- 07 December, 2021
- 1 Comment(s)
- 528 view(s)
- লিখেছেন : সরিতা আহমেদ
দীর্ঘ এগারো মাস বাদে স্কুল খুলেছে। বেশ কিছুদিন ধরেই ক্লাসরুম চত্বরের পরিচ্ছন্নতার ছবি এবং স্কুলের পরিবেশকে ছাত্রছাত্রীদের উপযোগী করে তোলার বহু কার্যাবলীর খবরে আমজনতা আশায় বুক বেঁধেছিল। নির্দিষ্ট দিনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ খুলল। আমজনতারই একাংশ আমরা, শিক্ষকরাও আশা ও আশঙ্কার দোলাচলে কাজে ফিরলাম। আশা ও খুশির ব্যাপারে নতুন কিছু বলার নেই, - সোশাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া ও টিভি নিউজ চ্যানেলের অলিগলিতেই তার সম্যক আভাস মিলেছে।
আশঙ্কার বিষয়টিই এ লেখার মূল উপজীব্য।
আশঙ্কা- শব্দটির প্রাথমিক চেহারা যদিও অতিমারির ভাইরাস কিম্বা ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের বিশ্বাস অর্জনের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়েছিল – তবে সপ্তাহ ঘুরতেই পর পর দুটো খবর বোমার মত আছড়ে পড়ল আমাদের ক্ষুদ্র স্টাফরুমে।
আমাদের স্কুলের দুটি মেয়ে - নবম শ্রেণির কাঞ্চন এবং দশম শ্রেণির ছাত্রী পায়েল, মারা গেছে সবার অলক্ষ্যেই।
“কেন? কীভাবে ?”- সমস্বরে প্রশ্নের বাণ ছুটে বেরোতেই উত্তরটা পেলাম ওদের সহপাঠীদের কাছে। দুটি মেয়েরই এবছরের শুরুতে বিয়ে হয়েছিল।
শ্বশুরবাড়িতে মাত্র কয়েক মাস কাটিয়েই পায়েল আত্মহত্যা করেছে এবং কাঞ্চনের আঁতুড় ঘরেই মৃত্যু হয়েছে।
মেয়েদুটির সারনেম জানার চেষ্টা করিনি। কারণ মেয়েদের ‘নেম’- ‘সারনেম’ বলে আসলে কিছু হয় না। শ্রেণি বিভক্ত সভ্যতার সৃষ্টি ইস্তক কন্যাসন্তান, জাতধর্মবর্ণসমাজ নির্বিশেষে জন্ম থেকেই ভোগের হাঁড়িকাঠে একতাল নরম মাংসের পিণ্ড বৈ আর কিছু নয়।
কিছু দিন আগেই পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী পালন হয়েছে স্কুলে স্কুলে। বিধবা বিবাহ প্রচলন ও বাল্যবিবাহ রদ করার মত নারীকল্যাণ উদ্যোগ নিয়ে তাঁর উপর নানা পাঠ হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। পণ্ডিতজীর লেখা ‘বাল্যবিবাহের দোষ’ শীর্ষক প্রবন্ধটিও বেশ কিছু স্কুলের সমাজকল্যাণ প্রজেক্টে ‘কাজে লেগেছে’।
১৪ বছর আগে (১লা নভেম্বর ২০০৭) স্বাধীন ভারতে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইন কার্যকর হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের স্কুলমুখী করতে, বাল্যবিবাহ রোধে এবং শিক্ষার হার বাড়াতে ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ সারা বিশ্বে বন্দিত হয়েছে, এসেছে প্রচুর আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
নানা প্রান্তিক স্থানে গড়ে উঠেছে ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’- যেখানে মেয়েদের আত্মরক্ষার মারপ্যাঁচ, বাল্যবিবাহ আটকানো ইত্যাদি নানা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
পুরুলিয়া,ঝাড়গ্রাম ইত্যাদি নানা জায়গার সাহসী ছাত্রীরা নিজ উদ্যোগে বহু মেয়ের ‘বিয়ে আটকে’ দিয়ে স্কুলমুখী করাতে পেরেছে – সেসব সাফল্যের খবরে দেশ মুখরিত হয়েছে। গর্বিত হয়েছি আমরাও।
এতদসত্ত্বেও কাঞ্চন,পায়েলের মত আজও হাজারো বালিকা বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে আড়ালে আবডালে। ওদের মধ্যে কেউ ভাগ্যজোরে টিকে যাচ্ছে, আবার কেউ হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে।
ক্লাসে ওদের যখন ‘কন্যাশ্রী ক্লাবে’র সাহসীনি মেয়েদের গল্প বলা হয়, ওরা ‘হাঁ’ করে শোনে। বাড়ির লোকেদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের বিয়ে রুখে দেওয়া পুরুলিয়ার পাঁচ নাবালিকা –আফসানা খাতুন, সুনীতা মাহাতো, বীনা কালিন্দী, মুক্তি মাঝি ও সঙ্গীতা বাউড়ি কত প্রতিকূল ও সাংঘাতিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে, কত সাহসের সাথে বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েছে। পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রতিনিধি হয়েও ভাবী প্রজন্মের কাছে আলোকিত একঝাঁক তারকা হয়ে তারা সম্মানিত হয়েছে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে– সেইসব গল্প শুনিয়ে যখন উজ্জীবিত করার চেষ্টা করি আমাদের অষ্টম,নবম কিম্বা দশম শ্রেণীকে, তখন সামনে তাকিয়ে দেখি ওই পঞ্চকন্যার বয়সী আমাদের মেয়েদের চোখে মরা মাছের দৃষ্টি। তাদের কান সজাগ -টিফিনের অথবা ছুটির ঘণ্টার দিকে। ক্ষুধা কিম্বা যৎসামান্য অর্থ উপার্জন যেখানে শেষ কথা বলে। শিক্ষা বা সচেতনতার স্থান কিছুতেই সর্বোচ্চ স্থান নিতে পারে না।
ঠিক এই সময়েই মনে পড়ে ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বনামধন্য হয়ে ওঠা এক মহিয়সীর কথা। যিনি কেবল নিজেকেই প্রতিষ্ঠিত করেননি, সমগ্র পিছিয়ে পড়া নারীজাতিকে শিক্ষা ও চেতনায় জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা থেকে একের পর এক গ্রন্থ লিখে গেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। তিনি। যদিও বিখ্যাত হয়েছেন বেগম রোকেয়া নামে, তবে ‘বেগম’ শব্দটি তাঁর আসল নামে কোনোদিনই যুক্ত ছিল না। তিনি নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা – রুকাইয়া খাতুন ওরফে রোকেয়া। সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা রোকেয়া তাঁর চিঠিপত্রে এবং সরকারি সব দস্তাবেজেই সই করতেন আর.এস.হোসেন নামে।
তাঁর ‘অবরোধবাসিনী’তে ব্যক্তিগত ঘটনাবলী সংকলনে রোকেয়া লিখেছেন – “ গত ১৯২৪ সনে আমি আরায় গিয়াছিলাম। আমার দুই নাতনীর বিবাহ একসঙ্গে হইতেছিল, সেই বিবাহের নিমন্ত্রণে। তাহাদের নাম মঙ্গু ও সবু। বেচারিরা তখন ‘মাইয়া খানা’য় ছিল। কলকাতায় বিবাহের পাত্র ছাপান্ন দিন পূর্বে মাইয়া খানায় কন্যাকে বন্দি করে রাখে। বেহার অঞ্চলে ছয়/সাত মাস পর্যন্ত এইরূপ নির্জন কারাবাসে রাখিয়া মেয়েদের আধমরা করে। আমি মঙ্গুর জেলখানায় অধিকক্ষণ বসিতে পারি না – সে রুদ্ধগৃহে আমার দম আটকাইয়া আসে। শেষে একদিন একটু জানালা খুলে দিলাম, দুই মিনিট পরেই এক মাতব্বর বিবি ‘দুলহান কো হাওয়া লাগেগি” বলিয়া জানলা বন্ধ করিয়া দিলেন। আমি আর তিষ্ঠোতে না পারিয়া উঠিয়া আসিলাম।
সবুদের জেলখানায় গিয়াও মোটেই বসিতে পারিতাম না। কিন্তু সে বেচারি তো ছয় মাস হইতেই সেই রুদ্ধ কারাগারে ছিল, শেষে সবুর হিস্টিরিয়া রোগ হইয়া গেল …”
উপরোক্ত হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রায় একশ বছর পরেও এমন মঙ্গু ও সবু, কাঞ্চন ও পায়েলের রূপে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়।
যাদের সামনে বারবার করে রোকেয়ার ‘স্ত্রী জাতির অবনতি’ গ্রন্থ খুলতে ইচ্ছে হয়, যাতে রোকেয়া লিখেছেন “আমরা আলস্যের – প্রকারান্তরে পুরুষের দাসী হইয়াছি। ক্রমশ আমাদের মন পর্যন্ত দাস হইয়া গিয়াছে। বহুকাল হইতেই নারী হৃদয়ের উচ্চ বৃত্তিগুলি অঙ্কুরে বিনষ্ট হওয়ায় নারীর অন্তর-বাহির, মস্তিষ্ক, হৃদয় সবই ‘দাসী’ হইয়া পড়িয়াছে।"
খুলতে ইচ্ছে হয় ‘রোকেয়া রচনাবলী’ যাতে তিনি অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মেয়েদের অলংকারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লিখেছেন –
“কারাগারে বন্দীগণ লৌহনির্মিত বেড়ী পরে, আমরা (আদরের জিনিস বলিয়া) স্বর্ণ-রৌপ্যের বেড়ী অর্থাৎ ‘মল’ পরি। উহাদের হাতকড়ি লৌহনির্মিত বেড়ি, আমাদের হাতকড়ি স্বর্ণ-রৌপ্য নির্মিত চুড়ি। কুকুরের গলে যে গলাবন্ধ দেখি, উহারই অনুকরণে বোধহয় আমাদের জড়োয়া-চিক নির্মিত হইয়াছে। গো-স্বামী বলদের নাসিকা বিদ্ধ করিয়া নাকদড়ী পরায়, এদেশে আমাদের স্বামী আমাদের ‘নোলক’ পরাইয়াছেন – যা হইয়াছে “স্বামীর অস্তিত্বের ( সধবার) নিদর্শন।"
রোকেয়া কোনোদিনই ছকেবাঁধা নারী-ভাবমূর্তিকে স্বীকার করেননি। তিনি পুরুষতন্ত্র নির্মিত মর্ষকামী নারী – সীতা বা রহিমার ধারণাকে বর্জন করে চলার নীতি নিয়েছেন। সীতার প্রতিরূপ হিসেবে সিদ্দিকা চরিত্রের নির্মান করেছেন তাঁর ‘পদ্মরাগ’-এ। রামায়ণে রাম ত্যাগ করেছিলেন সীতাকে। পদ্মরাগে রোকেয়ার হাতে সিদ্দিকা নিয়েছে সেই প্রতিশোধ - স্বামীকে ত্যাগ করে। সিদ্দিকা যখন সোচ্চারে বলে – “আমি সমাজকে দেখাইতে চাই, একমাত্র বিবাহিত জীবনই নারী জন্মের চরম লক্ষ্য নহে, সংসার ধর্মই জীবনের সারধর্ম নহে।"
সেই দৃপ্ত বাক্য তো খোদ রোকেয়ারই। তাঁর লেখনী ধরেই তো সিদ্দিকা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তার অতীতের বর্তমানের ভবিষ্যতের সমস্ত নারীর পক্ষে লতিফ জানতে চেয়েছে – “সিদ্দিকা স্পষ্ট বল ‘তুমি আমার গৃহিনী হইবে কিনা ?"
সিদ্দিকা বলেছে – “না। তুমি তোমার পথ দেখ, আমি আমার পথ দেখি।"
সে যেমন বিবাহ প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করে নি, তেমনই চায় নি স্বামীর পায়ের নিচের বেহেস্তও।
ইবসেনের ‘ডল্স্ হাউজ’ -এর ‘নোরা’ও বোধহয় ম্লান হয়ে যায় রোকেয়ার সিদ্দিকার কাছে। এতটাই স্পষ্ট উচ্চারণে রোকেয়া পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে জেহাদে নেমেছিলেন – যা সাহিত্য জগতেও বেশ দুর্লভই।
আজকের দিনে যখন পায়েল, কাঞ্চনের মত একবিংশ শতকের অজস্র মেয়ে, যারা ঝাঁ-চকচকে ইণ্ডিয়ার অধিবাসী নয়, সত্তরোর্ধ ভারতের কানাগলিতে ধুঁকে ধুঁকে, ভয়ে-ভয়ে বেঁচে থাকে, যাদেরকে আজও প্রতিনিয়ত শেখানো হয় - সে কন্যা -অতেব তার স্থান পুরুষের নিচে, তার মুক্তি স্বামীর পদসেবায়, পিতৃদায় ঘোচানোর একমাত্র উপায় যেনতেন প্রকারেণ বিয়ে নামক যূপকাষ্ঠে নিজের কচি মাথা গলিয়ে দেওয়া – তাদের কাছে শিক্ষা ও চেতনার আলোকবর্তিকা হয়ে রোকেয়া ভীষণভাবেই প্রাসঙ্গিক। হ্যাঁ, তাঁর আগমনের ১৪০ বছর অথবা তিরোধানের নব্বই বছর বাদেও ।
রোকেয়া বিশ্বাস করেছেন পুরুষ নারীকে প্রথমে শারীরিক শক্তিতে পরাভূত করে বন্দী করে এবং শেষে অর্থনৈতিক এক্তিয়ার থেকে বহিষ্কার করে করে তোলে। যদি অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় তবেই ঘুচে যাবে নারীর পুরুষাধীনতা। তাই তিনি দাবি করেছেন নারীর আর্থ-স্বাধিকার। তাঁর রচনাবলীতে সোচ্চারে জানিয়েছেন "স্বামীর সংসারে নারী বেতনহীন দাসী। যে পরিশ্রম আমরা স্বামীর গৃহকার্যে করি, সেই পরিশ্রম কি স্বাধীন ব্যবসায় করতে পারি না ?” কোনও পেশাই উপেক্ষনীয় নয়। ‘‘আমরা যদি রাজকীয় কার্যক্ষেত্রে প্রবেশ করিতে না পারি তবে কৃষিকার্যে প্রবেশ করিব। ভারতে বর দুর্লভ হইয়াছে বলিয়া কন্যাদায়ে কাঁদিয়া মরি কেন ?”
নারীমুক্তির চরম বানী উচ্চারিত হয়েছে রোকেয়ার দৃপ্ত কণ্ঠে "কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিতা করিয়া কার্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও। নিজের অন্নবস্ত্র উপার্জন করুক।"
রোকেয়া রচিত "সুলতানা’স ড্রিম" (অনুদিত রূপে ‘সুলতানার স্বপ্ন’) সম্পর্কে ‘পুরুষতন্ত্র ও রোকেয়ার নারীবাদ’ প্রবন্ধে বিখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ বলেছেন “ রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বৈজ্ঞানিক ইউটোপিয়া। যেখানে তিনি কোনও আদিম স্বর্ণযুগ সৃষ্টি করেননি, সৃষ্টি করেছেন ভবিষ্যতের বিজ্ঞাননির্ভর সমাজ। কেন না, বিজ্ঞানই শুধু মুক্তি দিতে পারে নারীকে …রোকেয়ার সুলতানা’স ড্রিম নারীতন্ত্রের চূড়ান্ত বিজয়ের ও পুরুষতন্ত্রের চূড়ান্ত পরাজয়ের কাহিনী।"
একথা শুনতে কটু হলেও সত্য যে, রোকেয়ার সময়ে নারীর জন্য শিক্ষাঙ্গন, কর্মক্ষেত্র, ঘরে-বাইরে পুরুষতান্ত্রিক নিষেধাজ্ঞাগুলো, পর্দাপ্রথা, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি শেকল ঠিক যতখানি ভয়ানক ছিল, স্বাধীন ভারতের বুকে আজও তারা বহাল তবিয়তে জারি আছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের আনাচেকানাচে। যেকোনও মেয়েমহলের দেওয়ালে কান পাতলে হামেশাই সেই অব্যক্ত রুদালির প্রমাণ মেলে।
যে সমাজ রোকেয়াকে দিয়ে লিখিয়েছিল – “আমি বাইশ বছর হইতে ভারতের সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জীবের জন্য রোদন করিতেছি … সে জীব – নারী।" সেই সমাজ যে আজও মেয়েদের ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও উদার হয় নি তার প্রমাণ আমাদের ছাত্রীরা। রোকেয়ার মত একজন বিদুষী ঠিক কতখানি হতাশা ও গ্লানি থেকে স্ত্রীজাতির প্রতি এই ধরনের বাক্য উচ্চারণ করতে পারেন – তা সহজবোধ্য।
আমাদের মেয়েদের অবস্থা সেই যুগের ‘নিকৃষ্ট জীব’-এর চেয়ে কিয়দাংশে উন্নত হলেও পুরোপুরি উৎকৃষ্ট শ্রেণির জীব হিসেবে যে তারা আজও সমাজে স্বীকৃত হতে পারে নি – তা শহরতলীর স্কুলছুট, বাল্যবিবাহের গ্রাসে হারিয়ে যাওয়া, কর্মক্ষেত্রে বেতনবৈষম্যসহ কটূক্তি সহ্য করা, যত্রতত্র শ্লীলতাহানীর শিকার হওয়া, জীবনযুদ্ধে হেরে আত্মহত্যা করতে চলা মেয়েদের দেখেই বুঝতে পারি প্রতিনিয়ত।
তাই ডিসেম্বরের ৯ তারিখটি প্রতিটা মেয়ের নিজেকে শিক্ষিত নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শপথ নেওয়ার দিন।
মঙ্গু, সবু ,পায়েল, কাঞ্চন প্রমুখ অকালে ঝরে যাওয়া নামগুলো থেকে আত্মপোলব্ধি করার দিন।
নিজের পায়ে স্বাধীনভাবে দাঁড়াবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার দিন।
ব্যক্তিজীবন অথবা সমাজে ঘটা অজুত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একজোট হয়ে সামিল হওয়ার দিন।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, অধিকার কেউ কাউকে ভেট দেয় না, অধিকার অর্জন করতে হয় অথবা ছিনিয়ে নিতে হয়।
1 Comments
Nandini Jana
08 December, 2021
খুব ভালো লেখা হয়েছে ।
Post Comment