- 23 June, 2020
- 1 Comment(s)
- 1043 view(s)
- লিখেছেন : সিউ প্রতিবেদক
একবছর সাত মাসের ছেলে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হন রোজিনা। স্বামী নাজির মোল্লার মৃত্যুর পর শ্বশুরের বসতবাড়ি, কৃষিজমি কোনটাতেই রোজিনা ও তাঁর ছেলের আর অধিকার রইল না। মুসলিম উত্তরাধিকার সম্পত্তির এই আইন এখনও ভারতে চালু আছে। তাই রোজিনাদের উচ্ছেদ হতে হল।
২০১৪ সালে বাঁকুড়া জেলার চাবড়া গ্রামের রোজিনার বিয়ে হয় বর্ধমানের রঘুনাথপুর গ্রামের নাজিরমোল্লার সঙ্গে। স্বামী এমব্রয়ডারির কাজ করতেন। উচ্চমাধ্যমিক পাশ রোজিনার বিয়ের সময় পণ লাগে নগদ একলাখ টাকা, মোটর সাইকেলের টাকা, সাড়ে তিনভরি সোনা। এছাড়াও খাট, বিছানা পত্র, আলমারি, যাবতীয় আরও অনেক কিছু। সবই শ্বশুরবাড়ির দাবি মেনে। কিন্তু ২০১৭ সালে স্বামীর মৃত্যুতে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। রোজিনা বললেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশটা দিন কাটেনি। ওরা আমাকে তাড়ানোর জন্য এমন অত্যাচার শুরু করল। ছোট বাচ্চা নিয়ে কোথায় ঠাঁই পাবো? বাপ, ভাইয়ের ওপর দায়িত্ব চাপাতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। আমার বাচ্চাটা তো ওই বাড়িরই ছেলে। ওদের অনেকগুলো ঘর আছে। একটা ঘরে ছেলে নিয়ে থাকতে চাইলাম। তাও দিল না। শ্বশুর-শাশুড়ি, দুই ভাশুর জানিয়ে দিল, শরিয়ত মতে কোন কিছুর দাবি করতে পারব না।’ স্বামী হারানোর শোক সামলানোরও সময় দিল না রোজিনাকে। ফিরে আসতে হল বাবার কাছে।
তবে রোজিনা হাল ছাড়েননি। কোলের শিশুর জন্য একটু সম্পত্তি লিখে দেওয়ার আর্জি নিয়ে বারবার শ্বশুরের কাছে আবেদন জানাতে গিয়েছেন। চেয়েছেন ওখানেই থাকতে। কিন্তু পারেননি। যে ঘরে স্বামীর সঙ্গে বাস করতেন সেই ঘরটাও শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যরা ব্যবহার করছেন। স্মৃতিটুকু ঝালিয়ে নেওয়ার অধিকারও তাঁর আর নেই। অত বড়ো বাড়িতে থাকার জন্য এক টুকরো কোণও মা-ছেলের জোটেনি। গ্রামের মানুষ কয়েক দফায় রোজিনার ছেলেকে একটা ঘর আর একটু সম্পত্তি লিখে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। তাতেও কোন সুরাহা হয়নি। দু বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে রোজিনা এবার দেশের আইনের আশ্রয় নিলেন। মুসলিম সম্পত্তি আইনের বৈষম্যে ঘা খেয়ে খেয়ে ওই ছাব্বিশ/সাতাশ বছরের রোজিনা এখন এক লড়াকু চরিত্র। বললেন, ‘আমি ওই বাড়ির বউ। আমার ছেলে ওদের বংশের। ওরা আমাকে অত্যাচার করে তাড়িয়ে দেবে কেন? আমি বাঁকুড়ার উণ্ডা থানাতে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ জানিয়েছি। ভাশুরকে ধরেছিল। শ্বশুরকেও ধরতে পারে। তবু ওরা বলছে, আমাদের কিছুই করতে পারবে না। মুসলিম আইন ওদের পক্ষে বলে? এখন ধর্ম দেখিয়ে ভিটে-মাটি কেড়ে নিচ্ছে, পণ নেওয়ার সময় ধর্ম কোথায় ছিল?’
পণের জিনিস সবই শ্বশুরবাড়িতে রয়েছে। একলাখ টাকাও শ্বশুরের হাতেই দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো সব হাতছাড়া। রোজিনা ছোট বাচ্চাদের পড়িয়ে কিছু উপার্জন করছেন। আর শেলাই শিখছেন। ছেলেটার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে। আর ভাবছেন যেভাবেই হোক জোরালো একটা কেস ঠুকবেন উচ্ছেদ করে দেওয়া এই মুসলিম সম্পত্তি আইনের বিরুদ্ধে।
ছবি : প্রতীকী
1 Comments
Rejaul Haque
08 July, 2020
Make a strong platform against the law, Demand uniform civil code, uniform inheritance of property law abolishing shariot law.
Post Comment