- 02 July, 2025
- 1 Comment(s)
- 1072 view(s)
- লিখেছেন : অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলার মেয়েরা স্কুলে যেতে শুরু করল, পরবর্তীকালে কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখল, দুই একজন লড়াই করে মেডিক্যাল কলেজেও স্থান করে নিল, শিক্ষয়িত্রী অথবা ডাক্তার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করল। পড়াশুনো বা কাজের তাগিদে এরা বাড়ির বাইরে দিনের অনেকটা সময় কাটাত। এবং এদের প্রকৃতির ডাকও নিশ্চয় দুই একবার আসত। মূত্রত্যাগ বা মলত্যাগের তাগিদ। ঋতুস্রাব চললে তো আরো মুশকিল! জামাকাপড়ে লেগে যাওয়ার আশংকা। তবে মেয়েরা ঋতুস্রাব সামলানোর জন্য তখন ঠিক কী ব্যবহার করত ভালোভাবে জানতে পারা যায়নি। আমরা অনুমান করতে পারি মাত্র। আজকের দিনের মেয়েরা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করলেও কয়েক ঘণ্টা পর পর তা পরিবর্তন করতে হয়। আর ছেঁড়া কাপড় হলে তো কথাই নেই। তার শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কতো আর! তাহলে বাথরুম যাওয়া তো খুবই দরকার। বস্তুত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলো বা অফিস কাছারি বলো বাথরুম না থাকলে চলবে কেন? পুরুষদেরও দরকার। তবে তাদের পিরিয়ড হয় না। যত্রতত্র মূত্রত্যাগ করার লাইসেন্স আছে। অর্থাৎ মেয়েদেরই বেশি দরকার। আমরা যারা নারী-ইতিহাস চর্চা করি, তারা পর্দা ভেঙ্গে মেয়েদের জনপরিসরে পা রাখার বৃত্তান্ত লেখার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ঘরে বাইরে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা কাটাতে হলে যে অপরিহার্য ব্যাপারটির বন্দোবস্ত থাকা দরকার – বাথরুম, সেই বাথরুম তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে পেয়েছিল কি না সেটা জানতে পারি না। যে সব মেয়েরা স্মৃতিকথা, আত্মকথা লিখেছেন, তাঁরা এইসব বিষয়ে আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে নারী-ইতিহাস চর্চায় নিয়োজিত ঐতিহাসিকদের মধ্যে এতদিন প্রশ্নটাও ওঠেনি তেমন ভাবে। এই বিষয়গুলি গোপন থাকার কথা, এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা ভদ্র, শালীন আচরণের পরিপন্থী। গোপন কথাটি থাক গোপনে। কিন্তু এই গোপন কথাগুলো টেনে বের করে আনার, নীরবতা ভাঙার প্রয়োজন সাম্প্রতিককালে অনুভূত হয়েছে।
বেথুন স্কুল নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। বেথুনের কোনও ছাত্রী বাথরুমের বিষয়ে লেখেননি। বিশ শতকের গোড়ায় শান্তা দেবী লিখছেন, স্কুল ছুটির পরও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হত তাদের। বাড়ি খুব কাছে হলেও হেঁটে যাওয়াটা দস্তুর ছিল না। স্কুল বাসেই করেই যাওয়া আসা করতে হত। বাসের সংখ্যা সীমিত অথচ স্কুলবাসে চড়েই ছাত্রীদের বাড়ি ফিরতে হবে। বাসগুলো কয়েক রাউন্ড ট্রিপ করত। শান্তা দেবীর মতো অনেকেরই বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সন্ধে হয়ে যেত। অর্থাৎ দিনের অনেকগুলো ঘণ্টা স্কুলে বসে থাকা। বাথরুম তো থাকতেই হবে নাহলে তো এতক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকা অসম্ভব। কিন্তু বাথরুমের কথা তো শান্তা দেবী লেখেননি! লেখেননি আর কেউই।
কাদম্বিনী যখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলেন তখন তিনি একমাত্র ছাত্রী। শিক্ষকরাও সবাই পুরুষ। এই একা মেয়ে এতক্ষণ কলেজে থাকতেন, তার বাথরুমের প্রয়োজন কীভাবে মিটত? জানিনা। কাদম্বিনী লিখে যাননি, বলে যাননি কিছু। যাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত হয়েছিলেন, বিশেষত বিপ্লবী দলে নাম লিখে ঘর ছেড়েছিলেন, পুরুষ সহবিল্পবীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে দেশকে স্বাধীন করার ব্রত নিয়েছিলেন তাঁদের ‘গোপন’ কথাগুলোও জানতে পারি না। পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য গোপন ডেরায় লুকিয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। আবার ধরা পড়ার পর কারাবন্দী অবস্থায় তাঁরা কীভাবে সামলাতেন ঋতুস্রাব? স্বাধীনতা-উত্তর পর্বে একজন রাজনৈতিক কর্মী কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জেলের ভেতর ঋতুযাপনের কথা লিখেছেন। কিন্তু তার আগে কমলা, কল্পনা, বীণারা কীভাবে জেলের ভেতর সামলাতেন তাঁদের ঋতুস্রাব? বাথরুমের ব্যবস্থা কেমন ছিল? অপরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা বা ব্যবস্থা না থাকার কারণে ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশনের ভয় ছিল কি? জানতে চাই কিন্তু জানার উপায় নেই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বভারতী স্থাপন করেছিলেন, তখন মেয়েদের জন্য আলাদা বাথরুমের কথা তাঁর মাথায় ছিল কি? বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাথরুমের কী ব্যবস্থা ছিল? ষাটের দশকে বিশ্বভারতীর একজন পড়ুয়া জানিয়েছেন, ‘বাথরুমের প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে যেতাম।’
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে রেল চালু হয়ে গেল। যাত্রীদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। তীর্থ করতে বেরিয়ে পড়ত মেয়েরা। সদলবলে। অবশ্য পুরুষ সঙ্গী বা পাহারাদার থাকত সঙ্গে। কত মেয়েরা যে কাশী বৃন্দাবনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিত তার ইয়ত্তা নেই। তাদের মধ্যে বয়স্কা ছাড়াও অল্পবসী মেয়েরাও থাকত। কিন্তু যতদূর জানি, ১৯০৯ সাল পর্যন্ত ট্রেনে বাথরুম ছিল না। অখিল চন্দ্র সেন নামের জনৈক ব্যক্তির ট্রেন চলাকালীন মলত্যাগের চরম তাগিদ এসেছিল। কিন্তু বাথরুমের অভাবে নিজেকে স্বস্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই ব্যক্তি ব্রিটিশ সরকারকে চিঠি লিখেছিল। শোনা যায়, তার আবেদনে সাড়া দিয়েই নাকি ট্রেনে বাথরুম চালু হয়েছিল। স্টেশনে ট্রেন থামলে নেমে স্টেশনের বাথরুম সদব্যবহার করতে হত। কিন্তু বাক্সপেঁটরা ট্রেনের কামরায় ফেলে রেখে সেটা কীভাবে সম্ভব হত জানি না। আর এক একটা স্টেশনে ট্রেন কতক্ষণ থামত তাহলে? হয়তো একজন মহিলা স্টেশনে নেমে বাথরুম গেছে, আর ট্রেন ছেড়ে দিল। তারপর?
রোকেয়া হোসেন তাঁর ‘অবরোধবাসিনী’ তে মেয়েদের রেলযাত্রার মর্মান্তিক চিত্র এঁকেছেন। তাঁর ভাষায়, মেয়েরা হল ‘হিউম্যান লাগেজ’। তিনি কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের বিবিদের রেলযাত্রার বিবরণ দিয়েছেন। লিখেছেন, প্রথমে বিবিদের প্রত্যেককে পাল্কিতে বিছানা পেতে, একটি তালপাতার হাতপাখা, এক কুজা পানি এবং একটা গ্লাসসহ বন্ধ করা হয়। তারপর সেগুলোর ওপর পরতের পর পরত চাপিয়ে সেলাই করা হত। এই সেলাই করতে তিন চার ঘণ্টা লেগে যেত। পরে পাল্কিগুলি ট্রেনের ব্রেকভ্যানে তুলে দেওয়া হত। আর মলমূত্রের কী ব্যবস্থা করা হত? মেয়েরা গন্তব্যে পৌঁছত অর্ধমৃত অবস্থায়। হয়তো মলমূত্র মাখা শরীরে। সেকথা অবশ্য রোকেয়া লিখে যাননি।
এখনো লোক্যাল ট্রেনে বাথরুম নেই। সেই ট্রেনগুলো দুই থেকে তিন ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করে। ওই সময়ের মধ্যে মেয়েদের বাথরুম পেতে পারে না? পুরুষদেরও পেতে পারে, কিন্তু মেয়েদের প্রয়োজন বেশি, তাদের ঋতুস্রাব হয়। আর মেয়েদের দরকার আড়াল। আমার ছাত্রী যারা ভেঙে ভেঙে প্রায় পাঁচ ছয় ঘণ্টা জার্নি করে আসে, তাদের স্টেশনের নোংরা বাথরুমে বারবার যেতে হয়। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে ইউরিন ইনফেকশনে।
আমি নিজে মনে করি, নারী পুরুষের আলাদা বাথরুম থাকা উচিত গণপরিসরে অথবা গণপরিবহণে। এবং লিঙ্গনিরপেক্ষ টইলেটও। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দূরপাল্লার ট্রেনে বা প্লেনে নারী পুরুষের আলাদা বাথরুম থাকে না। অথচ স্টেশনে বা এয়ারপোর্টে তো থাকে!
এবার নিজের কথা একটু বলি। আমি যে কনভেন্ট স্কুলে পড়তাম, সেখানে বাথরুমের কোনো সমস্যা ছিল না। ছিল না কলেজেও। কিন্তু শুনতে পাই যে গ্রামাঞ্চলে টয়লেটের অভাবে বহু মেয়ে স্কুলছুট হয়, বিশেষত তাদের পিরিয়ড শুরু হবার পর থেকে। পাহাড়ের যে সরকারী কলেজে প্রথম চাকরি করতে গেলাম সেটায় ছাত্রীদের সঙ্গে বাথরুম শেয়ার করতে হত। জল ছিল না। অত্যন্ত নোংরা ও দুর্গন্ধময় বাথরুম। বাড়ি কাছে বলে যখন তখন ছুটে যেতে পারতাম। অধ্যক্ষ মশায়কে বার বার বলেছিলাম বাথরুমের কথা। উনি রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘তোমরা মেয়েরা পাখি হয়ে যাও। পাখির মতো সলিড ইউরিন করো তাহলেই সমস্যা মিটে যাবে।‘ আজকের দিনে হলে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দিতাম। তখন সবে চাকরিতে জয়েন করেছি তাই ওই অসভ্য রসিকতা হজম করতে হয়েছিল। এখনও নানা কাজে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় যেতে হয়। এক একটি প্রতিষ্ঠানে বাথরুমের ব্যবস্থা বেশ ভাল। হয়তো মহিলা কর্মীদের সক্রিয় উদ্যোগ রয়েছে এর পেছনে। কিন্তু কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরে গেলে চিত্রটা উলটো। মহিলাদের বাথরুমের অবস্থা নারকীয়। অথচ নানান গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় কাজেই আমন্ত্রণ জানায় আমাদের। দুই চার ঘণ্টার পথ পেরিয়ে যাই কিন্তু বাথরুমের হাল দেখে আঁতকে উঠি।
বেড়াতে গেলে প্রথমেই হোটেলের বাথরুম দেখি। দামী হোটেল হলেও বাথরুম যে ঠিকঠাক হবে চোখ বুজে বলা যায় না। প্রথম দর্শনে ঘেন্না লেগে গেলে, সেটা আর কিছুতেই কাটে না। মনে হয়, হারপিক আর ব্রাশ বয়ে নিয়ে যাই। ঘেন্নার থেকে ওটাই ভালো। অর্থাৎ কাজ বা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে যতই হিল্লিদিল্লি করি না কেন, বাথরুম নিয়ে সবসময় একটা অস্বস্তি। একবার অক্সফোর্ডে গেছিলাম কনফারেন্সে। শৌচাগারে এক ফোঁটা জলের ব্যবস্থা নেই। শুধু গুচ্ছ গুচ্ছ কাগজ। মেঝেতে কার্পেট। ফ্লাশ করলে পটিতে জল বেরোয় কিন্তু হাত ধুতে গেলে বাইরে যেতে হবে। আমার এক বন্ধু বলেছিল, সে বিদেশে গেলে বাথটাবের ফোয়ারায় শৌচকর্ম করত। ভারতীয় অভ্যাস, কাগজ আমাদের চলে না। ঘেন্না লাগে। একবার বাংলাদেশের পাবনায় কনফারেন্সে গেছি। থাকার ব্যবস্থা সাধারণ। বাথরুমের অবস্থা কহতব্য নয়। এদিকে পৌঁছনোর পর থেকেই আমার ভয়ঙ্কর পেটখারাপ। বারবার যেতে হচ্ছে। আমার বন্ধুটির আবার পিরিয়ড হয়েছে। সেই দুইদিন আমরা যে কীভাবে কাটিয়েছি আমরাই জানি।
কিছুদিন আগে সরকারী কলেজের এক অধ্যাপিকা, যার পোস্টিং ছিল শহর থেকে অনেক দূরের এক কলেজে, তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছিল। প্রায় চার ঘণ্টার বাসজার্নি কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত। বাস থামলেই বাসের পুরুষ যাত্রীরা নেমে গিয়ে মূত্র ত্যাগ করত। কিন্তু পথে মেয়েদের জন্য কোন ব্যবস্থা ছিল না। একজন চাপ সহ্য করতে না পেরে খোলা মাঠে বসতে গেছিল, তাকে মাঝ পথেই উঠিয়ে দেওয়া হয়।
সত্তর-আশির দশকের বাংলা ও হিন্দি সিনেমায় সেলসগার্লদের খুঁজে পাই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাবান শ্যাম্পু বিক্রি করতে তারা। আজ আর তাদের দেখতে পাওয়া যায় না। ১৯৭৪ সালে রাস্তাঘাটে সুলভ শৌচালয় স্থাপিত হল। মেয়েরা পথেঘাটে সেগুলো কি ব্যবহার করত? এখন যারা মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টেটিভের পেশায় আছে, অথবা উবের চালায়, অর্থাৎ পথে পথে ঘুরে যাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়, তারা কী ধরনের অসুবিধের সম্মুখীন হয় আমরা জানিনা।
লক্ষ করেছি, বয়স বাড়ার সঙ্গে আমাদের বাথরুম নিয়ে খুঁতখুঁতানি বেড়ে যায়। বারবার জল ঢালি বাথরুমে। মনস্ত্বত্ত্বের পরিভাষায় OCD তে আক্রান্ত হই অনেকে। ঋতুবন্ধ-পরবর্তী মানসিক সমস্যা যা সাধারণ ওষুধ খেলেই এখন সেরে যায়। কিন্তু এক একজন বৃদ্ধাকে দেখেছি বাথরুমে জল ঢালছে তো ঢালছে, বাথরুম গেলে হাত ধুচ্ছে তো ধুচ্ছেই। সচেতনতার অভাবে চিকিৎসা হয় না, রোগ বেড়ে যায়। তবে নোংরা বাথরুম ব্যবহার করার স্মৃতি কেন জানি আমার স্মৃতি থেকে মুছে যায় না। ঘুরে ফিরে আসে। নাকে নোংরা বাথরুমের গন্ধ লেগে থাকে। ঘেন্নার ভাবটা মুছে যায় না। কে জানে এটাও মানসিক সমস্যা কি না। ভিজে বাথরুম ঘেন্না লাগে অথচ নিজেই জলের পর জল ঢেলে যাই। পশ্চিমী টইলেট ঘরের বাইরে ব্যবহার করতে ঘেন্না লাগে। সবসময় বাথরুম থেকে একটা উদ্বেগের চোরাগোপ্তা স্রোত মনের গহনে বয়ে যায়। হয়তো আমাদের পূর্বনারীদের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি। কিন্তু সে ইতিহাস লেখা হয়নি। হবেও না সম্ভবত। কারণ সেকালিনীরা সেই বিষয়ে আমাদের কিছু বলে যাননি।
1 Comments
Monika Acharya
06 July, 2025
Fabulous ma'am ♥️,you and your thoughts are just amazing.. really it is very essential to know for human being.
Post Comment