পরিচয়

  • 09 October, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 789 view(s)
  • লিখেছেন : রীনা মুখার্জী
একটি মেয়ে কোনও বাবা-‌মায়ের সন্তান, কারও বোন বা দিদি, কারও স্ত্রী, কোনও বাড়ির বধূ। তার পরিচয়ের আগে জুড়ে দেওয়া হয় ‘‌কারও’‌ বলে একটা শব্দ। এই শব্দটা ছাড়া এক মেয়ের পরিচয় খুঁজে বাঁচার লড়াই রয়েছে এই গল্পে।

সাতমাসের অন্তঃসত্বা ছোট বোনটা যখন বাবার বাড়িতে এল তখন শিউলির মা তাকে ডেকে বললেন—
ওরে বোনের জন্য একটা ব্যবস্থা কর। ডাক্তার ঠিক কর। নার্সিংহোম খোঁজ।
—মা তুমি বুঝতে পারছো না এখন এই এডভান্স স্টেজে ডাক্তার পাওয়া মুশকিল।
—তা কি আর করবি। একটা কিছু ভাব। তোর তো অনেক চেনা পরিচিতি। দেখ। ওখানে তো ডাক্তার দেখিয়েছে। ওই রিপোর্ট তো সব এনেছে। জামাই তো ওখানেই ডেলিভারি করাতে চেয়েছিল। হঠাৎ বদলি হল। বল কি করবি?

বৃদ্ধ বাবা আর মায়ের অসহায় মুখটা সেদিন শিউলিকে বাধ্য করল ডাক্তার খুঁজতে। অনেক  রেফারেন্স নিয়ে ডাক্তার জোগাড় করে নার্সিংহোম পর্যন্ত বুক করে নিল।

যেদিন মাঝ রাতে বোনটার ব্যথা উঠল সেদিন শিউলি একাই ওকে নিয়ে নার্সিংহোমে পৌঁছে গেল। এই ডিভোর্সি জীবনে বারবার অপমানিত হওয়া মেয়েটা কর্তব্য করে যেতে কখনো পিছু হটেনি। ট‍্যাক্সিতে বসে বারবার ছোট বোনকে সাহস দিচ্ছিল আর নিজের মেয়ে হবার দিনটা মনে করছিল। পায়ে হেঁটে হাসতে হাসতে গিয়েছিল শিউলি। বাবা আর মা সাথে ছিল কিন্তু ওদের কোনো কষ্ট দেয়নি শিউলি।

ছোট বোনটা আঁকড়ে ছিল শিউলির হাত। ওর বিয়ের সম্বন্ধ শিউলিই এনেছিল। ভাল ছেলে আর কলকাতার বাইরে থাকে। এককথায় বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। ছেলের বাড়িতে যেদিন সবাই আশীর্বাদ করতে গিয়েছিল সেদিন মা ডেকে শিউলিকে বারণ করে যেতে। সকলের সামনে  ডিভোর্সি মেয়েটাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠবে। বাবা মা লজ্জায় পড়ে যাবে। এমনকি শিউলির সাত বছরের মেয়েকেও নিয়ে গেল না। লোকে কী বলবে!

যথা সময়ে বোন একটি ফুটফুটে ছেলে কোলে করে বাবার বাড়িতে এল। এবার আতুর তোলার দায়। প্রথম কটাদিন ভাড়া করা মাসী এল। তারপর তার অনুপস্থিতিতে শিউলি হয়ে পড়ল আয়া মাসী। বাচ্চা ও মায়ের যত্ন করতে করতে পার করে দিল পাঁচটা মাস। ছয় মাসে অন্নপ‍্রাশন। আবার মায়ের আদেশে কটা দিন শিউলিকে মেয়ে নিয়ে ছুটি নিতে হল। লোকে কী বলবে?

আয়া সেন্টারের চাকরিটা পেয়ে শিউলি বেঁচে গেল। মেয়েকে মনের মতো করে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কাজ করে ক্লান্ত শরীরটা নিশ্চন্তে ঘুমায়। ভাড়া বাড়িতে আরো অনেকগুলো মাসীর সাথে আজ নিজের সঠিক পরিচয় করে নিয়েছে শিউলি।

সদ্য জন্মানো শিশুগুলোকে একটু বড় করতে সাহায্য করে। একবছরের কাছাকাছি হলে, কাজ পাল্টে যায়। মায়া পড়ে যায় আবার বাঁধন কেটে অন্য ঠিকানায় পৌঁছে যায়। এইভাবেই কাজ করে চলেছে শিউলি। এখন তো আর চিন্তা নেই। আয়া মাসী শিউলি। লোকে আর কি কিছু বলবে!!!

ছবি প্রতীকী

লেখক : ছোটগল্পকার, কবি, চিত্রশিল্পী

 

0 Comments

Post Comment