- 14 May, 2020
- 0 Comment(s)
- 714 view(s)
- লিখেছেন : স্বপন ঘোষাল
দেশপ্রেমের হাওয়া: দেশের মানে মহান ভারতবর্ষের সর্বত্র এখন একটা হইহই করে দেশপ্রেমের প্রচার চলছে। দেশের প্রতি গভীর ভালবাসার দাবি নিয়ে সদ্য কাশ্মীরে, ভারতের এই অবিচ্ছেদ্য অংশ, রাজনৈতিক ও আইনসংগতভাবে যা স্বীকৃত, সেখানে জম্মু–কাশ্মীরবাসীকে অধিক ভারতীয় করার জন্য সমস্ত ক্ষেত্রে— সংবাদ মাধ্যম, যোগাযোগ, নেট পরিষেবা, স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়কে, চিকিৎসা পরিষেবাকে, ব্যাবসা বানিজ্যকে সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্তব্ধ করে দিয়ে মানুষগুলোকে খাঁচায় পুরে রাখা হল। দশজন নাগরিক পিছু একজন ফৌজি। এই নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে তিনটি টুকরোয় ভাগ করে—জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখকে সহবত শিখিয়ে আপন করে নেওয়ার মহরত চলছে। এগুলি এখন কেন্দ্র শাসিত এলাকা। একটিও কোনো প্রদেশ নয়। স্বায়ত্বশাসন বাতিল হয়েছে। এটা করতে তিনশো সত্তর ধারা, আমাদের সংবিধানের যে শক্তির ভিত্তিতে সীমিত অর্থেও স্বায়ত্বশাসনের মর্মবস্তু যতটুকু টিকেছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এর দ্বারা তাঁদের প্রভূত উন্নতি হবে এমনটাই দাবি ভারত সরকারের। শিল্প, সংস্কৃতি, কৃষির বিকাশ এবং কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ হবে, নারীর উপর যে নির্যাতন চলত তা বন্ধ হবে, অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, মুসলিম নিয়মের নিগড় মুক্ত হবে। এছাড়া জঙ্গীরাও ঠাণ্ডা হবে।
এর বিরুদ্ধাচরণ করলে তা দেশদ্রোহিতা হিসেবে চিহ্নিত হবে। কারণ এটাই দেশের স্বার্থ বলে বিবেচনা করতে হবে। অন্যদিকে আসামে বিদেশিদের সংখ্যাধিক্য বাড়ছে বলে আসামে অসমিয়ারাই বে–ঘর হয়ে হতমান হয়ে যাচ্ছে—একথা শুনিয়ে সরকার কেন্দ্র রাজ্য মিলিতভাবে চালু করছে নন রেসিডেন্ট সিটিজেন (এন আর সি)। উনিশ লক্ষ ভেজালবাসীকে ভাগিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা পাকা। অন্যান্য রাজ্যে গিয়ে তারা সেঁধিয়ে যাবে সেটি হবে না। ভেজালদের জন্য সর্বত্র খোঁয়াড় তৈরি হয়েছে। ঘরে ঘরে আসল ও নকল বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্মীয়দের বিভাজন হয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের নদী ভাঙ্গনের চেয়ে এই ভাঙ্গন অনেক মারাত্মক ও সর্বগ্রাসী। ঘরে ঘরে কান্নার রোল উঠেছে। ৩৭০ বাতিলের ঝড় আর এনআরসি–র ঝড়ে বিরাট ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে। দেশের নাগরিকবৃন্দ খড়কুটার মত ভেসে যাচ্ছে।
যা চাই তাই পেতে হবে, না হলে ... : ঘরের খবর দেখি। ৯ সেপ্টেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকায় হঠাৎ ৬ নম্বর পৃষ্ঠায় নিচের কোনায় ছোট্ট কটা লাইনের সংবাদ চোখে পড়ল। শিরোনাম—‘অ্যাসিড হামলায়’। আট বছরে ওড়িশায় সত্তরটা অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমন তথ্যই এসেছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায়। জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো জানায়, দেশে অ্যাসিড আক্রান্তদের মধ্যে চুয়াল্লিশ শতাংশ পূর্ব ভারতের বাসিন্দা। এই নারকীয় অত্যাচার অব্যাহত। পুরুষের দাবি অনুযায়ী মেয়েদের সাড়া দিতেই হবে। নইলে এমনটাই করা হবে।
১৯ জুন, পাঁচজন আদিবাসী নারী ও তিনজন পুরুষ, খ্রিষ্টান এনজিও কর্মীসহ একটা স্কুলে, (বুরুড়িতে, গ্রাম ওবাং, রাজ্য ঝাড়খন্ড, জেলা খন্ডি) একটা পথনাটিকা করছিল। বিষয় ছিল পাচার বিরোধী। হঠাৎ ছ’জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী আক্রমণ করে নাটক থামিয়ে দিল। তারপর তাদেরকে অপহরণ করল। কয়েক কিলোমিটার দূরে, একটা জঙ্গলে মহিলাদের গণধর্ষণ করা হল। চলল বেদম প্রহার। নানা ধরনের বর্বরতা। আর পুরুষগুলোকে জবরদস্তি মূত্র পান করতে বাধ্য করা হল। স্কুলের অধ্যক্ষ ফাদার আল ফান সো আইয়েন এবং দুজন সন্ন্যাসিনী ধর্ষিতা নারীদের বললেন, সমস্ত ঘটনা চেপে যাও। কিন্তু অন্তর্দাহে ওঁদের একজন পরদিন মুখ খুললেন। পুলিশের ডিজি বাধ্য হয়ে আর কে মল্লিক ক্যাথলিক জাজক ও দুজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করলেন। অভিযুক্ত হল একটা সংগঠন যারা নিজেদের মাওবাদী বলে পরিচয় দেয়। তাদের বক্তব্য ‘পাথাল গাড়ি আন্দোলন’ সংগঠিত করে আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাই তাদের কাজ। প্রকৃত দুষ্কৃতীদের আড়াল করতে তাদের দোষী করা হচ্ছে— উদ্দেশ্য ও প্রতিবাদকে ধংস করা। এই বক্তব্য আন্দোলনের নেতা জোহান জোনাম টুডুর। ইন্ডিয়া টুডে–র সাথে সাক্ষাৎকারে তারা একথা জানায়। এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্রিশ গড়, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশায়। কারণ, সরকারগুলি পঞ্চায়েত সংক্রান্ত আইনি অধিকার অ্যাক্ট ১৯৯৬ বা PESA প্রয়োগ করছে না। মর্মকথা হল জমি দখল করতে হলে ও বন্য সম্পদের দখল নিতে হলে চিহ্নিত এলাকাগুলিতে আবশ্যিকভাবে গ্রামসভার সম্মতি নিতে হবে। এটা হচ্ছে না। সংবিধান সম্মত অধিকার থেকে আদিবাসীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে প্রায় পঞ্চাশ হাজার আদিবাসী জঙ্গল মহলে অধিকার রক্ষার জন্য লড়ছে। সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। (জুলাই ৯, ইন্ডিয়া টু ডে)
নারী ধর্ষণ ও সঙ্গে উচ্ছেদ সংক্রান্ত ভয়াবহ সমস্যায় আদিবাসীরা আতঙ্কিত। স্ত্রী–পুত্র নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানোর অবস্থায় তারা পৌঁছেছে। চরম দারিদ্র ও অসহায়তাকে কাজে লাগিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে চলছে পাচার। কাজেই পাচার বিরোধিতা করলে কায়েমি স্বার্থে ঘা লাগে। তাই শায়েস্তা করতে হবে ওদের। যত অসহায় হবে তারা, তত পাচার বাড়বে। পাচার ক্রমশই বাড়ছে।
পাচার চক্রের নারকীয়তা: এই রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলাটি ২০০৬–এর হিসেব অনুযায়ী দেশের অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া ২৫০ জেলার মধ্যে অন্যতম। চা–দোকানের এক গরিব মালিকের ছেলে ফারাক এখন জেলে। সে ১৩ লাখ টাকার মালিক হয়েছিল। ব্যবসা ছিল মেয়ে পাচার। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ষোল হাজার মেয়ে পাচার হয়েছে শুধু এই জেলা থেকে। একটি এনজিওর হিসেব অনুযায়ী আঠারো মাসে ৩০০ জন উদ্ধার আর পঞ্চাশ জন পাচারকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। ১৬–১৭ বছর বয়সেই মেয়েদের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকাও পাওয়া যায়। সমীক্ষায় দেখা যায় প্রতিবেশীরা শুধু নয়, আত্মীয়রাও পাচার করে দেয়। এমনকি বাবা–মাও। তাদের ভাবনা একটা মেয়েকে বিক্রী করে যে টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে আরও দুটো মেয়ে বা ছেলেকে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা যাবে। সারাদেশে এই পাচার এত বেড়েছে যাকে মহামারি হিসেবে বর্ণনা করলেন নোবেল জয়ী ব্যক্তিত্ব কৈলাস সত্যার্থী। তিনি সারাদেশের পাচার বিরোধী সচেতন শক্তি গড়ে তুলতে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে টানা পয়ত্রিশ দিন সারা দেশে পদযাত্রা করেছেন। সত্যার্থীর নিজের কথা হল—The sexual exploitation of children, rape, abuse, and traffiking–এর বিরুদ্ধে আমার সর্বাত্মক যুদ্ধ। এসবের বিরুদ্ধে তিনি সরকারগুলিকে সক্রিয় হতে দাবি করেছেন। রাষ্ট্রপতি মাননীয় রামনাথ কোবিন্দকে তিনি দেখা করে বলেছেন, জাতীয় স্তরে শিশুদের জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল স্থাপনা করতে হবে। বস্তুতপক্ষে, পাচার হওয়া শিশুদের হরমোন ইঞ্জেকশন দিয়ে ফার্মের মুরগীর মত বড় করা হয়। পনের–কুড়িজন নরমাংশ ভোজীকে প্রতিদিন তৃপ্তি দিতে এই অসহায় মেয়েরা বাধ্য হয়। তবু বলতেই হবে দেশ এগিয়ে চলেছে। ৩৭০ ধারার বাধা এই ভূখন্ডে অবশ্য নেই। ‘according to a conservative estimate from union ministry for home affaires 10000 children go missing every year.’ সত্যারথির এনজিও Global march against child labour. তাদের রিপোর্ট হল—‘... the lower estimate of the size of commercial sexual exploitation industry in India is 35 billion dollar. around 2 percent of the GDP.’(source: India Today 2017, novembar,13).
তার মতে এই বিপুল টাকার অংশ কিশোরী ও মহিলাদের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ সংগঠিত করতে ব্যবহৃত হয়। আসাম, বাংলা, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, উত্তরপ্রদেশগুলির মতো গরীব রাজ্যগুলির হতদরিদ্র ঘরের মেয়েরা ও শিশুরাই পাচারকারীদের শিকার হয়। পাচার হওয়াদের নব্বই শতাংশ মেয়ে এইসব রাজ্যের। আঠারোটা দেশে তারা চালান হয়। ২০১৬–তে হেড কোয়ার্টার সেন্টার ফর চাইল্ড বলছে, পাচার হওয়াদের নব্বই শতাংশ বিভিন্ন রাজ্যে দেহ ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হয়। ক্রমাগত এই পাচার বাড়ছে। সারা দেশের যৌন দাসত্বের পেশায় নিযুক্ত আছে তিন মিলিয়ন। এর চল্লিশ শতাংশ মানে ১.২ মিলিয়ন অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরী ও শিশু। (source: the lost girl report of the ministry of women and children). সার্বিক এই শিল্প (?) বেড়েই চলছে। পার্লামেন্টে ইউনিয়ন মিনিস্ট্রি ফর ওমেন অ্যান্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট মার্চ মাসে বললেন ২০১৬ সালে কুড়ি হাজার শিশু ও নারী পাচার হয়েছে। এটা ২০১৫ সালের চাইতে পঁচিশ শতাংশ বেশি। এই করুন চিত্রের পাশে হতাশাজনক সংবাদ হল অপরাধীদের শাস্তির হার মাত্র ২ থেকে ৫ শতাংশ। (সূত্র:ঐ) গরীব ঘরে ঘরে আগুন জ্বলছে। দোজখের আগুনে চলছে ভারতবাসীর কর্মসংস্থান! এই কর্মসংস্থানের সত্তর শতাংশই সংখ্যালঘু ও গরীব ঘরের। ভারতে দলিতরা কেমন আছেন। ঘরের এই ছবিটাও একটু দেখা যাক।
দলিত চিত্র: ‘...ever since the BJP came to power, Minorities and Dolit have been facing increase repression and violence. National crime records Bureau data on cast atrocities show that 2016, 40801 atrocities against Dolits were reported ; in 2015 the figure was 38670.’ তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ ক্রাইম হয়েছে সিডুইল কাস্ট নারীদের উপর। দশ বছরে এই আক্রমণ বেড়েছে। এই পর্যায়ে দলিত নারীদের ধর্ষণ দ্বিগুন হয়েছে। ২০০৬–এ প্রতিদিন ৩ জন ধর্ষিতা হতেন। ২০১৫–তে দিন প্রতি ৬ জন। এই সংখ্যা কেবল নথিভুক্ত অঙ্ক। গত দশ বছরে ২০১৪ সাল ছিল ভয়াবহ। কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতাসীন হল। এই বছরে এমন ক্রাইমের সংখ্যা ৪৭,০৬৪। বিগত বছরের তুলনায় তা উনিশ শতাংশ বেশি। ২০১৪ সালে ৭৪৪ জন দলিত খুন হয়েছিল। ২০১৩–তে এই সংখ্যা ছিল ৬৭৬। দেখা যায় বিজেপি শাসিত রাজ্যে অথবা কোনো আঞ্চলিক দলের সাথে তারা জোট করে সরকার চালাচ্ছে এমন সর্বত্র এই অপরাধ বেড়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসেবটা তাই। সবচেয়ে বেশি মধ্যপ্রদেশ ৪৩.৪ শতাংশ, তারপর রাজস্থান ৪২ শতাংশ, গোয়া ৩৬.৭ শতাংশ, গুজরাট ৩২.৫ শতাংশ। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে বলেছেন, প্রতি ১২ মিনিটে দলিত নির্যাতন ঘটেছে। তঁার কথায় গত চার বছরে এত দলিত বিরোধিতা ও আদবাসীদের বিরুদ্ধে এমন বিদ্বেষ অতীতে কখনও দেখা যায়নি। এই নিপীড়ন ও সন্ত্রাস সামগ্রিক ভাবে তাদের সমাজে, স্বাস্থ্যে, জীবন–জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। স্বাক্ষরতা মেয়েদের মধ্যে জাতীয় হারের চেয়ে কম। ২৪.৪ শতাংশ। ২০১১ সালের সেন্সাস অনুযায়ী এস সি জনসংখ্যা ছিল ২০১.৪ মিলিয়ন, মানে ১৬.৬ শতাংশ সারা ভারতে। এটা বেড়ে ২০.৬ শতাংশ হয়েছে, ন্যাশন্যাল ফ্যামেলি হেলথ সার্ভে অনুযায়ী (রাউন্ড ৪, ২০১৫)। গ্রামীণ রোজগেরেদের ৫২.৬ শতাংশ হল ক্যাজুয়াল লেবার। ০.৮ শতাংশ পরিবারে ৪.০১ হেক্টর জমি আছে। আশ্চর্য হতে হয় এইরকম অসহায় পরিবারগুলোর মধ্যে সরাসরি অদলিত লোকেরা বাড়িতে ঢুকে কখনও মেয়েকে বা বাড়ির বউকে ভোগ করার জন্য দাবি জানায়। এবং তা করেই ছাড়ে। এস সি মেয়েদের ১৫–৪৯ বছর বয়সী ৩৩.২ শতাংশই পাশবিক অত্যাচারের শিকার হয়। আর আদিবাসীদের ২৬.৩ শতাংশ। অন্যান্য ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসে ১৯.৭ শতাংশ। (সূত্র: ফ্রন্টলাইন, ২০১৮, জুলাই)।
কোটি কোটি মানুষ এভাবে নিদারুণ দারিদ্র, অনাহার, অপুষ্টি, নির্যাতনের মধ্যে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা, মায়েরা, বোন ও গৃহবধূরা এসব নির্যাতন সহ্য তো করছেই, তার সাথে শারীরিক নিগ্রহ, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বিরাট অংশ মেনেই নিচ্ছে এসব সহ্য করেই টিকে থাকতে হবে। আজ যদি মায়ের ধর্ষণ হয় পরের দিন মেয়ের। না হয় খুন। এখন এসব নিত্যদিনের সংবাদ। এরজন্য কোনো বয়সের বাধানিষেধ নেই। সর্বনাশের শেষ সীমানায় দঁাড়িয়ে নিপীড়িত মানুষের চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে। তবু এই দেশের মধ্যে পরবাসীদের ভাবতে হবে এ হল তাদেরই দেশ। নিজের জন্মভূমি। নিজের রক্ত মাংস। নিজের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এজন্য গর্ব করতে হবে তো। এতক্ষণ অনেক সংখ্যা তুলে ধরা হল। অবশ্য এ সংখ্যার সঙ্গে কত চোখের জল, কত দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার লুকিয়ে থাকে তার স্পর্শ পাওয়া যায় না। অনুভব করতে হয় চেতনা দিয়ে, মানবিক বোধ ও হৃদয়বৃত্তি দিয়ে।
উন্নয়নের কান্না: এই মাটিরই আর এক কান্নার কথা শুনি। তাদের চোখে জল আর নেই। শুকিয়ে গিয়েছে। মেনে নিয়েছে। এখন তা আটপৌরে ঘটনা যে। মহারাষ্ট্রের হাজিপুর গ্রামে মানন্দা উগালে কথাগুলো শুনিয়েছেন। হাজিপুর শুধু নয়, মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন পরিচিত ‘জরায়ু শূন্য অঞ্চল’ বলে। গত তিন বছর বিদ, ওসমানাবাদ, সাংলি, সোলাপুর সহ নানা জেলায় জরায়ু শূন্য নারীর সংখ্যা বাড়ছে। কারণ, আখ চাষ। নারী–পুরুষ নির্বিশেষে বছরে ছ’মাস খাটতে যেতে হয় আখ কাটতে বিভিন্ন এলাকায়। স্বামী–স্ত্রী মিলিতভাবে হিসাবে একটি ইউনিট ধরা হয়। কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে হয় কনট্রাক্টরের অধীনে। কাজ বন্ধ করলেই জরিমানা। কনট্রাক্টররা যেমন খুশি নির্যাতন করে আখ শ্রমিকদের। মেয়েদের উপর চলে বার বার শারীরিক অত্যাচার। প্রতিবাদের সুযোগ নেই। আইন, শাসন, বিচার সব অন্ধ। যে তাবুতে শ্রমিকরা থাকে জন্তু জানোয়ার পুষলে তেমন ভাবে রাখা হয়। শৌচাগার নাই। ঋতুস্রাবের সময়ে মেয়েদের নারকীয় অবস্থায় পড়তে হয়। কাজ কামাই করলেই আবার জরিমানা। প্রাণ রক্ষার তাগিদে, রোজগারটুকু বজায় রাখতে শারীরিক এই প্রক্রিয়াকেই তারা বন্ধ করে দেন শল্য চিকিৎসকদের সাহায্যে। স্থানীয় লোভী ডাক্তারেরাও ওঁত পেতে বসে থাকে এজন্য। কুড়িতেই যে মেয়ে দুই সন্তানের মা হয়ে ওঠে এদেশে, আখ না কাটলে তাদের পেট চলবে কি করে? তাই এই পথে গিয়ে জরায়ু কেটে বাদ দিতে হয়। এইসব গ্রাম কার্যত দুর্ভিক্ষের কবলে দাঁড়িয়ে। আশি শতাংশ মানুষই চলে যায় আখ কাটতে। অক্টোবর থেকে মার্চ। যে মেয়েরা যায় তাদের অর্ধেকের বেশি হিস্টেরেক্টমির শিকার। একদিন কাজ বন্ধ করলে পাঁচশো টাকা ক্ষতিপূরণ। কনট্রাক্টররাও খোলাখুলি বলছে জরায়ু থাকলে কাজে নেবেই না। (সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, জুলাই ২৬, ২০১৯, সোনালী দত্ত/ জরায়ুহীন মেয়েদের সমৃদ্ধ দেশ) আখের মিস্টি রসের জন্য জীবনের এই তিক্ততার খবর কজনই বা রাখেন। কেনই বা ঘটে চলেছে এসব।
দুই ভারতবর্ষ: যে সমাজ ও রাষ্ট্রে যে সমাজ–জীবন–ব্যবস্থা নারীকে হতমান করে, মানুষ হিসেবে গন্য করে না, মানুষের লালসার ভোগ্য বস্তু হিসেবে চিহ্নিত করে তা সভ্যতার সর্বনাশ করে। ইতিহাসে এই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ভারতবর্ষে অতি ধনীদের আয়ত্তে রয়েছে সম্পদের তিয়াত্তর শতাংশ। সাতষট্টি শতাংশ দেশবাসী গরীব। তেইশ কোটি মানুষ প্রতিদিন ক্ষুধার্ত থাকে। দারিদ্র ও অনাহারের জ্বালায় চাষী ও মজুরেরা প্রতি ঘন্টায় পাঁচজন আত্মহত্যা করছে। আর এরই পাশে মুকেশ আম্বানীর প্রতিদিন আয় তিনশো কোটি টাকা। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির বয়ানে দেশের বেকার ৬৭ কোটি। বেকারিত্ব ৪৫ বছরের মধ্যে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ। কর্মসংস্থানের বদলে চলছে ছাঁটাই। সরকারী সংস্থা বিএসএনএল থেকে ৫৪ হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। এর সাথে ৩০ শতাংশ চুক্তি শ্রমিকও। অটোমাবাইলে ডিলারশিপে দু’লক্ষ ছাঁটাই। ২০১৬ থেকে ২০১৮ অব্দি ৫০ লক্ষ কর্মী কর্মহীন হয়েছে। অটো পার্টস শিল্পে দশ লক্ষ ছঁাটাই করা হবে, রেলশিল্পে তিন লক্ষ। এই হল একটা ভারতবর্ষ— সংখ্যা গরিষ্ঠের ভারতবর্ষ। আর এক ভারতবর্ষ আম্বানিদের মতো মালিক শ্রেণির, যাঁদের হাতে রয়েছে (এক শতাংশের হাতে) প্রায় সমস্ত সম্পদ। এই দুই ভারতবর্ষ সংঘর্ষময়। দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশপ্রেম বলতে, দেশের প্রতি আনুগত্য বলতে কোন ভারতবর্ষের প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য বোঝাবে? এর নিরিখেই দেশপ্রেম ও নিজের অবস্থান প্রত্যেক ভারতবাসীর নির্ধারণ করতে হবে। ইতিহাসে প্রমাণিত এমন শ্রেণিসংঘর্ষের পথেই রাষ্ট্র, সমাজ বদলায়। শোষণ উচ্ছেদ হয়। এই তার চলার ছন্দ। এই দ্বন্দ্বছন্দেই ভূমিকা নিয়ে মানুষ মানুষ হয়ে ওঠে।
বিভেদ পন্থা কেন? সম্প্রতি এই সংঘর্ষের মধ্যে বিভেদ আনতে তুঙ্গে তোলা হচ্ছে হিন্দুত্ব–আগ্রাসী হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার উল্লম্ফনের নানা উপাচার। গো–হত্যার হুজুগে মুসলিমদের বেপরোয়া খুন করা হচ্ছে। খুন করা হচ্ছে আদিবাসীদের, দলিতদের। অথচ, গোরু ও মোষের মাংস বিদেশে রপ্তানি করার ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির চারটি কর্পোরেট হাউসের মালিকানা হিন্দুদের। চতুর্দিকে সংঘটিত হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। ন্যাশন্যাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসেবে শুধু ২০১৪–১৫ সালে ঝাড়খন্ডে ৪০৮ টা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ঘটেছে। হরিয়ানায় ২০১৪ সালে ২০৭ টা, ২০১৫ তে ২০১ টা। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এই প্রবণতা দুরন্ত গতি পেয়েছে। তাই প্রতিবাদ ধ্বনিত করলে সাংবাদিকরা খুন হচ্ছেন। জেলেও পোরা হচ্ছে তঁাদের। যুক্তিবাদী চিন্তা তুলে ধরলে খুন হতে হচ্ছে চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গকে। ন্যায়ের পক্ষ নিয়ে আইনজীবী লড়লে খুন হচ্ছেন, বিচারপতি খুন হচ্ছেন, সাক্ষীদের খুন করা হচ্ছে। খুনিদের বিরুদ্ধে চার্জ তুলে নেওয়া হচ্ছে। এটাই চলতি সময়ের রেওয়াজ। যারা সকলের সামনে আক্রান্ত হয়ে খুন হচ্ছেন, আসামী করা হচ্ছে সেই নিহতদেরই।
একদিকে অর্থনৈতিক চূড়ান্ত নিপীড়ন। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক চিন্তা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, সংসদ, বিধানসভা, প্রশাসন ধর্মান্ধতার অনুসারী হয়ে কঠোর রূপ নিচ্ছে। বিচারব্যবস্থাকেও শাসকদের পদানত করার চেষ্টা হচ্ছে। সংবিধান–বিরোধী আইন, সন্দেহ হলেই গ্রেপ্তার ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বিনা বিচারে বন্দি রাখার জন্য বিস্তর কালা কানুন চালু হয়েছে। এটাকে কেই বা গণতন্ত্র বলবে? গণতন্ত্রের আলখাল্লা চাপানো একটি ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র—হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার চক্রান্ত হচ্ছে। এই প্রশ্নে অতীতের সরকারের আমলে যেটুকু নাবালকত্ব ছিল, তা ঘুচিয়ে দিয়ে বর্তমান সরকার সাবালকত্ব ফিরিয়ে আনছে। এই ভয়াবহ পরিকল্পনার প্রকৃত নেতা হল টাটা বিড়লা গোয়েঙ্কা, আদানির মতো শিল্পপতি–গোষ্ঠী। তাদের ম্যানেজারি করছে বিজেপি সরকার। সঙ্গী আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং সহ নানা বাহিনী। দেশদ্রোহী শক্তিসমূহ, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছে ও বিপ্লবী নায়কদের দেশদ্রোহী বলেছে।
তাহলে কি কোথাও আশা–ভরসা বলে কিছু নেই? অবশ্যই আছে। আস্থা রাখতে হবে ইতিহাসের পরিবর্তনের নিয়মের উপর। সমাজ পরিবর্তনের নিয়মের উপর। নিয়মকে কেউ ধ্বংস করতে পারে না। সমস্তই নিয়মশাসিত। হিটলার পারেনি ইহুদি মুক্ত ফ্যাসিস্ট জার্মানি গড়তে। মুসোলিনি পরাস্ত হয়েছে, পারেনি। ধর্মের ভিত্তিতে ভ্রান্ত পথে কৃত্রিম ভাবে সৃষ্ট ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্থান টিকেনি। নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ গড়েছে বাঙালিরা, লড়াই করে বুকের রক্ত ঢেলে। তারা প্রথমে বাঙালি, পরে মুসলমান। জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে তার প্রমাণ দিয়েছে। হিন্দু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে নেপালের হিন্দু রাষ্ট্রকে উচ্ছেদ করেছে হিন্দুরাই। ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র অলীক, অনৈতিহাসিক চিন্তা। ব্যর্থ তারা হবেই। শেষ কথা বলবে মানুষই। তাই বলতেই হবে জম্মু–কাশ্মীর সম্পর্কিত পদক্ষেপ ওই এক শতাংশ পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর ভারতবর্ষের স্বার্থে আগ্রাসী মনোভাবেরই প্রতিফলন।
আজ যারা জম্মু–কাশ্মীর নিয়ে ৩৭০ ও ৩৫–এর এ ধারায় চুক্তিবদ্ধ প্রাচীন অধিকার লুপ্ত করেছে জম্মু–কাশ্মীরবাসীর তথাকথিত ভালোর জন্য, সেটাও সফল হবে না। দেশের মূল ভূখন্ডের চালচিত্রই তার বাস্তব দলিল। মূল ভূখন্ডে যারা কথায় কথায় বলেন মুসলমানদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে, মুসলমান মেয়েদের ধরে ধরে গণধর্ষণ করতে হবে, সেই বিজেপি, আরএসএস চালিত জম্মু–কাশ্মীরে কি সুবিচার করতে পারে? কি জনকল্যাণ করতে পারে?
প্রসঙ্গ জম্মু–কাশ্মীর: কাশ্মীরিয়ান মানে কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদ বিকশিত হয়েছিল রাজতান্ত্রিক ও সামন্ততান্ত্রিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। হাজার হাজার মানুষের সামনে কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদী নায়ক সেখ আব্দুল্লাহ বলছেন বক্তৃতায়—‘...the real difference one religion and another; it is between the oppressor and the oppressed .... Muslim land lords exploit Muslim tenants as much as Hindu land lords exploit Hindu tenants. (page 42, Tragic hero shaikh Abdullah)
এই ঐতিহাসিক বিকাশের সাথে ভারতের মূল ভূখন্ডের শোষিত মানুষের স্বার্থ নিবিড়ভাবে জড়িত। ভারতের জাতীয়তাবাদের বিকাশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এবং দেশের সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। কাশ্মীরি জাতিসত্তা এবং ভারতীয় জাতিসত্তা ভিন্ন চরিত্রের। দুই জাতিসত্তার মেল বন্ধনের প্রক্রিয়াকে জীবন্ত রাখতে ৩৭০ ধারা ৩৫ চালু ছিল। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে দুই জাতিসত্তার ঘনিষ্ঠতা যাতে গড়ে ওঠে স্বায়ত্ত শাসন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় একচেটিয়া পুঁজির দলগুলি স্বাধীনতার পর থেকেই স্বায়ত্ত শাসনের মর্মবস্তুকে ক্রমাগত গ্রাস করতে শুরু করে। কংগ্রেসি শাসন কালের পর্ব জুড়ে তা চলেছে। আজ তারই পথ বেয়ে বিজেপির বর্তমান পদক্ষেপ। সাম্প্রদায়িকতার সংঘর্ষে রক্তস্নাত ভারতের সাথে সংযুক্তি তাদের অনিবার্য ছিল না। সে সময়ে কাশ্মীরে ছিল ৭৭ শতাংশ মুসলমান। তা সত্ত্বেও তারা ভারতের সাথে চুক্তিবদ্ধ হল—কারণ ভারত ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বলে ঘোষিত। এটা ছিল উপমহাদেশের দ্বিজাতি–তত্ত্বের বিরুদ্ধে উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।
ন্যাশনাল কনফারেন্স জম্মু ও কাশ্মীরে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ৩৯৬ টি জায়গীরদারি বিলোপ করেন। জমির পরিমাণ ৪ লক্ষ একর। জমির মালিকের সংখ্যা ৯০০০ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশ হিন্দু জমিদার। অল্প মুসলমান। এই ক্ষতিগ্রস্তরাই হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার শ্রেণি ভিত্তি রচনা করে। তিনি জমির সিলিং প্রথা চালু করেন। দখল করা জমির জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেননি। নারী–পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। উভয়ের সমান মজুরি ও সমস্ত ক্ষেত্রে কর্মের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। কোনো মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় এরকম নেই। ভারতবর্ষেও মূল ভূখন্ডে নেই। বহিরাগতকে বিবাহ করলে নারী সম্পত্তিচ্যুত হয় না। পরিবারে ছেলে ও মেয়ের সমান অধিকার বজায় থাকে। বিবাহ ও বিচ্ছেদসহ অন্যান্য বিষয় ভারতের চেয়ে অনেক অগ্রগামী।
আজ যদি তারা বিরুদ্ধাচরণ করে তার কৈফিয়ত দিতে হবে শাসন ক্ষমতাসীন দলগুলিকেই। বিভিন্ন রাজ্যে ও কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচনে কারচুপির সাক্ষী প্রতিটি রাজ্যের জনগণ। এটা একটা নোংরা ট্র্যাডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের গণতন্ত্রে। নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়ে পাল্টা সরকার গড়তে ঘোড়া কেনাবেচা রাজনীতির খেলা বছরের পর বছর চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু–কাশ্মীরের নির্বাচিত সরকারকে ভাঙ্গা গড়া ও কব্জায় আনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম করেনি। ব্যতিক্রম হয়নি নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রেও। এসবের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রতিবাদকে দমন–পীড়ন করা হয়েছে। ইতিহাসের নির্যাস সংক্ষেপে বললে বলতে হয় —‘.... the alienation that everybody is talking about these days has its root in the manipulative and co-ercive methods adopted by the Indian rulers to force J and K into India. (source : Blood in the Valley/Kashmir, page – 48, behind the propaganda.) বর্তমান পরিস্থিতি দেখে একটাই সতর্ক বাণীর কথা মনে আসে। জম্মু–কাশ্মীরের ইতিহাস রাজতরঙ্গিনীর একটি কাব্য ছন্দ—‘.... Kashmir ....by the power of spirit .....yes. By the power of the sword .... never. (source: do)
সৌজন্য সিউ পত্রিকা, ২০১৯ সংখ্যা
কভার ইমেজ: ৩৭০ অবলুপ্তির পর কাশ্মীর। ছবি: সংগৃহীত
0 Comments
Post Comment