- 02 April, 2022
- 0 Comment(s)
- 938 view(s)
- লিখেছেন : তামান্না
মেয়েটি বলল, “আমার নাম তুষার-কণা৷”
“এখানে এলে কী করে?” আবার তারা প্রশ্ন করল।
তুষার-কণা তাদের বলল সব কথা— কী ভাবে সৎমা তাকে মেরে ফেলার আদেশ দিয়েছিল, কীভাবে শিকারী তাকে পালাতে দেয় আর কীভাবে সমস্ত দিন ছুটতে ছুটতে সে পৌঁছোয় তাদের ছোট্টো বাড়িতে।
তার কথা শুনে বামনরা বলল, “আমাদের হয়ে যদি তুমি ঘরসংসার দেখ, রাঁধোবাড়ো, বিছানা পাত, কাপড় কাচ, সেলাই-ফোড়াই কর, আর সবকিছু যদি পরিষ্কার পরিপাটি করে রাখ— তা হলে আমাদের সঙ্গে থাকতে পাবে, কোনো কিছুর অভাব হবে না।”
তুষার-কণা বলল, “তোমরা যা বলবে সবকিছু খুব খুশি হয়েই করব।”
এইভাবে মেয়েটি থেকে গেল তাদের সঙ্গে৷ তাদের হয়ে সে ঘরসংসার দেখে আর তারা পাহাড়ে যায় সোনা আর তামার খোঁজে। প্রতি সন্ধেয় বাড়ি ফিরলে সে তাদের পরিবেশন করে রাতের খাবার। কিন্তু সারাদিন ছোটো মেয়েটি একা থাকে বলে বিজ্ঞ বামনরা তাকে বলল, “তোমার সৎমা সম্বন্ধে সাবধান। খুব সম্ভব শিগগিরই সে জানতে পারবে তুমি এখানে আছ। তাই কাউকে বাড়ির মধ্যে আসতে দিও না। (তুষার-কণা ও সাত বামনের গল্প, গ্রিম ভাইদের রূপকথা)
এক যে, রাজা। রাজার সাত রাণী। বড়রাণী, মেজরাণী, সেজরাণী, ন-রাণী, কনেরাণী, দুয়োরাণী আর ছোটরাণী।
রাজার মস্ত-বড় রাজ্য; প্রকান্ড রাজবাড়ী। হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া, ভাণ্ডারে মাণিক, কুঠরীভরা মোহর, রাজার সব ছিল। এছাড়া, —মন্ত্রী, আমত্য, সিপাই, লস্করে, —রাজপুরী গমগম করিত।
কিন্তু, রাজার মনে সুখ ছিল না। সাত রাণী, এক রাণীরও সন্তান হইল না। রাজা, রাজ্যের সকলের, মনের দুঃখে দিন কাটে।
একদিন রাণীরা নদীর ঘাটে স্নান করিতে গিয়াছেন, —এমন সময়, এক সন্ন্যাসী যে বড়রাণীর হাতে একটি গাছের শিকড় দিয়া বলিলেন,—“এইটি বাটিয়া সাত রাণী খাইও, সোনার চাঁদ ছেলে হইবে।” (কলাবতী রাজকন্যা, ঠাকুরমার ঝুলি)
উপরের গল্পাংশ দুটি পাঠ করলে প্রথমেই যে ধারণাগুলি তৈরি হয় সেগুলি হল—
১. সৎমা মানেই শয়তান।
২. ভাল মেয়ে মানে অবলা, অসহায়, নিয়ন্ত্রিত, ঘরকন্নার কাজে পারদর্শী।
৩. রাজাদের বহুবিবাহ খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
৪. রানিদের পুত্রসন্তান জন্ম দিতে হবে।
৫. সন্তানহীনতা মানেই জটিল সমস্যা।
‘দি কমপ্লিট গ্রিম্স ফেয়ারি টেলসে’র ভূমিকায় মার্গারেট হান্ট লিখেছিলেন— ‘The volume was criticized as it was considered unsuitable for Children.' ১৮১২ খ্রীষ্টাব্দে জার্মান লোককথা ও লোকমুখে প্রচলিত লোকগল্প সংগ্রহ করে প্রথম খণ্ড প্রকাশ করেন জেকব ও ভিলহেলম গ্রিম। সেই সংকলনে মোট ছিয়াশিটি গল্প ছিল।
- গ্রিমভাইদের রূপকথার গল্পগুলিতে আছে হিংসা, জটিলতা, কুটিলতা, তেমনি রাজকন্যাদের পরমা সুন্দরী হতেই হবে, সেই সঙ্গে হতে হবে অসহায়, দুর্বল! রাজপুত্র কিংবা কোন বীরপুরুষ তাদের উদ্ধার করে বিয়ে করবে। একই দোষে দুষ্ট দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ঠাকুরমার ঝুলির গল্পগুলি। যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ২০০৩ সালে গ্রিম ভাইদের ১৬৮টি রূপকথার গল্প বিশ্লেষণ করেন। সেই বিশ্লেষণে দেখা যায় শতকরা ৯৪ ভাগ গল্পে নারী দেহের নমনীয় সৌন্দর্যের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া আছে। আবার, তাঁরা পর্যালোচনা করে দেখিয়েছেন মাত্র একটা গল্পে নারীর সৌন্দর্যের প্রসঙ্গ ১১৪ বার উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি বেশিরভাগ রূপকথাতেই দেখা গেছে সুন্দরী নারীরা জিতেছেন। আবার গল্পে ডাইনি অথবা রাক্ষসীর মতো নেতিবাচক নারী চরিত্রদের অসুন্দরী, কদাকার হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গবেষকগণ জানিয়েছেন, একজন নারীকে শুধু তাঁর সৌন্দর্য দিয়ে কখনো বিচার করা যায় না, এরফলে তাঁর অন্য গুণগুলো প্রকাশিত হয় না। কোনো কাজে সাফল্য অর্জন করতে সুন্দরী হতে হবে, এইরকম মনোভাব শিশুমনে কুপ্রভাব ফেলে। ফলে অনেক শিশু তাদের শিশুবয়সে সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিলে, ভবিষ্যৎকাল দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। পিতৃতন্ত্র নামক সামাজিক নকশাটির সূত্রে রূপকথার নারীরা বন্দী। রাজার কাছে রানিরা নিজেদের মনপ্রাণ সঁপে দেন। মাতৃত্বের মাধ্যমে জীবনে পূর্ণতা পান। রাজকন্যারা অপেক্ষা করে থাকে রাজপুত্রের। গল্পের শেষে দেখা যায়, সমস্ত অসহায় মেয়েরা কারো গলগ্রহ হয়ে সুখেশান্তিতে বসবাস করছে। আবার রূপকথায় স্বাধীনচেতা নারীদের দেখানো হয়েছে ডাইনি, সৎমা, চরিত্রহীন, অসৎ হিসাবে।
গবেষকরা বলে থাকেন, রূপকথায় খুব সহজে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন, সৎ-অসৎ ব্যাপারটা তুলে ধরা হয়। প্রাবন্ধিক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘রূপকথা’ প্রবন্ধে জানিয়েছেন—“শিশুর মনের গোপন কোণে যে পুঞ্জীভূত অন্ধকার জমাট হইয়া আছে তাহাতে পৃথিবীর সমুদয় রহস্য যেন নীড় রচনা করে; তাহার চিন্তাকাশে যে কুহেলিকা ব্যাপ্ত রহিয়াছে, তাহাতে, অন্ধকারে তারার মত, নানাবর্ণের আকাশ-কুসুম ফুটিয়া থাকে। পৃথিবীর দানশীলতার শেষ সীমা সম্বন্ধে এখন তাহার কোণ সুস্পষ্ট ধারণা জন্মে নাই; নানারূপ সম্ভব-অসম্ভব আশা-কল্পনার রঙিন নেশায় সে সর্বদা মশগুল। রূপকথা তাহার সম্মুখে একটি দিগন্তবিস্তৃত, বাধাবন্ধহীন কল্পনা রাজ্যের দ্বার খুলিয়া দিয়া তাহার সংসারানভিজ্ঞ মনের স্বচ্ছন্দ ভ্রমণের উপযুক্ত ক্ষেত্র রচনা করে। রূপকথার সৌন্দর্যসম্ভার তাহারই জন্যে, যে পৃথিবীর সংকীর্ণ আয়তনের মাঝে নিজ আশা ও কল্পনাকে সীমাবন্ধ করে নাই।’’ রূপকথার এই হিংসা, কুটিলতা, জটিলতা, বৈষম্য শিশুর অবচেতনে কতটা প্রভাব ফেলে? কোমল মনে কতটা কল্পনারাজ্যের দোর খোলে, আর কতটা কলুষিত করে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় হয়েছে!
কুটিল সৎমা ও মহান বাবা
রূপকথার গল্পগুলিতে বৈষম্যগুলি স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। এখানে আমরা ঠাকুরমার ঝুলি ও গ্রিম ভাইদের রূপকথার কয়েকটি গল্পের উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। কলাবতী রাজকন্যা গল্পের পরতে পরতে সতীনদের দ্বন্দ্ব দেখানো হয়েছে, বুদ্ধু-ভুতুমকে নিয়ে সৎমারা নোংরামি করেছে। কিন্তু রাজাকে এখানে নির্দোষ হিসাবে প্রমাণ করা হয়েছে। এই রাজা কিন্তু দুই রানিকে বাঁদী ও ঘুঁটেকুড়ানী দাসী করেছিলেন পেঁচা ও বানর প্রসবের অপরাধে। কিন্তু ঘটনার ঘনঘটায় রাজাকে একজন মহান বাবা হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে, রানিদের দেখানো হয়েছে শয়তানের প্রতিমূর্তি হিসাবে। আবার, তুষার-কণা গল্পে সৎমার থেকে জল্লাদকে দয়ালু দেখান হয়েছে। জল্লাদের দয়ায় তুষার-কণা বেঁচে যায়। ঠাকুরমার ঝুলির শীতবসন্ত গল্পে সৎমাকে বীভৎস ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। হানসেল আর গ্রেটেল গল্পে অভাবের তাড়নায় সৎমা ও বাবা ঠিক করেন গভীর বনে বাচ্চা ছেলে, মেয়েকে রেখে আসবেন। হানসেল ও গ্রেটেল অনেক বিপত্তি পার করে আবার বাড়ি ফিরে আসে। তারা যখন বাড়ি ফিরে আসে তাদের সৎমা তখন জীবিত ছিল না। এখানেও তাদের বাবাকে দোষী করা হয়নি। সব অপরাধের মূলে ছিল তাদের সৎমা। সিনড্রেলা গল্পে সৎমাকে জটিল করে দেখানো হয়েছে। গ্রিম ভাইদের রূপকথায় ‘জুনিপার গাছ’ গল্পে সৎমাকে ভয়ঙ্কর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দেশেবিদেশে সব জায়গায় সৎমা মানেই নির্দয়। স্নেহময়ী হিসাবে কখনো সৎমাদের উপস্থাপন করা হয়নি। তুষার-কণা গল্পে সৎ মেয়ের কলিজা, ফুসফুস খেয়ে সৎমা উল্লাস করেছেন। আবার, শীতবসন্ত গল্পে শেয়াল কুকুরের রক্তে রানি স্নান করে বীভৎসতার পরিচয় দিয়েছেন। জুনিপার গাছ গল্পে সৎছেলেকে খুন করে মাংস রান্না করে বাবাকে খাইয়েছে। এই গল্পগুলি পড়ে ছোট ছেলেমেয়েরা হিংসা, জটিলতা, বীভৎসতার সঙ্গে পরিচিত হয়। নিঃসন্দেহে শিশুমনে একধরনের বিরূপতার জন্ম দেয়।
বীর নায়ক ও মায়াবিনী
রূপকথায় রাজপুত্র, কোটালপুত্র, শিকারীদের বীরত্বের জয়গান গাঁথা হয়েছে। এই পুত্ররা যুদ্ধ করছে, সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হচ্ছে, পক্ষীরাজে চড়ছে, ময়ূরপঙ্খীতে ভেসে বেড়াচ্ছে। অজানাকে জয় করছে, অসহায়, অবলা রাজকন্যাদের উদ্ধার করছে। সমস্ত রোমাঞ্চকর অভিযানে এই বীরপুরুষেরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আবার এই বীর পুরুষদের চলার পথে অনেক বাধা আসছে। রাক্ষসী, ডাইনি, মায়াবিনীরা বীরপুরুষদের ছলনার আশ্রয় নিয়ে ফ্যাসাদে ফেলছে। এখানেও মহিলারা পথের কাঁটা হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ বোঝায় যাচ্ছে রূপকথার পরতে পরতে কী বিপুল পরিমাণ বৈষম্য রয়েছে। ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র নীলকমল আর লালকমল, সোনার কাঠি রূপার কাঠি, ডালিমকুমার গল্পে রাক্ষসীর সঙ্গে রাজকুমারদের যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে।
অসহায় কন্যারা
আগেই বলেছি রূপকথার গল্পে ভালো মেয়ে মানেই অবহেলিত, সৎমার দ্বারা অত্যাচারিত,
ঘরকন্নার কাজে পটু, অপরূপ সুন্দরী সেই একই গৎবাঁধা ছকে ফেলে এই চরিত্রদের তৈরি করা হয়েছে। এই সমস্ত অসহায় মেয়েরা নিজেদের সাহায্য কখনো করতে পারেনি, তাদের সাহায্য করেছে রাজা, রাজপুত্র, ভাই, সাহসী ব্যক্তি, জল্লাদ, শিকারিরা। রূপকথায় নারীদের এতটাই অসহায় করে উপস্থাপন করেছে, ভাবা যায় না! মানুষরা যখন সাহায্য করতে পারেনি তখন ইঁদুর, পাখি, ব্যাঙ সাহায্য করেছে। ইতালির এলেনা ফাভিলি ও ফ্রাঞ্চেস্কা জানিয়েছেন রূপকথার গল্প মেয়ে শিশুদের দুর্বল করে তোলে, বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। ওঁরা জানিয়েছেন, সমস্ত মেয়েদের বড় হওয়া উচিত সে যা চায়, তা-ই হতে পারবে সেই আত্মবিশ্বাস রেখে।
নতুন রূপকথা
রূপকথায় এতো অসামঞ্জস্য দেখেই বোধহয় পশ্চিম বিশ্ব একটু নড়েচড়ে বসেছে। তারা নতুন করে রূপকথা লেখার উদ্যোগ নিয়েছেন। নতুন ভাবে তারা রূপকথা লেখার চেষ্টা করছে। চরিত্রগুলির লিঙ্গ পরিবর্তন করে তারা নতুন ভাবে রাপাঞ্জেল, সিন্ড্রেলাকে নিয়ে ভাবছে।
রাপাঞ্জেল ছেলে হলে, তার কি লম্বা চুল থাকতো না লম্বা দাড়ি! রাজকুমারীর নৃত্যসভায় সিন্ড্রেলা কি নাচতো! প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে এলেনা আর ফ্রাঞ্চেস্কা লিখেছিলেন একশ জন বিপ্লবী সাহসী সফল নারীর জীবনের সত্যিকারের রূপকথা গুড নাইট স্টোরিজ ফর রেবেল গার্লস। এই গল্প পড়ে মেয়ে শিশুরা বুঝবে, নারীও পারেন নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে নিতে। তারাও বুঝবে, সাফল্য কখনো কেবলমাত্র নারী বা পুরুষ হওয়ার ওপর নির্ভর করে না, সাফল্য নির্ভর করে ব্যক্তির ওপর; সমান সুযোগ পাওয়ার ওপর। এই বইয়ের বিজ্ঞাপনে অভিনব চমক এনেছিলেন তাঁরা। এই বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়েছে সিন্ড্রারফেলা একজন অসহায় যুবক, তাকে তার সৎবাবা, সৎভাইয়েরা অত্যাচার করতো। সে খুব কান্নাকাটি করে দিন কাটাতো, এইসময় তাকে একজন দেবদূত সাহায্য করে। একদিন রাজকন্যার নৃত্যসভায় তাদের নিমন্ত্রণ আসে, দেবদূত তাকে সেই সভায় কাঁচের লোফার জুতো পরে পাঠায়। এখানে দেবদূতকে সিন্ড্রারফেলা জিজ্ঞাসা করে— “কাঁচ তো বিপদজনক?” তখন দেবদূত বলেন—“সুন্দর হওয়া মানে অত্যাচার সহ্য করা, সেটা তুমি জানো না?” রাজকন্যার সঙ্গে নাচতে নাচতে রাত বারোটা বেজে যায়, তখন থেকে কারফিউ শুরু হয়। সিন্ড্রারফেলা সেইসময় জুতো রেখে পালিয়ে যায়। পরের দিন রাজকন্যা তাকে খুঁজে বের করে। এখানেই বিজ্ঞাপন শেষ হয়ে স্ক্রিনে একটি প্রশ্ন ভেসে ওঠে— আমাদের ছেলেদের যদি এরকম রূপকথা না শোনাই, তবে আমাদের মেয়েদের কেন পড়ে শোনাবো?
রূপকথা ও সমতা
আলোচনার শুরুতেই আমরা পাঁচটি ধারণার উত্থাপন করেছিলাম। আমরা জানি পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কয়েক হাজার বছর ধরে নারীদের নিয়ন্ত্রিত করে রাখা হয়েছে। অন্য ক্ষেত্রের মতো রূপকথাতেও পিতৃতন্ত্র সমাজ থাবা বসিয়েছে, ফলে রূপকথার পৃথিবীও পিতৃতান্ত্রিক। তবে এ ক্ষেত্রে আমরা খুবই সচেতনার সঙ্গে এই বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন করতেই পারি। কেন? এই যে দিনের পর দিন রূপকথাতে বৈষম্য দেখেও নির্লিপ্ত ভূমিকায় আমরা অভিনয় করছি, এই অভিনয়কে বিশ্লেষকরা সমষ্টিগত অসচেতনার আখ্যা দিয়েছেন। সত্যিই জানি না, আর কতদিন চলবে এই অসমতা। আজকে আমাদের নতুন করে রূপকথা লেখার সময় হয়েছে। আজকে কোনো নারী প্রিন্স চার্মিং-এর জন্য অপেক্ষা করে না। নিজের জীবন নিজেই গড়ে নিচ্ছে। সৎমা, সৎমেয়ের মধ্যে শত্রুতা নেই, বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। স্বাধীনচেতা প্রতিটি নারী সম্মান পাক, গলা ফাটিয়ে নিজের দাবি জানাক। পুরনো রূপকথার দিন শেষ হোক, আমাদের রূপকথায় সন্তানহীনতা ও কন্যাসন্তান জন্মানোকে সমস্যার চোখে দেখা হবে না, আমাদের রূপকথায় রাজপুত্র কষ্ট পেলে চিৎকার করে কাঁদবে, পুরুষ মানুষ বলে চোখের জল ফেলবে না, পুরুষ মানেই কঠোর হতে হবে, এই চিন্তার অবসান হোক। আমাদের রূপকথা হোক সমতার!
পুনঃপ্রকাশ
লেখক: অধ্যাপক ও সমাজকর্মী
ছবি: সংগৃহীত
0 Comments
Post Comment