- 07 September, 2021
- 0 Comment(s)
- 724 view(s)
- লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
একসাথে দুই প্রজন্মকে নিয়েই লিখতে চেয়েছিলাম। বিশ্বজোড়া নারী বৈজ্ঞানিকদের ইতিহাসে মাদাম কুরির নামটিই বোধহয় সবচেয়ে বেশি করে স্মরণীয়। কুরি-পরিবারের নোবেল ঐতিহ্যের কাহিনিও বোধহয় জানা সকলেরই। মাদাম কুরি নিজে, তাঁর স্বামী পিয়ের, মেয়ে আইরিন, আইরিনের স্বামী ফ্রেডরিখ - এঁরা প্রত্যেকেই বিজ্ঞানের আঙিনাতে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। এমনকি, মাদাম কুরির আরেক কন্যা ইভের স্বামী হেনরি লাবুই ইউনিসেফের অধিকর্তা হিসেবে ১৯৬৫ সালে সেই সংগঠনের তরফে সেই বছরের নোবেল শান্তি পুরষ্কারটি গ্রহণ করেন। দুই প্রজন্মকে মেলালে, ছয়-ছয়টি নোবেল পুরষ্কারের ইতিহাস। কিন্তু আমরা কেবল মা আর মেয়ের কথাই বলব, বলব তাঁদের সংগ্রাম এবং অবশ্যই পরিবার হিসেবে তাঁদের সাফল্যের কথা। মেয়েদেরকে নিয়ে বা তাঁদের বুদ্ধি, বিবেচনা, মেধা বা মস্তিষ্ককে নিয়ে অনেক কিছুই বলা হয়ে থাকে। মাদাম কুরির প্রথম মহিলা হিসেবে নোবেলজয়, একমাত্র মহিলা হিসেবে তাঁর দুটি নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিত হওয়া – এগুলিকে ছাপিয়েও আমার মনে হয় বিশেষ একটি বক্তব্য মেয়েদের বুদ্ধিকে নিয়ে বাঁকা মন্তব্য করা সকলের মুখ একেবারে বন্ধ করে দিতে পারে। একাধিক বার নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন (বা হয়েছে), এমন মানুষের সংখ্যা ৪, এমন সংগঠনের সংখ্যা ২। পদার্থবিদ জন বার্ডিন ১৯৫৬ এবং ১৯৭২এ পদার্থবিদ্যার নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিত হন। রসায়নবিদ ফ্রেডরিখ স্যাঙ্গার যথাক্রমে ১৯৫৮ এবং ১৯৮০ সালে রসায়নের নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিত হন। আরেক রসায়নবিদ লাইনাস পাউলিং ১৯৫৪ সালে রসায়নে এবং ১৯৬২ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কারে সম্মানিত হন। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সোসাইটি যথাক্রমে ১৯১৭, ১৯৪৪, এবং ১৯৬৩তে ও রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী সংক্রান্ত সংগঠন ইউএনএইচসিআর যথাক্রমে ১৯৫৪ এবং ১৯৮১তে, সেই বছরগুলির নোবেল শান্তি পুরষ্কারে সম্মানিত হয়। অর্থাৎ কি না এই বিশাল পৃথিবীর বিপুল জনসংখ্যার প্রতিনিধি হিসেবে দাঁড়িয়ে, মারী কুরি কেবল একমাত্র মহিলা হিসেবেই দু-দুটি নোবেল পুরষ্কার জেতেননি – বরং, তিনি কিন্তু আরও বিরলতর একটি সম্মান অর্জন করেছেন। এই গ্রহে তিনিই একমাত্র ‘মানুষ’ যিনি কি না বিজ্ঞানের দুটি শাখাতেই অর্থাৎ কি না পদার্থবিদ্যায় (১৯০৩) এবং রসায়নে (১৯১১) নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। নারী বৈজ্ঞানিকদের কথা লিখতে গিয়ে বারে বারেই যে কথাকে মনে করিয়ে এসেছি, উৎকর্ষ এবং একমাত্র উৎকর্ষই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক, মানবমেধার শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক – মাদামের কথা বলতে গিয়ে সেই বক্তব্যই যেন সম্পূর্ণতা অর্জন করে।
মাদাম কুরির জন্ম ১৮৬৭তে, পোল্যান্ডের ওয়ারশতে। জন্মসূত্রে তাঁর নাম ছিল মারিয়া স্ক্লোদোয়াস্কা। সেখানে এক পোলিশ গুপ্তসংগঠনের গুপ্ত-বিশ্ববিদ্যালয়ে মারীর পড়াশোনার সূত্রপাত। ১৮৮৫ সাল থেকে ১৯০৫ সাল অবধি এই পোলিশ গুপ্তসংগঠনের গুপ্ত-বিশ্ববিদ্যালয়টি কার্যকরী ছিল। মূলত সম্মিলিত রুশ আগ্রাসন এবং জার্মান আগ্রাসন থেকে পোলিশ জাতীয়তাবাদের আদর্শকে অক্ষুণ্ণ রাখতেই পোলিশ বুদ্ধিজীবীদের তরফে এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ১৮৯১ সালে মারী তাঁর দিদির সঙ্গে প্যারিসে চলে আসেন। এখানেই ১৮৯৫ সালে স্বামী পিয়েরের সঙ্গে মারীর বিবাহ হয়। গুপ্তসংগঠনের গুপ্ত-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সূত্রপাত হয়েছিল বলেই হয়তো বা আমৃত্যু নিজের দেশ, এবং দেশের মানুষের প্রতি মারীর টান অক্ষুণ্ণ ছিল। পোলিশ জাতীয়তাবাদের প্রতি তাঁর অকুন্ঠ সমর্থন ছিল। তবে প্যারিসে আসার বিষয়টি মারীর পক্ষে সহজ ছিল না। টানা বেশ কয়েকবছর গৃহশিক্ষিকা, গভর্নেস ইত্যাদি পেশাতে কাজ করে করে তবেই মারী অবশেষে তাঁর প্যারিস যাত্রা এবং সেখানে থেকে তাঁর পড়াশোনা চালানোর মতো খরচ জোগাড় করতে পেরেছিলেন। ১৮৯১ সালের শেষভাগে মারী স্ক্লোদোয়াস্কা প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে নিজের নাম নথিভুক্ত করেন। এই প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়েই গবেষণার সূত্রে মারীর সঙ্গে পিয়েরের আলাপ হয়। ১৮৯৪ সালের গ্রীষ্মে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর মারী স্ক্লোদোয়াস্কা ও পিয়ের কুরি চুম্বকতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এর পাশাপাশি, তিনি চেষ্টা করেছিলেন যাতে কি না তিনি পোল্যান্ডে তাঁর মাতৃভূমে ফিরে গিয়ে তাঁর গবেষণার কাজ চালাতে পারেন। বন্ধু পিয়ের কুরি (তখনও তাঁদের বিবাহ হয়নি), মারীর সঙ্গে পোল্যান্ডে পাড়ি দিতেও প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু, মহিলা হওয়ার কারণে ক্রাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ে মারীর অধ্যাপক পদে আবেদন গৃহীত হয়নি। এই সময় পিয়ের তাঁকে প্যারিসে ফিরে এসে গবেষণায় মন দিতে বলেন। ১৮৯৫ সালের মার্চ মাসে চুম্বকতত্ত্বের উপরে তাঁর গবেষণার জন্য পিয়ের কুরি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিতে ভূষিত হন। সেই বছরই পিয়ের কুরির সাথে মারীর বিবাহ হয়। এই বিবাহে কোনওরকম ধর্মীয় আচার-আচরণ পালিত হয়নি। এমনকি কনের পোশাকে মারী যে গাঢ় নীল রঙের জামাটি পরেছিলেন, সেটি পরবর্তীতে - দীর্ঘদিন অবধি তিনি ল্যাবরেটরিতে পরে থাকার পোশাক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আচার-আড়ম্বরহীন এই অনুষ্ঠানে সেদিন যেন বিজ্ঞানের প্রতি নিবেদিত দুটি প্রাণ, বিজ্ঞানসাধনারই বেদীমূলে নিঃশেষে সমর্পিত হয়েছিল। মনের মিলের জন্য পছন্দের বিষয়ের প্রয়োজন, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের দুর্বোধ্য মন্ত্রোচ্চারণ নয়।
১৮৯৫ সালে উইলহেলম রন্টজেন এক্স-রে আবিষ্কার করেন। এরপর ১৮৯৬ সালে বিজ্ঞানী হেনরি বেকেরেল পর্যবেক্ষণ করেন, ইউরেনিয়াম যৌগগুলি এক্স-রে’র মতোই সমধর্মের কিছু রশ্মি পরিবেশে বিকিরণ করে। তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের এই ছিল প্রথম ধাপ। মারী কুরি বিশেষ ভাবে এই দুটি ঘটনাকেই তাঁর পিএইচডি গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন। এই সময় স্বামী পিয়েরের আবিষ্কৃত একটি যন্ত্র ‘ইলেক্ট্রোমিটার’ দিয়ে মাদাম কুরি ইউরেনিয়ামের এই বিকিরণকে পরিমাপ করতে চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যে ১৮৯৭ সালে মাদাম ও পিয়েরের প্রথম সন্তান আইরিনের জন্ম হয়। এই পরিস্থিতিতে মারী কুরি একোল নর্ম্যাল সুপিরিয়র বলে একটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করতে শুরু করেন। তখন সেই একোল নর্ম্যালের খুব কাছেই কার্যত একটি শেডঘরে মারী তাঁর নিজস্ব ল্যাবরেটরি তৈরি করেন। অত্যন্ত ছোট পরিসরের এই ঘরটিতে বাতাস চলাচলেরও তেমন একটা ব্যবস্থা ছিল না। বৃষ্টি বা বরফ পড়লে গোটা ঘরটিই স্যাঁতসেঁতে হয়ে যেত। তবু সেই পরিস্থিতিতেও মারী কুরি তেজস্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে কোনওরকমের কোনও নিরাপত্তা ছাড়াই, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান। যদিও একথাও সত্যি যে, মানবশরীরের উপরে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব বিষয়ে সেই সময় কারোরই কোনও সম্যক ধারণা ছিল না। তাই সেই তেজস্ক্রিয়তা থেকে বা ইউরেনিয়াম যৌগের উপাদানগুলি থেকে কখনও যে কোনওরকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে সেই বিষয়েও মারী অথবা পিয়েরের কোনও পূর্বজ্ঞান ছিল না। এরই মধ্যে পিচব্লেন্ডের উপাদান বিশ্লেষণ করতে করতে তার মধ্যে যে ইউরেনিয়ামের চাইতেও অনেক বেশি পরিমাণে ‘তেজস্ক্রিয়’ একেকটি পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে, সেই বিষয়ে মারী কুরি নিশ্চিত হয়ে ওঠেন। ১৮৯৮ সালে মারী কুরি থোরিয়াম মৌলটিকে চিহ্নিত করেন। থোরিয়ামের উপস্থিতি সম্পর্কে মারী নিশ্চিত হওয়ার পরে পরেই স্বামী পিয়েরও তাঁর এই সাম্প্রতিক গবেষণার বিষয়ে আরও উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এই প্রথম বোধহয় দেখা গেল, কোনও পুরুষের প্রাথমিক ‘সুপারভিশন’ ছাড়াই কোনও মহিলা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এতখানি মৌলিক এবং এতখানি পরীক্ষানির্ভর একটি নতুন তত্ত্বের অবতারণা করতে সক্ষম হলেন।
জুলাই, ১৮৯৮তে মারী ও পিয়ের পোলোনিয়াম মৌলের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। দুজনের একটি যৌথ গবেষণাপত্রে তাঁরা তাঁদের এই আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করেন। ২৬শে ডিসেম্বর, ১৮৯৮ – তাঁরা রেডিয়াম আবিষ্কার করেন। যদিও, তখনও অবধি এই দুটি মৌলের মধ্যে কোনটিকেই রাসায়নিকভাবে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করে দেখাটা তাঁদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। নিজের জন্মভূমির নাম অনুসারে যে পোলোনিয়ামের নাম দিয়েছিলেন মাদাম কুরি, জীবদ্দশায় সেই পোলোনিয়ামকে রাসায়নিক ভাবে আকর থেকে পৃথক করতে শেষ অবধি মারী কুরি সফল হননি। যদিও অনেক পরে, ১৯১০ সালে মাদাম কুরি পিচব্লেন্ড আকর থেকে রেডিয়ামকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করতে সক্ষম হন। এদিকে, ১৮৯৮ থেকে ১৯০২এর মধ্যে মারী ও পিয়ের তেজস্ক্রিয়তা এবং তাঁদের আবিষ্কৃত নতুনতর মৌলগুলির বিষয়ে মোট ৩২টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যেই একটিতে তাঁরা গবেষণা করে দেখান যে রেডিয়ামের উপস্থিতিতে মানবশরীরের স্বাস্থ্যকর কোষগুলির তুলনায় টিউমার-আক্রান্ত কোষগুলি অনেক তাড়াতাড়ি মৃত্যুবরণ করে। ক্যান্সারের চিকিৎসায় ‘রেডিওথেরাপি’র প্রয়োগের বিষয়ে এটিই বোধহয় ছিল সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম পদক্ষেপ। ১৯০৩ সালে মাদাম কুরি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিতে সম্মানিত হন। একই বছরে কুরি দম্পতিকে তাঁদের আবিষ্কার সম্পর্কে বলার জন্য লন্ডনের রয়্যাল ইনস্টিটিউশন থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যদিও, মহিলা হওয়ার কারণে সেই অনুষ্ঠানে মারীকে মঞ্চে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়নি। একা পিয়েরই তাঁদের আবিষ্কার সম্পর্কে সেই মঞ্চে বক্তব্য রাখেন। রেডিয়াম আবিষ্কারের পর সেই নিয়ে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হলেও, পেটেন্ট না নেওয়ার কারণে মারী ও পিয়ের এর থেকে কোনও আর্থিক সুবিধা পেতে অসফল হন। তখনও অবধি তাঁদের সেই শেডঘরেই তাঁদের গবেষণার কাজ চলছিল। ইতিমধ্যে সেই একই বছরে, ১৯০৩ সালে ‘তেজস্ক্রিয়তা’ আবিষ্কারের জন্য সুইডিশ এ্যাকাডেমি পিয়ের কুরি ও হেনরি বেকেরেলকে সে বছরের জন্য পদার্থবিদ্যার নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিত করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে। এই খবর পিয়েরের কানে গিয়ে পৌঁছলে পরে তিনি এই বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান, এবং মারী কুরিকে পুরষ্কৃত না করা হলে তিনিও পুরষ্কার গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। সবশেষে, ১৯০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সুইডিশ এ্যাকাডেমি মারী কুরি, পিয়ের কুরি ও হেনরি বেকেরেলকে ‘তেজস্ক্রিয়তা’ আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিদ্যায় সে বছরের নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিত করে। এই নোবেল পুরষ্কারের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের সাহায্যেই মারী ও পিয়ের প্রথমবারের জন্য তাঁদের শেডঘরের ল্যাবরেটরিতে একজন পূর্ণ সময়ের সহকারী নিয়োগ করতে সক্ষম হন।
ইতিমধ্যে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় পিয়ের কুরিকে তাদের প্রতিষ্ঠানে ফিজিক্সের ‘চেয়ার প্রফেসর’ হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, এবং এই সূত্রে কুরি দম্পতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই তারা একটি বিশ্বমানের গবেষণাগার তৈরির বিষয়েও তাঁদেরকে সাহায্য করবে বলে সম্মতি প্রদান করে। ১৯০৬ সালে সেই গবেষণাগারটি তৈরি হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, মাদামের এতদিনকার সহযোদ্ধা পিয়ের সেই গবেষণাগারটিকে দেখে যেতে পারেননি। ১৯শে এপ্রিল, ১৯০৬ তারিখে প্যারিসে রাস্তায় মর্মান্তিক এক পথ-দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পিয়ের কুরি মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান ইভের বয়স দুবছরও পূর্ণ হয়নি। এমতাবস্থায় পিয়ের কুরির জন্য প্রতিষ্ঠিত ফিজিক্সের চেয়ার প্রফেসর পদটিকে বিলুপ্ত না করে, প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় সেই সম্মান মাদাম কুরিকে প্রদান করতে সম্মত হন। ২৩শে মে, ১৯০৬ তারিখে মাদাম কুরিই প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তারও কিছু বছর পর, পাস্তুর ইনস্টিটিউট এবং প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় মাদাম কুরি তাঁর স্বপ্নের ‘রেডিয়াম ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বমানের একটি গবেষণাগার তৈরির জন্য মাদামের এতদিনকার যে স্বপ্ন, তা শেষ অবধি এই ‘রেডিয়াম ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বাস্তবরূপ ধারণ করে।
১৯১০ সালে দীর্ঘ গবেষণা ও পরীক্ষানিরীক্ষার পর, মাদাম কুরি অবশেষে আকর যৌগ থেকে রেডিয়ামকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করতে সক্ষম হন। এক বছর পর, ১৯১১তে মাদামের নাম ফ্রেঞ্চ এ্যাকাডেমি অব সায়ান্সেসের বিশেষ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাবিত হয়। ভোটাভুটিতে মাত্র এক কি দুই ভোটের ব্যবধানে সেই প্রস্তাবটি পরাজিত হয়েছিল। মাদাম কুরি ফ্রেঞ্চ এ্যাকাডেমি অব সায়ান্সেসের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেননি। অনেক পরে ১৯৬২তে, মার্গারেট পেরি প্রথম মহিলা হিসেবে ফ্রেঞ্চ এ্যাকাডেমি অব সায়ান্সেসের সদস্যপদ লাভ করেন। কালের পরিহাসে জানা যায় যে, এই মার্গারেট পেরিও অতীতে সেই মাদাম কুরিরই ছাত্রী ছিলেন। অধ্যাপিকা যা পারেননি, পাঁচ দশকেরও বেশী সময় পর তাঁরই এক ছাত্রীর হাত ধরে অবশেষে সেই অন্ধকারের রাহুমুক্তি ঘটে। মাদাম কুরির জগৎজোড়া খ্যাতির পাশাপাশিই তাঁকে জন্মসূত্রে ইহুদী হওয়ার জন্যও কম কটূক্তি সহ্য করতে হয়নি। এমনকি নারী হওয়ার দুর্ভাগ্যে, ১৯১১ সালে তাঁর নামের সঙ্গে পিয়েরের এক প্রাক্তন ছাত্রের নাম জড়িয়ে দিয়ে মাদামের চরিত্রহননেরও অপচেষ্টা হয়। এমনকি, এই ঘটনার উল্লেখ করে ১৯১১ সালে রসায়নে মাদামের নোবেলপ্রাপ্তিকেও আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। যদিও সব আঘাতকে সরিয়ে রেখে, মেধার স্বীকৃতিই শেষ অবধি মান্যতা পায়। ১৯১১ সালে রেডিয়াম এবং পোলোনিয়াম মৌলের আবিষ্কারের জন্য মাদাম কুরি রসায়নের নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিত হন। রসায়নে নোবেলপ্রাপ্তির পরেপরেই মাদাম কিডনির অসুখে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং প্রায় এক বছরের জন্য গবেষণার কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন।
এর ঠিক পরেপরেই এসে পড়ে বিশ্বজোড়া মানবসন্ত্রাসের প্রথম উদাহরণ ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধ’। মাদাম এবারে রীতিমতো এ্যাকটিভ সার্ভিসে নিজেকে নিয়োজিত করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের সঠিক সময়ে পরিচর্যা এবং অস্ত্রোপচারের জন্য এক্স-রে’র গুরুত্বকে বুঝতে পেরে মাদাম ঘোড়ায়-টানা গাড়িতে ‘মোবাইল এক্স-রে ইউনিট’ তৈরির বিষয়ে সচেষ্ট হন। গবেষণাগারের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে থেকে তাত্ত্বিক ও পরীক্ষামূলক গবেষণার নিরাপদ পরিসরের বিপরীতে, একেবারে হাতে-কলমে আপৎকালীন ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারযোগ্য এমন একটি চিকিৎসা-প্রযুক্তির এই আশ্চর্য ও সময়োপযোগী উদ্ভাবনই মাদামের প্রতিভাকে আরও একবার বিশ্বের দরবারে সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই সময় সতেরো বছরের কন্যা আইরিনকে সঙ্গে নিয়ে মাদাম কুরি নিজে অন্তত ২০টি এমন মোবাইল রেডিওলজিক্যাল ইউনিট এবং সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রের ‘ফিল্ড হাসপাতাল’গুলিতে অন্তত ২০০টি এক্স-রে ইউনিটের জরুরি ভিত্তিতে ইনস্টলেশনের তদারকি করেন। এছাড়াও তিনি আরও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক মহিলাদেরও এমন একেকটি ইউনিটে কাজ করার বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন।
তেজস্ক্রিয়তা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য পৃথিবীর মধ্যে যে চারটি প্রতিষ্ঠানকে আজ সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী বলে মনে করা হয়, সেগুলি হল যথাক্রমে ১) আর্নেস্ট রাদারফোর্ড কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরি, ২) স্টেফান মেয়ারের ইনস্টিটিউট অব রেডিয়াম রিসার্চ, ভিয়েনা, ৩) অটো হান এবং লিজা মেইৎনারের স্মৃতিধন্য কাইজার উইলহেলম ইনস্টিটিউট এবং অবশ্যই ৪) মারী কুরি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রেডিয়াম ইনস্টিটিউট। মায়ের এই প্রতিষ্ঠানেই গবেষণা করেছেন মেয়ে আইরিন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিষেবা দেওয়ার জন্য তিনি সেনাবাহিনীর তরফে একটি পদকে ভূষিত হন। বিশ্বযুদ্ধ শেষে তিনি তাঁর মায়ের সহকারী হিসেবে রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন। পোলোনিয়ামের বিকিরণে আলফা রশ্মির উপস্থিতি নিয়ে তাঁর গবেষণার মাধ্যমে আইরিন কুরি তাঁর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। রেডিয়াম ইনস্টিটিউটেই তাঁর আলাপ হয় ভাবী স্বামী ফ্রেডরিখ জোলিয়টের সঙ্গে। ফ্রেডরিখ এবং আইরিন মিলে ১৯৩৩ সালে পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থিত নিউট্রন কণাগুলির সঠিক ভর পরিমাপে সক্ষম হন। পরে, ১৯৩৪ সালে আইরিন ও ফ্রেডরিখ পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমাণ করেন তেজস্ক্রিয় কোনও একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থানকারী একটি প্রোটন কণা বিকিরণের মাধ্যমে নিউট্রনে পরিণত হতে পারে এবং এই বিক্রিয়ার ফলে তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াসটি থেকে একটি পজিট্রন এবং একটি ইলেকট্রন নিউট্রিনো কণার নিঃসরণ হয়। দ্বিতীয় প্রজন্মের এই কুরি-দম্পতির সম্পূর্ণ পরীক্ষানির্ভর এই আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানে তেজস্ক্রিয় মৌল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি পরিবর্তন আনে। বিকিরণের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াসের এই গঠনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন তেজস্ক্রিয় মৌলের উৎপাদন এর ফলে সহজতর হয়। এই আবিষ্কারের জন্যই ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে আইরিন জোলিয়ট কুরি ও তাঁর স্বামী ফ্রেডরিখ রসায়নের নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিত হন। তাঁদের এই আবিষ্কারই পরবর্তীতে অটো হান এবং লিজা মেইৎনারকে পরমাণুর বক্ষবিদীর্ণকরণ বা ফিসন বিক্রিয়াকে আবিষ্কার করতে সহায়তা করে।
১৯৩৪ সালের ৪ঠা জুলাই, শেষবারের মতো পোল্যান্ড ভ্রমণ সেরে ফেরার কয়েক মাসের মধ্যেই মারী কুরি ৬৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন। অনুমান করা হয় দীর্ঘমেয়াদে তেজস্ক্রিয় উপাদানের সংস্পর্শে থাকার কারণে তাঁর শরীরের অস্থিমজ্জার কোষগুলি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছিল। তেজস্ক্রিয়তার ক্ষতিকারক দিকগুলি জানা না থাকার কারণে তিনি অনেক সময়ই সেই উপাদান টেস্টটিউবে করে নিজের পকেটে নিয়ে ঘুরতেন, নিজের ঘরের ড্রয়ারেও ছড়িয়ে রাখতেন। এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মোবাইল রেডিওলজির ইউনিটগুলি থেকেও তিনি তেজস্ক্রিয় বিকিরণে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে গবেষকেরা সন্দেহ করেন। তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহারের যে জিনিসপত্রগুলি এখনও সংরক্ষিত আছে, সেগুলি থেকে আজ অবধিও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিঃসৃত হয়ে থাকে। সেগুলিকে দেখতে গেলে দর্শনার্থীকে বিশেষ ধরনের নিরাপদ পোশাক পরে তবেই সেগুলির কাছে যেতে হয়। নচেৎ তা থেকে বিকিরণজনিত অসুস্থতার আশঙ্কা রয়েছে।
মারী কুরির সার্থক উত্তরসূরী হিসেবে এদিকে আইরিন ও ফ্রেডরিখ তাঁদের তত্ত্বাবধানে ১৯৪৮ সালে আরও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সহায়তায় ফ্রান্সের প্রথম পরমাণু চুল্লিটিকে নির্মাণ করেন। পরে তাঁরা সেদেশে এ্যাটমিক এনার্জি কমিশনেরও অন্যতম সদস্য হন। সেই প্রথম পরমাণু চুল্লিটি ফিসন পদ্ধতির মাধ্যমে ৫ কিলোওয়াট অবধি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম ছিল। মায়ের মতোই, দীর্ঘমেয়াদে তেজস্ক্রিয় উপাদানের সংস্পর্শে থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত মেয়ে আইরিনও লিউকেমিয়াতে আক্রান্ত হন। ১৯৪৬ সালে তাঁর গবেষণাগারে দুর্ঘটনাবশত পোলোনিয়াম-পূর্ণ একটি সিলকরা ক্যাপসুল হঠাৎই বিস্ফোরিত হয়। এই ঘটনাই তাঁর তেজস্ক্রিয়তা-জনিত অসুস্থতাকে আরও ত্বরান্বিত করে।
এদিকে তাঁর অভিভাবকদের মতোই মেয়ে আইরিন ও তাঁর স্বামী ফ্রেডরিখও বিজ্ঞানের সাধনায় নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। এছাড়াও মানুষ ও মানবতার স্বার্থে বিজ্ঞানের অপব্যবহারও তাঁদের চরম অপছন্দের বিষয় ছিল। ১৯৩৫-উত্তর সময়ে নাৎসি ও ফ্যাসিবাদী বাড়বাড়ন্ত শুরু হলে পরে, তাঁরা দুজনেই সোচ্চারে তাঁদের ফ্যাসিবিরোধী মনোভাব ব্যক্ত করেন। তাঁদের গবেষণা সামরিক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে ১৯৩৯ সালের ৩০শে অক্টোবর তারিখে তাঁদের সমস্ত গবেষণার কাগজপত্র তাঁরা ফ্রেঞ্চ এ্যাকাডেমি অব সায়ান্সেসের বিশেষ ভল্টে সরিয়ে ফেলেন। ১৯৪৯ সালের আগে অবধি সেই কাগজপত্রকে আর বের করা হয়নি। যুদ্ধের পর আইরিন কুরি তাঁর মায়ের স্মৃতিবিজড়িত রেডিয়াম ইনস্টিটিউটের অধিকর্তার পদে বসেন। মেয়েদের শিক্ষা, গবেষণা এবং ফরাসী দেশে নারীশিক্ষার প্রসার ও প্রচারের ক্ষেত্রে আইরিন ও ফ্রেডরিখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। আইরিন কুরি ঘোষিত ভাবে নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন। মায়ের কথা মনে রেখেই, তিনি প্রতি বছর ফ্রেঞ্চ এ্যাকাডেমি অব সায়ান্সেসের সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদন করতেন। একথা জেনেও যে প্রতিবারেই শুধুমাত্র মহিলা হবার কারণে তাঁর আবেদনকে প্রত্যাখ্যান করা হবে। বিশ্বশান্তি আন্দোলনের মঞ্চে আইরিন ও ফ্রেডরিখ ভাষণ দেন। ১৯৪৮ সালে, ফ্রান্সে কয়লাশ্রমিকদের আন্দোলনের সময় তাঁরা কাগজে চিঠি লিখে প্যারিসবাসীকে দুর্দশাগ্রস্ত খনিশ্রমিকদের পরিবারের অসহায় শিশুদেরকে দত্তক নেবার জন্য অনুরোধ করেন। এই সময় তাঁরা নিজেও খনিশ্রমিকদের পরিবারের দুইটি অসহায় শিশুকে দত্তক নেন।
তেজস্ক্রিয়তা-জনিত অসুস্থতা দুই কুরির শরীরেই ক্রমশ প্রভাব বিস্তার করছিল। অবশেষে ১৯৫৬ সালে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আইরিন এবং ১৯৫৮ সালে লিভারের অসুস্থতায় স্বামী ফ্রেডরিখ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁদের দুই সন্তান, মেয়ে হেলেন এবং ছেলে পিয়ের দুজনেই যথাক্রমে পরমাণু বৈজ্ঞানিক এবং বায়োকেমিস্ট হিসেবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত হন।
কুরি পরিবারের ক্ষেত্রে যতই বলা হোক না কেন, তা সবসময়ই কম বলে মনে হবে। কেবল নোবেল দিয়েও তাঁদের প্রতিভাকে বিচার করাটা উচিত হবে না। বিজ্ঞানী হিসেবে, মানুষ হিসেবে, শান্তি আন্দোলনের কর্মী হিসেবে, যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের সেবিকা হিসেবে, নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে, খনিশ্রমিকদের সহমর্মী হিসেবে, এমনকি ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনের মুখ হিসেবেও কুরি পরিবারের সদস্যেরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিনে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন। এমন মানুষদের যে অবদান, তা নারীর অবদান না পুরুষের – সে কথাকে ছাপিয়েও বলতে চাইবো, সে অবদান মানুষের অবদান, আর সেই কথাকে মনে রেখেই আরও সোচ্চারে প্রত্যেক অবদমিত, নিপীড়িত, দুর্ভাগা, অথবা হতাশ একেকজনের উদ্দেশ্যে বলতে চাইবো “পারে! মানুষ সব পারে!” আর সেজন্যই সে মানুষ হয়ে জন্মেছে। আমরা কেবল অজানাকে জানবার উদ্দেশ্যকে বুকে নিয়েই, অচেনাকে চেনবার আগ্রহকে বুকে নিয়েই আরও আরও এগিয়ে চলতে চাই।
সূত্রঃ
[১] ‘নোবেল প্রাইজ ফ্যাক্টসঃ ফ্যামিলি নোবেল লরিয়েটস’, নোবেল ফাউন্ডেশন, ২০০৮
[২] জেনিফার হিকস, ‘আইরিন জোলিয়ট কুরি’, গ্রেট নেক পাবলিশিং, ২০০৬
[৩] ‘ফ্রেডেরিখ এ্যান্ড আইরিন জোলিয়ট কুরি’, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা
[৪] রবার্ট উইলিয়াম রেইড, ‘মারী কুরি’, নিউ আমেরিকান লাইব্রেরি, ১৯৭৪
[৫] ‘মারী কুরি – রিসার্চ ব্রেকথ্রুস’, আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্স
[৬] ‘দ্য ডিসকভারি অব রেডিওএ্যাকটিভিটি’, লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি
[৭] সুসান কুইন, ‘মারী কুরি – এ লাইফ’, দা কাপো প্রেস, ১৯৯৬
লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক
ছবি: সংগৃহীত
0 Comments
Post Comment