সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় মেয়েরা

  • 03 September, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 589 view(s)
  • লিখেছেন : আফরোজা খাতুন
মেয়েরা মৌলবাদীদের ঘুম কেড়েছে। ওদের ছুটিয়ে মারছে। ওদের নিয়ন্ত্রণের দড়ি কেটে বেরিয়ে পড়েছে। মেয়েদের আটকানোর জন্য তৈরি পোক্ত দেওয়ালে ক্রমাগত ঘা দিচ্ছে। ধর্মীয় মৌলবাদ বড় অসহায়। ছেলেদের নিয়ে তাদের ভাবনা নেই। যত সমস্যা মেয়েদের নিয়ে। তাই ঘন ঘন ফতোয়া জারি হচ্ছে। চৌহদ্দি নির্মাণ করো। মেয়েদের আটকাও।

জমিয়ত উলেমা-ই- হিন্দ খুব চিন্তায় পড়েছে মুসলিম মেয়েদের নিয়ে। এই মেয়েদের মধ্যে নাকি অনৈতিক, অসদাচরণ বেড়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় রীতিনীতির চর্চায় তেমন থাকছে না। অতএব মুসলিম মেয়েদের কো-এডুকেশন স্কুলে না পাঠানোর ফতোয়া জারি করল এই সংগঠন।  অন্য সম্প্রদায়ের মেয়েদের জন্যও একই আবেদন জানিয়েছে তারা। মেয়েদের নিয়ে মুসলিম মৌলবাদ ও হিন্দু মৌলবাদ বড় বিপাকে পড়েছে। মেয়েরা যে সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে আর থাকছে না।

হিন্দুত্ববাদী দল তাই ঐতিহ্যে মুখ ফেরানোর জন্য হিন্দু মেয়েদের মধ্যে শাঁখা সিঁদুরের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য তৎপর। মুসলিম ছেলেকে ভালবেসে না ফেলে সে জন্য লাভ জিহাদের গল্প তৈরি করেছে। মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনও একইরকমভাবে আতঙ্কিত মুসলিম মেয়েদের নিয়ে। এই বুঝি হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করে ফেলে। আটকাও ওদের। ধর্ম শিক্ষার চর্চা বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করো। উচ্চশিক্ষা নিতে পারে। তবে কো-এড স্কুল কলেজে নয়। ওদের জন্য তৈরি হোক গার্লস স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। 

মেয়েরা মৌলবাদীদের ঘুম কেড়েছে। ওদের ছুটিয়ে মারছে। ওদের নিয়ন্ত্রণের দড়ি কেটে বেরিয়ে পড়েছে। মেয়েদের আটকানোর জন্য তৈরি পোক্ত দেওয়ালে ক্রমাগত ঘা দিচ্ছে। ধর্মীয় মৌলবাদ বড় অসহায়। ছেলেদের নিয়ে তাঁদের ভাবনা নেই। ওরা অন্য ধর্মের মেয়ে বিয়ে করলেও নিজের সম্প্রদায়ে নাকি নিয়ে আসে। কিন্তু মেয়েরা চলে যায় অন্য সম্প্রদায়কে বিয়ে করলে। আসা-যাওয়ার পিতৃতান্ত্রিক হিসেব এটা। মেয়েরা সংখ্যা বাড়াতে পারে। তাই যে সম্প্রদায়ে ভিড়বে, তাঁদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে। এমন অমূলক ভয়ও মৌলবাদীদের কথায় স্পষ্ট। 

আজকের মেয়েরা সার্বিক উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। বাজার অর্থনীতির অবস্থানে তারা বুঝতে পারছে ছেলে-মেয়ে একইভাবে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। কো-এডুকেশনে অনেক সাবলীল হতে পারবে। কর্মক্ষেত্রের বাজারে একই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। তারা বুঝেছে, শুধু সন্তান উৎপাদন আর সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করা তাদের কাজ নয়। মেয়েদের মহিলামহলে আটকে রাখলে বলিষ্ঠ, সাবলীল জীবন যাত্রা ব্যহত হবে। ছোট থেকে স্বচ্ছন্দে ছেলে-মেয়ে বেড়ে উঠবে। আর্থিক উন্নয়নে ছেলে-মেয়ে সকলের অংশগ্রহণ দরকার। সেটা শুধু ব্যক্তির উন্নয়ন নয়। সার্বিকভাবে পরিবার এবং দেশের উন্নয়ন। ছোট থেকে মেয়েদের প্রতি অতিরিক্ত নজরদারি তাই সকলের পক্ষেই ক্ষতি। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের গণ্ডিতে মেয়েদের আটকানোর চেষ্টা আজ বৃথা। কারণ সব ধর্মবিধিতে রয়েছে পিতৃতান্ত্রিক দাপট। আইনের বৈষম্য। মেয়েদের জন্য আন্দোলন করে সেই আইন সংস্কার হয়েছে এবং হবে। মৌলবাদীদের ফতোয়াকে মেয়েরা আর তোয়াক্কা করে না। তারা লড়াই করতে নেমে পথ চিনেছে। নিজেকে গুরুত্ব দিতে শিখেছে। সকলের তাঁবেদারি আর নিয়ন্ত্রণ মেনে চলার জন্য মেয়েরা জন্মাই না সেটা অক্ষরে অক্ষরে টের পেয়েছে। কাকে বিয়ে করলে ভাল থাকবে তা মেয়েদের নিজের সিদ্ধান্ত। মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ, দেওবন্দ বা বিশ্বহিন্দু পরিষদ কাউকেই মেয়েরা আর তোয়াক্কা করে না। কারণ এরা কেউ মেয়েদের ভাল থাকার আইনের সমর্থক নয়। এদের দেওয়া ফতোয়া ফিরে ফিরে এদেরই চারপাশে অট্টহাস্য করে ফিরবে। নির্ভীক মেয়েরা স্বাধীন স্বচ্ছন্দে নিজের পথে চলবে। 

লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্মী

ছবি : সংগৃহীত

   

0 Comments

Post Comment