স্বামীর মৃত্যুর কারণে তাহেরা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত

  • 31 May, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 660 view(s)
  • লিখেছেন : আরমিন খাতুন
২০১৮ সালে তাহেরার স্বামীর কিডনির সমস্যা জনিত রোগ ধরা পড়ে। ফিরে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ২০২১ সালে তাহেরার স্বামী কাদের সেখ মারা যান। মারা যাবার চার দিন পর শাশুড়ি, জা-ভাসুর তাহেরার ঘরে তালা দিয়ে দেন। তাঁরা বলেন, ধর্মীয় আইনে তাহেরা এবং তার সন্তানের  আর কোনও অধিকার নেই এই পরিবারের সম্পত্তিতে ।

হাওড়া জেলার মেয়ে তাহেরার বিয়ে হয় হুগলির কাদের সেখের সঙ্গে ২০১৪ সালে। বিয়েতে ছেলের পরিবারের পণের দাবি ছিল এক  লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ, সাড়ে পাঁচ ভরি গহনা ও দুটি আলমারি। বিয়ের দুবছর পর তাহেরার একটি পুত্র সন্তান হয়।  স্বামীর এমব্রয়ডারির দোকান ছিল সুরাটে। বিয়ের পরে তাহেরা স্বামীর সাথে সুরাটেই থাকতেন। পারিবারিক কারণে তাহেরা সুরাট ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসেন ২০১৭ সালে। ২০১৮ সালে তাহেরার স্বামীর কিডনির সমস্যা জনিত রোগ ধরা পড়ে। তিনিও ফিরে আসেন নিজের রাজ্যে। কিন্তু দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ২০২১ সালে তাহেরার স্বামী কাদের সেখ মারা যান। মারা যাবার চার দিন পর শাশুড়ি, জা-ভাসুর তাহেরার ঘরে তালা দিয়ে দেন। তাঁরা বলেন, ধর্মীয় আইনমতে তাহেরার  আর কোনও অধিকার নেই এই ঘরে। শাশুড়ি মনে করেন তাহেরা  ঠিকভাবে সেবা করতে পারেনি  বলেই নাকি তার স্বামী মারা গেছে। ঘর কেড়ে নিলেও তাহেরা শ্বশুরবাড়ি ছাড়েননি। অবহেলা সহ্য করেই শ্বশুরবাড়িকে আগলে ধরেছেন। শিশুপুত্রকে তার বাপের ভিটেতেই মানুষ করবেন বলে। যদিও  ভিটে আর শিশুটির বাপের নয়। তাহেরার নয়, তাহেরার বাচ্চারও নয়। পিতা বেঁচেথাকালীন পুত্রের মৃত্যু হলে সেই মৃত পুত্রের সন্তান ও স্ত্রী মৃতের পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন না শরিয়ত আইন অনুযায়ী। এই অর্থনৈতিক বঞ্চনা থেকে মুক্ত করার জন্য অনেক পরিবারে দেখা গেছে মৃত সন্তানের ছেলেমেয়েদের নামে জমি লিখে দিতে। তবে সেই দান যদি কেউ না করেন তাহলে মৃতের পরিবার নিঃস্ব। কারণ বসতভিটে, চাষজমি, সোনা, গহনা, অর্থ কোন সম্পত্তিতেই মৃতের পরিবারের হক নেই মুসলিম পারিবারিক আইনে। তাহেরা বুঝতে পেরেছেন তার সন্তানকে স্বামীর পরিবার কিছুই দেবে না। আর দাদুর মৃত্যুর পর তো আর সম্ভাবনাই নেই। সম্পত্তির মালিক তখন তাহেরার স্বামীর ভাইবোনেরা।  

 

তাহেরা আর তার সন্তানের খাবারের সংস্থান কিছুটা তাহেরার মা করেন। অতি সম্প্রতি খুব সামান্য মাইনেয় তাহেরা একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ যোগাড় করেছেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক চাপে তিনি প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কারণ বাড়ি থেকে তাড়াতে না পেরে শাশুড়ি, জা মিথ্যা অপবাদের চাপে ফেলেছে তাঁকে। তাঁর বিরানব্বই বছরের শ্বশুরের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের গল্প ফেঁদেছে। শুধু একটা ঘরের দাবি তাহেরার। সেটা নিয়েই শরিকি জটিলতা। আপাতত স্থানীয় রাজনৈতিক দলের চাপে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে পারছেন না। দুশ্চিন্তায় তাঁর শরীরে অসুখ বাসা বেঁধেছে। কারণ শ্বশুরের অবর্তমানে সন্তানসমেত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তিনি? 

লেখক : গবেষক (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) 

ছবি : সংগৃহীত 

 

0 Comments

Post Comment