- 08 August, 2021
- 0 Comment(s)
- 705 view(s)
- লিখেছেন : আফরোজা খাতুন
আগস্টের ১ তারিখ মুসলিম নারী অধিকার দিবস পালন করা হল । কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নাকভি মনে করছেন, ১ আগস্ট দেশের মুসলিম মেয়েরা তাৎক্ষণিক তিন তালাক থেকে মুক্তি পেয়েছে। এই দিনটি তাই ‘মুসলিম মহিলা অধিকার দিবস’ হিসেবে পালিত হবে। কারণ ভারতের গণতন্ত্রে নাকি মুসলিম মেয়েদের প্রতি ন্যায় বিচারের এটা একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ২০২০ সালের ১ আগস্টও ভারচুয়াল মাধ্যমে এই দিনটির গুরুত্ব নিয়ে তিনি বক্তৃতা করেন। দেশের নানা প্রান্তের প্রায় সাতশো নারী অধিকার- রক্ষা কর্মী মুক্তার আব্বাস নাকভির বক্তব্যের বিরুদ্ধে লিখিত নিন্দা জানান।
তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার আইন প্রণয়ন করে ১ আগস্ট ২০১৯ সালে। ২২ আগস্ট ২০১৭, কয়েকজন তালাক প্রাপ্ত মহিলা এবং কিছু নারী সংগঠনের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাৎক্ষণিক তিন তালাককে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে। সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক তিন তালাক রদ করার অজুহাতে যে আইন করল তা মুসলিম পরিবারকে নানাদিক থেকে বিপদের মুখে দাঁড করিয়েছে। মুসলিম নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার অজুহাতে সুকৌশলে মুসলিম পুরুষদের কারাগারে পাঠানোর আইন বানিয়ে ফেলেছে। কারাগারে বন্দি- স্বামীর পরিবারের জীবনধারণের যুক্তিসম্মত কোন আইনি ব্যবস্থার স্পষ্ট রূপ সরকার দেয়নি। জেল ফেরত স্বামীর সঙ্গে তালাক পাওয়া স্ত্রীর সম্পর্ক পূর্বের অবস্থায় থাকবে না হালালা বিয়ের মাধ্যমে ফিরতে হবে তা উল্লেখ নেই। স্বামী জেল থেকে ফিরে যদি স্ত্রীর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আর একটি বিয়ে করে তখন কীভাবে প্রতিরোধ হবে তা জানা যায়নি। তাৎক্ষণিক তিন তালাক যদি অসাংবিধানিক, অবৈধ হয় সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী এবং সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তা বাতিল হয় তবে এত জটিলতা তৈরির কারণটাও স্পষ্ট। যে তালাক গ্রাহ্য হবে না বলে জানান হয়েছে সেই তালাককে কেন্দ্র করেই পরিবারকে পথে বসানোর ব্যবস্থা পাকা করেছে সরকার। অসাংবিধানিক হওয়া স্বত্বেও কেউ যদি তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিয়ে স্ত্রীকে বের করে দিতে চান তাহলে গার্হস্থ্য হিংসা আইনেই তো এই অপরাধের বিচার হতে পারত। অথচ সে পথ খোলা রাখেনি সরকার। মুসলিম বিদ্বেষ থেকেই তৈরি হয়েছে মুসলিম মহিলা ( প্রটেকশান অফ রাইটস অন ম্যারেজ) বিল ২০১৯। আর এই বিদ্বেষ- বিলের সুখ্যাতি করতে, তাকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকারিভাবে পালন হচ্ছে ১ আগস্ট ’মুসলিম মহিলা অধিকার দিবস’। এখানেই অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের বিরোধিতা।
এনএরসি, সিএএ করার উদ্দেশ্য মুসলিম তাড়ানো। দেশের একজন বিজেপি সাংসদের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে। তাঁদের বক্তব্য উনি বাংলাদেশের। তার উত্তরে এক বিজেপি নেতা বলেন, উনি হিন্দু। এদেশের নাগরিকত্ব তো পাবেনই। এই তো হিন্দুত্ববাদীদের চরিত্র। মুসলিম বিদ্বেষ তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দাঙ্গাবাজদের আশ্রয় দিয়ে দায়িত্বশীল নাগরিকদের জেলে ভরে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করে নাগরিকদের মন বিষিয়ে তোলে। মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করতে যাদের বাধে না, তাদের মুখে মুসলিম মহিলা অধিকার দিবসের ভাষণ! এই চরম প্রহসনের বিরুদ্ধেই অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা সক্রিয়।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্মী
ছবি : সংগৃহীত
0 Comments
Post Comment