার বীজ কাহারা বপন করিয়াছেন , সে বিষয়ে আমরা সবাই অবগত , কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন এর গোড়াপত্তন কোন্ স্তর থেকে শুরু হয়েছে? আনএডুকেটেড, অশিক্ষিত এই ধরনের তির্যক মন্তব্য আমরা প্রায়শই শুনে থাকি কেউ কোনো ভুল কাজ করলে, বোকামি করলে। আমাদের সমাজের ধারণা শিক্ষিতরা ভুলভ্রান্তি করেন না। সত্যিই কি তাই! শিক্ষিত হতে গেলে আমাদের স্কুলে যেতে হয়। তাই, খুব স্বাভাবিক ভাবে শিক্ষার প্রথম স্তর থেকেই ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের পাঠ্যক্রমের ভূমিকা শিশু মনে গভীর প্রভাব ফেলে। আমাদের এই আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায়, স্কুলস্তর থেকেই লিঙ্গ বৈষম্য কীভাবে দায়িত্ব সহকারে কচিকাঁচাদের মাথায় প্রবেশ করাচ্ছে, সেই আলোচনায় এবার আসা যাক।
ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট অনুযায়ী, স্কুল পাঠ্যপুস্তকে মহিলাদের ছোটো করে উপস্থাপন করা হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের চতুর্থ সংস্করণটি থেকে জানা গেছে, পাঠ্যপুস্তকগুলিতে পুরুষদের ছবির তুলনায় মহিলাদের ছবির সংখ্যা নগণ্য। এ ছাড়া, মহিলাদের উপস্থাপন করা হয় কম ‘মর্যাদাপূর্ণ’ হিসাবে। পাঠ্যপুস্তকগুলিতে যদি পুরুষদের ডাক্তার দেখানো হয় তাহলে মহিলাদের নার্স হিসাবে দেখানো হয়। কেবলমাত্র খাদ্য, ফ্যাশন বা বিনোদন সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে মহিলাদের উপস্থাপিত করা হয়। স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় নারীদের দেখানো হয় এবং পুরুষদের বেতনভোগী কাজের ক্ষেত্রে দেখানো হয়। লিঙ্গ বৈষম্যের এই দিকটাই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে রিপোর্টে বলা হয়েছে কিছু দেশ লিঙ্গ ভারসাম্যের লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তকের ছবিগুলি সংশোধন করেছে।
রিপোর্টে দেখা গেছে, আফগানিস্তানে, নব্বইয়ের দশকে প্রকাশিত প্রথম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে মহিলারা প্রায় অনুপস্থিত ছিলেন। ২০০১ সাল থেকে, তাঁদের পরোক্ষ ও ঘরোয়া ভূমিকা় যেমন মা, যত্নশীল কন্যা এবং বোন হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। বেশিরভাগ মহিলাকেই পরনির্ভরশীল হিসেবে দেখানো হয়েছে। শিক্ষিকার পেশাই তাঁদের একমাত্র কেরিয়ার। সেই একই রাস্তায় হেঁটেছে ইরান। ইরানে ৯৫টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, মহিলাদের মাত্র ৩৭টি ছবিতে দেখানো হয়েছে। প্রায় বেশিরভাগ ছবিতে মহিলাদের পরিবার ও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত দেখানো হয়েছে।
২০১৯ সালে মহারাষ্ট্র স্টেট ব্যুরো অফ স্কুল বুক প্রোডাকশন অ্যান্ড কারিকুলাম রিসার্চ লিঙ্গগত বৈষম্য মুছে ফেলে বহু পাঠ্যপুস্তকের ছবি সংশোধন করেছে। ইউনেস্কোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষার পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্য ও ছবিতে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৪৪%, বাংলাদেশে ৩৭% এবং পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে ২৪% নারীদের উপস্থাপন পাওয়া যায়। আমেরিকায় প্রারম্ভিক অর্থনীতি পাঠ্যপুস্তকের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, উল্লিখিত ১৮ শতাংশ মহিলারা বেশিরভাগই খাদ্য, ফ্যাশন বা বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত। স্পেনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা চরিত্রের উপস্থাপন ১০% এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ১৩% পাওয়া গেছে । রিপোর্ট অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তকের ১২০০০-এরও বেশি ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাত্র পঞ্চমাংশ জুড়ে মহিলারা ছিলেন। (হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা, ৩০/০৬/২০২০)
এই খবর পড়ে কৌতূহলবশত আমাদের পশ্চিম বাংলার পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে আগ্রহান্বিত হই। আলোচনার জন্য আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ১৩টি পাঠ্য বইয়ের মধ্যে থেকে নমুনা হিসাবে মোট ১০টি বই নির্বাচন করেছি। নির্বাচিত নমুনা বইয়ের আধেয় অর্থাৎ পাঠ্য, ছবি, চিত্রণ, গ্রাফিক্সের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নির্বাচিত বইগুলি নতুন পাঠ্যক্রমের অন্তর্গত। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির 'আমার বই'-তে বাংলা, ইংরেজি, গণিত সমন্বিত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের নাম পাতাবাহার, ইংরেজি বই বাটারফ্লাই। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির গণিত বইয়ের নাম যথাক্রমে--আমার গণিত, গণিত প্রভা। পরিবেশ বিদ্যার বইয়ের নাম--আমাদের পরিবেশ। পাতাবাহার বইয়ের প্রাক্কথনে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যালয় শিক্ষাদপ্তরের চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার জানিয়েছেন : “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শকে মাথায় রেখে এই বইগুলি সাজানো হয়েছে”। তিনি আরও জানিয়েছেন, “আমরা এই প্রক্রিয়া শুরু করার সময় থেকে জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা 2005 (NCF 2005) এবং শিক্ষার অধিকার আইন 2009 RTE 2009 এই নথি দুটিকে অনুসরণ করেছি। পাশাপাশি আমরা রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শের রূপরেখাকে ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করেছি”।
যে-সকল বই নির্বাচন করেছি, সেগুলির আধেয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রায় সকল বইয়ের রচনা ও সম্পাদনায় নারীদের থেকে পুরুষদের আধিপত্য বেশি। সমস্ত বইয়ের চেয়ারম্যান ও সভাপতির পদে পুরুষ রয়েছেন। প্রথম শ্রেণির আমার বই বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য পদে আছেন তেত্রিশ জন। এই তেত্রিশ জন সদস্যের মধ্যে ছাব্বিশ জন পুরুষ, সাতজন মহিলা। প্রচ্ছদ অলংকরণ এবং রূপায়ণের দায়িত্বে পুরুষ রয়েছেন । দ্বিতীয় শ্রেণির আমার বইতে দেখা গেছে, বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য পদে আছেন একুশ জন। তার মধ্যে আঠারো জন পুরুষ সদস্য, তিনজন মহিলা সদস্য। প্রচ্ছদ অলংকরণ এবং রূপায়ণের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বই পাতাবাহারের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য পদের দায়িত্বে আছেন ছয়জন পুরুষ, দুইজন মহিলা। সহযোগিতায় রয়েছেন তিনজন পুরুষ, চারজন মহিলা। পুস্তক নির্মাণ এবং পুস্তক অলংকরণের দায়িত্বে পুরুষ রয়েছেন। চতুর্থ শ্রেণির পাতাবাহার বইটির বিশেষজ্ঞ কমিটিতে সাতজন পুরুষ, তিনজন মহিলা রয়েছেন । সহযোগিতায় রয়েছেন তিনজন মহিলা, একজন পুরুষ। প্রচ্ছদ ও অলংকরণে সেই আগের ধারায় অব্যহত আছে। পুস্তক নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন চারজন পুরুষ।
তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবই বাটারফ্লাইতে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। টেক্সট বুক ডেভলপমেন্ট কমিটিতে রয়েছেন দশজন পুরুষ, চারজন মহিলা। প্রচ্ছদ ও চিত্রণের দায়িত্বে একজন পুরুষ রয়েছেন। চতুর্থ শ্রেণির বাটারফ্লাই বইয়ের টেক্সট বুক ডেভলপমেন্ট কমিটিতে রয়েছেন নয়জন পুরুষ, পাঁচজন মহিলা। প্রচ্ছদ ও চিত্রণের দায়িত্বে একজন পুরুষ রয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির আমার গণিত নির্মাণ ও বিন্যাসের দায়িত্বে রয়েছেন আটজন পুরুষ, দুইজন মহিলা। প্রচ্ছদ, অলংকরণ, রূপায়ণের দায়িত্বে পুরুষ রয়েছেন। চতুর্থ শ্রেণির গণিত প্রভার নির্মাণ ও বিন্যাসে রয়েছেন সাতজন পুরুষ, দুইজন মহিলা। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন একজন মহিলা। রূপায়ণ করেছেন একজন পুরুষ।
তৃতীয় শ্রেণির আমাদের পরিবেশ বইতে পুস্তক নির্মাণ ও বিন্যাসের দায়িত্বে ছিলেন পাঁচজন পুরুষ, একজন মহিলা। পরামর্শ ও সহায়তা কমিটিতে ছিলেন আঠারো জন পুরুষ, দুইজন মহিলা। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ, প্রচ্ছদ লিপি ও সহায়তা করেছেন একজন পুরুষ। চতুর্থ শ্রেণির আমাদের পরিবেশ বইতে পুস্তক নির্মাণ ও বিন্যাসের দায়িত্বে ছিলেন চোদ্দোজন পুরুষ, একজন মহিলা। পরামর্শ ও সহায়তা কমিটিতে ছিলেন ছয়জন পুরুষ, দু-জন মহিলা। প্রচ্ছদ করেছেন একজন মহিলা। অলংকরণ করেছেন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা। প্রচ্ছদ লিপি ও সহায়তা করেছেন চারজন পুরুষ।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির আমার বইয়ে কোনো সূচিপত্র নেই। বাংলা, ইংরেজি, গণিত এই তিনটি বিষয় এই বইয়ে স্থান পেয়েছে। আমরা জানি, বাচ্চাদের বইয়ে ছবি একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। আলোচ্য বই দুটি রংচঙে, চিত্তাকর্ষক। প্রথম শ্রেণির আমার বইয়ের নয় নম্বর পৃষ্ঠায় এসে আমাদের মতো নিরেট মস্তিকে ঠকঠক করে ঠোকা পড়ে, দশটি রংচঙে ছবি আছে এই পৃষ্ঠায়। ছবিগুলির মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সোজা-বাঁকা, বেশি-কম, ছোটো-বড়ো, লম্বা-খাটো, ভারি-হালকার ধারণা দেওয়া হয়েছে। ভারি-হালকা ছবিতে দেখানো হয়েছে বাচ্চা একটি ছেলে প্রকাণ্ড একটি পাথর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে । অপরদিকে হালকার ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাচ্চা একটি মেয়ে হাতে একটি ছোট পাথর নিয়ে ছুটছে। আবার সাঁইত্রিশ নম্বর পৃষ্ঠায় Let’s listen and act রাইমসের ছবিতে লাফাচ্ছে, ছুটছে দুটি ছেলে। একটি মেয়ে ডান্সিং ফ্রক পরে নাচছে। শব্দের মাধ্যমে বর্ণ চেনানো হয়েছে পয়তাল্লিশ নম্বর পৃষ্ঠায় সেখানে ছবিতে বয়স্ক একজন মহিলাকে উল বুনতে দেখা যাচ্ছে। বাহান্ন নম্বর পৃষ্ঠায় ছবি দেখে লেটার চেনানোর ক্ষেত্রে একটি পরিবারের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে একজন বয়স্ক মহিলা উল বুনছেন। বাচ্চা একটি মেয়ে পুতুল নিয়ে খেলছে। বাচ্চা একটি ছেলে দুধ খাচ্ছে। ষাট নম্বর পৃষ্ঠায় লেটার শিক্ষণের ছবিতে দেখানো হয়েছে- ছেলেরা মাঠে ফুটবল খেলছে। মেয়েরা স্কিপিং করছে। একশো বিরানব্বই পৃষ্ঠায় পরিবার নামক ছড়ায় পরিবারের যে ছবি চিত্রিত হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে--একটি বাচ্চা মেয়ে পুতুল নিয়ে খেলছে। একটি বাচ্চা ছেলে খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলছে। বাবার হাতে বাজারের থলি। মা রান্না করছেন। ঠাকুরদা সংবাদপত্র পড়ছেন। ঠাকুমা উল বুনছেন। একশো তিরানব্বই পৃষ্ঠায় Our Family শীর্ষক রাইমসে ছবিতে দেখা যায়--পরিবারের সকলে বসে খাচ্ছেন। মা খাবার পরিবেশন করছেন। দুশো ষোলো নম্বর পৃষ্ঠায় ১১ থেকে ১৫ গণনা শিক্ষণে যে ছবি চিত্রিত হয়েছে সেটি হল--একটি বাচ্চা মেয়ে ফুলের মালা গাঁথছে, পাশে একটি বাচ্চা ছেলে বসে দেখছে। দুশো বিয়াল্লিশ নম্বর পৃষ্ঠায় নদীর ধারে পিকনিকের ছবিতে দেখা যাচ্ছে-- মেয়েরা রান্না করছে, সবজি কাটছে। ছেলেরা খেলা করছে, গান শুনছে। নৌকা চড়ছে, নদীতে চান করছে। তিনশো সাত নম্বর ও তিনশো চোদ্দো নম্বর পৃষ্ঠায় ছোটো রবি, ছোটোদের রবি, নুরু থেকে নজরুল শীর্ষক গদ্যাংশে দুই জন মনীষীর জীবনী বর্ণিত হয়েছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির আমার বইয়ের চার নম্বর পৃষ্ঠায় ঘুড়ি ওড়াবার দিনে বিক্রম ও টিপুকে ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যাচ্ছে। আবার, ছয় নম্বর পৃষ্ঠায় খেলার মাঠে ফুটবল খেলার ফাইনাল দিনে ছেলেদের ফাইনাল ম্যাচ হচ্ছে। চব্বিশ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি ছেলে স্রোতস্বিনী নদীতে নাইতে নামছে। বিয়াল্লিশ নম্বর পৃষ্ঠায় ট্রাফিক সিগন্যালের বিধি বোঝাতে চালকের আসনে একজন পুরুষকে দেখা যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশও একজন পুরুষ। একই পৃষ্ঠায় Read the sentences লেখা হয়েছে- My Father is a Teacher. He teaches English. My mother is a house wife. She takes good care of us। ছেচল্লিশ নম্বর পৃষ্ঠায় ছবি দেখে ঠিকমতো লিখি পাঠ্যাংশে বল হাতে মীর, রাজু, রানা নামের তিনটি ছেলেকে দেখা যাচ্ছে। এখানেও কোনো মেয়ের উপস্থিতি নেই। হাটে বাজারে মেয়েরা একা যেতে পারবে না সেই কথা প্রকাশ পেয়েছে এই বইতে। আঠারো নম্বর পৃষ্ঠায় বাবার সঙ্গে ভ্রমর বাজারে গেছে। আবার একশো চৌষট্টি নম্বর পৃষ্ঠায় দেখা যাচ্ছে আফসানা বাবার সঙ্গে বাজারে গেছে। কিন্তু ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেই একই বয়সি ছেলেরা একা একা নদীতে যাচ্ছে, মাছ ধরতে যাচ্ছে, ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। একশো বাইশ নম্বর পৃষ্ঠায় গল্পের মাধ্যমে বিয়োগের ধারণাতে অঙ্কগুলি রয়েছে এইরকম--রোশেনারা ৩২টি ফুল নিয়ে মালা গাঁথা শুরু করল। কিন্তু মালা গাঁথার পর ঝুড়িতে ১২টি ফুল পড়ে আছে। মালায় কতগুলো ফুল আছে হিসাব করি। নিরানব্বই পৃষ্ঠায় গল্পের সাহায্যে যোগ অঙ্ক শেখানোর ক্ষেত্রেও পূজা ও সাবিনা মালা গেঁথেছে। শোভন ৬০টি ঘুড়ি এনেছে। আমাদের ৪৮ ঘুড়ি দিয়ে দিল। শোভনের কাছে এখন কতগুলো ঘুড়ি আছে হিসাব করি। সানিয়ার কাছে ৩৩টি টিপ আছে। সানিয়া বন্ধুদের ১৮টি টিপ দিয়ে দিল। সানিয়ার কাছে এখন কতগুলো টিপ আছে দেখি।
আঠাত্তর নম্বর পৃষ্ঠায় Month & Seasons সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এপ্রিল, মে, জুনের ছবিতে দেখানো হয়েছে--ভয়াবহ গরমে একটি বাচ্চা ছেলে রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে নাজেহাল হয়ে পড়েছে। জুলাই, অগাস্টের বর্ষাকালের ছবিতে বৃষ্টির মধ্যে একটি বাচ্চা মেয়ে মাথায় ছাতা দিয়ে হাসিমুখে যাচ্ছে। নভেম্বর মাসের শরৎকালের ছবিতে দেখানো হয়েছে একটি মেয়ের ঠাণ্ডা লেগেছে, রুমাল দিয়ে নাক মুছছে। ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসের ছবিতে একজন বয়স্ক মহিলার ছবি রয়েছে, তিনি জুবুথুবু হয়ে বসে আছেন। ফ্রেব্রুয়ারি, মার্চের বসন্ত কালের ছবিতে একটি বাচ্চা মেয়ে ফুলের বাগানে হাসিহাসি মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই বইতে বাচ্চা মেয়েদের দেখা গেছে পুতুল কিংবা বিড়াল নিয়ে খেলতে। ফুলের বাগানে ঘুরে বেড়াতে, মালা গাঁথতে, সেলাই করতে। দুশো তিরিশ নম্বর পৃষ্ঠায় have/has Sentence শেখানো হয়েছে। ছেলে এবং মেয়েদের ছবির পাশে যে বাক্যগুলি রয়েছে- I am Arjun. I have a cricket bat. You are Rubina. You have a beautiful smile. She is Rimi. She has a doll. He is Imran. He has a football.
একশো উনআশি নম্বর পৃষ্ঠায় বিদ্যাসাগরের কথা ও একশো নিরানব্বই পৃষ্ঠায় বিশ্বজয়ী বিবেকানন্দ শীর্ষক গদ্যাংশে দুইজন মনীষীর কথা ব্যক্ত হয়েছে। দুশো পঁয়ষট্টি পৃষ্ঠায় স্বপন বুড়োর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে প্রথম পুরষ্কার নামের একটি নাটক আছে। এই বইতে প্রথম শ্রেণির আমার বইয়ের মতো কোনো মহীয়সী নারীদের দেখা পাওয়া যায়নি।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বই পাতাবাহার। এই বই দুটির আধেয় বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি মহিলা লেখকদের সংখ্যা পুরুষ লেখকদের থেকে অনেক কম। তৃতীয় শ্রেণির পাতাবাহার বইতে মোট সাতাশটি প্রচলিত গল্প, গল্প ও কবিতা স্থান পেয়েছে। সাতটি প্রচলিত গল্প এই বইতে রয়েছে। প্রচলিত গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে পুরুষরা প্রাধান্য পেয়েছেন। পাঁচটি গল্পে পুরুষদের প্রধান চরিত্রে দেখা গেছে। মহিলা লেখকদের তিনটি গল্পে সুখলতা রাওয়ের ফুল গল্পে ফুল পরীদের কথা আছে। গৌরী ধর্মপালের সোনা গল্পে প্রধান চরিত্র চাষির মেয়ে সোনা। নবনীতা দেবসেনের মনখারাপের গল্পতেও বাচ্চা একটি মেয়ে প্রধান চরিত্র রয়েছে। মহিলা কবিদের কবিতা এই বইতে নেই। পুরুষ কবিদের কবিতায় প্রকৃতি, স্বদেশ স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু কবিতায় প্রধান চরিত্রে পুরুষরা প্রাধান্য পেয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির পাতাবাহার বইতে মোট বত্রিশটি গল্প, কবিতা, হেঁয়ালি নাট্য, নাটক রয়েছে। সাতাশ জন পুরুষ লেখক ও কবি এবং পাঁচজন মহিলা লেখক ও কবির লেখা আমরা পেয়েছি। বলাই বাহুল্য, এখানেও পুরুষ চরিত্ররা প্রাধান্য পেয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি বই বাটারফ্লাইতে প্রকৃতি, পরিবেশ, পশু, পাখিদের উপর প্রাধান্য দিয়েছে। মহিলাদের ছবি এই বইতে বেশি দেখা গেছে। মহিলা ও বাচ্চা মেয়েদের কয়েকটি কাজ করতে দেখা গেছে-- লেশন এক-এ কজল নামের বাচ্চা একটি মেয়ের পশুপ্রেমের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তার অনেকগুলি বন্ধু আছে--ভলু কুকুর, মিনি বিড়াল, রামু ভেড়া, মতি গরু। লেশন পাঁচে রুবির সঙ্গে তার মায়ের কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে। জলখাবার দিয়ে খাবার টেবিলের পাশে তার মা দাঁড়িয়ে পরিবেশ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করছেন। লেশন সাতে আওয়ার গ্রিন ফ্রেন্ডস অধ্যায়ে একটি বাচ্চা মেয়েকে গাছে জল দিতে দেখা যাচ্ছে। পাশে কয়েকজন বাচ্চা ছেলে খেলা করছে। লেশন আটের ইউনিট দুইতে একটি পরিশ্রমী মেয়ের চরকা কাটার ছবি ও তার পরিশ্রমের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ছবি দেখে কাল্পনিক গল্প তৈরির ছবিতে একটি সাহসী মেয়ের ছবি দেওয়া হয়েছে। সে দুটো ডাকাতের কাছ থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মেয়েটিকে এখানে সাহসী হিসাবে দেখানো হয়েছে এটি একটি ইতিবাচক দিক। চতুর্থ শ্রেণির বাটাররফ্লাই বইতে পুরুষরা প্রাধান্য পেয়েছে। বেশ কয়েকটি অধ্যায় ছেলেদের ঘিরে গড়ে উঠেছে। অধ্যায়ে চারে দি হিরো পাঠ্যাংশে ছেলেদের কবাডি খেলাকে কেন্দ্র করে কাহিনি এগিয়েছে। কবাডি খেলায় কোনো মেয়েকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। বরং অধ্যায় দুইতে আ গার্ল ইন আ ফেয়ার পাঠ্যাংশে দেখানো হয়েছে লিপি নামের একটি মেয়ে মেলায় ঘুরতে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে সে বেলুন কিনছে, পুতুল কিনছে, আলুকাবলি, ফুচকা খাচ্ছে! অধ্যায় দুইতে টেস্ট অফ বেঙ্গল পাঠ্যাংশে নারীর সেই সনাতনী রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একজন মহিলা ভালো রান্না করে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে পঞ্চব্যঞ্জন খাওয়াবেন এই বস্তাপচা ধারণা শিক্ষার্থীদের মাথায় গেঁথে দেওয়া হচ্ছে। পরিবারের অন্যরাও যে রান্না করতে পারেন, ঘরকন্নার কাজ করতে পারেন সেই বিষয়ে ছোটো থেকে বাচ্চাদের সচেতন করা উচিত। ইংরেজি পাঠ্যবইতে এই ধরনের বিষয় দেখে সত্যিই হতাশ হতে হয়।
তৃতীয় শ্রেণির আমার গণিত পাঠ্যে আমরা কী দেখছি? বাগানে ফুল তুলতে যাচ্ছে সবিতা, প্রিয়া। দৌড় প্রতিযোগিতায় ছেলেদের ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে। লাফদড়ি কেবলমাত্র মেয়েরাই খেলে। গোপাকে দাদু পয়সা দিলেন। সে ফুচকা, আলুকাবলি খেল।
চতুর্থ শ্রেণির গণিত প্রভা বইতে দেখছি রত্না মাফলার বুনছে। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রহমত ভালো দৌড়ে প্রথম হচ্ছে। মিলি ভাল দৌড়তে পারে না, তাই সে তৃতীয় হয়েছে। পাঠ্যবইতে ছেলে মেয়েদের বিভেদ সৃষ্টি করে, সবল-দুর্বলের ভেদাভেদ সৃষ্টি করা কতটা যুক্তিপূর্ণ! জরিনার লম্বা লাল ফিতে আছে এবং তার লম্বা চুল আছে। কেন এই ধরনের ছবি অঙ্ক বইতে স্থান পাবে? ছোটো চুল থাকলে কি ক্ষতি হত? মা রান্নার জন্য জল আনছেন, রান্নার কাজে মাকে সাহায্য করছে বাচ্চা একটি মেয়ে! ফুলদানিতে ফুল রাখছে রীতা ও দেবিকা। সত্যিই অঙ্কের বই দুটি দেখে মনে দ্বিধা জন্মায়, অঙ্কের বই না মেয়েদের সাংসারিক কাজকর্ম শেখানোর হোম সায়েন্স বই!
তৃতীয় শ্রেণির আমাদের পরিবেশ বইতে শাকপাতার খোঁজখবর পাঠ্যে দেখানো হয়েছে বৈশাখীর ঠাকুমা বাগানে ঘুরে ঘুরে শাক তোলেন। বৈশাখীর মা রান্না করে দেন। সাংসারিক কাজে মহিলারা করবেন সে কথায় এই বইতে বুঝিয়ে দিচ্ছে। পোশাকে যায় চেনা অধ্যায়ে সেই চিরাচরিত প্রথা অবলম্বন করে মহিলাদের নার্স, ছেলেদের ডাক্তার হিসাবে দেখানো হয়েছে। বাড়িতে কত কিছু অধ্যায়ে বোতলে জল ভরছে অলিভিয়া। সকলের তরে সকলে আমরা অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে ঠাকুমা সেলাই করবেন বলে নাতনি কেয়াকে সূঁচে সুতো পরিয়ে দিতে বলছেন। জীবিকার আদিকথা অধ্যায়ে কেতকী, শান্তনু আলি, চিনু, আকাশ আলোচনা করছে তাদের ঠাকুরদাদের জীবিকা নিয়ে। স্বাস্থ্যই সম্পদ অধ্যায়ে ছেলেদের শরীরচর্চা করতে দেখা যাচ্ছে। সুষম খাবার খেতে ছেলেদের দেখা গেছে। কোনো মেয়ের ছবি এই অধ্য্যায়ে দেওয়া হয়নি। ঘরোয়া শিল্পের নানান কথা অধ্যায়ে স্কুলের ছেলেমেয়েরা হাতের জিনিস প্রদর্শন করবে সে কথা বলা হয়েছে, কিন্তু হাতের কাজে প্রদর্শনীর ছবিতে ছয়টি মেয়ের ছবি দেওয়া হয়েছে, কোনো ছেলের ছবি দেওয়া হয়নি। সজাগ থেকো, ভুলে যেও না অধ্যায়ে লিখছে, কুমকুম মায়ের হাতে হাতে একটু আনাজ কাটে। ছবিতে কুমকুমকে আনাজ কেটে বটি রাখতে দেখা যাচ্ছে।
চতুর্থ শ্রেণির আমাদের পরিবেশ বইতে দিনের শেষে গল্পগাথা অধ্যায়ে জানান হয়েছে বাবা-জ্যেঠুরা কাজের জায়গা থেকে সন্ধ্যেবেলায় ফিরে আসেন। অর্থাৎ বাড়ির পুরুষরা বাইরে কাজে যাবেন, কোনো মহিলা বাড়ির বাইরে কাজে যাবেন না!
প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকের আনাচে-কানাচে এই পরিমাণ বৈষম্য রয়েছে! সত্যিই এই আধেয় বিশ্লেষণ করে শিউরে উঠতে হয়। সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই আলোচনার সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি। আমরা সবাই জানি, ছোটোদের সংবেদনশীল মনে ছবির প্রভাব কতখানি পড়ে। পাঠ্যপুস্তকে এই ধরনের ছবি, লেখা আগামী প্রজন্মকে কোন্ পথে নিয়ে যাচ্ছে সহজেই অনুমেয়। ফলে অচিরেই যথাযথ বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন করা উচিত। নইলে তাহাদের ভ্লগ দেখতে দেখতে আমি, আপনি, সে অরণ্য রোদন করে আফশোসে মিনমিন করে গাহিয়া উঠিব
সুখে আছে যারা সুখে থাক তারা
সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা
দুখিনী নারীর নয়নের নীর
সুখীজনে যেন দেখিতে না পায়।
লেখক : অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক, সমাজকর্মী
ছবি : প্রতীকী
3 Comments
জিতেন নন্দী
22 October, 2020
সমাজমনে যে বৈষম্যগুলি প্রোথিত রয়েছে, তা আমাদের গোচরে এবং অগোচরে পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের কলমে উঠে আসে। রবীন্দ্র শিক্ষাদর্শ ঘোষণায় কতটা রকমফের হয়? বরং ছেলে মেয়ে উঁচু নিচু জন্ম পরিচয়ের শিশুদের অবাধ মেলামেশা হয়তো বৈষম্যগুলোকে খানিকটা ভেঙে দিতে পারে --- যদি না অভিভাবকরা খবরদারি করে। অভিভাবক বলতে বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সমাজ সকলের কথাই বলছি।
জিতেন নন্দী
22 October, 2020
সমাজমনে যে বৈষম্যগুলি প্রোথিত রয়েছে, তা আমাদের গোচরে এবং অগোচরে পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের কলমে উঠে আসে। রবীন্দ্র শিক্ষাদর্শ ঘোষণায় কতটা রকমফের হয়? বরং ছেলে মেয়ে উঁচু নিচু জন্ম পরিচয়ের শিশুদের অবাধ মেলামেশা হয়তো বৈষম্যগুলোকে খানিকটা ভেঙে দিতে পারে --- যদি না অভিভাবকরা খবরদারি করে। অভিভাবক বলতে বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সমাজ সকলের কথাই বলছি।
জিতেন নন্দী
22 October, 2020
সমাজমনে যে বৈষম্যগুলি প্রোথিত রয়েছে, তা আমাদের গোচরে এবং অগোচরে পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের কলমে উঠে আসে। রবীন্দ্র শিক্ষাদর্শ ঘোষণায় কতটা রকমফের হয়? বরং ছেলে মেয়ে উঁচু নিচু জন্ম পরিচয়ের শিশুদের অবাধ মেলামেশা হয়তো বৈষম্যগুলোকে খানিকটা ভেঙে দিতে পারে --- যদি না অভিভাবকরা খবরদারি করে। অভিভাবক বলতে বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সমাজ সকলের কথাই বলছি।
Post Comment