অভিভাবকরাই মেয়েদের সর্বনাশ করে

  • 20 July, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 702 view(s)
  • লিখেছেন : সাবিয়া খাতুন
মেয়েটি ভাবতে থাকে, মৌলানারা যেহেতু এই তালাককে তালাক বলছেন কিন্তু ভারত সরকার তাৎক্ষণিক তিন তালাক ব্যান করেছে, তাহলে? আইনি সাহায্য নিয়ে স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়েও তো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। স্বামী আর একটি বিয়ে করতে পারে। কারাগার থেকে বেরিয়ে সেই মৌখিক তালাকেই আমাকে তাড়িয়ে দিতে পারে। কোথায় আমার আশ্রয়? 

আমার নিকট বন্ধু ছিল সেই মেয়ে (নাম প্রকাশে তার আপত্তি আছে)। কলেজে পড়াকালীন বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিল। জানাশোনা লোকের বাড়িতেই মেয়ে যাবে তাই ছেলের সম্বন্ধে বেশি খোঁজ নেওয়ার দরকার মনে করেনি বাড়ির লোক। চটপট পার করে ফেলো, মেয়েমানুষ মানেই ঝেঁটিয়ে যত তাড়াতাড়ি বিদেয় করতে পারো তত ভালো। বিয়ের পর  মেয়েটি জানতে পারে তাঁর স্বামীর প্রেমিকা আছে। স্বামী সেকথা স্বীকার করেছে এবং জানিয়ে দিয়েছে অভিভাবকের চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে। বিয়ে হলেও তাকে সে কোনদিন মেনে নিতে পারবে না। সারাজীবন একসঙ্গে থাকার প্রশ্নও ওঠেনা। যার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক সেই তার জীবনে ভবিষ্যতে স্থায়ী হবে। মেয়ে তো কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরলো। বাড়ির লোক সব শুনেও মেয়েকে ফিরে যেতে বলে। কারণ ছেলেদের অমন একটু আধটু দোষ থাকে। আর সেটা না কি মেয়েদের মানিয়ে নিতে হয়। স্বামীর সংসারে  মন বসবে স্ত্রীর সেবা-ভালোবাসায়। তখন না কি তার স্বামী এই দোষ কাটিয়ে উঠবে।

অভিভাবকদের অভিমতকে মান্যতা দিয়ে মেয়ে চেষ্টা চালায় স্বামীকে কাছে টানার। এতে আরও বিপরীত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় সে। শতকষ্ট বুকে চেপে রেখে স্বামী ফেরতের লড়াই সেরে ক্লান্ত মেয়ে কিছুদিনের জন্য বাবার বাড়ি আসে। ইতিমধ্যেই ঘটে যায় সেই ঘটনা। তার স্বামী সেই প্রেমিকাকে বিয়ে করছে। আর মেয়েটিকে পাঠিয়ে দিয়েছে  তিন তালাক লেখা এক চিরকুট। সেই তিনতালাকের চিরকুট দেখে মেয়ের গ্রামের মৌলানারা বলল তালাক হয়ে গেছে। মেয়েটা ছুটলো উকিলের কাছে। উকিল বলল এই চিরকুটে নাম ঠিকানা নেই। তাই এটা তালাক বলে গৃহীত হবে না। মেয়েটি তখন উকিলকে বলল ঠিক আছে তবে আপনি একটা বয়ান রেডি করে দিন,সেই অনুযায়ী থানায় গিয়ে আমি কেস ঠুকে দিচ্ছি যাতে আমার স্বামীর অন্য বিয়েটা আটকে যায়। এই তালাক যখন তালাকই নয় তাহলে তো সে আমার সাথেই থাকবে নিশ্চয়। উকিল বলল, মা তুই মূর্খের স্বর্গে বাস করছিস,ওর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবি না,বিয়ে তো আটকাতে পারবিই না কারণ তোদের ধর্মে লেখা আছে ছেলেরা এক সঙ্গে চারটা বিয়ে করতে পারে। ও এই বিয়েটা করার আইনি অধিকার রাখে। মেয়েটি ভাবতে থাকে, মৌলানারা যেহেতু এই তালাককে তালাক বলছেন কিন্তু ভারত সরকার তাৎক্ষণিক তিন তালাক ব্যান করেছে, তাহলে? আইনি সাহায্য নিয়ে স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়েও তো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। স্বামী আর একটি বিয়ে করতে পারে। কারাগার থেকে বেরিয়ে সেই মৌখিক তালাকেই আমাকে তাড়িয়ে দিতে পারে। কোথায় আমার আশ্রয়? পিতা-মাতা আমাদের স্বাবলম্বী হওয়ার সময় না দিয়ে কেন এই সর্বনাশ করেন? 

 

লেখক : শিক্ষক, সমাজকর্মী 

ছবি : সংগৃহীত 

0 Comments

Post Comment