- 15 August, 2021
- 0 Comment(s)
- 629 view(s)
- লিখেছেন : উৎসা সারমিন
১৫ অগাস্ট ১৮৬০ সালে রোসজে ভোস একটি প্রলেতারিয়ান ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়েসে তাঁর বাবা জ্যাকব মানুস ভোস, মারা যান। তাঁর মা, স্কন্টজে জ্যাকব ফ্রান্সম্যান তখনও বেঁচে থাকা সত্ত্বেও, রোসজে চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত আমস্টারডামের পুরানো ইহুদি কোয়ার্টারের একটি অনাথ আশ্রমে বড় হন। যদিও ভোস একটি রক্ষণশীল ইহুদি পরিবেশে বেড়ে ওঠেন, এটি সাধারণত অনুমান করা হয় যে সমাজতন্ত্রের কারণে তিনি তাঁর গোঁড়া ইহুদি ধর্ম থেকে সরে আসেন।
অনাথ আশ্রমে ভোস দর্জি হিসাবে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯০৩ সালে বিয়ের আগে পর্যন্ত, রোসজে শহরের একটি বড় কর্মশালায় দর্জির কাজ করতেন, বহু ইহুদি মেয়ে এবং বিবাহিত মহিলাদের মতন।
দর্জি মহিলাদের প্রতি শোষণের বিরুদ্ধে ভোস একটি সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তিনি “লিনেন দর্জিদের সহযোগিতা" গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত করলেন। এই সংগঠন বেশি সাফল্য পায়নি। ১৮৯৭ সালে এক নারী মুক্তি আন্দোলনের সভায় ডাচ নারীবাদী উইলহেলমিনা ড্রাকার নারীদের জন্য নিজস্ব ট্রেড ইউনিয়ন এবং একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। এই ইউনিয়ন গঠনে এগিয়ে আসা তিনজন নারীদের একজন ছিলেন ভোস। ৩০ মার্চ, ১৮৯৭ "Naaistersbond Allen Een” (ওল সিমস্ট্রেসেস ইউনাইটেড) নামক একটি ট্রেড ইউনিয়নের প্রথম সভা আয়োজন করা হয়। মহিলা দর্জিদের জন্য গঠন করা এই "ওল সিমস্ট্রেসেস ইউনাইটেড” ট্রেড ইউনিয়নে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন যে নারীরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
এই ট্রেড ইউনিয়নটিকে পুরুষ সংগঠনগুলির থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে স্বাধীন রাখা হয়। ইউনিয়নটি শীঘ্রই বামপন্থি নারীবাদী সংগঠনের অন্যতম পথিকৃৎ হয়ে ওঠে। ভোস ১৮৯৮ সালে মহিলাদের কাজের জাতীয় প্রদর্শনীতে অংশ নেন, যেখানে তিনি ও তাঁর সহকর্মীদের লক্ষ্য ছিল বৃহত্তর জনসাধারণের সামনে তাঁদের স্বল্প মজুরিতে শ্রম শোষণের চিত্র তুলে ধরার। কিছুদিনের মধ্যেই দর্জিদের এই সংগঠনটি তার নিজস্ব জার্নাল, "ডি নাইস্টারসবোড” শুরু করে এবং একটি সত্যিকারের ট্রেড ইউনিয়নে রূপান্তরিত হয় যা দেশের সব দর্জিদের একত্রিত করে। এরপর থেকে রোসজে ভোস ডাচ ট্রেড ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। একজন প্রতিভাবান বক্তা হিসেবে তিনি প্রায়ই বিভিন্ন মঞ্চে বক্তব্য রাখতেন এবং বেশিরভাগ সময় তিনি মঞ্চগুলির একমাত্র দৃশ্যমান মহিলা বক্তা হতেন।
সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক নেতাদের সাথে তাঁর মতবিরোধ ঘটেছে। নেতারা যখন ১০ ঘণ্টা কর্মদিবস সমর্থন করেন, ভোস সেখানে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে স্থির থাকেন। সমাজতান্ত্রিক নেতারা যখন নারীদের ভোটাধিকারের দাবি জানাচ্ছেন না, সেই সময় দাঁড়িয়ে ভোস নারীদের ভোটাধিকারের দাবি জানান। এই ধরনের মতবিরোধ সত্ত্বেও, সমাজতান্ত্রিক নেত্রী হিসাবে ভোসের অবস্থান বছরের পর বছর ধরে আরো বিশিষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি ডাচ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএইচ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং পার্টির একমাত্র মহিলা সংসদীয় প্রার্থী। আজীবন মহিলা শ্রমিকদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত ভোস ১৯৩২ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
আজও রোসজে ভোস একজন সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী সংগঠক হিসাবে খ্যাত। ডাচ সমাজতান্ত্রিক ট্রেড-ইউনিয়ন পরিবেশে রোসজে ভোসের নাম এখনও উল্লেখযোগ্য। তাঁর নাম এখন উল্লেখ করা হয় সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী মহলে এবং তরুণ মহিলাদের সমাজতন্ত্র প্রশিক্ষণের সময়।
লেখক : সমাজকর্মী
ছবি : সংগৃহীত
0 Comments
Post Comment