- 02 June, 2020
- 0 Comment(s)
- 1180 view(s)
- লিখেছেন : সিউ প্রতিবেদক
মর্মান্তিক মৃত্যু কেরলের এক ছাত্রীর। অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে না পেরে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করল কেরালার মালাপ্পুরমের দশম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাড়ির টিভি খারাপ ছিল। ইন্টারনেটের সুবিধা ছিল না। লকডাউনের পর থেকেই অনলাইন ক্লাস চালু হয় দেশে। কেরলে টিভি চ্যানেলে ‘ফার্স্ট বেল’ অনলাইন ক্লাস সম্প্রচার হয়। টিভি চালিয়ে অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্মার্ট ফোনে এই ক্লাসে যোগ দিতে হয়। কেরল পুলিস জানিয়েছে লকডাউনের জেরে বাড়ির টিভি ঠিক করা সম্ভব হয়নি। বাবা দিনমজুর। এই সময় কাজ বন্ধ থাকায় পরিবারেও চলছে অর্থনৈতিক চাপ। ফলে ক্লাসে যোগ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় পড়াশোনায় ভাল এই ছাত্রী মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করল।
অনলাইন ক্লাস নিয়ে মানসিক অবসাদ অনেক ছাত্র-ছাত্রী বা অভিভাবকদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। দিল্লির এক জরিশিল্পী মায়ের তৃতীয় শ্রেণির বাচ্চা অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারছে না। মা পম্পা মান্না বললেন, ‘অনলাইনে দুটো পরীক্ষাও হয়েছে। এই নাম্বারগুলো ফাইনালে যোগ হবে। আমার ছেলে এবছর আর পড়তে পারবে কিনা জানি না। এদিকে জরির কাজ বন্ধ। বাড়ির ভাড়া দিতে পারছি না। ছেলের দুধ কিনতে পারছি না। নেট খরচ যোগাব কীভাবে?’
পশ্চিমবঙ্গেও প্রথম দফা লকডাউনের পর থেকে অনেক জায়গায় শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। সকলের ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না। সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ফর উইমেনের এক ছাত্রী বলল, ‘আমি অনেকদিন ক্লাস করতে পারিনি। ইন্টারনেট কেনার মতো ক্ষমতা ছিল না। খুব কষ্ট হতো তখন। একজন ম্যাডামকে ফোন করে সমস্যার কথা বলতেই উনি নেটের ব্যবস্থা করে দিলেন। অনেকেই হয়তো এই সমস্যায় ক্লাস করতে পারছে না।' কলকাতার কলেজের এক শিক্ষক বললেন, ‘অনলাইন ক্লাস নিতে গিয়ে খুব অপরাধ বোধে ভুগছি। এক ছাত্রী ক্লাস করছিল। সেই অবস্থায় তার দাদা ফোনটা হাত থেকে কেড়ে নিচ্ছে বারবার। এই দৃশ্যটা যথেষ্ট অস্বস্তির। হয়তো ওই একটা ফোনেই দুজনকে কাজ করতে হয়।’
শুধু তো স্মার্ট ফোন বা ইন্টারনেট সমস্যা নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে অনুপস্থিত থাকছে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতার কারণে। ২০ মে আমপান ঝড়ে পশ্চিমবঙ্গের যে কটি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পড়েছে ভোগান্তিতে। আশুতোশ কলেজের বাংলার শিক্ষক চন্দ্রমল্লী সেনগুপ্ত বললেন, ‘আমপান ঝড়ের পর অনলাইন ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছি। পুরো সিস্টেম স্বাভাবিক হলে তারপর ভাববো।’ যোগমায়া দেবী কলেজের শিক্ষক পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মনে করেন, অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে অনেক ভাবনা-চিন্তা করা দরকার। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার একটি কলেজে পড়ান নির্মাল্য ঘোষ। তাঁর মতে, ‘এখন অনলাইন ক্লাস চালু রাখা মানে আমাদের পড়ুয়াদের ওপর অবিচার করা। অন্য কলেজের শিক্ষকরা তাঁদের পড়ুয়াদের পাঠদান করে এগিয়ে দেবেন। আমাদের পড়ুয়ারা তো পিছিয়ে থাকবে। কারণ আমপান ঝড়ের পর দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা অনেকটা ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানেই বাস আমাদের অধিকাংশ পড়ুয়ার। এখন অনলাইন ক্লাসের কথা আমরা ভাবতেই পারছি না।’
পরিকাঠামো ঠিক না করে অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্তে দেশে তৈরি হচ্ছে ছাত্র বিভাজন। পারলে সুযোগ নাও, না পারলে পিছিয়ে থাকো। ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এইরকম। পড়ুয়া ও অভিভাবকদের মানসিক অবসাদ এতে বাড়বে তো বটেই। কেরলের ছাত্রীর মতো আরো মর্মান্তিক দৃশ্যের জন্য কি আমরা অপেক্ষা করে থাকব? অনলাইন ক্লাস নিয়ে সুপরিকল্পিত কোনো পরিকাঠামো কি আদৌ তৈরি করবে কোনো সরকার? এই প্রশ্ন আজ পড়ুয়া-শিক্ষক-অভিভাবক সবার মনে।
প্রতীকী ছবি।
0 Comments
Post Comment