- 17 August, 2023
- 0 Comment(s)
- 1443 view(s)
- লিখেছেন : সফি মল্লিক
পর্ব-১
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে মেয়েদের বিরুদ্ধে যত সহিংসতা হয় তার মধ্যে মহিলাদের নিকট ব্যক্তি কর্তৃক হিংসা ও সেক্সুয়াল হিংসা সবথেকে জরুরি সমস্যা। অন্য এক রিপোর্টে হু জানিয়েছে প্রতি ৩ জন মহিলার মধ্যে ১ জন তাঁর সারা জীবনে অন্তত একবার হলেও হয় সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক / সেক্সুয়াল অথবা অন্য ব্যক্তি কর্তৃক সেক্সুয়াল হিংসার সম্মুখীন হন। এই হিংসার বেশিরভাগটাই নিকটজনদের কর্তৃক হয়। পৃথিবীর যত মহিলা খুন হন তার ৩৮% খুনই নিকট কোনও পুরুষ করে থাকে। পৃথিবী জুড়ে মহিলাদের উপর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য সম্ভাব্য উপায় হিসাবে যে ব্যাপক ভাবনা চিন্তা চলছে তার কেন্দ্রে আছে মহিলাদের ক্ষমতায়ন। মহিলাদের ক্ষমতায়ন মানে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সামাজিক ব্যক্তিত্ব বা ব্যক্তির ক্ষমতায়ন। এর কোনটাই একটার সঙ্গে অন্যটি বিচ্ছিন্ন নয়, সবগুলি পারস্পরিক সংযুক্ত। অর্থনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ বা নিয়ন্ত্রক হওয়া, উচ্চ শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্য, গড় আয়ু ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাপ কাঠিতে The World Economic Forum’s Global Gender Gap Report 2018 অনুযায়ী ভারতের অবস্থান ১৪২টি দেশের মধ্যে ১০৮তম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিভাগের আর একটি সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতে ১২.৮% জমি মেয়েদের দখলে আছে। মেয়েদের নামে থাকা আর মেয়েদের নিয়ন্ত্রণে থাকার মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ আছে। ভারতে ৮৮% জমির দখল পুরুষের অধিকারে থাকলেও উপরোক্ত জাতিসংঘের রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যাবে মানুষের অর্ধেক নারী ও অর্ধেক পুরুষ হিসাবে মূলত বিভক্ত হলেও সম্পত্তির অধিকারে নারীরা এখনও চরম বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্য গোটা পৃথিবী জুড়েই কম বেশি উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল, জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠী নির্বিশেষে আছে। মর্গানের তত্ব অনুসারে আদিম সমাজের মাতৃতান্ত্রিক অবস্থা থেকে সম্পদ সঞ্চয় ও উৎপাদনের পরিবর্তনের সাথে সাথে পিতৃতান্ত্রিকতা সমাজে জাঁকিয়ে বসেছে। এঙ্গেলসের মতে এই মাতৃতান্ত্রিকতা থেকে পরিবার, গোষ্ঠী, রাষ্ট্রের বিবর্তনের পর দেখা গেল নারী সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে গেছে।
মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাইলে মজবুত হওয়া দরকার পায়ের নিচের জমি আর সেই জমি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যের অধিকার যেমন সেই জমি গড়ে তুলতে সাহায্য করে, তেমনি সবার থেকে দরকারি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা তাঁর বাসস্থান, বাস্তুজমি ও কৃষিজমির উপর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ধর্মে, বর্ণে, গন্ধে অপরূপ বৈচিত্র্য সম্পন্ন ভারতে সম্পত্তিতে নারীদের প্রতি বঞ্চনাতেও কম বৈচিত্র্য নেই। এই বঞ্চনা শুধুই অতীতে রোপণ করা বীজের ফল নয়। আজ একবিংশ শতাব্দীতেও বঞ্চনা নানা রূপে টিকে আছে তার কারণ, আজও মানুষ নানাভাবে সেইসব বিষবৃক্ষের রোপণ ও ভরণপোষণ সমান তালে করে চলেছে। একদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখদের জন্য হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ১৯৫৬ আছে, মুসলিমদের জন্য আছে নিজস্ব পার্সোনাল আইন। হিন্দু আইনে বিবাহিত বা অবিবাহিত যেকোন ক্ষেত্রেই বোনেদের পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। মুসলিমদের আবার দুই ভগ্নী সমান এক ভ্রাতার পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে স্বীকৃত। আধুনিক পরিবার গঠন ও জীবনজীবিকার আমূল পরিবর্তন হলেও মুসলিম সমাজের মাথাদের এখনো নারী–পুরুষে ভেদাভেদ দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনে ভয়ানক আপত্তি। পরিবর্তিত সময়ে পরিবার ও পরিবেশের স্ট্রাকচার যেভাবে আমূল বদলে গেছে সেখানে একজন ভাই–বোন, স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে সম্পত্তিতে সহজ সরল সমানাধিকার প্রদান না করতে পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হবে। যেহেতু মুসলিম পারিবারিক আইনের কেন্দ্রে ইসলামিক আইডেন্টিটি আছে, তাই মধ্যযুগ থেকে চলে আসা প্রচলিত অন্যায় বা অন্যায্য রীতিকে আধুনিক রাষ্ট্র যেমন এন্ডোর্স করতে পারে না, তেমনি আধুনিক পশ্চিমাদেশের সাম্য বা মানবধিকারের ধারণাকে সরাসরি জোর করে প্রয়োগও করতে পারে না।
বর্তমানের মুসলিম সমাজের জন্য পুরানো নিয়ম নীতি প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে। যদি কোনও আইন প্রসঙ্গিকতা হারায় সেগুলি তুলে দেওয়া দরকার, এই মানসিকতা ও দাবি মুসলিম সমাজের ভিতর থেকেই উঠিয়ে আনা যেতে পারে। যেমন এক পত্নীর উপস্থিতিতে একাধিক বিবাহের ছাড়পত্র দেওয়ার আর কোনও প্রয়োজন নেই। ইসলাম বহুবিবাহতে উৎসাহ দেয় না বললেই মুসলিমদের দায়িত্ব শেষ হয় না। এখন আইন করেই সেটা নিষিদ্ধ করতে কোনও দ্বিধা থাকার কথা নয়। ইসলামি সমাজের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৈষম্যমূলক উত্তরাধিকার আইন এবং অনুশীলনগুলি বর্জন করার সম্ভাবনাটি অন্বেষণ সবথেকে বেশি এফেক্টিভ হতে পারে, সেখানে রাষ্ট্র পুরোপুরি সহায়ক হিসাবে ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রতিটি দেশে পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের উত্তরাধিকার প্রশ্নে সমবণ্টনের প্রশ্ন উঠলে জাতি ধর্ম ভাষা নির্বিশেষে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঐতিহ্য, সনাতন মূল্যবোধ, এবং সর্বোপরি ধর্ম। এই প্রতিটি বিষয়কে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে আজকের অর্থনীতি ও রাজনীতি। তাই, সম্পত্তির অধিকারের প্রশ্ন শুধু ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক নয়, সেটি একটি রাজনৈতিক প্রশ্নও বটে। মুসলিম মহিলাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার নিয়ে আলোচনায় মেয়েদের প্রতি বৈষম্যের কথা তুললেই মৌলবাদী একটি শিবির থেকে প্রথমেই মেয়েদের প্রতি বৈষম্যকে সরাসরি অস্বীকার করা হয়।
সম্পত্তির অধিকার নিয়ে রাজনীতি
বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধকে যদি মুক্তির যুগ ধরা হয়, যে সময়ে সোভিয়েত রাশিয়ার জন্ম হয়েছে, তার সাথে পৃথিবীর নানা প্রান্তে উপনিবেশের পতন ও আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে, দ্বিতীয় অর্ধে ফ্যাসিবাদের পতন ও পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্য শুরু করেছে, সবেমাত্র স্বাধীন হওয়া দেশগুলি নতুন আশা ও নিরাশার দোলাচলে এগিয়েছে। আগের অনুচ্ছেদেই উল্লেখ করেছি সম্পত্তির অধিকারের প্রশ্ন শুধুই ধর্মীয় বা অর্থনৈতিক নয় তা আসলে বিপুল ভাবে রাজনৈতিকও এবং সেই রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতে আসার পর আধুনিকতা যদি সমাজে আরোপ করা হয় তার প্রভাব বুঝতে সোভিয়েতের অভিজ্ঞতা অবশ্য পাঠ্য। সোভিয়েতের পতনে এই ধরনের আরোপের কোনও ভূমিকা আছে কিনা সেটা এই প্রবন্ধে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক, কিন্তু সোভিয়েতের পত্তন নারী মুক্তির আন্দোলনের ইতিহাসে নব নব দিগন্ত খুলে দেয় এবং নতুন নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়। তাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কী ধরনের কাজ ও আইডিয়া জনপ্রিয় করার চেষ্টা করা হয়েছিল সেটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম অর্ধ থেকে শুরু করে দ্বিতীয় অর্ধে গিয়ে পুঁজিবাদী দেশগুলিতে ধীরে ধীরে মেয়েদের ভোটাধিকার অর্জিত হয়েছে। সোভিয়েত রাশিয়াতে বিপ্লবের পরে শুধু ভোটাধিকার নয়, অর্জিত হয়েছে গৃহশ্রম থেকে মুক্তির পথ। বিপ্লবের পরে এক মাসের মধ্যেই মেয়েদের মুক্তির জন্য যে সমস্ত আইন প্রণয়ন করা হল বা ডিক্রি জারি করা হল (প্রথমটি ডিসেম্বর ১৯, ১৯১৭), তাতে বলা হল যে এখন থেকে মেয়েরা সামাজিক-আর্থিক-রাজনৈতিকভাবে সমানাধিকার পেল এবং সেই অনুযায়ী বেশ কয়েকটি মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হল। সম্পত্তির অধিকার পেতে মেয়েদের লড়াইয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে জরুরি, ধর্মের নাগপাশে যেভাবে তাদের আবদ্ধ করে রেখেছে, তা থেকে ছিন্ন করা। সেই কাজটাই করেছিল এই ডিক্রিগুলি। প্রথমেই ধর্মীয় বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হল। একমাত্র আইনসিদ্ধ হল সিভিল বিবাহ। এর সাথে কেউ যদি ধর্মীয় বিবাহ করতে চায় তা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছে অনিচ্ছে হিসেবে বিবেচিত হল। ফলে বিবাহকে স্বর্গীয় বিষয় থেকে এক ধাক্কায় মাটিতে নামিয়ে আনা হল। প্রসঙ্গত মনে রাখতে হবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুক্ত ছিল এশিয় মুসলিম অধ্যুষিত বিরাট অঞ্চল। বিবাহ আর ধর্ম যে মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হল, অমনি স্বামী-সংসার-সন্তান সম্পর্কে তার ধর্মীয় সম্ভ্রম-ভয় কেটে গেল। মেয়েরা এই তিনটিকেই মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে শিখল। সোভিয়েতের কোথায় কি ভুল ছিল সেটা যেহেতু আলোচ্য নয়, তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে আরোপ করার ফলে তার থেকে কী কী নতুন ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল সেটাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সেইসব অভিজ্ঞতাগুলি আজকে সম্পত্তির অধিকারের জন্য মুসলিম মেয়েদের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে থাকা মধ্য এশিয়াতে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ধর্মীয় স্বাধীনতা, এমনকি শরিয়ত পর্যন্ত অনুমোদনযোগ্য ছিল। কিন্তু কম্যুনিস্টদের বা কেন্দ্রীয় সরকারি দলের শরিয়তের বিরুদ্ধে, বোরখার বিরুদ্ধে প্রচার করার সুযোগকে যখন আঞ্চলিক অ-সোভিয়েত সরকার নস্যাৎ করছিল, বিদেশি শক্তিগুলির সাথে মিলে কেন্দ্রীয় সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করল, তখনই সোভিয়েত ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ঝাঁপালো। যদিও তা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত ধর্মাচরণের অধিকার ছিলই। কিন্তু মেয়েদের দ্বিতীয় শ্রেণি নাগরিক করে রাখা নিষিদ্ধ হল। এবং ১৯৩০ সালের মধ্যেই মুসলিম মেয়েরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুরুষের থেকেও এগিয়ে গিয়েছিল। মাথায় রাখতে হবে এই সবের অনেকটাই আরোপিত ছিল। বর্তমান সময়ে আমরা যখন বিষয়গুলি নিয়ে নতুন করে ভাববো তখন অবশ্যই কতটা আরোপ করা যায় আর কতটা অভ্যন্তরীণ বিকাশের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেগুলি নিয়ে সোভিয়েতের পরীক্ষাগুলো পথ দেখাতে পারে, নতুন পথের নির্মাণ করতে। এই সমস্ত বৈপ্লবিক পদক্ষেপের প্রভাব ছিল বিশ্বজোড়া, এবং সার্বিক লড়াইয়ের কিছু সুফল পরবর্তী অর্ধ শতাব্দীতে এলেও অর্ধেক মানব সভ্যতা নারীর জন্য সেইভাবে কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তির মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তাই নিয়ে এই সময়েই সমান্তরালে চলেছে নারীবাদী চিন্তা ও তার ভিন্ন ভিন্ন ঢেউ। নারীর অধিকার নিয়ে বিপুল বিতর্কে গোটা পৃথিবী জুড়েই নারীর ক্ষমতায়নের প্রধান অস্ত্র হিসাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও সম্পত্তির উপর নারীর অধিকারের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। বিংশ শতাব্দীর শেষ ও একবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই আন্তর্জাতিক আইন ও অধিকার সংস্থাগুলো বৈষম্যমূলক আইনগুলি দূর করে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণের সুপারিশ করছে। আধুনিক সভ্যতার মাপকাঠি হিসাবে লিঙ্গবৈষম্য কোন দেশ কতটা কমিয়ে আনতে পেরেছে সেটি বিচার করা হয়।
ইসলামিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার ব্যবস্থা
ইসলামী আইনশাস্ত্রের ধ্রুপদী পদ্ধতিটি আইনের উপর ব্যক্তির হস্তক্ষেপকে সীমাবদ্ধ রাখা। স্থান-কাল নিরপেক্ষভাবে, এমন একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি, যা আইনের ব্যাখ্যার নামে ব্যক্তির কারচুপিকে রুখে দিতে পারে। কুরানিক উৎসগুলির বিকৃত করার জন্য কোনও অনৈচ্ছিক প্রবণতাও হ্রাস করতে পারে। আইনকে নৈর্ব্যক্তিক করার প্রচেষ্টা যতটা প্রশংসার, কাল-নিরপেক্ষ করা ততটাই সমস্যাজনক। মুসলিম পার্সোনাল আইনের গাইড লাইন শরিয়া আইন, আরও নির্দিষ্টভাবে বললে কোরানের সুরা নিসা। মুসলিম আইনে সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারায় বেশ কিছু সংখ্যার বিশেষ গুরুত্ব আছে, যেমন মোট সম্পদের ১) অর্ধেক (১/২), ২) এক চতুর্থাংশ (১/৪), ৩) এক অষ্টমাংশ (১/৮), ৪) দুই-তৃতীয়াংশ (২/৩), ৫) এক-তৃতীয়াংশ (১/৩) এবং ৬) এক-ষষ্টাংশ (১/৬)।
কোন মুসলমান মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। চলুন আগে জেনে নিই কী সেই সব আনুষ্ঠানিকতা।
১। মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকলে সেখান থেকে তার দাফন কাফনের যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে।
২। তিনি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন ধার-দেনা করে থাকেন তবে তাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করে দিতে হবে।
৩। তাঁর স্ত্রী বা স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকলে বা আংশিক অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোট কথা স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেনমোহর স্বামী মৃত অথবা জীবিত যাই থাকুক না কেন তা স্বামীর সম্পত্তি থেকে আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে হবে।
৪। মৃত ব্যক্তি কোনো দান কিংবা উইল করে গেলে তা প্রাপককে দিয়ে দিতে হবে।
উপরের সব কাজ সম্পন্ন করার পরে মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী তাঁর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।
মুসলিম উত্তরাধিকার নির্ণয় করার জন্য উপরে উল্লেখিত বণ্টন কাজ সমাধা করার পরে পরবর্তী পর্যায়ে উত্তরাধিকারীদের অংশ বণ্টন হবে। এই অংশটিকে আবার দুইভাগে ভাগ করা হয়। এই ২টি অংশের অধিকারীদের সংখ্যা ১২ জন, তার মধ্যে চার জন পুরুষ— ১) পিতা ২) পিতামহ, ৩) বিপৈতৃক ভাই এবং ৪) স্বামী। এরপর আট জন মহিলা— ১) স্ত্রী ২) কন্যা ৩) পুত্রের কন্যা যত নিম্নে হোক না কেন ৪) সহোদরা ভগ্নী ৫) বৈমাত্রেয় ভগ্নী, ৬) বৈপিত্রেয়ী ভগ্নী, ৭) মাতা ৮) মাতামহী। এই অধিকারীদের আসহাবুল ফারায়েজ বা যাবিল ফুরূজ হিসাবে ধরা হয়। যাবিল ফুরূজ অংশ বণ্টনের পর বাদবাকি অংশ আসাবাদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। কোনো উত্তরাধিকারী থাকলে বা না থাকলে স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর বা স্ত্রীর মৃত্যুতে স্বামীর প্রাপ্য, ভাই থাকলে বা না থাকলে বোনের প্রাপ্য এবং এরকম বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ইসলামিক রীতিতে কার কী প্রাপ্য তার বিস্তারিত বর্ণনায় যাওয়ার কোনও প্রয়োজন এই মুহূর্তে অনুভব করছি না। মূল যে বক্তব্য ইসলামিক রীতিতে ও আল কুরআনিক নির্দেশ হিসাবে পাই তাতে বলা যেতে পারে উত্তরাধিকার আইনে পরিবার পরিজনের নিকট বা দূর আত্মীয়ের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তির এক রকম ব্যবস্থা আছে, যেখানে একজন দাস মালিক থেকে মুক্তি প্রাপ্ত দাসের প্রাপ্য, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভ্রাতা ও ভগ্নীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রাপ্যের উল্লেখ আছে। যে রীতিনীতিকে বিচার করলে এক কথায় বলা যায় কুরআনিক এই নির্দেশাবলী আসলে সম্পদের কেন্দ্রীভবনের বিরুদ্ধে এক সদর্থক প্রচেষ্টা। প্রায় ১৫০০ বছর আগে যখন দাস ব্যবস্থা ধীরে ধীরে উঠে যেতে বসেছে তখন সম্পত্তি নিয়েও স্বাধীন নাগরিক ও ক্রীতদাসের অধিকার নিয়ে যেসব বক্তব্য আছে সেসব পাঠ করলে বোঝা যায় সেই সময়ে ক্রীতদাস ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ বা হারাম করে দেওয়ার মত আধুনিকতা অর্জন করা যায়নি, কিন্তু ক্রীতদাস ব্যবস্থা যে সাধুবাদ পাওয়ার ব্যবস্থা নয় বরং দাসকে মুক্তি দেওয়ায় উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। হয়তো আরও ৫০০ বছর পর হজরত মোহাম্মদ ধরাধামে অবতীর্ণ হলে ক্রীতদাস ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করা হত কিনা সেটা বলা মুশকিল। এবার জেনে নিই কী অনুপাতে বা কীভাবে এই সম্পত্তি বণ্টন হবার নিয়ম আছে।
১। স্বামীর অংশ: স্বামী দু'ভাবে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকে। স্বামী কখনো তাঁর মৃত স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবে।
২। স্ত্রীর অংশ: স্ত্রীও দু'ভাবে তাঁর মৃত স্বামীর সম্পত্তি পেয়ে থাকে। বিধবা স্ত্রী কোনভাবে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্বামীর কোনো সন্তান বা তাঁদের পুত্রের সন্তান থাকলে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবে। মৃত স্বামীর কোনো সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। স্ত্রী একাধিক হলেও সবাই মিলে ১/৪ অংশ সমান ভাগেই পাবে।
৩। বাবার অংশ: বাবা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী তিন ভাবে হয়ে থাকে। যদি মৃত সন্তানের পুত্র, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের পুত্রের পুত্র এভাবে যতই নিচের হোক না কেন যদি থাকে, তবে মৃত সন্তানের পিতা পাবেন সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ।
যদি মৃত সন্তানের শুধুমাত্র কন্যা সন্তান বা তাঁর পুত্রের কন্যা সন্তান থাকে তবে পিতা সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন।
এই ক্ষেত্রে কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর অবশিষ্ট যে সম্পত্তি থাকবে তাও পিতা পাবেন। আর যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র-কন্যা বা পুত্রের সন্তান কিছুই না থাকে তবে বাকী অংশীদারদের তাঁদের অংশ অনুযায়ী দেয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকবে তার সবটুকুই বাবা পাবেন।
তবে মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান ও বাবা কেউ না থাকলে তাঁর সম্পত্তি তাঁর জীবিত ভাই বা ভাইরা পাবে। আবার ভাই না থাকলে তাঁর ভাইয়ের সন্তানরা পাবে।
৪। মায়ের অংশ: মা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তি তিন ভাবে পেয়ে থাকে। মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নেরই হোক থাকলে অথবা যদি মৃত ব্যক্তির আপন, পূর্ণ বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাইবোন থাকলে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন।
মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে এবং মৃত ব্যক্তির যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন। কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তার তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন।
৫। পুত্র সন্তানের অংশ: মৃত ব্যক্তির ছেলে বা ছেলেরা সকল ক্ষেত্রেই সম্পত্তি পায়। যেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে রয়েছে সেই ক্ষেত্রে ছেলে বা ছেলেরা, মেয়ে বা মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুন সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মাতাপিতা ও স্বামী-স্ত্রী নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে বণ্টন করা হবে। তবে মেয়ে না থাকলে অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী সম্পূর্ণ সম্পত্তি ছেলে বা ছেলেরাই পাবে।
৬। কন্যা সন্তানের অংশ: উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে কন্যারা তিনভাবে মাতাপিতার সম্পত্তি পেতে পারে। একমাত্র কন্যা হলে তিনি রেখে যাওয়া সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ (১/২) অংশ পাবে। একাধিক মেয়ে হলে সবাই মিলে সমান ভাগে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) অংশ পাবে। যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে। যা হোক কন্যা কখনো মাতাপিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয় না।
উপরের ভাগ বাঁটোয়ারায় নজর করলে দেখা যাচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন প্রতি ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির পরিমান ভিন্ন, এবং এই ভিন্নতার মূলে আছে দাবিদার পুরুষ নাকি নারী তার উপর। একদিকে এই ভিন্নতা যেমন দৃষ্টিকটু লাগে অন্যদিকে প্রশংসার বিষয়টি হচ্ছে উপরের সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারায় সম্পত্তির বিকেন্দ্রীভবন করার প্রচেষ্টা। আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে যেভাবে সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারার ব্যাপারটিকে ধরা হয়েছে তাতে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একদিকে চমকিত হতে হয়, কারণ সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এই আইনগুলি বেশ কিছু আধুনিক ও যুক্তি বোধের অভিমুখকে নির্দেশ করে। সবার জন্য কিছু না কিছু আছে, কাউকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করে সম্পত্তির কেন্দ্রীভবন রোধ করার প্রচেষ্টা স্পষ্টভাবেই পরিলক্ষিত হয়। শরিয়তের আইনে বারংবার বৈমাত্রীক বা বৈপিত্রীক ভাইবোন, অনাথ বালক বালিকার উল্লেখ স্পষ্টভাবে সেই সময়কার গোষ্ঠী ভিত্তিক লড়াই ও নিরন্তর যুদ্ধ বিধ্বস্ত সমাজকে নির্দেশ করে। যার স্বাভাবিক পরিণতি পুরুষদের বহুবিবাহ ও মহিলাদের সন্তান ধারণ ও পালনই মুখ্য ভুমিকা। আজকের দিনে যখন ছোট পরিবারের ধারণা প্রশ্নাতীতভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, কেন সম্পত্তি আইনগুলির বদল দরকার সেই প্রশ্নগুলি পর্যালোচনা প্রয়োজন।
বৈষম্য অস্বীকারের প্রবনতা
হিন্দু সমাজে যেখানে মেয়েদের পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার পেতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে, সেখানে মুসলিম সমাজে নারীরা ১৫০০ বছর আগেই সম্পত্তিতে অধিকার পেয়েছে, তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিটি ব্যবস্থা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যথাযথ দাবি করেন রক্ষণশীল মুসলিম চিন্তাবিদ ও স্কলাররা। এই শিবিরের দাবির ভিত্তিতে আছে যে, কিছু ক্ষেত্রে ভাই-বোন বা স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর প্রাপ্য বা উল্টো ক্ষেত্রে কিছু বৈষম্য থাকলেও অন্য বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নাকি মেয়েরা একই লেভেলের একজন পুরুষের থেকে বেশি সম্পত্তির ভাগ পায়। তাঁদের দাবি অনুযায়ী নারী বলতে শুধু আপন কন্যা বা আপন বোনকেই বোঝায় না। শরিয়তে এদের ছাড়াও উত্তরাধিকার হিসেবে দূর সম্পর্কের অন্য নারীদেরও অংশীদার করা হয়েছে, সেখানে ক্ষেত্র বিশেষে নারী-পুরুষের পৃথক অংশ রয়েছে। যেমন,
১। ৪ রকম ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর দ্বিগুণ অংশ পায়।
২। ১০ রকম ক্ষেত্রে পুরুষ এবং নারী সমান অংশ পায়।
৩। ১২ রকম বা তারও বেশি ক্ষেত্রে নারী পুরুষের তুলনায় বেশি অংশ পায়।
৪। ৪ রকম বা তার বেশি ক্ষেত্রে সমমানের নারী উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির অংশ পেলেও পুরুষ কোনো অংশ পায় না। এই রকম ভেদের মধ্যেই এক রকম চাতুরী লুকিয়ে আছে। এটা সেই শিশু কাহিনি মনে করিয়ে দেয়, যেখানে বোকা ও চালাক ব্যক্তি এক এক বছরে এক একরকম ফসল ফলিয়ে একজন মাটির উপরিভাগটা নেয় আর অন্য জন মাটির নিচের অংশটা নেয়, এবং প্রতি ক্ষেত্রে বোকা ব্যক্তিকে ঠকানো হয়। ধানের ক্ষেত্রে মাটির উপরের অংশটা পুরুষকে আর পেঁয়াজের সময় আগের অবস্থান বদলে মাটির নিচের অংশটা পুরুষকে দেওয়ার কথা বলা আর বাবার সম্পত্তিতে ছেলে বেশি পাবে আর মায়ের সম্পত্তিতে মেয়ে বেশি অংশ পাবে বলা একই ব্যাপার। মায়ের সম্পত্তি বা সেরকম দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের থেকে মেয়েদের ভাগে বস্তুত কিছুই জোটেনা। সমস্ত সার্ভে রিপোর্ট থেকে সম্পত্তির মালিকানায় পুরুষ ও নারীদের মধ্যে ভয়ঙ্কর বৈষম্য এই রকম ভেদের অসারতা স্পষ্ট করে দেয়। এই নিয়মের পক্ষে আর এক রকম যুক্তি আসে—স্বামীর সম্পূর্ণ সম্পদেই মেয়েদের অধিকার তো থাকেই বা ইসলামিক জীবন বিধানে পরিষ্কার উল্লেখিত যে, একই পরিবারে পারিবারিক খরচখরচা থেকে শুরু করে খোরপোষ সমস্ত দায়দায়িত্ব পুরুষের। নারীর আর্থিক কোনো দায়দায়িত্ব নেই। যেহেতু আর্থিক কোনো দায় নেই তাই নারীর আসলে সেইভাবে বেশি সম্পত্তির প্রয়োজন নেই। এই বক্তব্য যিনি বলবেন তাঁকে তাহলে প্রথমে নিশ্চিতভাবে স্বীকার করতে হবে মেয়েরা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসাবে লিঙ্গবৈষম্যের শিকার। পরের পদক্ষেপে লিঙ্গবৈষম্যের অজুহাত হিসাবে ভাই ও বোনের মধ্যে ভাইয়ের আর্থিক দায়-দায়িত্ব বেশি তাই তাঁকে বেশি দেওয়াটা সমর্থন করেন। বোনের যেহেতু দায় নেই তাই তাঁর সম্পত্তির দরকার নেই। বোনের বিয়ের খরচখরচার প্রসঙ্গ তুলে বিভ্রান্ত করারও প্রচেষ্টা অনেকে নিয়ে থাকেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, আজকের দিনের পরিবারে এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসারে বৃদ্ধ বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সাধারণত সরাসরি ছেলের হাতে চলে যায়। বোনটির যদি বিয়ে হয়ে গিয়ে থাকে সেখানে স্বামীর বাড়ির সম্পত্তিতে নিয়ন্ত্রণের অধিকার সে পায় কি? পায় না। গৃহবধূ হলে তো কথাই নেই, ভাত কাপড়ের চুক্তিতে মেয়ে চলল অন্য বাড়িতে শ্রম দিতে। অর্থাৎ বৈষম্য সর্বত্রই আছে। মজার বিষয় হল অনেক ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি কখনো বলেন ইসলামে নারী-পুরুষে বৈষম্য করা হয়না, আবার পরের মুহূর্তেই বৈষম্যের অজুহাতটিও দেন।
পুনঃপ্রকাশ, প্রথম প্রকাশ ২ জুলাই ২০২০
প্রতীকী ছবি
লেখক :অধ্যাপক
সৌজন্য ঃ 'সহজিয়া' ২০২০ ইদসংখ্যা
0 Comments
Post Comment