মা (সপ্তম কিস্তি)

  • 28 June, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 166 view(s)
  • লিখেছেন : চন্দন আঢ্য
‘জন্মনিয়ন্ত্রণ’ এবং আইনত গর্ভপাত নারীদের সুযোগ দেয় স্বাধীনভাবে মাতৃত্ব গ্রহণে। প্রকৃতপক্ষে, অংশত এটি একটি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ইচ্ছা এবং অংশত একটি সুযোগ -- যা নির্ধারণ করে দেয় মহিলাদের উর্বরতা। যতদিন পর্যন্ত কৃত্রিমভাবে গর্ভধারণের ব্যাপক প্রচলন না-হয়, ততদিন পর্যন্ত মাতৃত্বের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও একজন নারী তা নাও পেতে পারেন।

‘জন্মনিয়ন্ত্রণ’ এবং আইনত গর্ভপাত নারীদের সুযোগ দেয় স্বাধীনভাবে মাতৃত্ব গ্রহণে। প্রকৃতপক্ষে, অংশত এটি একটি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ইচ্ছা এবং অংশত একটি সুযোগ -- যা নির্ধারণ করে দেয় মহিলাদের উর্বরতা। যতদিন পর্যন্ত কৃত্রিমভাবে গর্ভধারণের ব্যাপক প্রচলন না-হয়, ততদিন পর্যন্ত মাতৃত্বের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও একজন নারী তা নাও পেতে পারেন। এর কারণ -- হয় পুরুষদের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই, নয়তো তাঁর স্বামী বন্ধ্যা, অথবা তিনি গর্ভধারণে অক্ষম। এটাই হল এইচ. ডয়েচ-এর উদ্ধৃত লিডিয়ার ঘটনা – ষোলো বছর বয়সে যাঁকে অপরিচিতদের বাড়িতে পরিচারিকা হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেখানে যে শিশুরা তাঁর দায়িত্বে ছিল, সবচেয়ে  বেশি অসামান্য নিষ্ঠা বা নিবেদিতপ্রাণতার সঙ্গে সেই শিশুদের যত্ন তিনি নিতেন। লিডিয়ার কাছে এটি ছিল শৈশবে দেখা দিবাস্বপ্নগুলির একটি সম্প্রসারণ, যেখানে নিজের মা-কে নিয়ে একসঙ্গে তিনি একটি সন্তান বড়ো করে তুলছেন। কিন্তু, হঠাৎ করেই নিজের কাজকে অবহেলা করতে শুরু করেন লিডিয়া। শিশু-সন্তানদের প্রতি ঔদাসীন্য দেখাতে থাকেন। বাইরে বেরোতে এবং পুরুষদের সঙ্গে ফ্লার্ট করতে থাকেন। শিশুদের সঙ্গে খেলার সময় তখন তাঁর শেষ হয়ে গেছে। নিজের বাস্তব জীবন নিয়ে তখন তিনি উদ্‌বিগ্ন হতে শুরু করেছিলেন। সেই বাস্তব জীবনে মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষার স্থান ছিল সামান্য। কিছু কিছু মহিলার সারা জীবন ব্যাপীই এই ইচ্ছা থাকে যে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের ওপর কর্তৃত্ব করবেন। যদিও প্রসবের জৈবিক শ্রমের ভয়াবহতা তাঁদের মধ্যে বজায় থাকে। নিজেদেরকে তাঁরা করে তোলেন মিডওয়াইফ, নার্স বা শিক্ষিকা। তাঁরা হন নিবেদিত-প্রাণ মাসী বা পিসি। তবে সন্তানের জন্মদান বা মাতৃত্বকে তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেন। অনেকে অবশ্য ঘৃণার সঙ্গে মাতৃত্বকে সরিয়ে না-দিয়ে নিজেদের প্রেমজীবন বা নিজেদের জীবনের মধ্যে ক্যারিয়ারকে একটি জায়গা দেওয়ার জন্য অত্যধিক মগ্ন হয়ে পড়েন। অথবা তাঁরা ভয় পান যে একটি সন্তান তাঁদের বা তাঁদের স্বামীর জন্য বোঝা হবে। 

প্রায়শই দেখা যায়, একজন মহিলা সমস্ত যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে গিয়ে, বা ‘জন্ম-নিয়ন্ত্রণ’-এর অনুশীলনের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর বন্ধ্যাত্ব নিশ্চিত করেন। তবে, এমনও কিছু ঘটনা রয়েছে যেখানে মহিলারা সন্তানের থেকে নিজেদের ভয়কে স্বীকার করেন না। এক্ষেত্রে,  সন্তানের থেকে ভয়ই হল গর্ভধারণকে বাধা দেওয়ার একটি প্রতিরোধী মানসিক প্রক্রিয়া। এ ছাড়াও, সেই মহিলাদের মধ্যে এমন অনেক কার্যকরী ব্যাধির সৃষ্টি হয় যা ডাক্তারি পরীক্ষায় শনাক্ত করা যায়। তবে, এই ব্যাধির উৎস কিন্তু স্নায়ুচাপ। অন্যান্য নানা উদাহরণের মধ্যে একটি চিত্তাকর্ষক উদাহরণের উল্লেখ করেছেন ডাক্তার আর্তু।

নারী-জীবনের জন্য শ্রীমতী এইচ.-কে তাঁর মা ভীষণ বাজে ভাবে প্রস্তুত করেছিলেন। মেয়ের উদ্দেশে মা সবসময়ই ভবিষ্যদ্বাণী করতেন -- গর্ভবতী হলেই মেয়ের জীবনে সবচেয়ে খারাপ বিপর্যয়টি ঘটবে। বিয়ে হওয়ার পরের মাসেই শ্রীমতী এইচ. ভেবেছিলেন যে তিনি গর্ভবতী। পরে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তিন মাস পর আবারও তিনি ভাবলেন যে তিনি গর্ভবতী। এবার নতুন একটি ভুল। এক বছর পর শ্রীমতী এইচ. একজন গাইনোকোলজিস্টের কাছে যান যিনি তাঁর বা তাঁর স্বামীর মধ্যে বন্ধ্যাত্বের কোনো কারণ দেখতে পাননি। তিন বছর পরে শ্রীমতী এইচ. অন্য একজনকে দেখান। তিনি বলেন : “আপনি তখনই গর্ভবতী হবেন যখন আপনি কম কথা বলবেন”। বিয়ের পাঁচ বছর পর শ্রীমতী এইচ. এবং তাঁর স্বামী মেনে নেন যে তাঁদের আর সন্তান হবে না। বিয়ের ছ-বছর পর তাঁদের একটি সন্তান হয়।

গর্ভধারণের গ্রহণযোগ্যতা বা প্রত্যাখ্যান সাধারণভাবে গর্ভাবস্থার মতো একই বিষয়সমূহ দ্বারা প্রভাবিত হয়। গর্ভাবস্থার সময়েই একজন মহিলার শৈশবের স্বপ্ন এবং কৈশোরের উদ্‌বেগগুলি পুনরুজ্জীবিত হয়। একজন মহিলা তাঁর সঙ্গে তাঁর মায়ের, তাঁর স্বামীর এবং তাঁর সঙ্গে তাঁর নিজের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে গর্ভাবস্থাকে বেশ বিভিন্ন উপায়ে অনুভব করেন।

লেখক : অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক 

ছবি : সংগৃহীত 

 

0 Comments

Post Comment