- 22 February, 2025
- 0 Comment(s)
- 32 view(s)
- লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
[১৯]
দিল্লি শহরে রাত। মিনাবাজারের হট্টগোল অনেকক্ষণ থেমে গিয়েছে। রাস্তার ওপারে আলোয় সাজানো লালকেল্লা চত্বর। ধুলো আর ফুটপাথে শুয়ে থাকা মানুষজন। হুশহাশ গতিতে দামী গাড়িগুলো বেরিয়ে যায়। টাকার হিসেবে পৃথিবী চলেছে। নাগরদোলায় ঘুরেছে দেশ। বিদ্বেষ বড় সহজ শব্দ আজ। মাটি খুঁড়ে আজকাল আর ইতিহাস বেরোয় না। স্থাপত্য বেরোয় না। বেরোয় কেবল মন্দির-মসজিদের হিসেব। টাকার খেলায় হাতবদল হয় মনুষ্যত্ব। কারোর গেলাসে বরফ আর রঙিন জল চলকিয়ে ওঠে।
লিফটে চড়ে উপরে উঠতে উঠতে মনোহরলাল ভাবছিলেন। তেমন গভীরে গিয়ে অবশ্য তিনি কোনওদিনই কিছু ভাবেননি। গূঢ় কোনও তত্ত্বভাবনা তাঁর মেজাজের সঙ্গে মেলেনা একেবারেই। তিনি কেবল লেনদেন আর ব্যাঙ্ক ব্যালান্সের কথা ভাবেন। তাতেই তাঁর আহার-নিদ্রাযাপন। কিন্তু মাঝরাত্তির পেরিয়ে আজ, হঠাৎ স্বয়ং সাংসদ-সাহেবের জরুরি তলব? কারণ কিছুটা আঁচ করতে পারলেও সবটুকু বুঝতে পারেন না মনোহরলাল। তবু তাঁর মন খুশ হয়ে থাকে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময়েই তিনবার তাঁর ডান চোখের পাতা নেচে উঠেছিল। থরথর করে তিনি সেই কাঁপুনি টের পেয়েছিলেন। এর অর্থ সৌভাগ্য না হয়েই যায় না। মনোহরলাল আদবানি নিজেকে শান্ত রাখেন। পরনের গলাবন্ধ জামাটা একটু নাড়িয়ে-চাড়িয়ে ঠিক করে নেন। লিফট তার গন্তব্যে হাজির। ডোরবেল বাজিয়ে মনোহর অপেক্ষা করেন।
গাড়ি ছুটছে। বিরক্তিতে শেখর খাণ্ডেলওয়ালের গলা শুকোয়। পায়ের চাপ বাড়ে এ্যাকসিলারেটরের উপর। অনেক কাল আগে দিল্লিরই কোনও এক পোড়-খাওয়া রাজনীতিকের বিশেষ এক উদ্ধৃতিকে তিনি নিজের নিবন্ধে সরাসরি ব্যবহার করেছিলেন। “আদমি বহৌত হি অনেস্ট হ্যায়। ইয়ে তো সহি বাত। পর পতা লগানা হ্যায় কি ও অনেস্টি কা ভাও কিতনা!” মনে মনে হাসেন শেখর। অব্যর্থ এই উক্তি। নিজের জীবনেই তো কতবার এই উক্তিকে তিনি অক্ষরে অক্ষরে ফলে যেতে দেখেছেন। আজকের ঘটনাটা সেই কারণেই ব্যতিক্রম। অবাক হয়ে শেখর গাড়ি চালাতে থাকেন। এক-দু’বার সিগনাল ভুল হয়। তবু ফাঁকা রাস্তায় তিনি সেসব খেয়াল করেন না। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে যান।
সাংসদ সাহেবের নাম উচ্চারণ করতে নেই। তাঁকে কেবল ‘স্যর’ বলে ডাকতে হয়। কাঠুয়া নালার যে রিসর্টকে নিয়ে কাঁটার মতো বিতর্ক বিঁধে রয়েছে, তার মালিকের নামও লোকে ‘ভাইয়াজি’ বলে জানে কেবল। এই ‘ভাইয়াজি’ অথবা মনোহরের মতো লোকেরাই আদতে ‘স্যরের’ কাঁচা পয়সার হিসেব ‘বরাবর’ রাখে। বিনিময়ে এদের কপালে জোটে লোভনীয় কন্ট্র্যাক্ট। অবিশ্বাস্য বেশি দামে। সরকারি অর্থ তো এভাবেই শেষমেশ ‘জনতা’র হাতে ‘ফেরে’। স্যর নিজে বলেন। মনোহরলাল, ‘ভাইয়াজি’রা বিনয়ের সঙ্গে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানান। আজকে বোধহয় ১৫ কিলোমিটার লম্বা, সেই পাহাড় ফুঁড়ে যাওয়া, চার-লেন টানেলটার বিষয়েই মনোহরের কপালে শিকে ছিঁড়তে চলেছে। দেশজুড়ে আজ বিকাশের মরসুম। মানুষ তো দূরস্ত, পাহাড়-নদী-অরণ্যের অস্তিত্বও এখন আর নিরাপদ নয়। প্রায় সোয়াশো কোটি টাকার প্রজেক্ট। মনোহরলাল বিগলিত ভঙ্গিতে দামি শম্পাইনের বোতলটা স্যরের সামনের টেবলে রাখেন। স্যর মুখ তুলে তাকান। মিটিমিটি হাসি এসে তাঁর মুখ আর ঠোঁটের চারপাশে জড়ো হয়। ‘ট্রিবিউন কা ও ছোকরি তো অব বহৌত হি কামিয়াব লগতি হ্যায় লালজিভাই!” মনোহরলাল শরীর কুঞ্চিত করেন। তিনি ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন।
-“লগতি তো হ্যায় স্যর!” মনোহর মুখ কাঁচুমাচু করেন, “আমি তো ভেবেছিলাম এমন একটা নিউজপেপার-ওয়ালা অর্গানাইজেশনের সঙ্গে জুড়ে থাকতে পারলে ভোটে আমাদেরই ইমেজ ক্যাম্পেন-বাজিতে ‘বেহতর’ থাকবে। কিন্তু এ যে এমন একজন কপালে এসে জুটবে!” তিনি কপালে করাঘাত করেন, “পর উপায় এক হ্যায় স্যর, ম্যায়নে ও রাস্তে মে ভি কাম শুরু কর দিয়া,” উৎসাহের সঙ্গে তিনি বলেন। স্যর তখনও নিস্পৃহ দৃষ্টিতে মনোহরের দিকে চেয়ে আছেন। “বতাইয়ে, ম্যায় শুন রহা হুঁ!” শান্ত গলায় তিনি জবাব দেন। প্ল্যানটা খুলে বলতে বলতেই ডোরবেল বেজে ওঠে। দ্বিতীয়বার। আবারও স্যরের মুখ আর ঠোঁটের চারপাশে হাসির মরসুম। “দরওয়াজা খোল দিজিয়ে জরা,” তিনি মনোহরলালকে অনুরোধ করেন, “মনে হচ্ছে আপনার জবরদস্ত সল্যুশনেরও সাকসেস-নিউজ এসে গেল!” গলায় কি হালকা ব্যঙ্গের ছাপ? দরজা ঠেলে ঘরের ভিতরে ঢুকে আসেন শেখর খাণ্ডেলওয়াল।
“মাই গুডনেস, শি রিয়লি হ্যাজ সম স্ট্রেংথ অব কনসিয়শনেস এ্যাণ্ড ডিটরমিনেশন!” চেয়ারে বসতে বসতে স্যরের দিকে শেখর মন্তব্য ছুঁড়ে দেন। তারপর মনোহরের দিকে তাকান, “শি রিফিউজড দ্য প্রাইজ!” মনোহরলাল হতবাক চেয়ে থাকেন।
কেরিয়রের একদম শুরুর দিকে থাকা একজন মানুষও কিনা এভাবে, এমন একটা লোভনীয় জার্নালিজম প্রাইজ মুখের উপরে প্রত্যাখ্যান করতে পারে অবলীলায়! নিজের জীবনদর্শনের সঙ্গে কোনওভাবেই একে মেলাতে পারেন না মনোহরলাল। নেহাত তিনি সাত্ত্বিক মানুষ। তাই মনে মনেই তিনি ‘চূড়েইল’ মেয়েটাকে আচ্ছাসে গালাগালি দেন। মুখে কিছু বলেন না। কেবল মুখ লাল করে বসে থাকেন। স্যর তখনও তাঁদের দিকে হেসে তাকিয়ে আছেন।
“আপলোগ না এক চিজ নহি সমঝতে!” তিনি বলেন, “আজকাল, এই মডার্ন প্রজন্মের মধ্যে প্রিন্সিপল জিনিসটা ক্রমশই যেন এক কড়া নেশার পর্যায়ে চলে গিয়েছে।” তিনি পানীয়ে চুমুক দেন, “ওদেরকে সোজা পথে ডিল করা যায় না। নেশা চড়ে গেলে মানুষকে কি করতে হয় জানেন?” তিনি চটুল দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকান। বিষয়টা পুরোপুরি ধরতে পারেন না কেউ। ওঁরা স্যরের কথার জন্যই অপেক্ষা করেন।
“পিটনা পড়তা হ্যায় উসকো!” স্যর পানীয়ে শেষ চুমুক দিয়ে কুর্সি ছেড়ে উঠে দাঁড়ান, “বস, অচ্ছাসে ধুলাই দেনা পড়তা হ্যায়। বস তব সমঝেগা উও লোগ – কি দেশ ক্যায়সে চলতে হ্যায়! হাঁ!” তাঁর মুখ রাগে থমথম করছে।
“আরে শুনিয়ে!”
আজকের মতো বোধহয় মিটিং শেষ, এই ভেবে মনের কষ্ট মনে চেপে রেখেই উঠে পড়তে যাচ্ছিলেন মনোহরলাল। স্যরের ডাক শুনে আবার তাঁকে বসে পড়তে হয়। স্যরের চোখেমুখে আবারও হাসি ফিরে এসেছে।
“বাহার নাম হ্যায় না উসকা? ওই জার্নালিস্ট মেয়েটার সাথে যে দিওয়ানা বন্দা রয়েছে? মুসলমান?” স্যর জিজ্ঞেস করেন। ঘাড় নাড়েন মনোহরলাল। “হাঁ স্যর। বাহার।” স্যর হাত তুলে মনোহরকে কাছে ডাকেন। ফিসফিস করে তাঁর কানে কিছু বলতে থাকেন। শেখর ততক্ষণে নিজের গেলাসে মদ ঢালেন। এখানে আসা ইস্তক এই নিয়ে তাঁর তৃতীয়বার।
দেখে বিরক্তিতে গা কুঁচকে যায় মনোহরের। হবে নাই বা কেন? মনোহর জানেন তাঁদের মতো লোকেদের কপালে, যারা কিনা সোজা কথায় ‘বিজনেসম্যান’, সে যে বিজনেসই হোক না কেন – শালা চুরি না করলেও ‘চোর’ অপবাদ জোটে। আর এই শেখর খাণ্ডেলওয়াল বা তাঁদের মতো পাক্কা দুনম্বরি একেকজন, তাঁরা হলেন কিনা সাংবাদিক, জার্নালিস্ট। প্রাইজ পাওয়া খানদানি ক্লাস। আবারও মনোহর মনে মনে গালাগালি দেন। শেখর খাণ্ডেলওয়াল কেবল সাংবাদিকই নন। সাংবাদিক-কুলের মধ্যেও রীতিমতো নক্ষত্রখচিত কেরিয়র তাঁর। শোনা যায় সবদলের উপরমহলের সঙ্গেই নাকি তাঁর অবাধ যাতায়াত। তাই কেরিয়রের ঝুলিতে পুরষ্কার আর প্রমোশনের কোনও কমতি নেই। এহেন শেখরেরই কাছ থেকে আসা সর্বভারতীয় এক সাংবাদিকতার পুরষ্কারের ক্ষেত্রে সরাসরি নমিনেশনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে রাখী শ্রীবাস্তব। মেয়েটার প্রতি একটু যেন হিংসেও হয় মনোহরের। ধক আছে বটে তার।
“সমঝে আপ?” স্যরের প্রশ্নে মনোহরের সম্বিৎ ফেরে। তিনি ঘাড় নাড়েন। মনোহরের মুখের দিকে তাকিয়ে স্যর যেন বিষয়টা আরেকবার জরিপ করে নিতে চান, “ঠিক তো? তাহলে ওইদিন যেমনটা বললাম, ওইসে হি কাম হোনা চাহিয়ে। বাকি আমি সামলে নেব।” তিনি ইঙ্গিতে মনোহরকে আবারও পিছনে ফিরে গিয়ে চেয়ারে বসতে বলেন। রাত বাড়ছে। মনোহরলাল নিজের গেলাসে মদ ঢালেন। এইবারে চুমুক দেওয়া যায়। কেবল তার আগে, পকেট থেকে গঙ্গাজলের শিশিটা বের করে এনে, তিনি গেলাসের চারপাশে একটু ছিটিয়ে নেন।
ভিড় বাড়ছে। কাজ খুঁজে চলা মানুষের ভিড় বাড়ছে। আজকাল পাকাপোক্ত চাকরি মেলে না। তাই চুক্তিভিত্তিক যে কোনও নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই চুক্তির মেয়াদটুকুই যদি বা মোটামুটি চলনসই হয়, তবে সেই একেকটা কন্ট্র্যাকচুয়াল চাকরি নিয়েই রাজপথে ধুন্ধুমার বেঁধে যায়। এর পাশাপাশি অবশ্যই অন্ধকারের আলাদা কারবার চলে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রতিটা রাজনৈতিক দলই চায় নিজস্ব একেকটা হাঙ্গামাকারী-ফৌজ প্রস্তুত রাখতে। আর সেইসব ‘বেআইনি’ প্রকল্পও ঘুরপথে হয়ে ওঠে গরিব মানুষের কর্মসংস্থানের উপায়।
বস্তিতে খবরটা রটেছিল আগের দিন। গেরুয়া রঙ স্বেচ্ছাসেবকেরা এসে ঘোষণা করে দিয়ে গিয়েছিল, সনাতন দেশের ঐতিহ্য রক্ষার্থে কিসব যেন সংগঠন তৈরি করা হচ্ছে। তাই সকল ‘সনাতনী ভাইয়েরা’ যেন দলে দলে নাম নথিভুক্ত করে। এও বলেছিল, সপ্তাহে দু’দিন অথবা মাসে বড়জোর পাঁচ কি ছয় দিন কাজ। বাকি দিনগুলো চাইলে সদস্যেরা সবাই অন্য কোথাও এর পাশাপাশি অন্য কাজ করতে পারে। ছেলেটির মনে উৎসাহ জেগেছিল। যত না তা ‘সনাতন ঐতিহ্য রক্ষা’র টানে, তারচেয়ে ঢের বেশি করে তাকে টেনেছিল পারিশ্রমিকের অঙ্কটাই।
বাস রে বাস! ছেলেটা এতটাও কল্পনা করতে পারেনি। এতো রীতিমতো মাঠ ভাড়া করে ভর্তির পরীক্ষা। খবর পেয়ে লোকও জুটেছিল প্রচুর। পুরনো দিল্লির সেই ঘিঞ্জি মহল্লার ভিতর এমন একখানা যে মাঠেরও হদিস ছিল, ছেলেটা তা কোনওদিন আন্দাজও করতে পারেনি। দৌড়, লাফ, কুচকাওয়াজ – কি না করতে হল। শেষমেশ লাঠিখেলার কসরত। গ্রামে থাকতে ছোটবেলায় ছেলেটা কিছুদিন শিখেছিল এসব। তাই ঘামে জবজবে হয়ে সে যখন ‘নির্বাচিত’দের সারিতে গিয়ে দাঁড়াল, চারপাশে তাকিয়ে সে দেখল বাদ পড়ার সংখ্যাই বেশি। ঐতিহ্যরক্ষার সংগঠনে এমন তাগদওয়ালা জোয়ান কিসের প্রয়োজন সে বুঝে উঠতে পারে না। কেবল দিনপ্রতি টাকার অঙ্কটাই তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে। হাতে হাতে একটা করে ছোট ত্রিশুল দিয়ে গেল কেউ। শপথের সময়। দিনকাল দ্রুত বদলাচ্ছে। ছোট ছোট পুস্তিকাও হাতে আসে তাদের। মোবাইল নম্বরগুলো লিখে নেওয়া হয়। ছোট ছোট হোয়াটস্যাপ গ্রুপও নাকি তৈরি হবে এবার। সেখান থেকেই কাজের নির্দেশ আসবে। আর আসবে বিভিন্ন বিষয়ের উপর পড়বার জিনিস।
সারাদিন কারখানায় দিন গুজরান করে এসে সবসময় সেই গ্রুপের ভিডিও দেখতে শরীরে শক্তি থাকে না। তবু দেখতে হয়। কেমন যেন অস্বস্তি বোধ হয় তখন। বড্ড বেশি চড়া দাগের কাজ। খারাপ-ভালোর বড় সরাসরি ভেদাভেদ। দেশ বাঁচাতে কি এতখানিও উগ্রতার প্রয়োজন? ছেলেটা সঠিক বুঝতে পারে না। তবু ক্রমশ ভিডিও অথবা গ্রুপে পাঠানো পিডিএফের বক্তব্যগুলোকে তার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। ছোটবেলা থেকে সে অপ্রাপ্তি দেখেছে, অন্যায় দেখেছে, অবিচার সহ্য করেছে। লাথি খেয়ে পড়েছে রাস্তার উপর। এখন এই সংগঠন যেন নতুন করে তাকে আজ পালটা লাথি মারতে শেখায়। লাথি মারতে উৎসাহিত করে। মারের বদলা মার। কমবয়সী ছেলেটার মনস্তত্ত্বে হঠাৎ যেন এই বদলার প্রবণতাই দানা বাঁধতে শুরু করে।
কাউকে না পেলে অন্য কাউকে মার, মেরে বদলা তোল!
আর মনে রাখবি, এদেশে কেবল এক জাতি, এক ধর্মের মানুষেরাই …
শব্দগুলো কানের ভিতর গুনগুন করে। করতে করতে ক্রমশ তা চিৎকারে পরিণত হয়। ছেলেটা পালটে যায়।
দিল্লিতে ভয়াবহ দূষণ। সারা দেশেও তাই। হৃদয় থেকে মস্তিষ্ক অবধি বিষ ছড়িয়ে যায়। বাহার, রাখী অথবা সুহানিরা একেকজন সেই বিষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায়। কাল থেকে বিকাশমূলক প্রকল্পের নামে পরিবেশ ধ্বংসের কারণে উত্তরাখণ্ডে ঘনিয়ে আসতে চলা সম্ভাব্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলির বিষয়েও ওদের আরও একটা নতুন সিরিজ বেরতে শুরু করবে। অবাক হয়ে ওরা কাজটা নিয়ে রিসার্চের সময় দেখেছে, কিভাবে বিশাল একেকটা ইনফ্রা-ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টকে সুচতুর ভাবে অনেকগুলি ছোট প্রোপোজালে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে পাহাড়ি-পরিবেশের উপর তাদের প্রভাব-বিষয়ক বাধ্যতামূলক সমীক্ষার প্রশ্নটিকেও সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া গিয়েছে। দূরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে বাহার। মেঘ এসে কখনও কখনও তার সানুদেশ ছুঁয়ে যায়। সুহানি আর রাখী ঘরের ভিতর শেষবারের মতো কনটেন্ট রিভাইজ করে নিচ্ছে।
“আপলোড করে দিলাম।”
রাখী এসে ধুপ করে বাহারের পাশে বসে পড়ে। গোধূলি বিকেলে তিনজন মানুষ। হলদোয়ানি ট্রিবিউনের বারান্দায়। হাওয়াতে কোনও অচেনা ফুলের সুবাস। শুকনো পাতার সরসর শব্দ হয়। সমস্ত রাগ-বিদ্বেষ-হিংসা-হানাহানির বিপরীতে থাকা ওরাও, এই পৃথিবীরই সদস্য কয়েকজন।
(চলবে)
আগের পর্বের ঠিকানা – https://nariswattwo.com/welcome/singlepost/the-siege-serialised-novelette-series-eighteen-
0 Comments
Post Comment