- 13 September, 2025
- 0 Comment(s)
- 93 view(s)
- লিখেছেন : ডালিয়া খাতুন
আরমানের মা শেফালি কয়েক বছর যাবত ডিভোর্স নিয়ে বাপের বাড়ি থাকত। দেখতে বেশ সুন্দর ও বুদ্ধিমতি মেয়ে কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস,যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সে ফ্রড বের হয়। যে ঘরবাড়ি দেখে তাকে তার দাদারা বিয়ে দিয়েছিল সেই বাড়ি থেকে শেফালিকে বের করে দিল। অন্য ভাইয়ের বউ নিয়ে আসবে বলে তার উপর অত্যাচার করে তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। শেফালি আর অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে শেষে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয়। সব কিছু মুখ বন্ধ করে সহ্য করতে করতে মেয়েটা যখন নিজে এই সিদ্ধান্ত নিল তখন তার দাদারাও পাশে এসে দাঁড়ায়। আরমান মাত্র তিন বছরের বাচ্চা তাকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকত।
শেফালিরা চার ভাই আর তিন বোন। শেফালিই সকলের ছোট। খুবই কম বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল, দেখতে সুন্দর বলে। স্কুলে পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়। শেফালির অল্প বয়সেই আরমানের জন্ম হয়। তারপর আবার ডিভোর্সও হল। সবাই আরমানের নানিমাকে বোঝালেন, মেয়ের তো এখন সারাজীবন পড়ে আছে ওর আবার বিয়ে দিন। কিন্তু তিনি সবসময় বলতেন, একবার ভুল হয়েছে আর বিয়ে দেওয়ার সাহস পাচ্ছি না। এদিকে ছোট ছেলের বিয়ের বয়স পার হচ্ছে। ছোট ছেলের বিয়েতে একটি কথাই বার বার উঠতে লাগলো যে, বাড়িতে ডিভোর্সি বোন থাকলে সেখানে মেয়ের বিয়ে দেবে না। মোট কথা অনেকেই ডিভোর্সি কোনো ননদ থাকুক সেটা সহ্য করে না।
শেষমেষ শেফালির মায়ের মনে হতে লাগলো সত্যিই এবার মেয়েটার বিয়ে দেওয়া দরকার। ওর একটা সংসার হওয়া দরকার। কারণ ওর বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। আমিও আজ আছি কাল নেই। কে তাহলে আগলে রাখবে মেয়েটাকে। ভাইয়েরাতো হয়তো দেখবে কিন্তু সব ভাইয়ের বউ কি সারাজীবন সহ্য করবে? মেয়ের জন্য পাত্র দেখতে বললেন। যেহেতু বয়সটাও বেশি না আর সুন্দর দেখতে তাই অনেক গুলোই সম্বন্ধ এলো। তারমধ্যে একটি পাড়ার ছেলে রমজান। রমজানের মা শেফালির মাকে বার বার বোঝাতেন যে পাড়ার ভিতরেই বিয়ে দিন তাহলে মেয়ে কাছাকাছি থাকবে। যখন ইচ্ছা মাকে দেখতে যেতে পারবে।
রমজানেরও আগে একটা বিয়ে হয়েছিল। আগের বউটি মারণরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। রমজান এদের এমনও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে আরমানের সব দায়িত্ব নেবে। তার আগের পক্ষের কোনো সন্তান ছিল না। এসব শুনে শেফালির মা ও দাদারা রাজি হয়ে যায়। পাড়ার কাউকে না জানিয়েই বিয়ে ঠিক হয় এবং বিয়ের দিনই সবাই জানতে পারে। একবার ডিভোর্স হয়ে গেছে তাই শেফালিও আর কোনো প্রশ্ন করেনি। নীরবে মেনে নিয়েছে সবটা।
বিয়ের পর রমজান কিন্তু আরমানকে নিজের বাড়িতে আনেনি। শেফালির বিয়ের পর তার ছোট ভাই তৌফিকেরও বিয়ে হয়ে যায়। আরমানকে ওর নানিই মানুষ করে। ভরণপোষণের খরচ চার মামা দিলেও আরমান আর কারোর ভালোবাসা পায়না। শেফালি তাই ছেলেকে দেখতে বার বার ছুটে আসে এবং আরমানও ছুটে যায় মায়ের কাছে। রমজান আলী যখন ঘরে থাকেনা সেই সময় দেখা করে যায় মায়ের সঙ্গে। আরমান জানতে পেরে শেফালিকে বকাবকি শুরু করলো।
রমজানের প্রতিনিয়ত ব্যবহার কথাবার্তা পরিবর্তিত হতে থাকে। এমনকি ছোট খাটো ভুল নিয়ে গায়ে পর্যন্ত হাত তুলতে শুরু করেছে। বিধাতার কি নির্মম পরিহাস তাকে আবার বিয়ে দিল যাতে সুখে থাকে কিন্তু এখানেও অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে। শেফালির অবস্থা দেখে মায়ের মন কাঁদে, নীরবে চোখের জল ফেলে কিন্তু মেয়ের জন্য কিছু করতে পারে না।
শেফালি যখন দেখছে আগের মতোই এখানেও একই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে তখন আর চুপ করে মেনে নিতে পারলো না। প্রথম বিয়ের সময় সে না হয় ছোট ছিল, অবুঝ ছিল। এখন আর সে অবুঝ বা ছোট মেয়ে নেই যে সবসময় শুধু মুখ বন্ধ করে মার খেতে থাকবে। মেয়েদের উপর অত্যাচারের মাত্রা কত বীভৎস রূপ নিতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করলো শেফালি। এই সংসার ছেড়ে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই জানে সে। এখানেই লড়াই করে তাকে টিকতে হবে। কিন্তু মুখ বুজে মার খেয়ে নয়। অত্যাচার করলে তার যে কষ্ট হয় তা জানাতে হবে জোরের সঙ্গে। তাই সে লড়াকু, প্রতিবাদী রূপ নিয়ে স্বামীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এখন সে আর এই ভাবনায় চলে না যে বোবার কোনো শত্রু হয় না,বরং এই ভাবনায় চলে কেউ যদি ছোবল দেয় বিনিময়ে ছোবল যদি না মারতে পারো অন্তত ফোঁস করতে হয়। তবেই বাঁচতে পারবে নইলে কেঁচোর মতো পিষে দিয়ে চলে গেলেও কিছু করতে বা বলতে পারবে না। এই সংসারে সে অনেক কাজ করে। তাই সংসারটা তারও। রাজরানির মতো বসে বসে খায় না। স্বামীর মনে হলেই তাকে চড় থাপ্পড় মারে, সেই ঋণ সেও শোধ করবে। খনখনে গলায় শেফালির তেড়ে আসার চেহারা দেখে মিইয়ে গেল রমজান। যেচে গিয়ে আরমানকে বাড়িতে নিয়ে এল। মনে মনে ভাবল শেফালির অত্যাচারের হাত থেকে তার বাঁচার একমাত্র আশ্রয় এখন আরমান।
লেখক : শিক্ষার্থী
ছবি : সংগৃহীত
0 Comments
Post Comment