প্রেমকথা

  • 06 July, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 1379 view(s)
  • লিখেছেন : অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
বিসমকামী প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্যসম্পর্কের ব্যাপারে কী ভাবে বর্তমান প্রজন্মের মেয়েরা? এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে অতি সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। ১৮ থেকে ২৫— এই বয়সসীমার মধ্যে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মূলত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া মেয়েদের মনের গহনে অভিযান চালানোর চেষ্টা হয়েছিল।

বর্তমান প্রজন্মের মেয়েরা বিসমকামী প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্যসম্পর্কের ব্যাপারে কী ভাবে? প্রেমিকের বা স্বামীর কাছে তাদের প্রত্যাশার ধরনটা কী রকম? বিয়ের পাত্রের মধ্যে দেখতে চায় কোন কোন গুণ? এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমি সম্প্রতি ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি ক্ষেত্রসমীক্ষা করেছিলাম। ১৮ থেকে ২৫— এই বয়সসীমার মধ্যে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মূলত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া মেয়েদের মনের গহনে অভিযান চালাতে চেষ্টা করেছিলাম। ৭০ জনের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলাম একটি করে প্রশ্নপত্র। তাদের উত্তরের সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকে কতগুলি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ৭০ জনের মধ্যে ৫২ জনই বিয়ে করতে স্পষ্টভাবে আগ্রহী। ৭ জন আগ্রহী নয় এবং বাকি ১৩ জন এই বিষয়ে এখনো কিছু ভাবেনি। ৫০ জন উত্তরদাতা পারিবারিক উদ্যোগে বিয়ে বা arranged marriage-এর থেকে প্রেমজ বিয়ে বা love marriage বেশি কাম্য মনে করে। তবে ৫৮ জন মনে করে যে প্রেমজ বিবাহের ক্ষেত্রেও অভিভাবকের অনুমোদন জরুরী। ৭০ জনের মধ্যে মাত্র ১৭ জন জানিয়েছে অভিভাবকের অনুমোদন না থাকলেও তারা পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে পিছপা হবে না। ৩৭  জানিয়েছে যে সম্বন্ধ করে বিয়ে করতে হলে তারা অন্য সম্প্রদায় বা জাতে বিয়ে করবে না। ৩২ জন মনে করে যে জীবনসঙ্গীর উপার্জন বেশি হলেই তা মানানসই হবে। ৩১ জন মেয়েদের বয়সে বড় পাত্র পছন্দ। প্রেমিক বা বিয়ের পাত্র বয়সে ছোট হলে বাকিদের কোন আপত্তি নেই। সঙ্গী শিক্ষার মানে পিছিয়ে থাকলেও ৪০ জনের আপত্তি নেই। ৭০ জনের মধ্যে ৩৯ জনের বিয়ের আগে সহবাসে আপত্তি নেই। ৫১ জন মনে করে মেয়েরা যৌনসম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগ নিলে সেটা অশোভন কিছু নয়। মাত্র ২৪ জন মনে করে একসঙ্গে বা কাছাকাছি থাকাটা প্রেম বা দাম্পত্যের স্বাস্থ্য ও স্থায়িত্বের জন্য খুব জরুরী। ভৌগোলিকভাবে বিছিন্ন থাকলে সম্পর্ক বেশিদিন টেকে না। বাকিদের মনে হয় না ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে সম্পর্ক বিপন্ন হতে পারে। পুরুষের প্রেমের ওপর এই প্রজন্মের মেয়েদের যথেষ্ট আস্থা। অন্তত সমীক্ষা তাই বলে। ৩৪ জন বিশ্বাস করে না পুরুষেরা মেয়েদের থেকে বেশি প্রতারণাপ্রবণ। তারা মনে করে না পুরুষ নারীর মনের থেকে শরীরে বেশি আগ্রহী। মাত্র ২১ জন মনে করে যে মেয়েরা প্রেমের ক্ষেত্রে বেশি সৎ, গভীর।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, পাত্র বা স্বামীকে উপার্জন বা শিক্ষাগত মানের দিক থেকে এগিয়ে থাকতে হবে এই ধারণা এখন পুরনো হয়ে গেছে। বিবাহপূর্ব যৌনতা সম্বন্ধে এই প্রজন্মের মেয়েরা ছুৎমার্গ অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। পুরুষের প্রেমের ওপর তারা আস্থা হারায়নি। তবে অভিভাবকের আপত্তি থাকলে অনেকেই সম্পর্কে  প্রবেশ করতে চায় না। জাতি বা সম্প্রদায়গত ভেদকে তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যেতে রাজী নয় বেশির ভাগ জন। সঙ্গীনির্বাচনের ক্ষেত্রে অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণ এখনো মেয়েরা অনেকেই কাম্য মনে করে। সব মিলিয়ে একটি দ্বন্দ্বজর্জর ভাবজগতের দিকে অঙুলিনির্দেশ করে এই সমীক্ষা। স্পষ্টতই, প্রেম, বিয়ে প্রভৃতির ব্যাপারে সমাজের বিধি-নিষেধগুলো আমাদের মনোভূমিকে এখনো অনেকটাই দখল করে রেখেছে।

তবে সোশ্যাল মিডিয়া এই প্রজন্মের মেয়েদের প্রেমের ধারণায় এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের বার্তা দেয়। প্রেমিকের সঙ্গে কাটানো নিবিড় সান্নিধ্যের মুহুর্তের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে আজকের মেয়েরা লজ্জা পায় না।  বিচ্ছেদ— আজকের ভাষায় ব্রেক-আপ— ঘোষণা করতেও কোনও দ্বিধা নেই। প্রেম তাই আর ব্যক্তিগত, গোপন বিষয় নয়। গোপনীয়তার সঙ্গের প্রেমের বিযুক্তি ঘটেছে। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া বহু সম্পর্কের জন্ম দেয়, এবং শুধু প্রবঞ্চনা নয়, জঘন্য সব অপরাধের রাস্তা খুলে দেয়।  

পুনঃপ্রকাশ। প্রথম প্রকাশ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 

প্রতীকী ছবি

লেখক  : অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক

0 Comments

Post Comment