- 13 August, 2021
- 0 Comment(s)
- 1177 view(s)
- লিখেছেন : কিংকর দাস
এক
ঘুম থেকে ধড়পড় ক’রে উঠে বসে শাকিলা। হামিদুলকে ধাক্কা মেরে জাগিয়ে বলে —কী প’ড়ে প’ড়ে নিশ্চন্তে মোষের মতো দিনরাত ঘুমাও, মোর যে বুক দিয়ে জল নামে নি।
—কেন? আবার হবে নাকি?
—মরণ, কথার ছিরি দ্যাখো; আমি বলিতিছি—
—কী, আবার অম্বল হয়েছে ত — ঠিক আছে, রহমান কোয়াকের কাছ থেকে কাল গুলি এনে দিব;— এখন ঘুমাও—ঢের রাত বাকি। শেষরাতের কুঁকড়ি এখনো ডাকেনি।
—বলি মানুষটার কি কুনুদিনও হুশ হবে, গজগজ করতে করতে থাকে শাকিলা।
বিরক্ত হয় হামিদুল। তার বিরক্তিভাব বাইরে প্রকাশ পায় না। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। সংসারে যেকটি জিনিসকে সে আল্লাতালার পরম রহম ব’লে জেনেছে, তার মধ্যে ঘুম একট—যার ঘুম নেই সে ঘুমের মর্ম বুঝবে কী করে। ঘুমের আড়ষ্টতা নিয়ে বিবিকে খুশ করবার জন্য বিছানায় উঠে বসে—শাকিলার পিঠে হাত রাখে, বলে— আবার ত’লে কি… কদ্দিন বন্ধ হ’ল?
কথাটা হামিদুলের মুখ থেকে সম্পূর্ণ বের হয়েছে কি হয় নি এক ঝাপটা মেরে হামিদুলের হাতটাকে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার ক’রে ব’লে ওঠে শাকিলা—ক্যামন বাপ তুমি? ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় হামিদুল। তার অপরাধটা কোথায়, ঠাহরও করতে পারে না সে। শাকিলা এমনভাবে চিৎকার করে উঠল—হামিদুলের মনে হ’ল রাত বেরাতে নেশা ক’রে নিজের বাড়ি ব’লে ভুল ক’রে লোকের বাড়ির আগড় খুলে পরের বিবির শোওয়ার ঘরে সেঁধিয়ে গেছে সে। হামিদুলের নেশা বলতে তো ওই পিরিত বিড়ি—তবে দিনে মাত্র এক বাণ্ডিল। তাছাড়া শাকিলা তার দস্তুরমতো শাদি করা বিবি। এক হাল-গরু দেনমোহর দিয়ে শাদি করা বিবি। তাহলে ফেউ-এর মতো অমন চিৎকার ক’রে উঠল কেন শাকিলা? ব্যাপারটা বোঝবার চেষ্টা করে হামিদুল। সুর নরম ক’রে বলে— কী হ’ল বলবে ত?
—শুনে কী করবে শুনি? তুমি ত্যামন বাপ নও। হ’লে তোমার নজর থাকত। ঝাঁঝালো জবাব শাকিলার।
কেমন বাপ হামিদুল?—তা হামিদুল নিজেও জানে। শবনম গুলশন দিলারা আর ফকির—এই চারজনের আব্বুজান সে। পরপর তিনটি বেটির পর অনেক মানত-টানাত ক’রে শেষ পর্যন্ত পীর উলেমচাঁদ ফকির চিস্তির দরগায় দাগা বাঁধবার পর ফকির এসেছিল শাকিলার পেটে। সুলেমান চাচা বলেছিলেন—অব্যর্থ দাবাই ভাতিজা, মার যাবার নয়। মিথ্যা হয়নি সুলেমান চাচার কথা, ঠিক সময়ে ফকির হয়েছিল। আর তাই উলেমচাঁদ ফকিরের কথা শুনে মনে রেখেই ছেলের নাম হয়েছে ফকির। তাও নয় নয় করে সে আট বছর আগের কথা। এর জন্য কম ঝক্কি পোয়াতে হয়নি হামিদুলকে। মানতের নিয়মে কোনো ফাঁক-ফোকর রাখতে দেয়নি শাকিলা। নিজেও পই পই ক’রে মেনেছিল সব নিয়মকানুন আর মানতে বাধ্য করেছিল তার খসমকেও। হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিল সেদিন হামিদুল, নির্জলা উপবাস কাকে বলে। জীবনে যে ক’টি বিষয় তার বশে নয়—তার অন্যতম আহার। তাই ইসলামের প্রতি তার পরম শ্রদ্ধা থাকলেও কোনদিন রোজা রাখতে পারেনি। সে জানে কাকে কখন গোর দেওয়া হবে তখন রসুলের দূতেরা তার কবর চেপে ধরবে। তবুও তার কোনদিন রোজা পালন করা হয়নি। এর জন্য তার গুনাহ বহুবার কবুল করেছে সে। প্রতিবছর বাড়তি পঁচিশের সিন্নিও চড়ায় সে পীরের দরগায়। তবুও এ নিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি তাকে। রফিকুল আড়তদার কারণে অকারণে তাকে কাফের ব’লে সম্বোধন করে। খুব একটা সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদও করতে পারে না সে। না নওয়াজ, না রোজা—শুধু সালভর একবার সিন্নি আর বকরি ঈদে একখানা বকরি—এতেই তো সাচ্চা মোসলমান হওয়া যায় না। এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগে সে। তবু তার একটাই সান্ত্বনা— সে ধর্মের কঠিন কঠিন রীতি-নীতি পালন করতে পারেনি ঠিকই কিন্তু ধর্মের বিরুদ্ধাচরণও করেনি কোনদিন; বরং ধর্মের প্রতি তার বিশ্বাস পাহাড়ের মতো অচল অনড়, আর এই মানসিক শক্তি তাকে চালিত ক’রে এনেছে এতোদিন। তাছাড়া মোসলমান শব্দটির জাদুকরি অর্থও তো সে জেনেছে মৌলবি হাজি সিদ্দিকির কাছ থেকে।
হাজিসাহেব বলতেন— মোসলমান কথাটার মানে জানিস বেটা?
—না হজরত।
—মস্-অল্ল-ই-ইমান।
—মানে হজরত?
মানে হ’ল যে ইনসান কোনো অবস্থাতেই তার ধর্ম থেকে বিছড় থাকে না।
—হাজিসাহেবের এই কথাগুলো শিরায় উপশিরায় অস্থি-মজ্জায় গেঁথে আছে তার, তাই প্রথা তাকে টানে না—টানে মানুষ—অনেক অনেক বেশি ক’রে।
পরপর তিনটি বেটি হওয়ার পর ঘরে বাইরে হাজার কথায় জেরবার হতে হয়েছে শাকিলাকে। কিন্তু হামিদুল ভুলেও একবারের জন্য খোটা দেয়নি বিবিকে। রাগও করেনি। বিবির ওপর এতোটুকু সোহাগ ক’মে যায়নি তার। বেটি গুলিকেও সাদরে গ্রহণ করেছে—আল্লাতালার তোহফা মনে ক’রে। কোনো অনাদর অবহেলা অযত্ন হতে দেয়নি তাদের— না বেটিদের, না বেটির মায়ের। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সোহাগের বেহেল্লাপনা বেড়েছে বৈ কমেনি।
নানা কারণে কিছুটা খাপছাড়া গোছের মানুষ সুজাগঞ্জের হামিদুল রেজা। তার সন্তানপ্রীতি আর বিবিপ্রীতি নিয়ে খামারে, পুকুরপাড়ে, মসজিদের সিঁড়িতে— প্রায় গোটা মহল্লা জুড়েই কিস্সা আছে; আর এ কিস্সা দিনে দিনে রূপান্তর পেয়েছে খেশগল্পে।
সেই হামিদুল রাত দু’প্রহরে ঘুম জড়ানো চোখে ভাবতে বসে, সে কেমন বাপ। ভাবতে ভাবতে আবার তার চোখ জুড়ে ঘুমের ঢল নামে। তাকে ঘুমে ঢুলতে দেখে ধৈর্য হারায় শাকিলা। এবারে আরো জোরে চিৎকার করে ওঠে এবং প্রায় কাকতালীয় ভাবে একই সঙ্গে তিন প্রহরের কুঁকড়িটাও ডেকে ওঠে—কোঁকর্ কোঁক্ ক অ।
শোওয়া ফকিরের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙা চোখে হারিকেনের মৃদু আলোতে আব্বু আর আম্মিকে এভাবে ব’সে থাকতে দেখে খানিকটা অবাক হয় সে। কিন্তু কোন তরফেই তার দিকেই দৃষ্টি না দেওয়াতে সে আবার বিছানায় শুয়ে পড়ে। আর শুয়ে প’ড়ে এক ফুরসতেই ঘুমিয়ে যায় ফকির।
—তোমার কি হলো বল ত? এই রাত-দুপুরে ঘুম থেকে ওঠে—হামিদুলের কথাটা শেষ না হতেই শাকিলা তারস্বরে বলে ওঠে তমার কি চোকের মাতা আছে?
—আস্তে আস্তে। ছেলেটা ঘুমাচ্ছে। পাশের ঘরে আম্মিজান আছে। বেটিরা আছে…।
—তোমার যদি বেটিদের চিন্তা থাকতো…।
—কেন অদের কি হ'ল?
—আ মরণ। হবে আবার কি। দিন দিন কেমন কলাগাছের মতো বাড়ছে দেকছ?
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হামিদুল। এতক্ষণে শাকিলার গুস্সার কারণটা মালুম করতে পারে।
—ও তাই বলো। বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু বয়স তো হয়নি, এই জামাদিয়াস সানিতে ষোলা পেরিয়ে সতেরাতে পড়ল।
—হয়নি মানে। ওই বয়সে আমার ত পহেলটা পেটে মরে গিছল, আর সাব্বুও তো হয়ে গিছল।
—সে সময়ের কথা আলাদা ছিল, আর অ্যাকন—
—কেন অ্যাকন কি হুরের বেহস্ত ব’নে গেল যে আলাদা হবে। তাছাড়া কোন উকিল-মোক্তার দামাদ করবে ব’লে বেটিরে লেখাপড়া করাচ্ছ। শাদির পর ত সেই রান্নাবাড়া।
—রান্নাবান্না মানুষির জীবনের একটা জরুরতমন্দ্ ঠিকই, কিন্তু সেটাই শেষ কতা নয়।
—তাহলে কি তোমার বেটি শশুরালে মোক্তারি করবে?
—আমি সে কথা বলিনি। আমি বলিতিছি, ওর বয়েস হয়নি। তাছাড়া লেকাপড়া করছে, একটা পাশ-টাশ করুক।
—পাশ দে কি হবে শুনি? সেই ত রান্নাবাড়া …।
—থাক ওসব কতা। তমাকে বুঝানো যাবেনি। তাছাড়া তুমি বুঝতিও পারবেনি। আমি কিন্তু বলছি, ও পড়ছে অ্যাকন পড়াই করুক।
কথাগুলা বলে একটা বড়সড় হাই তুলে আবার বিছানায় গড়িয়ে পড়ে হামিদুল। খসমের এরকম চিন্তাভাব দেখে রাগে গজ গজ করতে থাকে শাকিলা। দাঁড়িয়ে পড়ে। জানালার পাল্লার ফাঁক দিয়ে এক চিলতে ফিকে ভোর ঢুকে পড়েছে ঘরের মেঝেতে। পাশের ঘরে শাকিলার জন্নৎবানু কাশছে, একটু পরেই উঠে পড়েব—উঠে প’ড়েই বলবে—চ হ’ল বহু? দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যায় শাকিলা। শেষ প্রহরে কুঁকুড়ির ডাকে অন্ধকার দ্রুত ভাঙছে।
দুই
শবনম ধীরে ধীরে টের পাচ্ছিল—সে বড় হচ্ছে।
শবনম বাড়ছিল শরতের শিশিরের ঘ্রাণে, হেমন্তের গোবিন্দভোগ ধানের সুবাসে, শীতের কুয়াশার শব্দে, বসন্তের অনুরাগে, গ্রীষ্মের ঝরা বকুল আর কচি আমের টুপটাপে, আর বর্ষার ধেয়ে আসা টলমল উচ্ছলতায়। তার সারা শরীর জুড়ে একটা মস্ত বাগানের আভাস। তার চলন-বলন-হাসি-কান্না-লজ্জা-ব্রীড়ায় ফুটে উঠে নানা নাম না জানা কত ফুল। ফুলের সৌরভ তার সমস্ত শরীর ঘিরে। এসব কিছু বেশ টের পায় শবনম। এই টের পাওয়া ব্যাপারটা আরও গাঢ়তর হয় মহল্লার উঠতি যুবকদের বিশেষ দৃষ্টিনিবদ্ধতায় কিংবা গায়ে পড়ে আলাপচারিতার ভেতর দিয়ে। কী আছে তার মধ্যে? মাঝে মধ্যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে নিজেই ঢিল ছুঁড়ে মারে। উত্তর খোঁজে। উত্তর সে পায় না এমন নয়; কেননা তার নজরকাড়া হাসি, কালো চোখের ছাউনি, বাঁকা ভ্রুকুটি, লাস্য যে কোনো জোয়ানের দু’দিনের ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। এটা খুব ভালো বোঝে শবনম। বোঝে ব’লেই ব্যাপারটা তারিয়ে তারিয়ে অনুভব করে সে। কতো সহজেই যে একটা মানুষ ল্যাজ-নাড়া কুকুর হয়ে যেতে পারে তা বোধহয় শবনমের চাইতে আর কেউ ভালো বোঝে না। বোঝে ব’লেই হিসেব করে রাস্তা চলে তার সাবধানি পা।
জীবনে এত রঙের মাঝে জীবনটাকে কেমন যেন বেরঙ লাগে শবনমের। কীসের একটা অতৃপ্তিবোধ তাকে প্রায়শই উদাসীন করে তোলে। আনমনা হয়ে পড়ে সে। কেন যে এমন হয় তার কারণটা ঠিক করে ঠাহর করে উঠতে পারে না। তবে একটা ব্যাপার লক্ষ্য ক’রে দেখেছ—গঞ্জের উত্তরে মুনসিপুকুরটাকে দেখলেই তার মনটা আরও ভীষণ ভীষণ রকমের উদাস হয়ে যায়। শুধু পুকুরটা নয়, পুকুর এবং পুকুরের লাগোয়া পনেরো বিঘার শোলজমির খন্দটা শবনমকে ঠেলে দেয় অন্য এক জগতে। আব্বু হামিদুলের মুখে শোনা সেসব গল্প—কোনো কল্পজগতের নয়, এ ধরাতলেরই ভারতের আজাদি যুদ্ধের গল্প, বাংলাদেশ সৃষ্টির গল্প, গাজিপীরের মেলায় তার হারিয়ে যাওয়ার গল্প আর হামিদুল মিঞার জোত-জিরেতের গল্প। রাতে আব্বুর কাছে শুয়ে শুয়ে এসব গল্প কতবার শুনেছে শবনম তার হিসেব নেই—একই গল্প বারবার, তবুও পুরনো হয় না; পরের বার মনে হতো আগের বারের চেয়ে আরো জমকালো। তাছাড়া হামিদুলের গল্প বলার ধরনটিও চমৎকার। তাই বলার গুণে এবং শ্রোতার ধৈর্যশীলতায় ও আগ্রহে প্রতিবার গল্প পেয়েছে নতুনতর মাত্রা, এইসব গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়েছে শবনম।
শবনমবানু—বয়স আঠারো। বি.এ ইতিহাস অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ঘাট বাঁধানো মুনসিপুকুরের পাশ দিয়ে কলেজ যেতে যেতে হিসেব করে, কেমন ক’রে কার জন্য হামিদুল রেজা আজ জমিহীন জোতহীন একজন মামুলি সবজি পাইকার? নুন আনতে পান্তা ফুরায়—এমন অবস্থা তাদের। সেই বাড়ির মেয়ে হয়ে সে যে এতোদূর আসতে পেরেছে তা কেবল একজনের জন্যই—সে হল তার আব্বু, তার আব্বুজান—হামিদুল রেজা, ওই মানুষটার এমন অদম্য উৎসাহ না থাকলে এমনটা যে ঘটত না তা মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারে শবনম। দেখেছে তো তার চারপাশের জগৎটাকে। তারই স্কুলের সহপাঠী রোজনা-ফতেমা-আয়েষারা কবে শাদি ক’রে শশুরালে চ’লে গেছে। কেমন যেন সুখী সুখী ভাব একটা ওদের মধ্যে। মনে মনে হাসে শবনম। ওদের জন্য কেমন একটা করুণা হয় ওর। আবার ভাবে জীবনটা ওরা হয়ত ছকে বাঁধা নিয়মের মধ্যে দেখতে চেয়েছে। কিন্তু এতো সহজ ক’রে কেমন নির্বিরোধভাবে জীবনটাকে দেখতে অভ্যস্ত নয় সে। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত মানুষটা হাড়-মাস জল ক’রে সংসারটাকে টেনে নিয়ে চলেছে, তার প্রতি, আর সেই আব্বুজানের প্রতি তার শ্রদ্ধার সীমা-পরিসীমা নেই। এই মানুষটার এই রকম অতিমানবীয় কর্মকাণ্ড শবনমের মধ্যে একধরনের সংবেদনশীলতার জন্ম দেয়। আর তাই সে হয়ে উঠেছে সুজাগঞ্জ মহল্লার আর পাঁচটা মেয়ের চাইতে এক্কেবারে আলাদা।
অস্বচ্ছলতাকে প্রতি পদে প্রতি পলে অনুভব করে শবনম। ঘরের ভাঙা টালির ফাঁক দিয়ে রোদ-বৃষ্টি আসার মধ্যে দিয়ে, আম্মিজানের ফাটা শাড়িতে লজ্জা সামলানোর ভিতর দিয়ে, ভাই-বোনের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে না পারায় আব্বুর অসহায়তায়, নানির কাফ সিরাপ ফুরিয়ে যাওয়ায় খক্খকানিতে সে টের পায় কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সে। তার দাঁড়াবার ভিতটা তেমন শক্তপোক্ত নয় এ অনুভব তার আশৈশবের নয়।
একজন সম্পন্ন ক্ষেতিবাড়ি করা চাষি ছিল হামিদুল রেজা। সারা বছর খেত নিয়ে মত্ত থাকত মানুষটা। ধান-সরিষে-রাই-বেগুন-করলা-ভুট্টা-মূলো-বাঁধাকপি-ফুলকপি-ওলকপি—কীসের না চাষ ছিল হামিদুলের? সকলে বলত, চাষির বেটা হামিদুল। অনেকেরই চোখ টাটাত, হিংসা করত হামিদুল মিঞার বাড়বাড়ন্তকে। কারো উপর রাগ করত না সে, বরং হেসে জবাব দিত—দিল লাগাকে মেহনত কর ভাই। খেত ছিল যেন হামিদুলের জান। খেতিবাড়ি করার ফাঁকে ফাঁকে অবসর পেলে টুকটাক পাইকারি কারবারও করত সে। সব মিলিয়ে সুখীগৃহস্থ ছিল সুজাগঞ্জের হামিদুল রেজা।
মাঝে মাঝে সাব্বুকে কাঁধে চড়িয়ে নিয়ে যেত ক্ষেতবাড়িতে। মহরম-সাফার মাসে ক্ষেতের তখন কী রূপ। হলুদ শাড়ি-পরা সরষেলতা,কাজলপরা জংলিজটা ধানের শিষ, আর ঝুমকোলতা দুলানো বেগুন ফুল— এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়, আব্বুর কাঁধ থেকে তরতরিয়ে নেমে আলের উপরে দিয়ে ছুট লাগাত ছোট্ট শবনম, তার ছোট্ট পায়ের আলতা চুরি ক’রে নিত আলের ঘাসের উপরে বসে থাকা শিশির। কলাবিনিনি দুলিয়ে প্রজাপতির মতো এ ক্ষেত থেকে ও ক্ষেত উড়ে বেড়াত শবনম, তার সালোয়ার-কামিজ-দোপাট্টায় সিঁধিয়ে যেত নাছোড়বান্দা চোরকাঁটার দল। হামিদুল চিৎকার করে বলে উঠত—দেখবি, বৈঁচিকুলের কাঁটা আছে, পায়ে বিঁধবে’খন। কিন্তু সেই ডাক বন্ধনহীন প্রজাপতির গায়ে পৌঁছেও পৌঁছাত না। সে আপন খেয়ালে আপন খেলায় মগ্ন। আর এই উদ্দাম বেপরোয়া লুকোচুরি খেলায় কখনো কখনো হুমড়ি খেয়ে পড়ত শবনম, ক্ষেতের উপরে। হৈ হৈ ক’রে উঠত হামিদুল—হ’ল ত—,হ’ল ত—বেশ হ’ল। তখন থেকে বারণ করছিলাম—এখন হ’ল ত।
ধানের বুকে তখনো পরিপূর্ণভাবে দুধ জমেনি। ক্ষেতে এখনো পা ভরা জল। তারই উপরে উপুড় হয়ে পড়েছে শবনম। দু’হাতের চেটোর ফাঁক দিয়ে পালিয়ে গেছে নীল ডোরাকাটা ছোট্ট নিরহালি মাছটা, আর যুদ্ধে পরাজিত শবনম তাই এই আত্মসমপর্ণ। জলকাদা জড়িয়ে গেছে তার বসনে, হাতে পায়ে মুখে—সর্বাঙ্গে। তবু কান্না নয়, বরং এক আত্মতৃপ্তির খুশির ঝলক শবনমের সারা চোখ-মুখ জুড়ে। যেন তার মন-প্রাণ ভ’রে গেছে। প্রাণভরে শ্বাস নেয় সে, শ্বাসের সঙ্গে নাকের ডগায় লেগে থাকা নরম পোসেমাটির সোঁদাগন্ধ সিঁধিয়ে যায় ওর নাকের ভিতরে। এই গন্ধটা বড় প্রিয় শবনমের। শুধু সোঁধাগন্ধ নয়—ওর কেমনে যেন মনে হয়। গন্ধটার মধ্যে একটা সবুজ-সবুজ ভাব আছে। ঝুঁকে পড়ে ও, এক খাবলা মাটি তুলে নিয়ে নাকের সামনে মেলে ধরে—খুব জোরে বুক ভ’রে একটা শ্বাস টানে। আবেশে চোখ বুঁজে আসে শবনমের। তারপর শব্দ ক’রে নিশ্বাস ফেলে ও। যেন তৃপ্তির পরিপূর্ণতা পায়। বেটির কাণ্ডকারখানা দেখে হেসে কুটিকুটি হয় হামিদুল। বেটি বলে—শুঁক আব্বু, শুঁক। মাটির দলাটা আব্বুর সামনে তুলে ধরে সে। বেটির জেদাজেদিতে নরম মাটির গন্ধ শুঁকতে বাধ্য হয় হামিদুল।
—গন্ধ পেলে?
—কিসের?
—বাদশাভোগের।
—দূর পাগলী। মাটিতে কি ধান-চালের গন্ধ থাকে?
—থাকে, খুব থাকে, তুমি পাওনি তাই, মানে তমার সর্দি হয়েছে।
—হবে হয়ত।
তর্ক না বাড়িয়ে বেটির কথায় সায় দেয় বাপ।
হামিদুলকে কেউ কখনো অসুখী দেখেনি। যেদিন তার অনেক কিছু ছিল সেদিন তো নয়ই, আজ যে তার কিছুই নেই বললেই চলে—আজও নয়। সবসময়ের জন্য তার ঝিঙে বিচির কালো দু’পাটি দাঁত প্রকাশিত হচ্ছেই। পড়শিরা অবাক হয় এই ভেবে—কী ক’রে, কেমন ক’রে সবুজ সবজির মতো মানুষটা নিজেকে টাটকা সতেজ রাখে। কোনো কিছুতেই যেন ভ্রূক্ষেপ নেই মানুষটার। পরিশ্রম করে অকাতরে হাসতে হাসতে, বিরক্তি ছাড়াই। কিন্তু শবনম তো জানে, তার আব্বুর মতো দুঃখী মানুষ আর কেউ নেই। যে মুখটা বাইরে লোক দেখে সেটা তার আব্বুর সত্যিকারের মুখ নয়। এই হাসিমুখের আড়ালে লুকানো আছে যন্ত্রণাহত ক্ষত-বিক্ষত একটা মানুষের মুখ। সেই মুখটার হদিশ জানে কেবল তিনজন—জন্নৎবানু, শাকিলা আর শবনম নিজে। শবনম তো এখনকার আব্বুর মুখটা চায় না, চায় সেই মুখটা, যেখানে সে ছুটে বেড়াচ্ছে ফলন্ত ক্ষেতের আলের উপর, আর পরিতৃপ্ত হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছে তার আব্বুজান।
তিন
প্রথমদিন মোটর বাইকটা একেবারে গা ঘেঁষে চ’লে গিয়েছিল শবনমের। হকচকিয়ে গিয়েছিল সে। কিছু বুঝে ওঠার আগে, হাতকাটা কালো গেঞ্জি, ব্যাকব্রাশ চুল, কালো চশমা-ঢাকা চোখ ঘাড় ঘুরিয়ে দাঁত বের ক’রে বালা-পরা হাতটা উপরে তুলে ‘হাই ডার্লিং’ শব্দটা উচ্চারণ ক’রে ভুস ক’রে বেরিয়ে গিয়েছিল। ব্যাপারটা শবনম বুঝে ওঠার আগেভাগেই ঘ’টে গেল। ধাতস্থ হতে একটু সময় লেগেছিল ওর। পরপর কয়েকদিন শবনম লক্ষ্য করল, কালো হিরো হণ্ডাটা চক্কর কাটছে কারণে-অকারণে। চক্কর কাটছে তার চারপাশ জুড়ে।
মাঝে মাঝে একটা পোকা ঘুরপাক খায় শবনমের মাথার ভিতর। অস্থির হয়ে ওঠে তখন ও। কী করবে ভেবে উঠতে পারে না, আজকাল আব্বুকে মাঝে মধ্যে কেমন যেন ক্লান্ত দেখায়। মনে হয়, এত বড় ভার টানবার ক্ষমতা আব্বুর যেন দিন দিন ক’মে আসছে। যদি আব্বুর কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে কোথায় দাঁড়াবে ওরা। ফকির তো এখন এতটুকু একরত্তি পুঁচকে, কী হবে তার নিজের পড়াশোনার—এসব ভেবে ভেবে রাতে ঘুম আসতে চায় না ওর। বিছানায় শুয়ে ছটপট করে। ঘুম আসে অনেক অনেক দেরিতে। কোনো কোনো দিন রাত কাবার হয়ে যায়—রাতচরার মতো জেগে থাকে ওর চোখ, নিঃশব্দের শব্দ গোনে, প্রহর গোনে, রাতের দ্রুত মৃত্যুকামনা করে, পাশ ভাঙে বিছানায়। মাঝে মাঝে পাশের ঘরে মায়ের চাপা কান্নার আওয়াজ শোনে তার প্রহরজাগা কান। মসজিদে আজানের ধ্বনি শুনে বুঝতে পারে, রাত আর নেই। চারটে বেজে গেছে। ভারি মাথা নিয়ে বিছানা ছাড়ে ও।
এসব চিন্তার মাঝে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে কালো হিরো হণ্ডাটা। মাথার পোকাটার মতোই এটাও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে তার সমস্ত সত্তা জুড়ে। ফতেমা বলছিল, মন্দ কী? ওদের কিন্তু অনেক টাকা।
—টাকা। টাকাটাই সব?
—এখন টাকাটাই সব।
দারুণ রাগ হয়েছিল মিঠুর উপর সেই সময়। কিন্তু রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভেবেছে তাদের যে এত কষ্ট, তা তো টাকা না থাকার জন্যই। তার আব্বুকে যে এই হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হয়, সে তো টাকার জন্যই। তবু শধু টাকা। টাকা ছাড়া আর কিছু নয়, আর কিছু নেই—এটা মেনে নিতে পারে না শবনমের মন। বিছানায় পাশ ফেরে। জন্নুৎবানু বলে—দিদি কি মহাব্বত হয়েছে নাকি?
—তোমার যত কথা নানি।
—তা’লে রাতভর জাগু ক্যানে? আমি সব টের পাই।
—চিন্তায় ঘুম আসে না নানি।
—বেটিছার অত কিসের চিন্তা? শাদি হবে,খসমের ঘর চ’লে যাবি, নাকি কিছু হচ্ছে কারু সঙ্গে?
কী ক’রে বোঝাবে শবনম তার যন্ত্রণাটা কোথায়। হঠাৎ প্রশ্ন ক’রে বসে?
—আচ্ছা নানি, ভালোর জন্য গুনাহ্ করলে পাপ হয় না, না?
—নাঃ।
একটা মানসিক জোর পেয়ে যায় শবনম, তারপর নিজের মধ্যে নিজেকে নানা প্রশ্নে অস্থির ক’রে তোলে—তোলপাড় হয় সে নিজে নিজে, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্যের দোটানায়।
একদিন সুজাগঞ্জের বাজারশুদ্ধ লোক দেখল, তাদের নাকের ডগার উপর দিয়ে আসফাক বেগের ব’খে যাওয়া মাধ্যমিক ফেল ছেলে জাহাঙ্গীরের কালো হণ্ডা মোটরবাইকের পিছনে ব’সে হামিদুলের বড় বেটি শবনমবানু হুস ক’রে বেরিয়ে গেল।
এ ওর চোখের দিকে চাইল। কেউ ঠোঁট টিপে হাসল। আর পানের পিক ফেলে দাঁতবিহীন মাড়ি বের ক’রে করিমউদ্দিন শেখ আসগর গোলদারিকে বলল— দ্যাখছু মিঞা—বিল্লির ম্যাও।
কথাটা হামিদুলের ঘর পৌঁছতে দেরি হ’ল না। সন্ধের সময় হামিদুল বাড়ি ফিরে এলে, কারুর কিছু বলার আগেই শাকিলা হাঁ হাঁ ক’রে ব্যাখ্যান শুরু করল—
—বলি হ’ল ত। তখনি পই পই ক’রে বলিছি—লেকাপড়ার কাজ নাই। বেটির শাদি দাও। না লেকাপড়া করবে, উকিল-মোক্তার দামাদ হবে, এমন মরদ পছন্দের নয়, অমন মরদ পছন্দের নয়। অ্যাকন শেষে কিনা ছ্যা ছ্যা ছ্যা। ফকিরের মন্ত্র পড়ার মতো কথাগুলো উগরে দিয়ে দম নেয় সে।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় হামিদুল। কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারে না, গায়ের ঘেমো পাঞ্জাবিটা খুলতে খুলতে বলে কী হ’ল?
—হবে আবার কী? আদরের বেটি একটা বড়-সড় ঝামা দে বাপের নাকে ঘ’ষে দেছে। দিনরাত ত বড় বেটির গুণ গাইতে—সাব্বু এই, সাব্বু ওই, এবার ঠ্যালা সামলাও।
—বলি কী হ’ল বলবে নাকি…।
—বা’র থেকে আসতিছ। আগে হাত-মুখে পানি দ্যাও। তারপর না শুনবা বেটির কেচ্ছা, কথাটা ব’লে ঘরের ভেতরে চ’লে যায় শাকিলা, হামিদুলের জন্য পানি আর মুড়ি আনতে।
মুড়ি চিবোতে চিবোতে ঘটনার আদ্যি-পাদ্যি শুনল সে। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না হামিদুলের। শবনম এমন একটা কাজ করতে পারে কিছুতেই মানতে চাইছিল না তার মন। কেননা, এই তো সেদিন গোকুলপুরের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সিরাজুলের জন্য কথাটা পেড়েছিল হাবিবুর চাচা। ব্যাপারটা তেমন আমল দেয় নি হামিদুল; ও মেয়ের সঙ্গে কথা ব’লে বুঝতে পারেছিল, পাসকোর্স গ্র্যাজুয়েট আর প্রাইমারি টিচার এই দুটো ব্যাপারে বেটির খুব একটা সায় নেই, জোর করলে হয়তো রাজি হতো, কিন্তু শাদি-নিকার ব্যাপারে জোরাজুরিতে খুব একটা সায় নেই তার। তাই হাবিবুর চাচাকে একথায় সেকথায় বুঝিয়ে দিয়েছিল—এখনো পড়াটা শেষ হয়নি, তা ছাড়া বয়েসটা তেমন…। আচ্ছা’ আচ্ছা ব’লে নুরে হাত বোলাতে বোলাতে চ’লে গিয়েছিল হাবিবুর মাস্টার, হামিদুল স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিল, তার অরাজির ব্যাপারটা ভালো লাগেনি হাবিবুর মাস্টারের। সেই মেয়ে কিনা…। এবার পথেঘাটে হাবিবুর চাচার সঙ্গে দেখা হ’লে সে তো মুখ দেখাতে পারবে না।
—সাব্বু কোথায়?
—আম্মির ঘরে।
—ওকে ডাকো।
ঘর থেকে শবনম বেরিয়ে আসে না, আসে জন্নৎবানু, বেটাকে বলে—মিছামিছি গুস্সা করছু হালু। যা হবার হয়ে গেছে। তুই কবুল কর মেরে জান।
—আম্মি, তমার কি মাথার ঠিক আছে? ওই দুশমনের ভিটায় আমার বেটির শাদি? তাছাড়া তুমি জানো আম্মি, ওই বজ্জাত লোকটার জন্য আজ আমার দুর্দশা।
—সব জানি রে বেটা, সব জানি।
—সব জেনেও তুমি মোকে কবুল করতি বলছ?
—শাদি নবীর কেরামতি, মেরে লাল। দোস্ত দুশমন বনে, দুশমন দোস্ত হয়।
—তুমি ওকে ডাকো আম্মি, ওর লেকাপড়াটা আমি এভাবে নষ্ট হতি দেবো না।
—শাদির পর অরা লেকাপড়া করাবে বলিছে।
—ছাই করতি দেবে। আমি হাড়ে হাড়ে চিনি শয়তানটাকে।
—সব দেবে বলিছে। পুকুর, জমি—যা তোর কাছ থিকে হড়কে নিছিল সে সব ফেরত দেবে, আর নয়ানজুলির দশ বিঘে জমি দেনমোহর দেবে, তাও বে-আপসি।
—আমি বিশ্বেস করিনে। এটা আসফাক বেগের একটা নতুন চাল। আমার সরলসিধা বেটিরে অরা জাদুটোনা করছে।
—ঠাণ্ডা হ হালু। ঠাণ্ডা হ। মাতা গরম করিস নি। বেটি বড় হচ্ছে। এখন ঘর ছেড়ে পালালি কি তোর নাম বাড়বে—বল? তার চে তুই বরং পানচিনির ব্যবস্থা কর।
এতক্ষণ চুপ করে ছিল শাকিলা। পানচিনির কথা শুনেই খেঁকিয়ে উঠল সে।
—বুড়ি ধাড়ি হারামজাদির আবার ‘পানচিনি’ কি শুনি? অত গোলাপা ত চৌধুরিদের বাগেও নাই।
কী করবে ভেবে উঠতে পারছিল না হামিদুল। আসফাক বেগ কি রাতারাতি রসুল ব’নে গেল? লোকে বলে, বনের বাঘকেও দু’দণ্ডের জন্য বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আসফাক বেগকে নয়। সেই আসফাক, যে গতকাল সেটল্মেন্টের সময় জে.এল.আর.ও.আর পার্টির প্রধানকে হাত ক’রে জাল দলিল দেখিয়ে তার অত বড় পুকুরসমেত পনের বিঘা শোল জমিটা বেদখল করেছিল, সে কিনা…। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যায় তার।
—আমি মুকের কথায় বিশ্বেস করবনি। দেনমোহরে সব পাকা ক’রে লিকতে হবে। আর পাঁচজনের সামনে মোক্তারনামা সই-সবুদ করতে হবে।
—তুই মাতা ঠাণ্ডা রাখ—সব হবে।
চার
পানচিনির দিনক্ষণ স্থির হওয়ায় আগেই একদিন ভরসন্ধ্যাবেলায় আসফাক বেগ একটা পেল্লাই সাইজের মোটর গাড়িতে চ’ড়ে হামিদুলের ঘরে হাজির। একা আসেনি সে। তার সঙ্গে রয়েছে পঞ্চায়েত-মেম্বার ইনামূল, প্রধান নবীন ঘোষ আর তার প্রিয় দুই সর্বক্ষণের সঙ্গী হাসিবুল আর মনিরুদ্দিন। দিনদুয়েক জেল থেকে বেরিয়ে এসেছে মনিরুদ্দিন। বে-আইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে পুলিশ তাকে ধরেছিল, কিন্তু আদালতে তার বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ দিতে না পারায় বেকসুর খালাস পেয়েছে সে।
মোটর গাড়ির হর্ন-এর আওয়াজ শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল হামিদুল। একই সঙ্গে মহল্লার তথাকথিত এতগুলি মাননীয়দের দেখে ঘাবড়ে গেল সে। তাকে আশ্বস্ত ক’রে আসফাক বলে
—সেলাম আলেকম্।
—আলেকম সেলাম।
প্রতিসেলাম জানাবার ইচ্ছা একেবারে ছিল না হামিদুলের, কিন্তু কী করবে—ঘর বয়ে যে এসেছে তাকে অসম্মান করেই বা কী ক’রে? ফকিরের উদ্দেশ্যে হাঁক পাড়ে দড়ির খাট দুটো বের করার জন্য। কিন্তু বাধা দেয় আসফাক।— ওসবের দরকার নাই মিঞা। কতাটা বলতি এলাম, তারপর জন্নৎবানু যা যা বলেছিল তারই পুর্বাপর পুনরুক্তি ক’রে গেল আসফাক। কোনরূপ ভনিতা ছাড়াই। আরো বলল—পুরানো কথা ভুলে যাও হামিদুল ভাই। সে সময় একটা ছোটখাটো ভুল হয়ি গিছল।
—ছোট নয় আসফাক ভাই, বহুত বড়। আর তার জন্যি আমার…
হামিদুলের কথাটা শেষ করতে দেয় না আসফাক।
—পুরানো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ কী মিঞা, যখন আমরা রিস্তেদার বনতি চলেছি। তা’হলে চলি। তোমার আম্মির জন্যি আদাব রইল। আর কোনো কথা না ব’লে, না শুনে গাড়িতে চেপে বসল সপার্ষদ। গাড়িতে ব’সে কারো সঙ্গে কোনো কথা বলল না। থম মেরে ব’সে পান চিবোতে থাকে—কান থেকে আতর-লাগানো তুলো বের ক’রে আঙুলে বোলায়। মনিরুদ্দিন বলে—হামিদুলের বেটি কি ঝোপ বুঝে কোপ মারল কর্ত্তা?
—পরে সব আমি কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেব।
আসফাক বেগ সুজাগঞ্জ মহল্লার ডাকসাইটে নাম। ক্ষমতা-প্রতিপত্তি নজর কাড়ার মতো। ইঁটভাটা, আইস ফ্যাক্টি, পাঁউরুটির কারখানা, রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা—সব মিলিয়ে ঈর্ষা করার মতো বেগ সাম্রাজ্য। লোকে বলে, বেগ সাহেবের দ্যাখন্তি ব্যবসার চাইতে না দ্যাখন্তি ব্যবসার আয় অনেক বেশি। জমির দালালি দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিল সে। পেটে তেমন বিদ্যা ছিল না, কিন্তু তার বুদ্ধি শেয়ালেরও এককাঠি উপরে। তাই তরতর ক’রে বেড়ে গেছে তার বিত্ত-সম্পদ। তার শত্রুপক্ষরা আড়ালে-আবডালে বলে আসফাক বেগ নয়-বদ। কিন্তু সামনাসামনি তার মুখের ওপরে কথা বলার একটিও লোক নেই। তাছাড়া রুলিং পার্টির নেতাদের সঙ্গে রয়েছে তার ওঠা-বসা-খানা-পিনা। সুজাগঞ্জের চকবাজারের মোড়ে যে চারতলা পেল্লাই বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে, সেটাই বেগ মহল। সবেবরাতের দিন দুঃস্থ মানুষদের লম্বা লাইন পড়ে বেগ মহলের সামনে। এ হেন আসফাক বেগ—কেবল বেটার কথা ভেবেই হামিদুলের বেটির কথা ভাবতে হয়েছে; তা না হ’লে…। শুধু কি বেটার কথা ভেবেই…? না না। আসফাক মনে মনে ভাবে, শুধু বেটাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এ শাদিতে তারও তো একটা প্রচ্ছন্ন ইচ্ছা আছে। তা না হ’লে শুধু বেটার কথা ভেবে ওইরকম একটা বাড়িতে রিস্তেদারি? আসফাক বেগ তেমন আদমিই নয়। পহেলি বাত ইয়ে হ্যায়—হামিদুল তার দুশমন। জমিটা হারানোর পর থানা-পুলিশ, আইন-আদালত অনেকদূর পর্যন্ত গিয়েছিল হামিদুল। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেনি। এরজন্য বেশ পয়সা খরচ করতে হয়েছিল কিন্তু আসফাককে। সেটা এখনো মাঝে মাঝে খোঁচা দেয় তাকে। দুসরা বাত—লড়কি খুবসুরত, লিখাপড়াওয়ালি, দেমাকি—উস পর দুশমনকা বেটি। এ সবকিছুই আসফাকের খুব পছন্দের। দুটো জিনিস নিয়ে খেলতে ভালোবাসে আসফাক—মাছ আর দুশমন। সে জানে, কোন মাছের জন্য চারের প্রয়োজন। শুধু চার নয়, কোন মাছের জন্য কোন কাঁটার, কোন ডোরের প্রয়োজন—তাও। টোপ গেলবার পর কোন মাছকে পানিতে কতক্ষণ খেলাতে হয়। কোন কোন মাছকে তাড়াতাড়ি তুলে ফেলা যায়, আবার কাউকে পানিতে অনেকক্ষণ রগড়সগড় করতে হয়। দুশমনের ক্ষেত্রে সেই একই কিস্সা।
পাঁচ
কথামতো মুনসিপুকুর এবং পুকুরসংলগ্ন পনেরো বিঘার শোলবিঘা ফেরত পেল হামিদুল। আর শবনমের নামে নয়ানজুলির দশ বিঘা জমি দেনমোহর বাবদ বরাদ্দ হ’ল। কাজি সাহেব দেনমোহর পাকা করলেন সইবাবুদ ক’রে। তারপর কাজির কথামতো তিন কবুলকে কবুল ক’রে জাহাঙ্গীর বেগের বিবি হয়ে শবনম চলে গে’ল বেগ-মহলে জামাদিয়াল আউয়ানের এক সন্ধ্যায়।
সময়ের হাত ধ’রে দু-চার দিনের মধ্যেই হালাল হয়ে গেল শবনমের শাদি। কেননা শরিয়ত মোতাবেক শাদিসুদা আদমি আর আরাউতের মধ্যে যতোক্ষণ না শারীরিক মিলন ঘটছে ততক্ষণ পর্যন্ত সে শাদি হালাল হয় না।
হাবে-ভাবে আচারে-ব্যবহারে দু-একদিনের মধ্যে বেগ-মহলের সবার মন জিতে নিল শবনম। এ বাড়ির কাউকেই বুঝতে দিল না যে তার শিক্ষা-দীক্ষা-অভিরুচি এদের চাইতে ভীষণ ভীষণ রকমের আলাদা। ফলে প্রতিশোধের যে আগুনটা আসফাকের কলিজায় জমেছিল তাও নিবে গেল ধীরে ধীরে। আর জাহাঙ্গীর তো খুশিতে ডগমগ। নানান অছিলায় এটা-ওটা কিনে এনে উপহার দেয় শবনমকে। আফশোস করে, নিজে লেখা-পড়া না করার জন্য। মদ খাব না ব’লে কসম খায় শবনমের শরীর ছুঁয়ে। তার ফেবারিট হণ্ডাতে চড়িয়ে শবনমকে কলেজে ছাড়তে যায়, নিয়ে আসে কলেজ থেকে। আবার মাঝে মধ্যে নিয়ে যায় সিনেমা-রেস্তোরাঁ কিংবা মেলাতে। বেশ কাটছিল জাহাঙ্গীরের, কিন্তু কাটছিল না শবনমের। সে তো শুধু ভাবে, কেমন আছে তার আব্বু হামিদুল রেজা।
রাতে শুতে এসে জাহাঙ্গীর বলল— আমাদের শাদি নাকি সাতমাস হয়ে গেছে?
—কেন, তোমার কী মনে হয়?
—না, মনে হয় এই তো সেদিন…।
—সেদিন? মার্চে আমাদের শাদি হয়েছে, আর এটা সেপ্টেম্বর।
—সত্যি?
—কী সত্যি?
—কত কিছু পার হয়ে গেল, না?
—হ্যাঁ। কালকে একটু হাজি নাজিরের দরগায় যাব, তুমিও যাবে আমার সঙ্গে।
—আব্বুকে বলেছ?
—বলেছি।
—কী বলেছে?
—তোমাকে সঙ্গে যেতে বলেছে।
—ওখানে যেতে হ’লে বোরখা পরতে হয় কিন্তু।
—জানি।
—কাল কখন?
—বিকালবেলায়।
—কেন যাবে ওখানে?
—তোমার নামে দোয়া করেছিলাম। সেটা পূর্ণ হয়েছে, তাই।
—কিসের দোয়া?
—সেটা পরে বলব।
হাজি-নাজিরের দরগাটা বেগ-মহল থেকে খুব বেশী দূরে নয়। পায়ে হাঁটা মিনিট দশেকের পথ। বেগ-মহলের সামনের পিচ-রাস্তাটার পাশ দিয়ে যে মোরামের রাস্তাটা সাদাতপুরের দিকে চ’লে গেছে—সেই মোরাম রাস্তা বরাবর পশ্চিমে হেঁটে গেলেই হাজি-নাজিরের দরগা। দরগার সামনে আছে একটা বিশাল বট। তার বয়স কত কেউ জানে না। প্রায় বিঘা দুয়েক জায়গা জুড়ে নানান গল্পকথা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বটগাছটা। হাজি-নাজিরের দরগায় যারা দোয়া মাগে, মানত করে, তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হ’লে একটা পেতলের ঘণ্টা বাঁধে এই বটের ডালে। অসংখ্য শাখা-প্রশাখা গুঁড়িতে ঝুরিতে বাঁধা অগণন ঘণ্টার সারি, এ কারণে এই বটের আর এক নাম ঘণ্টাবট।
শবনম আর জাহাঙ্গীর যখন বেগ-মহল থেকে বেরিয়েছিল তার একটু আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। বৃষ্টি পড়ে মোরামের রাস্তা চটচটে হয়ে উঠেছে। দূরত্ব আর রাস্তার কথা ভেবেই মোটর বাইকটা বের করেনি জাগাঙ্গীর। হেঁটে চলেছে ওরা দু’জনে। জাহাঙ্গীর লক্ষ্য করল, শবনম আজকে কেমন যেন মেঘাচ্ছন্ন আকাশটার মতোই থমথমে। ঝড় উঠবার কিংবা ভারি বর্ষণের আগে কালো মেঘভরা আকাশটা যেমন গুম মেরে যায়, বাতাস বন্ধ হয়ে যায়—ঠিক তেমনি পাল্লাসমেত কালো বোরখা শবনমও। অন্যদিনের হসি-উচ্ছলতা-প্রাণচঞ্চলতা কোথায় যেন উড়ে গেছে। যে শবনমকে জাহাঙ্গীর চিনত জানত— এ যেন সে নয়। এ অন্যজন। অন্য নারী। পরের বিবির মতো দূরত্ব মেপে রাস্তা চলছে শবনম। কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলে হ্যাঁ কিংবা না-তে সংক্ষিপ্ত জবাব দিচ্ছে। বাড়তি কোনো কৌতূহল বা উচ্ছ্বাস তার মধ্যে নেই।
এইভাবে হাঁটতে হাঁটতে দরগার বটগাছটার সামনে চ’লে এসেছে ওরা। এক পা দু’পা ক’রে গাছটার দিকে এগিয়ে যায় শবনম। বোরখার ভেতর থেকে একটা পেতলের ঘণ্টা বের করে, ঘণ্টাটাকে দু’চোখে বুলায়, কপালে ঠেকায়, চুমু খায়, তারপর লাল সুতো-বাঁধা ঘণ্টাটা গাছের একটা ঝুরিতে বাঁধে। একবার দুলিয়ে দেয়। টুং টাং শব্দ তোলে ঘণ্টা। হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে শবনম। কনুইভাঙা সোজা দু’হাত উপরে তোলে। দু’হাতের খোলা চেটো কপাল স্পর্শ করে তার। বন্ধ চোখসমেত মুখ আকাশের দিকে তুলে বিড়বিড় ক’রে কী সব বলতে থাকে। এ সবকিছু জাহাঙ্গীর মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে।
তারপর উঠে দাঁড়ায় শবনম। জাহাঙ্গীরের দিকে ফিরে বলে—দরগার ভিতরে চলো, হাজিসাহেবের দোয়া নেব। কোনো কথা বলে না জাহাঙ্গীর। শবনমের আজকের আচরণে অবাক হয় সে। বশীকৃত মানুষের মতো সে অনুকরণ করে শবনমকে। একটা একটা ক’রে সিঁড়ি ভেঙে দরগার চাতালের উপরে ওঠে শবনম, পেছন পেছনে জাহাঙ্গীর।
মৌলবী হাজি মহম্মদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওরা দু’জনে। আদাব জানায় মৌলবীসাহেবকে। হাজিসাহেব চামর বুলিয়ে দেন ওদের মাথার উপরে। ওদের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে খোদাতালার কাছে। ওদের সুখময় ভাবিষ্যতের দোয়া দেন। উঠে দাঁড়ায় ওরা দু’জনে।
ঘটনাটা ঘ’টে যায় এক লহমায়। শবনম এক ঝটকায় বোরখার পাল্লা সরিয়ে ফেলে—জমাট কালো মেঘের ফুটো দিয়ে এক ফালি সূর্য বেরিয়ে এসে যেমন চমক লাগায়, ঠিক তেমনি বোরখার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল শবনমের মুখমণ্ডল। হাজি মহম্মদ লজ্জায় মাথা নত করলেন; হাজি হওয়ার পর পরজেনানার মুখ দেখা দোজখে যাওয়ার মতোই গুনাহ্। কিন্তু কাউকে কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারার আগে শবনম চিৎকার ক’রে বলে ওঠে
—আমার গুস্তাকি মাফ করবেন হজরত। আপনি সাক্ষী, জান-এ-নুর সাক্ষী, জান-এ-হুর সাক্ষী, জান-ন-এ-পীর নাজির সাক্ষী, আমি আমার খসমকে তালাক দিলাম। তালাক তালাক তালাক। তিন তালাক কবুল।
শবনমের কথাগুলি ছড়িয়ে পড়ল সমস্ত দরগায়ময়। দরগার দেওয়ালে ধাক্কা লেগে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এল হাজি সাহেব আর জাহাঙ্গীরের কানের ভিতর। বাজ পড়ে কানে তালা লাগার মতোই জাহাঙ্গীরকে করে তুলল শব্দশ্রবণ রহিত। বিস্ময়ে বাকশূন্য হয়ে পড়ল সে। বিমূঢ় অধোবদনে দাঁড়িয়ে রইলেন মৌলিবি হাজি মহম্মদ। বেবাক পাথর ব’নে গেছে জাহাঙ্গীর। সে কোনো কিছু করার আগেই বোরখা খুলে ফেলেছে শবনম। তরতর ক’রে দরগার সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করেছে সে। জাহাঙ্গীর তার হাত ধরবার জন্য হাত বাড়ায়, কিন্তু নাগাল পায় না সে। সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে এসে ঘণ্টাবটের দক্ষিণের কাঁচা পথব্বব্বব ধ’রে দৌড় লাগাল সে। তার পেছনে ছুটে এসে দরগার সিঁড়িতে ব’সে পড়ে জাহাঙ্গীর। তার সমস্ত শক্তি যেন কোথাও হারিয়ে গেছে, কেউ যেন তার দু’পায়ে বাণ মেরেছে—চলবার বিন্দুমাত্র শক্তিটুকুও তাতে আর অবশিষ্ট নেই। ধুপ্ ক’রে ব’সে পড়ে দরগার শেষ সিঁড়িটার উপর। আর ব’সে ব’সে লক্ষ্য করে শবনমের দৌড়। তখনই নামে মুষলধারে বৃষ্টি।
ছয়
অঝোরে বৃষ্টি ঝ’রে চলেছে। সেদিকে কোনো হুঁশ নেই শবনমের। বৃষ্টি ঝাপ্টা। এঁটেল মাটির কাদা, পচা বাঁশ-কাঁটা, চোরকাঁটা, শিয়ালকাঁটার বাধা শবনমের দৌড়ের গতিকে রুদ্ধ করতে চায়, কিন্তু আজকে শবনম যেন ঝড়ের পাখি। কোনো কিছুর বাধা যেন আজ তার, এখন তার বাধা নয়। তাই সকল বাধার ভ্রূকুটিকে উপেক্ষা ক’রে সে দৌড়চ্ছে। দরগাকে পিছনে ফেলে, সুজাগঞ্জ-সাদাতপুর ছাড়িয়ে বিদ্যুৎচেরা আলোর পথ ধ’রে দৌড়ে চলেছে…।
লেখক : অধ্যাপক, গল্পলেখক
ছবি : প্রতীকী
পুনঃপ্রকাশ (প্রথম প্রকাশ - ০৩ নভেম্বর ২০২০)
0 Comments
Post Comment