- 08 November, 2021
- 0 Comment(s)
- 534 view(s)
- লিখেছেন : অমর্ত্য বন্ধ্যোপাধ্যায়
দুটি আশ্চর্য শব্দ। অথবা শব্দবন্ধ। আজ এই দুটি শব্দবন্ধকে নিয়েই আমাদের আলোচনা। দুজন মানুষকে নিয়ে আমাদের আলোচনা। নারী বিজ্ঞানীদের বিষয়ে এই আলোচনাপর্বের শেষ লগ্নের দিকে যতই এগিয়ে চলেছি, ততই ফিরতে চেয়েছি মাটির কাছাকাছি, অথবা মহাকাশের দিকেই। অনেক আগে যখন খনা অথবা সোফিয়া ব্রাহের ইতিহাসকে নিয়ে নাড়াচাড়া করেছি, অথবা আলোচনা করেছি মেরি এ্যানিংয়ের গবেষণাকে নিয়ে – তখনই বারংবার উপলব্ধি করেছি, বিজ্ঞানের আসল সত্য নিহিত রয়েছে প্রকৃতিতে। অথবা নিহিত রয়েছে মহাকাশের বিস্তীর্ণতায়। আজ যে দুজনের কথা বলবো, একজন পেশাগত ভাবে লেখক – এবং পদার্থবিদ, অন্যজন মেরিন বায়োলজিস্ট, কিন্তু তিনিও বই লিখেছেন। মানুষ এবং প্রকৃতির সম্পর্কের কথা লিখেছেন। প্রথমজন আবিষ্কার করেছেন নক্ষত্র-সংকেত বা পালসারের প্রথম ইঙ্গিত। মহাবিশ্বকে ছাপিয়ে সুদূরের চেয়েও সুদূরের অভিলাষে ভেসে চলা আমাদের জীবনকে এক আশ্চর্য ব্যঞ্জনায় উদ্দীপ্ত করেছেন। মাটি থেকে বিজ্ঞানের আলোচনাকে শুরু করেছিলাম। ক্রমশ মহাকাশ ছুঁয়ে এসে উন্মুক্ত প্রকৃতিতেই তা বিস্তৃতি লাভ করুক।
গোড়াতে এই পালসারের সংকেত সম্পর্কেই দু’চারকথা বলে নেওয়া যাক বরং। বিরল একেকটি মহাজাগতিক ঘটনার কারণে যখন মহাকাশের কোনও প্রান্তে কোনও নিউট্রন স্টার বা নিউট্রন নক্ষত্রের উদ্ভব ঘটে, তখন তার চৌম্বকীয় মেরুদ্বয় থেকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের উৎপত্তি হয়। এই তরঙ্গকে নিয়মিত ব্যবধানের স্পন্দনের মতো পৃথিবীর একেকটি রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে নির্ণয় করা যেতে পারে। একই প্রকারের তরঙ্গ শ্বেত বামন নক্ষত্র বা হোয়াইট ডোয়ার্ফ গোত্রের নক্ষত্রগুলি থেকেও উদ্ভূত হতে পারে। নিয়মিত ব্যবধানের স্পন্দন বা পালসেটিং তরঙ্গ বলেই এর নামকরণ করা হয় পালসার। এই পালসারের প্রথম আবিষ্কারের যে গল্প, সেই কথাই আজকে শোনাব।
জোসেলিন বেল বার্নেল, জন্ম ১৫ই জুলাই, ১৯৪৩। ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো থেকে বিএসসি, ১৯৬৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ থেকে পিএইচডি। পিএইচডি সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট পদার্থবিদ এ্যান্থনি হিউইশ। এই হিউইশের সঙ্গেই পিএইচডির কাজের অঙ্গ হিসেবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জোসেলিন এবং আরেক ছাত্র মার্টিন রাইল যৌথ ভাবে একটি রেডিও টেলিস্কোপ তৈরি করেন। ১৯৬৭ সালে ইন্টারপ্ল্যানেটারি স্কিনটিলেশন এ্যারে নামের ওই টেলিস্কোপটি কাজ শুরু করে। ৬ই আগষ্ট, ১৯৬৭ – ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড়ান জোসেলিন। রেডিও টেলিস্কোপের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক সম্পূর্ণ নতুন তরঙ্গের উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত হন। সুপারভাইজার হিউইশ অবশ্য এই তরঙ্গকে মোটেই মহাজাগতিক আবিষ্কার বলে স্বীকার করতে চাননি। তাঁর বক্তব্য ছিল এই তরঙ্গ আসলে মানুষের কীর্তিকলাপ-জনিত কোনও কারণে সৃষ্ট অবান্তর শব্দ মাত্র। জোসেলিন হাল ছাড়েননি। ২৮শে নভেম্বর, ১৯৬৭তে তিনি পরীক্ষামূলক ভাবে দেখান, নতুন এই তরঙ্গটি আসলে স্পন্দনের মতোই বারে বারে ফিরে আসছে; এবং প্রতিটি স্পন্দনের মধ্যেকার ব্যবধান ১.৩৩ সেকেন্ড। তবে কি মহাকাশের অন্যপ্রান্তেও আছে প্রাণ ? শেষোক্ত প্রশ্নটির মধ্যে লুকিয়ে থাকা রহস্যের লোভনীয় উষ্ণতাতেও জোসেলিন গা ভাসাতে চাননি। বা পারেনওনি বোধহয়। কারণ, ২১শে ডিসেম্বর, ১৯৬৭ – জোসেলিন বেল আবিষ্কার করেন দ্বিতীয় একটি পালসার তরঙ্গকে, এবং তিনি প্রমাণ করেন এই ঘটনার নিঃসন্দেহে কোনও নির্দিষ্ট মহাজাগতিক ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু পালসারের এমন আবিষ্কার সত্ত্বেও স্বীকৃতির পাল্লাতে পিছিয়ে পড়েন জোসেলিন। মেয়ে বলেই ?
১৯৭৪ সালে পালসার আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিদ্যার নোবেলে সম্মানিত হন এ্যান্থনি হিউইশ এবং মার্টিন রাইল। নাম বাদ পড়ে জোসেলিনের। জোসেলিন বলেছিলেন, “পিএইচডির সময় ছাত্রের ভুলভ্রান্তির দায়িত্ব যেমন অনেক ক্ষেত্রেই সুপারভাইজারকে মাথা পেতে নিতে হয়, তাহলে গবেষণার যে সাফল্য তারই বা সিংহভাগটুকুই, তখন সেই সুপারভাইজারেরই কৃতিত্বে পড়বে না কেন ?” কিন্তু পাশাপাশি তিনি এও বলেছিলেন, যে হিউইশ প্রথমে পালসার তরঙ্গকে একদিন মানুষের কীর্তিকলাপ-জনিত কোনও কারণে সৃষ্ট অবান্তর শব্দ মাত্র বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন – সেই হিউইশই পরবর্তীতে দিনের পর দিন মার্টিন রাইলের সঙ্গে এই তরঙ্গের আবিষ্কার ও তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, মিলিত হয়েছেন – কিন্তু সেই সমস্ত মিটিংয়ের একটিতেও ডাক পাননি জোসেলিন। মেয়ে বলেই?
এমনকী পালসার আবিষ্কারের পরবর্তীতে, যখন সেটি আন্তর্জাতিক মহলে আলোচ্য বস্তু হয়ে উঠল – জোসেলিন বলেছিলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে যখন তাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হত সেই সময় পদার্থবিদ্যা সংক্রান্ত জটিল সমস্ত প্রশ্নগুলি কেবল অধ্যাপক হিউইশের জন্যই নির্ধারিত থাকত। জোসেলিনকে জিজ্ঞেস করা হত তাঁর চুলের রং, তাঁর জামার পছন্দ এমনকি তাঁর পুরুষবন্ধুদের সম্পর্কে। ছবি তোলার সময়েও জোসেলিনকে অনুরোধ হত জামার উপরের দিককার দুয়েকটি বোতামকে খুলে বসার জন্য। ২০২০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক সেমিনারে জোসেলিন নিজেই তাঁর এই সমস্ত অভিজ্ঞতার কথা শ্রোতাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন। আমরা যে এখনও মেয়েদেরকে মানুষ বলে ভাবতে শিখিনি, বিজ্ঞানী তো অনেক ভারী শব্দ বোধহয়।
বর্তমানে জোসেলিন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অতিথি অধ্যাপক পদে রয়েছেন। তাঁর দীর্ঘ জীবনে তিনি শিক্ষকতা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব সাউথহ্যাম্পটন, ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, এবং ইউনিভার্সিটি অব বাথের মতো একেকটি প্রতিষ্ঠানে। তাঁর তত্ত্বাবধানেই হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের নামাঙ্কিত রেডিও টেলিস্কোপটি তৈরি করা হয়েছে। ২০১৮ সালে জোসেলিন বেল বার্নেল স্পেশাল ব্রেকথ্রু প্রাইজ ইন ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্সে সম্মানিত হন। এই পুরষ্কারের অর্থমূল্য প্রায় তিন মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। জোসেলিন এই প্রাপ্ত অর্থের সমস্তটুকুকেই ‘সংখ্যালঘু, শরণার্থী ও নারী’ গবেষকদের পদার্থবিদ্যায় গবেষণার সাহায্যার্থে নির্মিত একটি ফান্ডে দান করেন। জোসেলিনরা এভাবেই অস্তিত্বময়ী হয়ে বেঁচে থাকেন, একার মধ্যে নয় – অনেকের মাধ্যমেই।
... ফিরে আসব র্যাচেল কারসনের জীবনে। জন্ম ১৯০৭, মৃত্যু ১৯৬৪। পেশাগত ভাবে পরিবেশকর্মী ও মেরিন বায়োলজিস্ট। দ্য সি এ্যারাউন্ড আস, দ্য এজ অব দ্য সি, সাইলেন্ট স্প্রিং – তাঁর তিনটি বই, সমুদ্র ও পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে এক দিগন্তকে উন্মোচন করে। ১৯৬২তে প্রকাশিত সাইলেন্ট স্প্রিং গ্রন্থে তিনি লিপিবদ্ধ করেছিলেন, কিভাবে রাসায়নিক সমস্ত কীটনাশক ও অন্যান্য বস্তু সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। এর আগেও ছিল সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে নিয়ে তাঁর দীর্ঘ গবেষণার ইতিহাস।
ছোটবেলায় ভালোবাসতেন হারমান মেলভিলের সমস্ত এ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস পড়তে, যার অনেকগুলিতেই পটভূমি ছিল উত্তাল সমুদ্র। পেনসিলভেনিয়া কলেজ, বর্তমানে চ্যাথাম ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পড়তেই ইংরেজি থেকে বায়োলজিতে নিজের মেজর্স বা মূল পাঠ্য বিষয়কে বদলে নেন র্যাচেল। ক্রমশ মেরিন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে একটি সামার কোর্স সম্পন্ন করার পর, ১৯২৯ সালে জন হপকিনস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন কারসন। ১৯৩২ সালে তিনি জুলজিতে মাস্টার্স করেন। ১৯৩৫এ আমেরিকার বুকে নেমে আসে ভয়াবহ এক অর্থনৈতিক মন্দার ভ্রুকুটি। র্যাচেল কারসন তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়ে চাকরি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এইসময় ব্যুরো অব আমেরিকান ফিশারিজের তত্ত্বাবধানে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর ৫২টি পর্বের একটি রেডিও অনুষ্ঠানের ভাষণ লিখে দেওয়ার জন্য তাঁর ডাক পড়ে। র্যাচেলের জীবনে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর তথ্যমূলক সাংবাদিকতা ও গবেষণার এই প্রথম সূত্রপাত। এরপর একের পর এক সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রে সমুদ্র ও সেই সমুদ্রের নীচেকার জীবন সম্পর্কে তিনি প্রবন্ধ প্রকাশ করতে শুরু করেন। এরই সঙ্গে সঙ্গে ১৯৩৬ সালে তিনি মার্কিন সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় বসেন। সসম্মানে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে র্যাচেল কারসন দ্বিতীয় মহিলা হিসেবে পূর্ণ সময়ের জন্য ব্যুরো অব আমেরিকান ফিশারিজের জুনিয়র এ্যাকোয়াটিক বায়োলজিস্টের পদে নিযুক্ত হন। আটলান্টিক মান্থলি, সান পত্রিকা, নেচার, এবং কলিয়ার্স-সহ একাধিক নামী পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে শুরু করে। সাইমন এ্যান্ড শুস্টারের মতো প্রকাশনা সংস্থা তাঁর বই প্রকাশের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়। ১৯৪৫ সালে লেখালিখির কাজে ব্যস্ততার কারণেই ব্যুরো অব আমেরিকান ফিশারিজের পদ থেকে সরে আসার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেন র্যাচেল কারসন। যদিও সেই সময় মেয়েদের পক্ষে মেরিন বায়োলজি বা এমন কোনও একটি বিষয়ে চট করে নতুন কোনও একটি কাজ খুঁজে নেওয়া – তৎকালীন আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মোটেই সহজ ব্যাপার ছিল না। এই সময়েই কারসন ডিডিটি ও তার ক্ষতিকারক দিকগুলিকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
১৯৫০ সালে প্রকাশিত হয় র্যাচেলের প্রথম বই, ‘দ্য সি এ্যারাউন্ড আস’। ১৯৫২ সালে বইটি নন-ফিকশন বিভাগে ন্যাশনাল বুক এ্যাওয়ার্ডসে সম্মানিত হয়। এর কিছুদিন পরেই পুরোপুরি ভাবে নিজেকে লেখার কাজে নিযুক্ত করবেন বলে র্যাচেল কারসন সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয় কারসনের সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’। পরিবেশের উপরে ডিডিটির ক্ষতিকারক প্রভাবের বিষয়ে বইটিতে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন। দেশজুড়ে তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বড় বড় রাসায়নিক সংস্থাগুলি র্যাচেলের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়ে ওঠে। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে মামলারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি আল গোরের ভূমিকা সম্বলিত ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’য়ের একটি বিশেষ সংস্করণও সারা বিশ্ব জুড়ে সমাদর লাভ করে। এই ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের কারণেই শেষ অবধি মার্কিন আইনপ্রণেতারা সেদেশে ডিডিটির ব্যবহার বন্ধে সক্ষম হন। র্যাচেলের প্রয়াণের পর মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার তাঁকে মরণোত্তর প্রেসিডেন্টস মেডেল অব ফ্রিডমে সম্মানিত করেন।
কৃত্রিম ও রাসায়নিক কীটনাশকের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন এই র্যাচেল কারসন। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ই. বি. হোয়াইট র্যাচেলের এই সংগ্রামে সতীর্থ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। নিজের উদ্যোগে র্যাচেল এ’সমস্ত কীটনাশকগুলির ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে নিয়ে যাঁরা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে গবেষণা করছেন, এমন সমস্ত গবেষক ও বৈজ্ঞানিকদের এক মঞ্চে তুলে আনতে সচেষ্ট হন। সারাজীবন পরিবেশকে বাঁচাতে, কৃত্রিম জীবাণুনাশকের বিরুদ্ধে মতামত গড়ে তুলতে, এমন সমস্ত জীবাণুনাশক ব্যবহারের জন্য পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তাকে কার্যত বায়োসাইড বলে চিহ্নিত করেন র্যাচেল। ডিডিটির ক্ষতিকারক দিকগুলির সম্পর্কে তিনি রীতিমতো সংখ্যার প্রমাণ দিয়ে তার ভয়াবহতাকে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের জন্য তাঁর এই লড়াই আজীবন জারি ছিল। ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’য়ের শেষদিককার কাজকর্ম চলতে চলতেই ক্যানসারে আক্রান্ত হন কারসন। তবু রোগশয্যাতে শুয়েই তিনি তাঁর এই বইটির শেষ মুহূর্তের সমস্ত কাজকর্ম চালিয়ে যান। ১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধে হার মানেন র্যাচেল কারসন।
চুপ করে বসে থাকতে থাকতেই, দূরে কোথাও যেন শুনতে চেষ্টা করি নক্ষত্র-সংকেত ও বসন্তের নীরবতা।একদিকে উন্মুক্ত মহাকাশ, অন্যদিকে বিস্তৃত মহাসাগর। দুয়ের মাঝখানে আমরা যেন এক অনন্ত যাত্রাপথের সোয়ারি। যে সমুদ্রে ঢেউ ওঠে, যে কালসাগরে তরঙ্গেরা হারিয়ে যায়। দুই কিংবা তিন থেকে শুরু করে আরও অজস্র এমন মহীয়সীর গবেষণা, অনুসন্ধিৎসুতা এবং পরিশ্রমের কারণেই পৃথিবী ও মহাকাশের আরও, আরও সুন্দর একেকটি রূপ আমাদের সামনেটায় ফুটে ওঠে। এসব গল্প তো কোনওদিন শেষ হতে পারে না। কাচের দেওয়াল তো পার্থিব জড়বস্তু কেবল।
... মহীয়সীদের গণ্ডি এখন সাগর থেকে আকাশে, মহাদেশ থেকে মহাকাশে বিস্তৃতি লাভ করেছে – আমরা সেই উত্থানকেই কুর্ণিশ করি কেবল।
(বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অর্হিত ঘোষ)
সূত্রঃ
[১] ভিকি এ্যালান, ‘ফেস টু ফেসঃ সায়ান্স স্টার হু ওয়েন্ট আন্ডার দ্য রাডার অব নোবেল প্রাইজ জাজেস’, দ্য হেরাল্ড, গ্লাসগো, জানুয়ারি, ২০১৫
[২] জোয়ান ব্ল্যাকওয়েল, ‘ইন্টারভিউ উইথ জোসেলিন বেল বার্নেল’, বিলিফ, বিবিসি, নভেম্বর, ২০১০
[৩] জন পল, ‘দ্য র্যাচেল কারসন লেটার্স এ্যান্ড দ্য মেকিং অব সাইলেন্ট স্প্রিং’, সেজ ওপেন, ২০১৩
[৪] লিন্ডা লিয়র, ‘র্যাচেল কারসনঃ উইটনেস ফর নেচার’, নিউইয়র্ক, হেনরি হোল্ট, ১৯৯৭
0 Comments
Post Comment