রাতদখলের আন্দোলন – এক দীর্ঘস্থায়ী লংমার্চ

  • 14 September, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 99 view(s)
  • লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
 তিলোত্তমার মৃত্যু এই যে বিরাট রাতদখলী-জনতাকে জাগিয়ে দিয়ে গেল, তাঁদের মিলিত পথচলার আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদে অনেক তিলোত্তমার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে। অনেক সাধারণ গৃহবধূকে এই আন্দোলন নারীবাদের প্রথম পাঠ হৃদয়ঙ্গম করাতে সক্ষম হবে। অনেক সাধারণ মানুষকে প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার স্বাভাবিক ও ব্যবহারিক ধারণা উপলব্ধি করাতে সাফল্য লাভ করবে ও দীর্ঘমেয়াদে সমাজে প্রকৃত নারীবাদী অথবা মনুষ্যত্ববাদী মানুষের সংখ্যা বাড়াতে এই আন্দোলন কার্যকর হবে।

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২। জন্মদিনের মাত্র পাঁচদিন বাকি থাকতে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যু হয়। ইরান জুড়ে গড়ে ওঠে ‘জিন, জিয়ান, আজাদি’র আন্দোলন।

 

সেপ্টেম্বর ২০২৪। কলকাতার রাজপথে একই শ্লোগানের উদযাপন। উপলক্ষ তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে রাতদখলের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান। এই লেখা শুরুর সময়েই একথা বলে নেওয়া প্রয়োজন, এর আগে বেশ কিছু লেখায় এই আন্দোলনের রাজনৈতিক দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করলেও সচেতন ভাবে বর্তমান প্রবন্ধে সেই অভিমুখ থেকে সরে আসতে চাইব। দলীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির বাইরেও দীর্ঘমেয়াদে এই তিলোত্তমা-আন্দোলন কতখানি ব্যাপক হয়ে উঠেছে সেই দিকগুলিকে এই লেখায় তুলে আনতে চাই বলেই, সমকালীন রাজনীতির খেউড়কে এই লেখায় পরিসর দেব না। সেই রাজনীতির কদর্যতা প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তেই যেভাবে বিকৃত থেকে বিকৃততর হয়ে পড়ছে – সে কথা ভাবলেও বিবমিষা বোধ হয়।

 

২০২৪ সাল – এই বছরটি নারীস্বত্ব তো বটেই, বাংলা তথা সমগ্র ভারতের নারী আন্দোলনের ইতিহাসে ক্রমশ উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এর কারণ বোধহয় সাম্প্রতিক-সময়ের রাজনীতি-ইতিহাসেও নিহিত। সচেতন ভাবে নারীস্বত্বে রাতদখলের ঘটনার বিষয়ে কিছু লিখতে গিয়ে বেশ খানিক সময় নিয়ে ফেলেছি। কারণ আমার মনে হয়েছিল তিলোত্তমার ঘটনা পরবর্তীতে যে বিস্ফোটক নারী-জাগরণ এবং সঙ্গত কারণেই আন্দোলনের একেবারে প্রাথমিক পর্বে প্রায় পুরুষ-নারীর এক দ্বণ্যুক(দ্বৈত বা দুইভাগ) বিভাজন উঠে আসা, এমতাবস্থায় নারীর কলমেই এই নারী-আন্দোলনের কথা সর্বাগ্রে উঠে আসা উচিত। দলমতশ্রেণীধর্ম নির্বিশেষে এমন আন্দোলন বাংলা দেখেনি। এমনকি নির্ভয়ার বেলাতেও নয়। ধাপে ধাপে এমন উচ্ছসিত বক্তব্যগুলির কারণ বিশ্লেষণের চেষ্টা করব।

 

দলমতশ্রেণীধর্ম নির্বিশেষ আন্দোলন – এই শব্দবন্ধ থেকে ‘শ্রেণী-নির্বিশেষ’ এই নির্দিষ্ট বিশেষণটিকেই প্রথমে আলাদা করে নিতে চাইব, তিলোত্তমা-আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে আমি যাকে মনে করি। বিগত কয়েক বছর ধরেই নারীদিবস উদযাপনের সময় নারীবাদী সংগঠনগুলির তরফে প্রচারে উঠে এসেছে ‘শ্রমজীবী নারী দিবস’এর বক্তব্য। ৮ মার্চ কেবল আন্তর্জাতিক নারী দিবস নয়, সম্পূর্ণ অর্থে তা শ্রমজীবী নারী দিবস। এই শ্রমের গুরুত্ব সকলের অনুধাবন করা উচিত। একটু অন্য প্রসঙ্গে গিয়ে বলতে চাই, বিশেষ করে যাঁরা দার্শনিক কার্ল মার্কস সম্পর্কে হয়তো বা নানা অর্থে, নানা কারণে ‘ভিন্নমত’ পোষণ করে চলেন – কেবল আমার অভিমত হিসেবেই বলছি না, সারা পৃথিবীর প্রথম সারির অর্থনীতিক ও সমাজতাত্ত্বিকেরা একথা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে পৃথিবীর সমাজতাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণের পরিসরে কার্ল মার্কসের সবচেয়ে বড় অবদান হল, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে শ্রমের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ। এর গুরুত্ব সহজ কথায় পড়ে উপলব্ধি করতে গেলে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের ‘জগৎ কুটির’ অথবা ‘Home in the World’ বইটিকে আপনারা পড়ে দেখতে পারেন। কাজেই শ্রমের গুরুত্ব সুদূরের চেয়েও অনেক বেশী সুদূরপ্রসারী। তাই, শ্রমজীবী নারী দিবস কথাটি বলতে গিয়ে ‘শ্রম’এর বক্তব্যটিই যদি বা উহ্য হয়ে পড়ে, তবে সমস্ত ব্যাখ্যাটিই চূড়ান্ত লঘুত্বে এসে দাঁড়ায়।

 

এই শ্রমের মধ্যেও কায়িক ও বৌদ্ধিক দুই ধরণের শ্রমের কথা বিবেচিত। কাজেই ৮ মার্চ দিনটিকে শ্রমজীবী নারী দিবস বলে উল্লেখ করলেই তার মধ্যে যে শ্রেণীসংগ্রামের আরও বিশ্লেষিত তত্ত্বকে সঙ্গে সঙ্গে চুলচেরা আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে এমনটাও নয়। শ্রেণীসংগ্রাম বাদ দিয়েও, আন্তর্জাতিক নারী আন্দোলনের উদ্দেশ্য হল, প্রত্যেক শ্রেণীর, প্রত্যেক নারীর, প্রত্যেক অধিকারকে সুনিশ্চিত করা। তাই নারীর মঞ্চ শ্রেণীনির্বিশেষে যদি সকল শ্রমজীবীর মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে, তাই চূড়ান্ত সার্থকতার উদযাপন। এবারের নারীদিবসে সমাজমাধ্যমগুলিতে সার্বিক এক পোস্টার-প্রচার-আন্দোলন তাই, সেই চূড়ান্ত লক্ষ্যেই একাধিক সংগঠনের মিলিত প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছিল। সেই আন্দোলনকে সামনে রেখেই ‘মেয়েদের দল’গুলির কাছাকাছি আসা, বেঁধে বেঁধে থাকার প্রথম সূত্রপাত।

 

এই কাছাকাছি আসা, অথবা বেঁধে বেঁধে থাকার যে শুরুয়াৎ, তার জন্য কিঞ্চিৎ ধন্যবাদ বোধহয় কেন্দ্রের মোদী-যোগী-শাহের একচ্ছত্র সরকারেরও প্রাপ্য। দীর্ঘ এক দশক ধরে তাদের একমুখী, একবগ্গা, ব্রাহ্মণ্যবাদী, পুরুষতান্ত্রিক শাসন দেশের সমস্ত সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষজনকে তো বটেই, নারীবাদীদেরও বিভিন্ন সংগঠনকে কাছাকাছি, পাশাপাশি এসে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে আমরা দেখেছি, উপলব্ধি করেছি, বেঁধে বেঁধে থাকার আসল শক্তি-উদযাপন। যে কারণে ৮ মার্চ, নারীবাদী সংগঠনগুলির তরফে যে পোস্টার-প্রচার-আন্দোলন, তার পরবর্তীতে আমরা দেখেছি একাধিক নারীবাদী মঞ্চে বা আন্দোলনে সেই একই ধাঁচের, একই ভাষার, একই প্রতিকল্পের পোস্টার ও বক্তব্য নির্মাণ। এই কাজ কতখানি সচেতন ভাবে হয়েছে, অথবা অবচেতনেই কি এভাবে ভাবনার পরিসরে ক্রমশ কাছাকাছি আসা গিয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে দীর্ঘ গবেষণার প্রয়োজন। কিন্তু এই যে এক বৃহত্তর অনুরণন ধ্বনিত হতে পেরেছে, সেই থেকেই সাফল্যের প্রাথমিক সূত্রপাত।

 

এরপর ৯ আগস্ট, তিলোত্তমার মৃত্যুদিন। ১৪ আগস্ট রাতদখলের প্রথম উদযাপন।

 

যে কথা আগেও বলেছিলাম, তিলোত্তমা আন্দোলন যতই পরিসরে বেড়েছে ততই রাজনীতি-দুর্নীতি-পাল্টা-রাজনীতির চক্রাবর্তে তা ক্রমশই বিরাট, বহুমুখী ও একই সঙ্গে জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেবল নারী ও শ্রমের দৃষ্টিকোণ থেকেই যদি এই আন্দোলনের ব্যাপ্তি ও উপযোগিতাকে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করি, তবে তার বিরাটত্বকে কেবলই সম্ভ্রমের সঙ্গে লক্ষ্য করতে হয়। রাতদখলের আন্দোলনে যাঁরা গোড়া থেকেই পথে নেমেছিলেন, বিভিন্ন কারণে তাঁদের আর্থ-সামাজিক অস্তিত্বগুলি নজর কেড়েছিল। আন্দোলনে প্রথম দিন, ১৪ আগস্ট থেকে শুরু করে সাধারণ মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত গৃহবধূ-সম্প্রদায়ের মানুষ, রাস্তার রাজনীতিতে যাঁদের চিরকালের অনীহা, তাঁরাও সকলে অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে শহর ও শহর-সংলগ্ন মফস্বল এলাকায় অথবা জেলার শহরগুলিতেও এমন প্রতিনিধিত্বের মানুষের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক। পাশাপাশি, মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত – এমন আর্থ-সামাজিক বিশেষণগুলিকে বাদ দিলেও, বয়সের নিরিখে বয়োজ্যেষ্ঠা বৃদ্ধারাও নিজের গরজে অসুস্থ শরীরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে মিছিলে পা মিলিয়েছেন। প্রাক্তনী সংগঠনগুলির মিছিলে মহিলাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। যতই সমাজের একশ্রেণীর মানুষ কটাক্ষ করার চেষ্টা করুন যে “এনারা তো ভোটের সময় ভোট দিতেই যান না – এখন এঁরা মিছিলে নামায় আর কিই বা এসে গেল”, এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে অনীহায় থাকুন বা না থাকুন উন্মুক্ত রাজপথে এমন আর্থ-সামাজিক পরিসরের সব বয়সের মহিলাদের এমন সার্বিক আন্দোলন উদযাপন ইতিহাসের পাতায় বড় একটা দেখেনি কেউ। তাই রাতদখলের প্রথম বিজয় শুরু সেই থেকেই।

 

কিন্তু এর পরবর্তীতেও এই আন্দোলন উচ্চবিত্ত-উচ্চ-মধ্যবিত্তের আন্দোলন বলেই সমালোচিত হতে পারত, কেবল যদি মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত অথবা শহুরে বাসিন্দাদের অংশগ্রহণেই এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসত। তাহলে কোনও ভাবেই আমরা এই আন্দোলনকে শ্রেণীহীন বিশেষণে ভূষিত করতে পারতাম না। এখানেই বহু বহু দিন ধরে বেঁধে বেঁধে থাকার চেষ্টা করা সমস্ত নারীবাদী সংগঠনের কর্মকর্তাদের সাফল্য। আন্দোলনের শুরু থেকেই প্রান্তিক, নিম্নবিত্ত, অসংগঠিত মহিলাদের আন্দোলনের অংশ করে তুলতে তাঁদের পরিশ্রম বিফলে যায়নি। রাতদখলের মঞ্চে পাশাপাশি জায়গা ভাগ করে নিয়েছেন শ্রমিক, দোকানদার, সবজিবিক্রেতা, গৃহ-পরিচারিকা, দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, প্রভৃতি সকল আর্থ-সামাজিক শ্রেণীর প্রতিনিধিবর্গ। যে কারণেই রাতদখল অন্য সব রাজনৈতিক শক্তিগুলির আন্দোলন-দখলের মিলিত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে তিলোত্তমা-আন্দোলনের এক নিজস্ব নাগরিক-রাজনৈতিক পরিচিতি তৈরিতে সফল হয়ে উঠেছে।

 

এতসত্ত্বেও একথা ভুললে চলবে না, দুর্ভাগ্যবশত সাংবিধানিক পরিসরে এরাজ্যে যে প্রধান বিরোধী দলটির অস্তিত্ব রয়েছে, কূটবুদ্ধি ও অর্থনৈতিক শক্তির নিরিখে সাধারণ কোনও সংগঠনের পক্ষে তার বিরুদ্ধে এঁটে ওঠা অসম্ভব। কাজেই, বহু ক্ষেত্রে আন্দোলনের প্রকাশ্য বিবরণী (narrative) তৈরিতেও উক্ত রাজনৈতিক দলটির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও সেই কাজে তাদের সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের তরফে চূড়ান্ত অনমনীয় মনোভাব, দাম্ভিক আচরণ ও প্রশাসনিক সমাধানের বদলে রাজনৈতিক সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা, এই আন্দোলনকে ক্রমশই আরও জটিল, আরও কদর্য করে তুলেছে। এর মাঝেও নিরপেক্ষ, নাগরিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলির এই রাতদখলের আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদে আশা জাগিয়ে দেয়। তাঁদের সাফল্যের পরিমাপ একদিন বা একমাসের হিসেবে করা অসম্ভব। তিলোত্তমার মৃত্যু এই যে বিরাট রাতদখলী-জনতাকে জাগিয়ে দিয়ে গেল, তাঁদের মিলিত পথচলার আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদে অনেক তিলোত্তমার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে। অনেক সাধারণ গৃহবধূকে এই আন্দোলন নারীবাদের প্রথম পাঠ হৃদয়ঙ্গম করাতে সক্ষম হবে। অনেক সাধারণ মানুষকে প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার স্বাভাবিক ও ব্যবহারিক ধারণা উপলব্ধি করাতে সাফল্য লাভ করবে। এই ফলাফলগুলি প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক আন্দোলনের ফলাফলকে এই মুহূর্তেই হয়তো প্রভাবিত করবে অথবা করবে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সমাজে প্রকৃত নারীবাদী অথবা মনুষ্যত্ববাদী মানুষের সংখ্যা বাড়াতে এই আন্দোলন কার্যকর হবে। আমি আমার সেই বন্ধুটিকেই এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমার ব্যক্তিগত ‘মিছিলের মুখ’ হিসেবে তুলে আনতে চাইব, যে কল্যাণী অথবা তেমনই কোনও মফস্বল শহরে বিড়িশ্রমিক মহিলাদের রাতদখলের আন্দোলনে শামিল করার মুখ্য দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিয়েছিল। আমার কলমের চেয়ে তার হাতে-কলমে ময়দানে উপস্থিতিই এই আন্দোলনকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করেছে। আমাদের মতো পুরুষেরা কেবল কলম হাতে দূর থেকে কুর্নিশ ঠুকেছি তাই।

লেখক : বিজ্ঞানী, প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক 

ছবি : সংগৃহীত 

0 Comments

Post Comment