একটুকরো  আকাশ (পর্ব-১)

  • 17 August, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 138 view(s)
  • লিখেছেন : মীরা কাজী
জনা কুড়ি বিভিন্ন বয়সের যুবক যুবতী, এরা সকলেই কি করে ওনার ভাই-বোন হতে পারে! ইরাবতীদিকে যতটুকু চিনেছি, উনি মিথ্যা বলার মানুষ নন। আমার মনের কথা বুঝতে পেরে ইরাবতীদি বললেন, ভাবছ তো এতগুলো ভাইবোন কি করে হয়? নিজের বলতেই  রক্ত সম্পর্কিত হতে হবে এমনতো নয়। অনেক সময়  অর্জিত সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি আপন হয়ে ওঠে। এরা সবাই সেভাবেই আমার নিজের ভাই-বোন। এদের মধ্যে কেবল দুজন আমার সহোদর বোন।    

                                                             (ক)

 

বিকেল গড়িয়ে যায়। সুর্যটা যাই যাই করেও দেরি করে। কিছুটা  সোনালী আলো নারকেল সুপুরি গাছের মাথায়  তখনো  দোল খায়। পাখিরা বাসায় ফেরার আগে  ডানায় সেই আলো মেখে  নিতে নিতে কলতানে মেতে ওঠে। খানিক পরে পালটে যায় প্রকৃতির ক্যানভাস। আলো, পাখির কলতান কিছুই থাকেনা। বাগান ঘেরা বাড়িটায়  নিশব্দে  অন্ধকার নেমে আসে। কেবল দোতলার একটা ঘরে  আলো জ্বলে। সারা রাত ধরেই জ্বলে। সেখানে টেবিল ল্যাম্পের  আলোর সামনে খোলা বই সঙ্গী করে ইরাবতী দেবী বসে থাকেন। কখনো বইয়ের মধ্যে ডুবে যান কখনো বা নিজের মধ্যে,কখনো বা তন্দ্রায় । ধীরে ধীরে  রাত গভীর হয়, ফর্সা হবার দিকে মোড় নেয়  তিনি বুঝতেই পারেন না। ঊষার আলোর ছটা জানালা গলে চোখে-মুখে এসে পড়লে  তার ঘোর কাটে। আলস্য ঝেড়ে বাড়ির লাগোয়া বাগানের দিকে পা বাড়ান।

 বাগান ঘেরা বাড়িটায়  ইরাবতী দেবী একাই থাকেন। একজন মালি গোছের মানুষ আছে, সেই গাছ-পালা দেখাশোনা করে। তবুও রোজ সকালে একবার বাগানে এসে গাছপালা গুলোর খবর না নিলে ইরাবতী দেবী স্বস্তি পান না। তারপর ফিরে  নিজস্ব টুকি টাকি কাজ। নিজের জন্য সামান্য রান্না তিনি নিজেই করেন। বাকি সময়ের সঙ্গী বই। তার নিজ্স্ব সংগ্রহে যা বই আছে, গুছিয়ে রাখলে একটা ছোটোখাটো লাইব্রেরি হয়ে যাবে। তার পরেও তিনি  স্থানীয় লাইব্রেরিতে যান  নতুন  বই খুঁজতে। জীবনের সত্তরটা বছর পার করে দিয়েছেন।  এখন বাকি  দিন-রাতগুলো  তিনি  এভাবেই  সাজিয়ে নিয়েছেন। 

 আমি তখন একটা বেসরকারি ব্যাঙ্কের বিভাগীয় প্রধান। কাজের সুত্রে  প্রতিনিয়ত বহু জনের সঙ্গে পরিচয় হয়।  বেশির ভাগ মুখই কিছুদিনের মধ্যেই  হারিয়ে যায় মন থেকে। দেখা হলেও চট করে মনে পড়েনা। আবার এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের ভুলতে চাইলেও ভোলা যায়না। নিজের অজান্তেই  মনের কোনে তাদের জন্য একটা  স্থায়ী  আসন  তৈরি হয়ে যায়। তেমনই একজন মানুষ হলেন ইরাবতী দে। 

 রিটায়ার্ড  অধ্যাপিকা। নম্র-ভদ্র স্বভাবের এই প্রৌঢ়া মহিলাটির সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল নিজের  কর্মস্থলে। কয়েকদিন ধরে দেখছিলাম,একজন প্রৌঢ়া অনেক আগে এসেও সবার শেষে এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। ফলে তার কাজটি অসমাপ্ত থেকে যাচ্ছে। পরের দিনেও তিনি   অন্যকে  সামনে এগিয়ে যেতে সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং সময় পেরিয়ে যাবার কারণে ফিরে যাচ্ছেন। 

একদিন  দেখলাম, সারির প্রথম জন হিসাবে  তিনি  আমার সামনে এসে গেছেন। আমি তার বাড়ানো কাগজটি  নিতে যাব এমন সময়  পিছন থেকে কেউ কিছু একটা  বলতেই তিনি  লাইন থেকে সরে একেবারে পিছনে চলে গেলেন। আমি  অবাক হওয়ার সাথে সাথে একটু  বিরক্তও হলাম। কিন্তু কিছু করার নেই। এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। লাঞ্চ টাইমে দেখলাম তিনি চেয়ারে বসে একমনে কিছু একটা পড়ে চলেছেন।  

  •  আপনি রোজ এভাবে নিজের লাইন অন্যকে ছেড়ে দিচ্ছেন। তাহলে আপনার কাজটা করবেন কিভাবে? আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

  • আমার থেকে ওদের কাজগুলো  বেশি জরুরি বলে মনে হয় তাই। ভদ্রমহিলা বই থেকে মুখ তুলে বললেন।   আমার কেমন যেন মায়া হল দিদির  বয়সি মহিলাটিকে দেখে। আমি সেদিন লাঞ্চ না করেই তার কাজটি করে দিলাম। অন্যরা  জিজ্ঞেস করলে বললাম, “আজ আমার  খেতে ইচ্ছে করছেনা”।

 কাজের ফাঁকে ভদ্রমহিলার  সঙ্গে আমার আলাপ হল। বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি।  আপনার জন বলতে  তার অনেক গুলি ভাই-বোন আছে। এখান সেখান ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কাজের সূত্রে আরো বার কয়েক তার সাথে আমার দেখা হল। ফোনেও কথা হল। একসময়  কাজের ব্যাপারটা মিটে গেলেও ইরাবতীদির সাথে যোগাযোগটা থেকে গেল। 

 আমার অফিস থেকে ইরাবতীদেবীর বাড়ির দূরত্ব বেশি নয়। মাঝে মাঝে ইরাবতীদির বাড়ি যাই। তিনিও আমাকে নিজের ছোটো ভাই এর মত আদর যত্ন করেন। একদিন ফোন না করলে অনুযোগ করেন। 

ইরাবতীদির  ঘরের দেওয়ালে  একটা গ্রুপ ফটো বাঁধানো আছে। সেটা দেখিয়ে একদিন জিজ্ঞেস করলাম-

  •  এরা কারা? 

  • আমার ভাই-বোন। 

  • নিজের ভাই-বোন? 

  • হ্যাঁ।

এবার আমার অবাক হবার পালা। জনা কুড়ি বিভিন্ন বয়সের যুবক যুবতী, এরা সকলেই কি করে ওনার ভাই-বোন হতে পারে! ইরাবতীদিকে যতটুকু চিনেছি, উনি মিথ্যা বলার মানুষ নন। 

 আমার মনের কথা বুঝতে পেরে ইরাবতীদি বললেন, ভাবছ তো এতগুলো ভাইবোন কি করে হয়? নিজের বলতেই  রক্ত সম্পর্কিত হতে হবে এমনতো নয়। অনেক সময়  অর্জিত সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি আপন হয়ে ওঠে। এরা সবাই সেভাবেই আমার নিজের ভাই-বোন। এদের মধ্যে কেবল দুজন আমার সহোদর বোন।

 আমি অপ্রস্তুত। সত্যিই তো! আমারই ভুল। আমিওতো এই অল্প সময়ে ইরাবতীদির কাছের হয়ে গেছি।  ভাই ফোঁটার দিন যত্ন করে আমার জন্য নিজে রান্না করেন। অন্যের কাছে আমার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন -আমার ভাই। 

 বেশ অনেক দিন ইরাবতীদির কাছে যাওয়া  হয়নি। ফোনও করা হয়নি। তিনিও করেন নি। একদিন রাতের দিকে ফোনে তাকে ধরলাম।  কথা বলে বুঝলাম, তার মনটা ভাল নেই। জিজ্ঞেস  করতে এড়িয়ে গেলেন তার স্বভাব মত। অফিস ফেরত তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। দেখলাম তিনি চুপচাপ শুয়ে আছেন। আমকে দেখে ধড়মড় করে উঠে বসলেন। চোখ মুখ  বসা। উসখো –খুসখো চেহারা। দেখে মনে হল কয়েক দিন স্নান- খাওয়া ঠিক মত করেননি। 

  • কি হয়েছে? শরীর টরীর খারাপ?

  •  না। ঠিকই আছি। 

 আমি বেশি কৌতূহল না দেখিয়ে চুপ করে গেলাম। বলার মত কিছু হলে উনি নিজেই বলবেন।

  • জান পুষ্কর! আমার  একটি বোন  আজ চলে গেল।

  • চলে গেল! কোথায়?

  • যেখানে সবাইকে একদিন যেতে হয়। ওই যে হলুদ শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে সবার মধ্যমনি হয়ে। সে  বড় অসময়ে  চলে গেল!  দেওয়ালে বাঁধানো গ্রুপ ফটোর  দিকে তাকিয়ে বললেন ইরাবতীদি।

 বলা হয়নি আমার নাম  পুষ্কর।  সেদিন আর কোনো কথা হলনা। ইরাবতীদি  ফটোর দিকে তাকিয়ে থাকলেন।  কিছুক্ষণ বসে থেকে আমিও চলে এলাম। যে মারা গেছে সে তার নিজের বোন নাকি অন্যদের মধ্যে একজন সেটা জিজ্ঞাসা করা হলনা। 

 দিন কতক পরে ইরাবতীদি  আমাকে ফোন করে বললেন,” সেদিন তোমার সাথে ঠিক মত কথা বলতে পারিনি। আজ পারলে এস”।  অফিস থেকে সোজা ইরাবতীদির বাড়ি গেলাম। আজ তাকে বেশ ঝরঝরে মনে হল। আমাকে দেখে বললেন,“আজ তোমার সাথে একটু গল্প করার ইচ্ছা হল।“

  •  আজ আপনি বলবেন আমি শুনব। রোজ দিন তো আমি একাই বক বক করি।  

  •    কি বলব? আমি তো তোমার মত গুছিয়ে বলতে পারি না।  

  •  আপনার  ভাই- বোনেদের সম্বন্ধে কিছু বলুন। 

  বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ইরাবতীদি বললেন, “তারা এমন কেউকেটা কেউ নয়। নেহাতই  সাদা মাটা। ওদের  কথা শুনে কি করবে?”

  •  সাদামাটা মানুষদের কি কিছু কথা থাকে না?

  •   থাকে। অনেক  কথা থাকে। তবে শোনবার জন্য কেউ থাকে না।  

  •  বলুন, আমি শুনব।

  • আজ থাক। পরে একদিন বলব।

সেই পরের দিনটা আর আসেনি। ইরাবতীদির বাড়ি যাওয়াই তো আর হয়নি। হঠাৎ করে  একটা ভাল কাজের অফার পেয়ে দিন কতক পর  কলকাতা ছেড়ে আসামের হাফলং শহরে রওনা দিলাম। তাড়াহুড়োতে  ইরাবতী দির সাথে দেখা করার সময় পেলাম না। ফোনে জানিয়ে দিলাম। 

 আসামে এসে হোটেলে কয়েকটা দিন থেকে বাড়ি খুঁজে ফ্যামিলি সিফট করানো, তারপর ছেলেকে  ঠিকঠাক একটা স্কুলে ভর্তি করানো। এই সব করতে কেটে গেল বেশ কয়েক মাস। এখানে আমার অফিসের কাজের চাপও বেড়ে গেছে।  অন্য কোনোদিকে মন দেবার সময় পাচ্ছি না। একটা প্রবাদ আছে “চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়”। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলনা। ইরাবতীদির সাথে যোগাযোগ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে গেল। মাঝে মাঝে তার কথা  মনে হয়, তবে আজ করি কাল করি করে ফোন করা হয়ে ওঠে না। ইরাবতীদি প্রথম প্রথম  নিয়ম করে খোঁজ খবর নিতেন। এখন তিনিও করেন না। 

 দেখতে দেখতে দশ বছর কেটে গেছে।  সেদিন অচেনা নাম্বার থেকে একটা ফোন এল। বাঁকুড়ার মাচানতলা  থেকে  একজন মহিলার ফোন। “মাচানতলা” নামটা শুনেই চমকে উঠলাম।  একটা  মুখ আমার মনে ভেসে উঠল, ইরাবতীদি্রমুখ। ইরাবতীদি তো ওখানেই থাকেন।  যিনি ফোন করেছন তিনি ইরবতীদির বোন বলে পরিচয় দিলেন।

  • কেমন আছেন ইরাবতীদি? অনেকদিন  কথা হয়নি। তার কথার মধ্যেই বলে উঠলাম।

  • দিদি নেই। বছর পাঁচেক হল দিদি মারা গেছে।

  • মারা গেছেন! পাঁচ বছর আগে! ওহো! 

  •   হ্যাঁ! শেষের দিকে তার স্মৃতিশক্তি একেবারেই চলে গিয়েছিল। কেবল কয়েকজনের নাম বলত। তার মধ্যে একটা নাম-পুষ্কর।

  •   আগে জানতে পারলে দেখা করার চেষ্টা করতাম।

  • কাউকেই  চিনিনা। তাই যোগাযোগ করার প্রশ্নই ওঠেনা। এখন  যা বলবার জন্য ফোন করেছি সেটা বলি -

 আমরা এবার আমাদের বাড়িটা বিক্রি করে দেবার কথা ভাবছি, দিদির জিনিসপত্র গোছাতে গিয়ে একটা মুখবন্ধ খাম পেয়েছি। চিঠিটা লিখে পোষ্ট করতে ভুলে গেছে। প্রাপকের  ঠিকানার জায়গায় কেবল  নাম লেখা আছে - পুষ্কর সেন। পুরো  ঠিকানা লেখা থাকলে  ডাকেই পাঠিয়ে দিতাম। ডায়েরি ঘেঁটে আপনার ফোন নম্বরটা পেলাম। আপনি ঠিকানাটা বললে  চিঠিটা ডাকে পাঠিয়ে দেব। এখনো  সেটা মুখবন্ধই আছে। 

 

  •  দরকার নেই। এখানকার কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমি কয়েকদিনের মধ্যে কলকাতা ফিরছি।  গিয়ে আপনার সাথে দেখা করে চিঠিটা নেব।

  • ঠিক আছে আসুন। তবে বেশি দেরি করবেন না। বাড়িটার ব্যবস্থা করেই আমরা চলে যাব।

 ভদ্র মহিলা ফোনটা রেখে দিলেন। আমি সেদিন অফিসের কোনো কাজে মন দিতে পারলাম না। বার বার ইরাবতীদির কথা মনে হতে লাগল। স্মৃতি যতদিন ছিল ততদিন তিনি একতরফা আমার খোঁজ খবর নিয়েছেন। তারপর আর পারেননি। চিঠিতে কি লিখেছেন? নিশ্চয় খোঁজ না নেওয়ার জন্য অনুযোগ করেছেন।   

 কলকাতা ফিরে দেরি করলাম না । পরেরদিনই  বাঁকুড়া  রওনা দিলাম। বাঁকুড়া আমার চেনা জায়গা। এখানে অনেকদিন কাজ করেছি। দশ বছরে  অনেক কিছুই পালটে গেছে। মাচানতলায়  ইরাবতীদির  বাড়ির সামনে গিয়ে মনটা উদাস হয়ে গেল। বাড়িটা কেমন যেন অচেনা হয়ে উঠেছে। বাগানটা আছে তবে তাকে জঙ্গল বলাই ভাল। পাঁচিলের বহু জায়গা ভাঙ্গা। বাড়িটার অবস্থাও তেমন। বহুকাল রঙ করা হয়নি। জায়গায় জায়গায় প্লাস্টার খসে পড়েছে। ইরাবতীদির দুই বোনই বাড়িতে ছিলেন। পরিচয় দিতে যথেষ্ট আপ্যায়ন করে ভিতরেরে ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালেন। তারপর চিঠিটা আমার হাতে দিলেন। খামের মুখ ছিঁড়ে পড়তে শুরু করলাম। 

              “ ভাই পুষ্কর,  আমার প্রাণভরা আশীর্বাদ নিও। অনেকদিন তোমাদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি। বোন প্রণতি ও বাবুসোনাকে আমার স্নেহাশীষ দিও। মাঝে মাঝে তোমাদের সবাইকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে। কলকাতা এলে একবার দেখা কোরো। 

  তুমি তো লেখালেখি কর। একবার  তোমার একটা বই আমাকে গিফট করেছিলে। বেশ লেখা। আমার  কয়েক জন  ভাই- বোন আছে ,তুমি তো জান। তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার অকালে এই পৃথিবী ছেড়ে চলেও গেছে। তবে আমার স্মৃতিতে তারা আগের মতই আছে। মুশকিল হল, আজকাল অনেককিছু মনে রাখতে পারি না। ভয় হয়- আর কিছুদিন পরে তাদেরকে যদি  তেমন ভাবে আর খুঁজে না পাই! আমার স্মৃতিপটে  উজ্বল হয়ে থাকা মুখগুলি  ক্রমশ ধূসর হতে হতে একসময়  যদি হারিয়ে যায়! ক্যানভাস থেকে রঙ্গীন ছবি ধীরে ধীরে  যেমন করে  বিবর্ন  হয়ে যায়, তেমন ভাবে! কিন্তু  আমি তো সেটা চাই না। কিভাবে সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখব এখন সেটাই আমার একমাত্র চিন্তা। ভাবতে  ভাবতে  তোমার কথা মনে হোলো।

     ডায়েরিতে  তাদের সমন্ধে কিছু কথা লিখে রেখেছি। যখন যেমন মনে পড়েছে তেমনই লিখেছি- অগোছালো, খাপছাড়া ভাবে।  তুমি  যদি সেগুলিকে একটু গুছিয়ে লিখে দাও তাহলে খুশি হব। তুমি অনেক বার তাদের কথা জানতে চাইতে। এর মধ্য দিয়ে তাদের সাথে তোমার পরিচয়  হয়ে যাবে।  হয়তো তোমার উপর চাপ হয়ে গেল। তবে আমার কোনো তাড়া নেই। তুমি সময় সুযোগ মত লিখো। ভাল থেকো। 

                                                 আশীর্বাদিকা  - ইরাবতী দি।“

 চিঠিটা পড়ে মন খারাপের মধ্যেও  কিছুটা  শান্তি পেলাম। ইরাবতীদি  আমাকে যে  কাজের ভার দিয়েছে সেটা আমি করব। আমি চিঠিটা ইরাবতীদির বোনেদের পড়তে দিয়ে ডায়েরিগুলো  চেয়ে নিলাম।  তারা খুশি মনে সেগুলো দিয়ে দিলেন। বললেন, ঠিক করে লেখার পর  যেন একবার দেখাই।  তাদেরকে কথা দিয়ে আমি ফেরার পথ ধরলাম।  

চলবে---    

লেখক : ছোটগল্পকার 

ছবি : সংগৃহীত

 

0 Comments

Post Comment