- 09 March, 2025
- 0 Comment(s)
- 75 view(s)
- লিখেছেন : তামান্না
নারী দিবস এসে গেছে, হ্যাঁ, বসন্ত এসে গেছের মতো, মনে পুলক জাগিয়ে, গুনগুনিয়ে কাযো, জিভা, ফেবইন্ডিয়া, পার্পেল, তাদের বার্তার সমাহার নিয়ে পিছু পিছু ছুটছে; অনেক কিছু বলতে চাইছে- This Women's Day, own your style! Shop for Rs.6500 & get Rs.500 off, shop for Rs.9000 & get Rs.1000 off at your nearest KAZO store. T&C.
Hi! Give your kitchen a makeover with Fabindia's beautifully crafted kitchen ware, like spoon sets, serve ware, plate sets and more!
এরকম একাধিক বার্তা দেখে মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে, ফ্যাশন ডিভার পার্ট লইবো, নাকি সিলভার কিনে ভারাক্রান্ত হইবো, পার্পেলের বিউটি প্রডাক্ট কিনিয়া লাল, গুলাবি, বেগুনি সাজিয়া কেত মারিবো! না, না বরং কিচেন সামগ্রী-বাটি, চামচ, প্লেট খরিদ করিয়া সুনিপুণ গৃহিণী অবতারে-‘ইহা ম্যাঁ ঘর ঘর খেলি’ গেয়ে উঠবো; এরকম একাধিক ভাবনা-চিন্তার ভারে, বেচারাথোরিয়াম হয়ে, এক্কেবারে বেমক্কা এক ধাক্কা খেয়ে নড়েচড়ে উঠে দেখি, এইবারে, রাষ্ট্রসংঘ ২০২৫-এর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের থিম রেখেছে, "Accelerate Action" (অর্থাৎ, "কর্মে গতি আনা")। প্রতিবছর, ৮ই মার্চ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়, লিঙ্গ সমতা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো হয় এবং নারীর ক্ষমতায়নকে উৎসাহিত করা হয়। এই দিনেই সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার বার্তা দেয়।
- নারী-পুরুষ বৈষম্য
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে নারীরা বৈষম্যের শিকার। সব দিক থেকে নারীরা পিছিয়ে আছেন। বৈষম্য ও অবহেলা, অবজ্ঞার পাশাপাশি মূলত একটি পরিবারের প্রায় সমস্ত দায়িত্ব নারীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। ঘরকন্নার কাজ, রান্না, বাচ্চার দেখাশোনা, বাড়িতে কেউ অসুস্থ থাকলে তাঁর দেখভাল, বাজারহাট, ইত্যাদি ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়।
পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট থেকে জানা যায় ভারতীয় মহিলারা দৈনন্দিন পাঁচ ঘণ্টা ঘরের কাজ করেন। সেখানে বাবাজীবনরা দৈনন্দিন ১.৩ ঘণ্টা ঘরের কাজ করেন।
- অক্সফাম রিপোর্ট
Oxford Committee for Famine Relief (২০২২) এর রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে- ভারতীয় নারীরা চাকরির বাজারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া সমান যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম বেতন পান।
অক্সফাম ইন্ডিয়াস ডিসক্রিমিনেশন রিপোর্ট (২০২২) থেকে আরও যে বিষয়গুলি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়- নারীদের কম মজুরির জন্য 'সামাজিক ও নিয়োগদাতাদের কুসংস্কার’কে দায়ী করা হয়েছে।
অক্সফাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহার বলেন, সমান যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পরিচয় বা সামাজিক অবস্থানের কারণে কারও প্রতি ভিন্ন আচরণ করাটাই শ্রমবাজারের বৈষম্য। তিনি আরও বলেন, 'শুধু শিক্ষা বা কাজের অভিজ্ঞতার কারণে নয়, সামাজিকতার কারণেও নারী ও সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়।'
শ্রমবাজারে লিঙ্গ বৈষম্যের আরেকটি বড় কারণ হতে পারে শিক্ষিত নারীদের উপর ঘর সামলানোর দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া। সামাজিক অবস্থানের কারণে নারীরা অনেক সময় চাকরি করতে চান না। আরও বলা হয়, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণেই এমন এক বিশাল নারীগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে যারা পুরুষদের সমান বা বেশি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি করে না। সময়ের পরিক্রমায় এ পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
- কর্মক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান
২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে জানা যায় UNDESA র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভারতে প্রথম লক ডাউনে কাজ হারালেন ৪৭% মহিলা শ্রমিক।
শতাংশের বিচারে মাত্র ৭% পুরুষ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। গত দশক জুড়ে কর্মরত মহিলার সংখ্যা প্রতিদিন কমেছে। ২০১০ সালে ২৬% মহিলা কর্মরত ছিলেন, ২০২০ সালে এই হার ১৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে চেন্নাইয়ের গ্রেট লেকস ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, শহুরে ভারতে নারীর কর্মসংস্থান ছয় বছরে (২০১৭-১৮ থেকে ২০২৩-২৪) ১০% বৃদ্ধি পেলেও, ২০২৩-২০২৪ সালে ৮ কোটি ৯০ লক্ষেরও বেশি শহুরে ভারতীয় মহিলা এখনও শ্রমবাজারের বাইরে রয়েছেন। ব্যক্তিগত পছন্দ বা সামাজিক রীতিনীতির সীমাবদ্ধতার কারণে ১ কোটি ৯০ লক্ষেরও বেশি স্নাতক-শিক্ষিত শহুরে নারীর দক্ষতা শ্রমবাজার কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে! (তথ্যসূত্রঃ THE HINDU, 7/03/25)
গ্রামীণ ভারতের তুলনায় শহরের নারীরা কাজ খোঁজা, কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।
- কর্মক্ষেত্রে নারীদের দুরবস্থা
পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণায় কর্মক্ষেত্রে এক ধরনের লিঙ্গগত পক্ষপাত দেখা যায়, যার কারণে মানুষ সাধারণত ধরে নেয় নারীদের পেশা ও পদবি হবে পুরুষদের নিচে। মানুষ ধরে নেয় সেক্রেটারি, প্রশাসনিক সহকারী, নার্স, স্ত্রী, গার্লফ্রেন্ড; এসব ভূমিকাতেই শুধু দেখা যাবে নারীকে। আর সিইও, অধ্যাপক, আইনজীবী, ডাক্তার বা প্রকৌশলীর মতো পেশাগুলো বরাদ্দ থাকবে পুরুষদের জন্য।
আনঅরগানাইজড সেক্টরে নারীদের প্রথমত কাজে নিতে চান না। আবার, নারীরা কাজ পেলেও সমান যোগ্যতা থাকলেও উঁচু পদ পান না।
যে কারণে মহিলারা পিছিয়ে থাকছেন- ক) মহিলাদের ওভার টাইম কাজ করাতে পারেন না।
খ) পুরুষদের বেশি চাই কারণ- তাঁদের হায়ার/ফায়ার করাতে ঝক্কি নেই।
গ) মেয়েদের সঙ্গে কড়া আচরণ করতে পারে না সংস্থা । সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের কেস করে দেবে সেই ভয় থেকে।
ঘ) প্রেগন্যান্ট/ প্রেগনেন্সি সংক্রান্ত জটিলতা।
ঙ) মানসিক ও শারীরিক হেনস্থার শিকার হন।
- শ্রম বাজারে নারীদের অংশগ্রহণ
গত কয়েক বছর ধরে লেবার ফোর্স বা শ্রমশক্তিতে মেয়েরা কেবলই পিছিয়ে পড়ছে, ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে ভারতে চাকরিতে যখন পুরুষের সংখ্যা বেড়েছে নয় লক্ষ, তখন সেখানে নারীর সংখ্যা ২৪লক্ষ কমে গেছে। দেশের শ্রমশক্তিতেও এক দশক আগে মেয়েদের প্রায় ৩৫ শতাংশ অংশগ্রহণ বর্তমানে নেমে এসেছে ২৭ শতাংশে।
২০১৮ সালের বিশ্বব্যাঙ্কের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে- পুরুষের সমসংখ্যক নারী যদি ভারতের অর্থনীতিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেত, তাহলে ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের জিডিপি বাড়ত প্রায় ৬০ শতাংশ।
বিশ্বব্যাঙ্কের মতে, ভারতে গ্র্যাজুয়েট মেয়েদের দুই তৃতীয়াংশই বেকার। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলের থেকে এই শিক্ষিত বেকারের হার ভারতে অনেকটাই বেশি। চাকরির বিজ্ঞাপনগুলিও লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মেয়েদের কাজ বলতে বেশিরভাগ গৃহকাজ অথবা সেবিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিশ্বব্যাংকের জরিপ আরও জানাচ্ছে, গৃহস্থালির ৯০ শতাংশ কাজ ভারতীয় নারীদের করতে হয়। সংস্থাটির মতে, অন্য যেকোনো বড় দেশের তুলনায় ভারতে ঘরের কাজে নারীদের বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। বিশ্বব্যাংকের জরিপ আরও বলছে, বাসন মাজা বা সন্তানদের ঘুম পাড়ানোর কাজে পুরুষেরা সপ্তাহে মাত্র দুই ঘণ্টার কম সময় অতিবাহিত করে। বৈশ্বিক অর্থনীতি মূল্যায়ন বিষয়ক সংস্থা ম্যাককিনজি গ্লোবাল থেকে জানা যাচ্ছে- গৃহস্থালি কাজে পুরুষদের অংশগ্রহণ বাড়লে নারীর কর্মসংস্থান ১০ শতাংশ বাড়ত।
- সরকারি কর্মচারী
দেশের মোট ৩০ লক্ষ ৮০ হাজার কর্মীর মধ্যে মাত্র ৩ লক্ষ ৩৭ হাজারের কাছাকাছি মহিলা সরকারি কাজে নিযুক্ত রয়েছে। শতাংশের হিসাবে মাত্র ১০%। এখনও অনেক পথ যেতে হবে নারীকে। অর্থাৎ সরকারি কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আকাশচুম্বী।
সরকারি ক্ষেত্রে মহিলাদের যোগদান বাড়ানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সরকারের পক্ষ থেকে। ইউপিএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় আবেদন ফি হ্রাস সহ একাধিক ব্যবস্থা।
- পাঞ্জাব, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্য সরকার নিজে থেকে সরকারি চাকরিতে ৩০% মহিলা আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করে ফেলেছে।
১৮০ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি, ৭৩০ দিনের সদ্যজাত শিশুর যত্নের জন্য ছুটি।
- কৃষিক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতি
কৃষিকাজে নিযুক্ত পুরুষ ও নারীর সংখ্যা নিম্নমুখী, বিশেষত পুরুষ কর্মীদের সংখ্যা ব্যাপক ভাবে কমে যাওয়ায় কৃষি ক্ষেত্রে মহিলাদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে।
কৃষিক্ষেত্র সংক্রান্ত সম্পত্তির মালিকানা অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলাদের অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। বেঁচে থাকার জন্য কোনও বিকল্প কার্যকর পথের সন্ধান না থাকায় এই মহিলারা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ছেড়ে যাওয়া উপার্জনের পথ অবলম্বন করতে বাধ্য হন।
- মহিলারা জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত তাই তাঁদের সরকারি ভাবে কৃষক রূপে গণ্য করা হয় না এবং চাষবাসের প্রসার সংক্রান্ত কাজে এবং ঋণের ক্ষেত্রে তাঁদের অবহেলা করা হয়।
- জমির মালিকানা না থাকার ফলে কৃষক হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও মহিলারা জমি ও শস্য সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত, স্বাধীন ভাবে নিতে পারেন না। ফলে কৃষিক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের দূরীকরণ সম্ভব হয় না।
- মহিলাদের মালিকানাভুক্ত জমির পরিমাণ পাকিস্তানে ২%, শ্রীলঙ্কায় ৯.৭%,বাংলাদেশে ১০% এবং ভারতে ১৩.৫%। এমনকি মহিলাদের মধ্যেও যাঁরা জমির মালিক, সব সময় জমির নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে থাকে না।
- কাজের সময় সংক্রান্ত ব্যাপারে মহিলাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়, পুরুষ কর্মীদের গ্রাম থেকে শহরে কাজে চলে যাওয়ার ফলে নারীদের পরিবারে পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই ভূমিকা পালন করতে হয়। ফলে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়।
- শরিয়তি আইন অনুযায়ী, মুসলিম মহিলারা তাঁদের পরিবারের পুরুষদের তুলনায়
- কেবল মাত্র অর্ধেক পরিমাণ সম্পত্তিরই অধিকারী হতে পারেন।
- কৃষিক্ষেত্রের মূলধারা থেকে লিঙ্গ বৈষম্যের দূরীকরণে যথাযথ আইন বা নীতি এবং কর্মসূচি নির্ধারণের প্রয়োজন।
- রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা
সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য রাজনৈতিক অগ্রগতি ঘটেছে, কিন্তু সর্বাধিক প্রভাবিত করেছে রাজনৈতিক ভূমিকায় নারীদের অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি। নারীরা আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংখ্যার অনুপাতে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব কম।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সংসদের মোট সদস্যের মধ্যে নারীরা ১০.৫ শতাংশ। রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের দুর্দশা আরও প্রকট, কারণ সেখানে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব ৯ শতাংশ। স্বাধীনতার এত বছর পরেও লোকসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ১০ শতাংশও বাড়েনি। ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলিতে নারী কর্মীর সংখ্যা প্রচুর; কিন্তু তাঁদের প্রায়ই প্রান্তিক পর্যায়ে রেখে দেওয়া হয়, এবং ভোটের সময় তাঁদের দলীয় টিকিট দেওয়া হয় না।
- ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের কম প্রতিনিধিত্বের বেশ কিছু কারণ আছে, যেমন মহিলাদের উপর প্রথাগত ভূমিকা চাপিয়ে দেওয়া, রাজনৈতিক নেটওয়ার্কের অভাব, আর্থিক চাপ, সম্পদের অনুপলব্ধতা ইত্যাদি৷ কিন্তু রাজনীতিতে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তির পথে একটি বড় বাধা হল দেশে নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার অভাব।
- রাজনীতিতে নারীদের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারেন, এবং সে কারণে নারীদের এগিয়ে আসা উচিত।
এমন নীতিসমূহের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে যা দেশে মহিলাদের আরও বেশি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারে, যেমন আরও কঠোর নীতি প্রণয়ন এবং দেশে শিশুকন্যার শিক্ষার বাস্তবায়ন,বাল্য বিবাহ বন্ধ, রাজ্য বিধানসভার ও সংসদীয় নির্বাচনে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির উদ্যোগ, মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস করা; নারীদের জন্য নিরাপদ রাজনৈতিক ক্ষেত্র, এবং নারীদের প্রথাগত ভূমিকার অবসান।
- বেতন বৈষম্য ও নির্যাতন
একই শিক্ষাগত যোগ্যতা সত্ত্বেও পুরুষরা তো মেয়েদের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি টাকা পায় ভারতে। এবং রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় চাষের কাজে, নির্মাণ কাজে মেয়েরা পুরুষের থেকে অনেক কম মজুরি পায়।
এই বিষয়ে নারী শ্রমিকদের প্রশ্ন করলে তাঁরা বলেছেন-'মজুরি কম না নিলে যে কাজ দেবে না। আর কাজ না পেলে খাব কী?'
ভারতের এই 'জেন্ডার পে গ্যাপ' নিয়ে ২০১৬ সালেই ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন
একটি সতর্ক সঙ্কেত দিয়েছিল। ভারতে সব থেকে বেশি জেন্ডার পে গ্যাপ দেখা গেছে।
প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মজুরির বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। বিড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে মহিলাদের মজুরী দেওয়া হয় বান্ডিল হিসেবে আর পুরুষদের দিন প্রতি। গৃহস্থালির কাজ সামলে খুব স্বাভাবিকভাবে মহিলাদের কাজের পরিমাণ কম হয়।
গৃহ সহায়িকারা নিজেদের কাজ হারিয়ে আয়ার কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন কোভিডের সময়। একটা বড় অংশ এভাবে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার হয়ে উঠেছিলেন। আন্তর্জাতিক শ্রম কনভেনশনের ১৮৯ তম সুপারিশ অনুযায়ী এদের ন্যূনতম মজুরি ঠিক করতে হবে সরকারকে।
মহামারী পরবর্তী সময়ে দাঁড়িয়ে মহিলাদের অবৈতনিক কাজের পরিমাণ শুধু বৃদ্ধি পায়নি এর সঙ্গে কাজের শর্ত হিসেবে চাপিয়েদেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু অমানবিক এবং মহিলাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক শর্তও।
মহারাষ্ট্রের আখের ক্ষেতে,তামিলনাড়ুর পোশাক শিল্পে মহিলারা নৃশংসতার শিকার হন। তাদের থেকে বেশি কাজ আদায় করে নিতে কোথাও তাদের জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয়। অনেক জায়গায় তাদের বন্ধাকরণ করানো হয় ।
মহারাষ্ট্রের খেতে স্বামী স্ত্রী মিলে একটি ইউনিট ধরা হয়, নতুন শ্রমকোডে এ ধরনের ঘটনা আটকাতে কোন ব্যবস্থা তো নেওয়াই হয়নি!
চাকরি খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা এখনো কঠিন সময় অতিক্রম করছে বলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৫ শতাংশ নারী চাইলেও চাকরি পাচ্ছেন না, সেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ১০.৫ শতাংশ। দুই দশক ধরেই এই লিঙ্গ ব্যবধান অব্যাহত রয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, নারী-পুরুষের আয় বৈষম্যও এখনো ব্যাপক। বিশ্বজুড়ে গড়ে একজন পুরুষ শ্রম দিয়ে এক ডলার আয় করলে তার বিপরীতে নারীর আয় ৫১ সেন্ট। অর্থাৎ বৈশ্বিক হিসাবে নারীর শ্রম আয় এখনো পুরুষের অর্ধেক। এই ব্যবধান নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে আরো বেশি। সেখানে পুরুষের প্রতি ডলার আয়ের বিপরীতে নারীর গড় আয় ৩৩ সেন্ট, তবে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে নারীর আয় ৫৮ সেন্ট। (তথ্যসূত্র :এএফপি, আইএলও, বিশ্বব্যাংক)
- কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি
কোভিড অতিমারীর ফলে অনেক বড় আকারে দেখা গেছে পৃথিবী জুড়ে লিঙ্গ বৈষম্য। যা আবারও প্রমাণ করে দিয়েছে, প্রযুক্তি ও সভ্যতায় পৃথিবী এগোলেও এখনও সত্যি অর্থে লিঙ্গ বৈষম্য থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।
ভারতে নারী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ গৃহকর্মী। আগে এরা খুবই কম অর্থের বিনিময়ে বা শুধু খাবারের বিনিময়ে বাড়িতে কাজ করত। এখন তার পরিবর্তন হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশে এখন ঘণ্টা বা কাজের চুক্তিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে বিপুলসংখ্যক নারী।
কোভিড অতিমারীতেও অনেক বড় আকারে দেখা গেছে পৃথিবী জুড়ে লিঙ্গ বৈষম্য। যা আবারও প্রমাণ করে দিয়েছে, প্রযুক্তি ও সভ্যতায় পৃথিবী এগিয়ে গেলেও এখনও সত্যি অর্থে লিঙ্গ বৈষম্য থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।
শ্রমজীবী নারী দিবসের শুভেচ্ছা রইল। তবে, হ্যাঁ এতক্ষণ ধরে যে কাঁদুনি গাওয়া হইলো, তাহা পড়ে কী আমাদের মনে হচ্ছে না শ্রমবাজারের এই বৈষম্য ভয়ানক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে? নারী দিবসের পার্টিতে যোগ দিতে যাবার সময়, পার্টিতে তুলতুলে নরম গোলাপি কেকের দিকে তাকিয়ে, কেকটা নীল না হয়ে গোলাপি হল কেন? ভাবতে ভাবতে-
মাসি গো মাসি পাচ্ছে হাসি,
নিম গাছেতে হচ্ছে শিম্-
হাতীর মাথায় ব্যাঙের ছাতা
কাগের বাসায় বগের ডিম্ ।। আওড়াতে আওড়াতে এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে থাকুন-
- কেন পুরুষরা কাঁদতে পারেন না?
- পুরুষরা কেন মেকআপ করতে পারেন না?
- পুরুষরা কেন "নরম" হিসাবে বিবেচিত কাজগুলি করতে পারেন না?
- নার্সিং
- শিক্ষাদান
- বেবি-সিটিং এবং আরো আরো.... –
- পুরুষ কেন পারেন না পুরুষ কেন পারেন না?
- ঘরের লক্ষ্মী কেন মেয়েরাই হবেন?
- পরের ধন কেন মেয়েরা ?
0 Comments
Post Comment