- 18 January, 2024
- 0 Comment(s)
- 288 view(s)
- লিখেছেন : বিপাশা সাহা
যে নদী খরস্রোতা, তাকে বাঁধ দিয়ে খুব একটা সুবিধা করা যায় না। রোকেয়া হলেন সেই খরস্রোতা নদীর মতন যে আপন মনে, আপন বেগে বয়ে চলেছিলেন নারী শিক্ষা ও নারী চেতনার মহাসমুদ্রের দিকে। পারিপার্শ্বিক বাধা তার একার লড়াইকে থামিয়ে দিতে পারেনি। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বাধাকে সজোরে আঘাত করেছিলেন।
‘নারীবাদ’ কী? সে সম্পর্কে একটু ধারণা করে নিতে পারি রোকেয়ার নারীবাদী ভাবনা-চিন্তা আলোচনা করার আগে। নারীবাদের মতাদর্শ ও কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু বিভ্রান্তি আমাদের মাঝে কাজ করে। নারীবাদ এমন একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পদক্ষেপ যা সেই সমস্ত পদ্ধতি, সংগঠন এবং মনোভাবকে মুছে ফেলতে চায়, যেগুলি পুরুষ প্রভুত্বকে প্রতিপালন করে।
বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সর্বপ্রথম সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের দাবি তুলে নারী মুক্তি আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন রোকেয়া। তার পথকে পাথেয় করে আজকের নারী মুক্তি আন্দোলনের ধারাবাহিকতা। তিনি নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্মের নামে মেয়েদের শোষণ গোড়া পর্দাপ্রথা এবং সর্বোপরি নারীকে দীর্ঘদিন ধরে পুরুষজাতির থেকে দুর্বল সাজিয়ে রাখার পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবকে বদলাতে চেয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম 'নারী' কবিতায় বলেছেন—
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”
রোকয়াও নারী পুরুষ সমানাধিকারের বিষয়ে সচেতন করতে বলেছেন —“যে শকট-এর এক চক্র বড় (পতি) এবং এক চক্র ছোট (পত্নী ) হয়, সে শকট অধিক দূরে অগ্রসর হইতে পারে না; সে কেবল একই স্থানে (গৃহকোণে) ঘুরিতে থাকিবে। তাই ভারতবাসী উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে পারিতেছেন না।”(অর্ধাঙ্গী) এরপরেই তিনি উদ্ধৃত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নবদম্পতির প্রেমালাপ’ কবিতার কয়েকটি ছত্র এবং দেখিয়েছেন নারীর লক্ষ্য বা চাওয়া কি পরিমাণ কল্পনা ও খেলার জগতে সীমাবদ্ধ। সে প্রসঙ্গে তিনি ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে বলেছেন— “স্বামী যখন পৃথিবী হইতে সূর্য নক্ষত্রের দূরত্ব মাপেন, তখন স্ত্রী একটা বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ্য প্রস্থ (সেলাই করিবার জন্য) মাপে!” অর্থাৎ সাহিত্যে, দর্শনে, সংগীতে, ধর্মনীতিতে, আচরণে, গল্পে নারী বিদ্বেষের যে পরিচয় পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে রোকেয়ার নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
ফরাসি নারীবাদী সিমোন দ্য বোভোয়া, তাঁর ‘The Second Sex’ গ্রন্থে বলেছেন— নারী হয়ে কেউ জন্মায় না, ক্রমশ নারী হয়ে ওঠে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক নিয়মে এক শিশু স্ত্রীঅঙ্গ নিয়ে জন্মায় শুধু এটুকুই। এরপর সমাজ তার উপর ‘Code of Conduct’-এর নানা বিধি আরোপ করে তাকে বুঝিয়ে দেয় সে একজন নারী, প্রথম নয় দ্বিতীয় লিঙ্গ। যা নিছক জৈবিক বা যৌন প্রভেদ (Biological or Sex difference), তা কালক্রমে লিঙ্গবৈষম্য (Gender difference)-এ পরিণত হয়েছে।
সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে কিভাবে ছোট থেকেই পর্দা প্রথার কঠোর প্রভাব ছিল তা তিনি বলেছেন ‘অবরোধবাসিনী’ প্রবন্ধে—“সবেমাত্র পাঁচ বৎসর বয়স হইতে আমাকে স্ত্রীলোকদের হইতেও পর্দা করিতে হইত।... পাড়ার স্ত্রীলোকেরা হঠাৎ বেড়াইতে আসিত; অমনি বাড়ীর কোন লোক চক্ষু ইশারা করিত, আমি যেন প্রাণভয়ে যত্রতত্র—কখনো রান্নাঘরে ঝাঁপের অন্তরালে, কখনো কোন চাকরানীর গোল করিয়া জড়াইয়া রাখা পাটির অভ্যন্তরে ...লুকাইতাম।” এমন এক পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেও রোকেয়া স্বশিক্ষিত হয়েছিলেন। পর্দাপ্রথা সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন—“এদেশে আমাদের অবরোধ প্রথাটা বেশি কঠোর হইয়া পড়িয়াছে। ...এইভাবে সর্বদা গৃহকোণে বন্দিনী থাকায় তাহাদের স্বাস্থ্য ভঙ্গ হয়।” (বোরকা)। বিজ্ঞানমনস্ক রোকেয়া মহিলাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কেও যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তাই বলেছেন, যে বোরকার কাপড় মোটা তার কিছু বিবর্তন করা দরকার আমাদের পরিবেশ অনুসারে। পোশাকের সাথে অজ্ঞতার কোন সম্পর্ক নেই। অজ্ঞতা হয় শিক্ষার অভাবে।
মেয়েদের বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন ‘শিশুপালন’ প্রবন্ধে। একজন ১২-১৩ বছরের বালিকা সে তো মায়ের কর্তব্য পালন শিখতেই পারে না, তাই তার সন্তানের মৃত্যু ঘটে এবং তাতেও দায়ী করা হয় মেয়েটিকে। সমাজের নানা কুসংস্কার অকথা কুকথা তাকে শুনতে হয়। আমরা আজও দেখি একজন সন্তানের ক্ষতি হলে বা কোনো নারীর সন্তান না হলে তাতে শুধুমাত্র নারীটিকেই দোষ দেওয়া হয়, ভেবেও দেখি না সন্তান না হওয়ার পিছনে বা সন্তানের শারীরিক ক্ষতির পিছনে সমানভাবে একজন পুরুষেরও অর্থাৎ তার বাবারও সমস্যাজনিত কারণ থাকতে পারে। আমরা আজও নানাভাবে নারীটিকে দোষ দিয়ে যাই। রোকেয়া বলেছেন—“এখন দেখছি শিশুর রক্ষা করতে হলে আগে শিশুর মায়ের রক্ষা করা দরকার ...মেয়েদেরও খাওয়া-দাওয়ার একটু যত্ন করবেন। মেয়ের বিয়েতে অনেক টাকা খরচ করতে হয় বলে বেচারীদের শুকিয়ে মারবেন না।”
মার্কসীয় দর্শন অনুযায়ী শ্রেণিবিভক্ত সমাজের শোষিত শ্রেণি, শ্রমিক শ্রেণির সাথে একাত্ম করে দেখা হয় নারীজাতিকে কারণ সমাজে নারীরাও শোষিত। তবে নারীর শ্রমের কোনো বাজার মূল্য নেই। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে দুই ধরনের শ্রেণি দেখা যায়, শ্রমিকশ্রেণি ও পুঁজিপতিশ্রেণি। অর্থাৎ শ্রমিকশ্রেণি— যাদেরকে শোষণ করে পুঁজিপতিশ্রেণিরা তাদের পুঁজি আরও বাড়িয়ে তোলে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করা, যার মধ্যে দিয়ে সমান অধিকার পাবে রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিক। যার ফলে প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের দায়িত্ব থাকবে রাষ্ট্রের। নারীরা যার মাধ্যমে স্বনির্ভরতার সঙ্গে কাজ করবে এবং তার ভার নেবে রাষ্ট্র। কোনো পুরুষের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না। যার ফলে পিতৃতান্ত্রিকতা বিলোপিত হবে।
রোকেয়া নারীদের মনের অন্দরমহলে ধাক্কা দিয়েছিলেন তাঁর সাহিত্য রচনার মাধ্যমে। তিনি তাঁর ‘স্ত্রী জাতির অবনতি’ প্রবন্ধে নারীর অলংকারকে বলেছেন—“এগুলি দাসত্বের নিদর্শন বিশেষ। ... তাই দেখা যায় কারাগারে বন্দিগন পায়ে লৌহ নির্মিত বেড়ি পরে, আমরা (আদরের জিনিস বলিয়া) স্বর্ণ বা রৌপ্যের বেড়ি অর্থাৎ ‘মল’ পরি। ...কুকুরের গলে যে গলাবন্ধ (Dogcollar) দেখি, উহারি অনুকরণে বোধ হয় আমাদের জড়োয়া চিক নির্মিত হইয়াছে।” এই সোনা মাহে পড়ে আমরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজে আত্মসমর্পণ করেছি। সোনার খাঁচায় বসে আমরা আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখি। এখনো বহু পরিবারে দেখা যায়, মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে অর্থ ব্যয় করতে তাঁরা উদাসীন। তাঁরা মনে করেন সেই অর্থ সঞ্চয় করে রাখলে বিবাহের সময় তা দিয়ে পাত্রপক্ষকে খুশি করে কন্যার সুখ নিশ্চিত করবেন। কিন্তু এটা ভাবেন না যে, মেয়েকে শিক্ষিত করলে সেও নিজের এবং পরিবারের সুখ নিজেই নিশ্চিত করতে পারবে।
রোকেয়া ‘নারীবৃত্তি’ অঙ্কুরে বিনষ্ট হওয়ার কথা বলেছেন। যে স্থলে দরিদ্র লোকেরা সূচি কর্ম বা দাসীবৃত্তির দ্বারা অর্থ উপার্জন করিয়া পতিপুত্র পালন করে, সেখানেও ওই অকর্ম পুরুষেরাই ‘স্বামী’ থাকে। নারীর অন্তর থেকেই দাসীবৃত্তির মনোভাবকে দূর করতে হবে নারীকেই, কারণ অধিকার কেউ উপহার দেয় না তা অর্জন করতে হয়। যতই আমরা উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছি, একদল মানুষ এখনো আমাদের মস্তিষ্ককে মনুসংহিতায় নারীদের যে অবস্থান ছিল তা পুনরায় চালনা করার চেষ্টা করছে বিভিন্ন কর্মসূচি, সিনেমা ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। মেয়েদের শোষণের প্রশ্নে, মনুসংহিতায় বিশ্বাসী গোঁড়া হিন্দুত্বের ধ্বজাধারি বা রক্ষণশীল মৌলবাদীদের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। এই দুই দলেরই লক্ষ্য হল নারীকে দমিয়ে রাখা বা নারীকে শোষণ করা। নারীকে কেবল পুত্র জন্ম দেওয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে— এই মন্তব্যকে আবার তুলে ধরা হচ্ছে বর্তমানে। যেখানে ১০০ বছর আগে সমাজে নারীর অগ্রগতির যে পথ দেখিয়ে গেছেন রোকেয়া।বর্তমানে সেই পথে আমরা কতটা এগিয়েছি তা ভাবা দরকার। তাই আজও কোন মহিলা ধর্ষিতা হলে রাষ্ট্রের উচ্চস্থানের নারীরা তাকে ‘ছোট ঘটনা’ বা ‘মেয়েটির চরিত্রগত দোষ ছিল’ বলে অনায়াসে দাগিয়ে দিতে পারে। তাই এগারো বছর আগে ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় খুন হয়ে যাওয়া বরুণ বিশ্বাসের খুনিদের শাস্তি আজও হয় না।
মুসলিম নারীদের শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে শুধু নানা প্রবন্ধ গল্প উপন্যাস লিখেই তিনি নারী মুক্তির অপেক্ষা করেননি। বাইরে বেরিয়ে সমাজের চিরাচরিত ধ্যান-ধারণা বদলে দিয়েছেন। সাখাওয়াত হোসেনের মৃত্যুর পর, তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিহারের ভাগলপুরে ১৯০৯ সালের পয়লা ডিসেম্বর মাত্র ৫ জন ছাত্রী নিয়ে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর আবার নতুন উদ্যোমে ১৯১১ সালে ১৬ই মার্চ ৮ জন ছাত্রী নিয়ে কলকাতায় স্কুল শুরু করেন। যা তাঁর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত ১৩৩ জন ছাত্রী সংখ্যায় পৌঁছায়। এমনকি স্কুলের বাস কেনার জন্য নিজের ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে ৩০ হাজার টাকা দান করেছিলেন। কারণ তখনও মুসলিম সমাজে পর্দাপ্রথা অতিক্রম করে পায়ে হেঁটে আসার স্বাধীনতা ছিল না। সেই গাড়িতে অভিভাবকদের অনুরোধে পর্দানশীনতা বজায় রাখতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলে দুই-তিন জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে স্কুলে এসে। কারোর মাথা ধরে যায়, কারোর বমি পায়। তাই সেই ব্যবস্থা পরিবর্তন করে কাপড়ের পর্দা ঝোলানো হয়। তাতে পর্দাপ্রথা ভাঙ্গা হয়েছে বলে মনে করে ‘কাঠমোল্লা’ ও অভিভাবকরা রোকেয়া সম্পর্কে মিথ্যে অপবাদ দিতে থাকে। তিনি আক্ষেপ করে লিখেছিলেন— “আমার হাড় ভাঙ্গা খাটুনির পরিবর্তে, সমাজ বিস্ফারিত নেত্রে আমার খুঁটিনাটি ভুলভ্রান্তির ছিদ্র অন্বেষণ করিতে বদ্ধপরিকর।”
আমাদের ভাবা দরকার রোকেয়া সেই পরাধীন ভারতের প্রতিকূল সমাজ পরিস্থিতিতে থেকে শিক্ষার প্রসারের জন্য প্রাণপণ করেছিলেন নিজের অর্থ দান করে এবং অনুদান জোগাড় করে। শুধু উর্দু নয়, বাংলা ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষারও ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনকি শিক্ষিকাদের নিজেই ট্রেনিং দিতেন। আর আজ স্বাধীন ভারতের শিক্ষার প্রসারে রাষ্ট্রের উদ্যোগ কমে যাচ্ছে। সরকারি অনুদানের অভাবে ও শিক্ষকের অভাবে একের পর এক সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের রাজ্যে তা সংখ্যায় ৮০০০-এর বেশি। ফলে দূর প্রান্তের ছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণে পিছিয়ে পড়ছে। রোকেয়ার মতে শিক্ষা নারীদের অন্তরে না প্রবেশ করলে তারা চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে থাকবে। অর্থাৎ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ক্রমশ শিক্ষা থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে কিছু অংশের ছাত্রীরা। কাজের অভাবে সস্তা শ্রমিক বা পণ্যে পরিণত হচ্ছে মেয়েরা। বাড়ছে নারী পাচার। শতকরা হিসেবে দেখা যাবে পাচার হওয়া মেয়েদের মধ্যে মুসলমান মেয়েদের সংখ্যাও বেশি। রোকেয়া বলেছিলেন—“টাকা উপার্জন করায় যে শিক্ষা লাভের মূল উদ্দেশ্য ইহা আমি শিকার করি নাই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য মানুষকে মানুষ করিয়া গড়িয়া তোলা।” অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহণ করলে তবেই একজন মানুষের প্রকৃত জ্ঞান বা মানুষ হবার প্রকৃত শিক্ষা সে পাবে।তবে আমাদের কাছে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার এবং বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য থেকে তাঁদের কি দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে না? সচেতন মন নিয়ে শিক্ষার্থীরা কি প্রশ্ন করতে শিখছে?
আমাদের সমাজে মহিলাদের তিন ধরনের বৈষম্য, নিপীড়নের শিকার হতে হয়—১) শ্রমিকশ্রেণির অংশ হিসেবে, ২) নাগরিক অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং ৩) শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণেই। রোকেয়া এই তিন ধরনের বৈষম্য বিষয়ে সচেতন ছিলেন, তাই তিনি ১৯১৬ সালে কিছু শিক্ষিত মহিলাদের নিয়ে ‘আন্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তারা মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁদের কাজে প্রবল বাধা আসা সত্বেও এই সংগঠনটি সম্মেলন, বিতর্ক সভা আয়োজনের মাধ্যমে জনমানসে সচেতনতা আনার চেষ্টা করছিল। নারী শোষণের বিরুদ্ধে এই নয়া উদারনীতিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় রুখে দাঁড়ানোর জন্য রোকেয়া আমাদের পথিকৃৎ। তাকে স্মরণ করা মানে তার দেখানো পথকে অনুসরণ করা। শুধু বদ্ধ ঘরের বক্তৃতা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীবাদী পোস্ট শেয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তাকে সম্মান জানানো হবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে নারী মুক্তির পথ আরো জটিল তাই তার সমাধানে সকলের সচেতন অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
তথ্য—
১। "শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ বেগম রোকেয়া"- সংকলন ও সম্পাদনা ডক্টর মিজানুর রহমান
২। আব্দুল কাদির সম্পাদিত "রোকেয়া রচনাবলী"
৩। "প্রথম বাঙালি নারীবাদী বেগম রোকেয়া" -গোলাম মুরশিদ
৪। নারীবাদ ও তার মার্কসীয় দিকদর্শন- ডক্টর অরূপ অধিকারী (International journal of Humanities and Social science studies)
লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজকর্মী
0 Comments
Post Comment