- 20 May, 2020
- 0 Comment(s)
- 1051 view(s)
- লিখেছেন : তামান্না
যেখানে প্রথম বিশ্ব—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি করোনা ভাইরাস আতঙ্কে তটস্থ; ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কবলে জর্জরিত হয়ে পড়েছে, তখন তৃতীয় বিশ্বে বসে খুব স্বাভাবিক ভাবে আমাদের লেজ সেঁধিয়ে যাবার উপক্রম, ঠিক সেই সময় নিউজ চ্যানেল থেকে দৈববাণী। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন প্রেস কনফারেন্সে বলছেন—‘সেরকম ভয়ানক অবস্থা ভারতে হবে না।’ এখানেই তিনি ক্ষান্ত হননি, আরও জানিয়েছেন—‘যে কোনও খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি রয়েছে ভারত।’ এই খবর শুনে আমি যথারীতি বিমোহিত হয়ে পড়লাম। আমার মনে হল, তৃতীয় বিশ্ব আদতে নিঃস্ব নয় তাহলে, চন্দ্রবিন্দুই বোধহয় ভুল বুঝিয়েছিল!
কেন্দ্রের আশ্বাসবাণীকে জীবনের ধ্রবতারা করে বেশ দিন কাটনো যেত। তবে, নচ্ছার স্মৃতি তা হতে দিল না। মনে পড়ে গেল, ২২ মার্চের কথা। সেদিন জনতা কার্ফু ছিল। আমাদের ‘রাজা’ সেদিনটি ধার্য করেছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহিত ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার জন্য। বিকেল পাঁচটায় হাততালি, থালা-বাটি, কাঁসর-ঘণ্টা বাজলো। ঘণ্টা খানেক পরে হোয়াটসঅ্যাপে সহকর্মীর মেসেজ দেখে মনটা কেঁপে উঠল। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর বোন পশ্চিমবঙ্গের কোনও এক সুপারস্পেস্যালিটি হাসপাতালের নার্স। ২২শে মার্চ সারাদিন ধরে পুণে, মুম্বাই, নাগপুর— ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়িতে ফিরে আসা লোকজনের থার্মাল স্ক্রিনিং করেন। প্রায় তিনশো লোকের টেস্ট করা হয়, কয়েকজনের কোভিড পজিটিভ পাওয়া যায়। অথচ নিজের প্রোটেকশনের জন্য N95 মাস্ক পাননি। বিদেশের মত ফুল প্রটেক্টিভ গিয়ার তো এখানে স্বপ্ন। সেদিন প্রথম জানলাম স্বাস্থ্যকর্মীরা কী বিপদে আছেন।
আমাদের দেশে ওয়ার্কিং ফ্রন্টলাইন ফোর্সে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের বারবার একই অভিযোগ করতে দেখা যাচ্ছে। কোথাও পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। এআইআইএমএস-এর (All India Institute of Medical Sciences) চিকিৎসকেরা ১৬ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন উপযুক্ত পিপিই (Personal Protective Equipment) তাঁদের নেই। অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
এতদিন পরেও একই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীরা। এমনকি, স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলস পরিশ্রম করার পরেও তীব্র হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। ৪ এপ্রিল প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ট্যুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেই ভিডিওতে দেখা যায় উত্তরপ্রদেশের বান্দা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক জুনিয়র ডাক্তার অভিযোগ করছেন— তাঁর করোনা আক্রান্ত একটি আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডিউটি পড়ে। তিনি নিজের সুরক্ষার জন্য স্যানিটাইজার ও মাস্ক চান। এরপরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে বলেন— ‘এখান থেকে চলে যান নইলে হাত-পা ভেঙে দেব আপনার ... যোগীজির আদেশ এসেছে আপনার মতো লোকেদের বের করে দেওয়ার।’ কর্তৃপক্ষ সেই জুনিয়ার ডাক্তারের বেতন কেটে নেয় এবং তাকে বরখাস্ত করে। এই ঘটনা দেখে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে আর্জি জানান— ‘যোদ্ধাদের প্রতি এই দুঃসময়ে সুবিচার করুন, ওঁদের কথা শুনুন।’ চীন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে মেডিক্যাল শিক্ষার্থী (৪র্থ-৫ম বর্ষের) ও অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারদের ডেকে আনছে, সেখানে আমাদের দেশে ওয়ার্কিং ফ্রন্টলাইন ফোর্সকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অবহেলা এমনকি বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য প্রশাসন সরকারকে তুষ্ট করছে।
এই সময় দেশ জুড়ে আরেকটি ঘটনাপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেককেই বাড়ির মালিক বাড়িছাড়া করছেন। অনেক স্থানে তাঁদের গায়ে হাত তোলার মতো অপমানকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রেসিডেন্ট ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন এই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে অনেক আগে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিল। পরিস্থিতির কোনও রদবদল না ঘটায়, পুনরায় চিকিৎসকদের সংগঠন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছে। চিঠির বয়ানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা আছে। (তথ্যসূত্র: এইসময়, ১৭ এপ্রিল, ২০২০)
সারা দেশেই বিক্ষিপ্ত ঘটনাস্রোতের ধারা প্রবাহ বহমান। দুই মহিলা চিকিৎসককে দিল্লির গৌতম নগরের একটি বাজারে অপমান করা হয়। আবার, মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে স্বাস্থ্যকর্মী এবং ডাক্তাররা স্থানীয় এলাকায় কোভিড পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করতে গেলে তাঁদের উদ্দেশে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়। দু জন মহিলা চিকিৎসক গুরুতরভাবে আক্রান্ত হন। কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী আহত হন। হায়দরাবাদে করোনা আক্রান্ত হয়ে গান্ধী হাসপাতালে একজন রোগী মারা যান। এরপরে রোগীর স্বজনেরা হাসপাতাল ভাঙচুর করে। চিকিৎসকদের মারধর করা হয়। উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের নবাবপুরার নাগফণি এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির কবলে পড়েন স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি হয়। ইটের আঘাতে কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীর মাথা ফেটে যায়। (তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াল ব্যুরো, ১৫ এপ্রিল, ২০২০)
দেশের নানা প্রান্ত থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা লাগাতার অভিযোগ জানাচ্ছেন তাঁদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণের পিপিই নেই। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ১১ মে প্রায় ২০০ জন ইন্টার্ন (২০২০-২১ ব্যাচ) ডিউটি করেননি। তাঁরা জানান, তাঁদেরকে কাজ করতে হচ্ছে করোনা সন্দেহে ভর্তি রোগীদের সাথে। তাঁদের কেবলমাত্র সার্জিকাল মাস্ক দেওয়া হয়েছে, এন ৯৫ দেওয়া হয়নি। এর ফলে অনেক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড পজিটিভ হচ্ছেন। আরজিকর হাসপাতালে সাতজন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। প্রাণ বাজি রেখে আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজ করতে হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর অনুযায়ী, জুনিয়ার চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত সুরক্ষার দাবিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে মিটিং করেন, তাতেও সুরাহা মেলেনি। তারপর তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেন। চিকিৎসকরা তাঁদের জন্য উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার দাবি জানান। (তথ্যসূত্র: News18 বাংলা, ১১ মে, ২০২০) এরকম ভুরিভুরি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। মগের মুলুকে পরিণত হয়েছে দেশ!
করোনাযুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধাদের মধ্যে আশাকর্মীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। ঘরেঘরে গিয়ে প্রাথমিক সমীক্ষা করছেন। একরাশ বিপদের মাঝখানে তাঁরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন। তাঁরা ক্লোজ কন্ট্রাক্টে যেহেতু যাচ্ছেন, তাই আমরা ধরেই নিচ্ছি ওঁরা যথাযথ সুরক্ষা-সরঞ্জাম পেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে ওঁরা কী পেয়েছেন? না, তাঁরা পাননি এন ৯৫ মাস্ক, গ্লাভস, প্রটেক্টিভ গিয়ার! তাঁদের দেওয়া হয়েছে কাপড়ের তৈরি মাস্ক (সার্জিকাল মাস্কও জোটেনি), পঞ্চাশ গ্রাম হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যানবাহন চলছে না বলে তাঁরা কিন্তু অজুহাত দিতে পারেন না। সময় মতো কাজে পৌঁছে যান। এবং প্রতিদিন যে মানুষদের সাহায্য করতে যান, তাঁরা পুরস্কার স্বরূপ তাঁদের দেন যাতনা। তাঁদের পাথর ছুঁড়ে মারে। এএনআই সংবাদ মাধ্যমকে নাগপুরের আশাকর্মী ঊষা ঠাকুর জানান— ‘আমরা সমীক্ষার জন্য গেলে, লোকে আমাদের পাথর ছুঁড়ে মারে। কটু কথা বলে। আপনারা আমাদের বাড়িতে কেন এসেছেন জানতে চান, আমরা বুঝিয়ে বলি, আমরা আপনাদের ভালোর জন্যই কাজ করছি। আপনারা আমাদের তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন, আমরা আপনাদের থেকে এটুকুই চাই।’ (তথ্যসূত্র :NDTV বাংলা, ২২ এপ্রিল, ২০২০) সমস্ত দেশ জুড়ে এভাবেই হেনস্থা করা হচ্ছে আশাকর্মীদের।
8ই মে তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষের ট্যুইট থেকে জানা যায় গুজরাটে মহান প্রধানমন্ত্রীর জন্মস্থান ভাদনগরের মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীরা ধর্মঘটে বসেছেন। তাঁদেরও সেই একই অভিযোগ — কেউ গ্লাভস, স্যানিটাইজার, মাস্ক পাননি। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আন্দোলনে সামিল হন।
‘হয়তো এই ভাইরাস আমাদের সাথে স্থায়ী হবে। হয়তো এই ভাইরাস কোনদিন আমাদের পিছু ছাড়বে না।’ WHO-এর জরুরি বিভাগের বিশেষজ্ঞ মাইক রিয়ান অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, করোনা একটি দীর্ঘকালীন সমস্যায় হয়তো পরিণত হবে, তাই আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে যা চলছে তাতে বিষাদের সুরে বলতেই হচ্ছে — ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে / কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’ (কুসুমকুমারী দাশ)
বিশ্ব জুড়ে কমপক্ষে ৯০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ নার্সেস (আইসিএন) জানাচ্ছে, এটা সঠিক সংখ্যা নয়, কারণ সব দেশের তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি। এই সংস্থা জানিয়েছে পর্যাপ্ত পিপিই ও সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকার ফলেই এত পরিমাণ স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত। আইসিএন-এর চিফ একজিকিউটিভ অফিসার হোয়ার্ড ক্যাটন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মাত্র ৩০টি দেশ, ন্যাশনাল নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের ডেটা এবং সরকারি পরিসংখ্যান ও সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের ভিত্তিতে সমীক্ষা করেই স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার এই সংখ্যাটা জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, ১৩০টি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন এবং অন্তত ২০ লক্ষ নার্স আইসিএন-এ নথিভুক্ত । (তথ্যসূত্র: ঢাকা টাইমস, ৭ মে, ২০২০)
বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মেন্টাল হেলথ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন খবর দেখে শিহরিত হতে হচ্ছে। অবসাদে দেশেবিদেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা আত্মহত্যা করছেন। আমাদের দেশে বেশিরভাগ খবর চাপা পড়ে যাচ্ছে, এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীরা আত্মহত্যা করলে, তাতে পারিবারিক ঝামেলা, প্রেমঘটিত সমস্যার রং চড়ানো হচ্ছে!
এদিকে, এই কঠিন সময়ে দেশে বহালতবিয়তে চলছে চোরাকারবার। পিপিই, কিটের অভাবে যখন দিকে দিকে আওয়াজ উঠছে সেইসময় গত ১৩ মে দিল্লির শুল্ক বিভাগ পাকড়াও করল প্রচুর সংখ্যক পিপিই, কিট, মাস্ক, কাঁচা মাল এবং স্যানিটাইজার। চিনে পাচার হচ্ছিল! গত ৭ এপ্রিল অ্যালকোহল বেসড স্যানিটাইজারের রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তারও আগে ১৯ মার্চ ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড সবরকম ভেন্টিলেটর, সার্জিকাল এবং ডিসপোজেবল মাস্ক, মাস্ক বানানোর কাপড় এবং কভারঅলের রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। (তথ্যসূত্র: এইসময়, ১৪ মে, ২০২০)
আইসিএন-এর রিপোর্ট অনুসারে ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ সংক্রমণে সারা বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ২৬০ জন নার্সের। শুধুমাত্র আমাদের দেশে এই সংখ্যা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে কে জানে। আমাদের দেশে ফ্রন্ট লাইনে ANM নার্সরাও প্রশংসনীয় কাজ করছেন। তাঁদের কথা বিশেষ ভাবে বলতে হয়, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাঁরাও কোনও পিপিই পাননি, এমনকি তাঁরা নিজের টাকায় স্যানিটাইজার, মাস্ক কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। খবরে দেখলাম পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি হাসপাতালের ভিন রাজ্যের নার্সরা গণহারে ইস্তফা দিচ্ছেন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়তো দেশের অন্য কোনও স্থানে অচিরেই দেখা যাবে। কারণ করোনা আক্রান্তের গ্রাফ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। আগামী মাসে আক্রান্তের সংখ্যা একলাফে অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই যে দেশের সরকার ফুল-বাতি-তালি-থালি-স্তুতিবাক্য দিয়ে সান্ত্বনা দেয়, সে দেশে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের দেখা পাওয়া তো ভার হবেই!
এইমসের চিকিৎসকরা একটি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন, ‘এক দিনের জন্য সরকারি ডাক্তার হয়ে যান, নিজের গায়ে চাপিয়ে নিন সাদা অ্যাপ্রন, তারপরে বুঝতে পারবেন আমাদের দুরবস্থা৷’ (তথ্যসূত্র: এইসময়, ১৭ এপ্রিল, ২০২০)
বাস্তবে স্বাস্থ্যকর্মীরা কী পরিমাণ দুরবস্থার শিকার আমরা কি বুঝতে পারছি? গদিতে যাঁরা বসে আছেন তাঁরা কি টের পাচ্ছেন? মনে হয় না, কেউ তিল পরিমাণ তাঁদের ব্যথায় সমব্যথী হতে পারবো। যাইহোক, কয়েকদিন আগে মহাসমারোহে স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান জানানো হয়েছে। দেশের হাসপাতালগুলিতে বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান থেকে পুস্পবৃষ্টি করা হয়। এর পিছনে কত খরচ হয়েছিল, সে আলাপ না হয় এই আলোচনায় মুলতবি রাখলাম। তবে এত সম্মান প্রদানের পর, স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে থাকলো পেনসিল!
দেশের সেবায় যাঁরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করছেন তাঁদের প্রাপ্তি কি কেবল সম্মান প্রদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করেছেন। এরপরে আমাদের দেশের অবস্থান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন নেট নাগরিকরা। অনেকেই বলেন, বেতন বৃদ্ধি এ দেশে কল্পনাতীত ব্যাপার, দয়া করে স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই দেওয়া হোক। এত বড় বিপদে আমাদের কান্ডারী স্বাস্থ্যকর্মীরা, কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তা কোথায়?
তাঁদের প্রতি যে জঘন্য আচরণ প্রদর্শিত হয়ে চলেছে তার প্রতিবাদে আমরা সেভাবে সোচ্চার হয়েছি কি? জানি, আগামী দিন ভয়ানক হতে চলেছে, তাই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে পারছি না। বরং ‘I believe in Angels’— এই ‘Angels’-দের প্রতিবাদের সুরে আমার, আপনার গলা মেলানোর সময় হয়েছে। আর কত! চলুন, অজস্র চিন্তা ও ক্ষুদ্র আশা নিয়ে প্রতিনিয়ত লড়ছেন যাঁরা, তাঁদের এই মরুপ্রান্তরে মরীচিকা ধরতে সাহায্য করি।
আশাকর্মীদের ছবি নেট থেকে সংগৃহীত।
লেখক অধ্যাপক
0 Comments
Post Comment