জিন্নাতারা লড়াই করছেন সম্পত্তির অধিকার নিয়ে

  • 05 February, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 531 view(s)
  • লিখেছেন : আফরোজা খাতুন
জিন্নাতারা এখন আইসিডিএস- এর কর্মী। বাইরে কাজে বেরিয়ে তিনি অনেক সাহসী হয়ে উঠেছেন। সন্তানদের হক আদায় করেই ছাড়বেন। স্বামীর ভাগের সম্পত্তি পুরোটা পেলে বাচ্চাগুলোর দিনের খাবার ঠিকমতো জুটে যেত। খাবারের টানাটানিতে তিন মেয়ের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ছেলেরাও পড়তে পারেনি রোজগারের তাগিদে। তাঁর দাবি, বাপ মারা গেলে তাঁর ভাগের সম্পত্তি থেকে সন্তানদের হক মেরে দেওয়াকে শরিয়ত বলে চালানো বন্ধ করতে হবে। (মুসলিম সম্পত্তি আইন পর্ব-৪)

২০০০ সাল। বাঁকুড়ার জিন্নাতারার বয়স তখন ৩৪ বছর। স্বামী শেখ জাবেরুল মারা গেলেন। জিন্নাতারার পরিবার চলত স্বামীর ব্যবসার আয়ে। তাঁর সংসারের উপার্জন বন্ধ হলো। এদিকে ছটি সন্তান। ছোটটি কঠিন রোগে আক্রান্ত। নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতেও জিন্নাতারার কাছে আইনের ফতোয়া আসতে দেরি হয়নি। স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশ দিন পেরোতেই শ্বশুর ও স্বামীর ভাই তাঁদের অধিকার হারানোর কথা ঘোষণা করে জানিয়ে দিলেন বাচ্চাদের খাওয়া পরার দায়িত্ব জিন্নাতারাকে নিতে হবে। শ্বশুরের ধানী জমি, বাড়ি কিছুই মৃত শেখ জাবেরুলের পরিবার পাবে না। অথৈই জলে জিন্নাতারা। বাচ্চাদের মুখে একবেলা খাবার তুলে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর নেই। বাচ্চাদের বাঁচানোর জন্য শ্বশুর, ভাসুরের হাতেপায়ে ধরে সামান্য একটু জমি পেলেন। তবে সে জমি মৌখিকভাবে দিয়েছেন। তাঁদের দানে স্বত্ত ত্যাগ নেই। তাই জিন্নাতারার সন্তানদের কোনও হক বর্তায়নি। বরং তাঁদের তাঁবেদারি করে না চললে হুমকি আসে।

জিন্নাতারা এখন আইসিডিএস- এর কর্মী। বাইরে কাজে বেরিয়ে জিন্নাতারা অনেক সাহসী হয়ে উঠেছেন। মনের ক্ষোভ আর চেপে রাখতে চান না। স্বামীর ভাগের সম্পত্তি পুরোটা পেলে বাচ্চাগুলোর দিনের খাবার ঠিকমতো জুটে যেত। খাবারের টানাটানিতে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তিন মেয়ের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ছেলেরাও পড়তে পারেনি, রোজগারের তাগিদে। অসুস্থ ছোট ছেলেকে চিকিৎসা করাতে মাঝেমাঝে আসেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। দেখা হলো সেখানেই। জমিজমা সংক্রান্ত অনেক কাগজ তাঁর সঙ্গে। তিনি নাকি হন্যে হয়ে কোনও দরদি উকিল খুঁজছেন। যিনি তাঁর স্বামীর প্রাপ্য সম্পত্তি সন্তানদের আদায় করে দিতে পারেন। স্বামী মারা গেল বলে শ্বশুর, ভাশুর মৃতের পরিবারকে ভিখিরি বানাবে, ধর্মমতে এমন আইন চলতে পারে না বলেই তিনি মনে করছেন। জিন্নাতারা বললেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জায়নামাজে বসে আল্লার কাছে দরবার করছি। কই ওদের ইমান তো জাগল না। চোখের সামনে ছেলেমেয়েদের জীবন তছনছ হয়ে গেল। বাপ মরা বাচ্চাদের আরও আগলে রাখার কথা দাদু, চাচাদের। অথচ এমন আইন হয়ে আছে যার দাপটে বাপ হারানোর সাথে সাথে সহায় সম্পত্তি সব হারাতে হলো ওদের। জীবনে যখন কোনও সুখই পেলাম না তখন বাকি জীবনটা কোর্টে ঘুরেই কাটাবো। তবে কোর্টে যাওয়ার টাকা নেই। তাই  আর্জি জানিয়ে বেড়াচ্ছি মানুষের কাছে। আমার সন্তানদের মতো বাপ হারিয়ে সম্পত্তি  থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বাঁকুড়ার এরকম আরও কিছু পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হতে  পেরেছি। ঠিক করেছি আমরা একসঙ্গে কোর্টে যাব। এখন সবার কাগজ জোগাড় হচ্ছে। মানুষের অনিষ্ট করা আইনকে নাকি পালটানো যায়। তাহলে এই আইন এখনও কেন পাল্টাচ্ছে না? আমরা নিজেদের হক চাইব, আর চাইব আমাদের মতো কারো কপালে এমন দুর্ভোগ যেন না ঘটে।’ আত্মবিশ্বাসী জিন্নাতারাকে দেখে মনে হলো ঝড় উঠছে। জোরালো হচ্ছে ভারতে মুসলিম পৈতৃক সম্পত্তি-আইন সংস্কারের দাবি।  

0 Comments

Post Comment