ঘেরাটোপ (পর্ব-১১)

  • 27 September, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 81 view(s)
  • লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
অনেক দূরে কেবল সবুজ জঙ্গলের দিগন্তরেখা দেখা যায়। তার পিছন থেকেই মেঘ উঠে আসছিল। ঘন কালো, পাঁজা পাঁজা তুলোর মতো শক্তিশালী মেঘ। কুড়ুনি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। পা সরছিল না তার। বিশাল আকাশটা যেন তখন তার চোখের সামনেতেই বিরাট গোল চাপা দেওয়া বাটির মতো হয়ে উপরে উঠে যাচ্ছিল। আর সেই উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে এদিক থেকে ওদিকে ছুটে বেড়াচ্ছিল ঘনবরণ কালো মেঘের দল। ভয় পেলেও কুড়ুনির মনে কিসের যেন এক অদ্ভুৎ আকর্ষণ কাজ করছিল। সে ভেজা কাদামাটির উপর একলাটি, চুপ করে দাঁড়িয়েছিল তখন।

[১১]

 

বোম্মাইয়ের নাহয় ভৈরব ছিল। পূর্ণিমার বিশ্বাস ছিল দেবী জাকাম্মার প্রতি। কেবল কুড়ুনির কোনও ঈশ্বর ছিল না। থাকলেও সে ছিল কুড়ুনি হয়ে ওঠার আগেকার কোনও সময়। যে সময়ের কথা সকলে ভুলেছে একেবারেই। মা বলে কোনওদিন কেউ ছিল কি তার? মালতীকে সে কোনওদিন মা বলে ডাকেনি। মুখে কথা বলতেও তার শেখা হয়নি। মালতী চলে যাওয়ার পর নদীতে ডুবে মরা ছাড়া কুড়ুনির আর কোনও পথ ছিল না। তবু সে হাঁটতে শুরু করে। পায়ে পায়েই পেরিয়ে যায় অনেকদূর। এক গ্রাম ছাড়িয়ে আরেক গ্রাম। যতক্ষণ না অবধি সে আবার, আরেক নদীর কিনারে এসে দাঁড়ায়।

 

নদীতেই জীবন কাটে এদের। পাকেচক্রে স্রোত। কুড়ুনি জানত না মালতীর সঙ্গে আবার তার দেখা হবে। কুড়ুনি জানত না কলকাতায় সুবর্ণ বলে রয়েছে কেউ। কেবল সে নতুন আশ্রয় পেয়েছিল সেই নদীর ধারেরই এক ছোটখাটো দোকানে, যে দোকানদারের গালে আবার একটা লম্বা কাটা দাগ। নাম নাকি সত্যেন। কুতকুতে চোখ। কিন্তু সেই বলেছিল “দোকানে থাকবি, খাবি, আর গোলমাল করবিনি। পয়সা পাবি মাসে মাসে। আমার কাছে জমা থাকবে। যদি কখনও ছেড়ে যাস,” আর কিছু বলতে হয়নি। খিদের জ্বালায় ধামা ভর্তি মুড়ি কোলে নিয়ে কুড়ুনি বসে পড়েছিল। ওর মনে হয়নি দোকানটা গ্রামের একেবারে প্রান্তে। ও তখনও বোঝেনি এই দোকানে কেবল সন্ধ্যের শেষ দিকেই রুক্ষ, অন্ধকার সমস্ত চরিত্রেরা এসে বসে একেকজন।

 

দোকানের পেরোলেই অল্প মাঠ। তারপর থেকে নদীর জল। বাঁধের অবস্থা ভালো। অন্যান্য জায়গার মতো চটজলদি ভেঙে যাবার নয়। বারো পেরিয়ে কুড়ুনি তেরোয় পড়েছিল। একদিন হঠাৎ তার শরীর ভালো ঠেকছিল না। সত্যেনকে ইঙ্গিতে বলায় সে চোখ কুঁচকে কুড়ুনির উপর-নীচ ভালো করে দেখে কি যেন জরিপ করেছিল। তারপর হঠাৎই খসখসে গলায় বলেছিল, “আজ থেকে দোকানের ভিতরে শুবি। মনে করে দরজাটা শেকল দিয়ে রাখবি। আর,” একটা চাবি হাতে দিয়ে বলেছিল, “বাথরুম আছে। ওই পিছনটায়। রাত্তিরে আর মাঠে যেতে হবে না।” সত্যেনের এই মহানুভবতায় কুড়ুনি তখন শরীরের অস্বস্তির কথাও ভুলে গিয়েছিল। আর এও খেয়াল করেনি তারপর থেকেই সন্ধ্যে পেরিয়ে দোকানে আসা লোকগুলোর খরখরে, মিশমিশে গলায় খুব যেন হাসি শোনা গিয়েছিল কয়েকদিন।

 

কুড়ুনি বড় হচ্ছিল। তার মুখে কথা না ফুটলেও আশপাশ থেকে বেশ বোঝা যাচ্ছিল তার বেড়ে ওঠা। নতুন ফ্রক কিনে এনে দিয়েছিল সত্যেন। গ্রামের ভদ্র পরিবারের কেউ কালেভদ্রে সত্যেনের দোকানে আসতে বাধ্য হয়। কুড়ুনি বুঝে উঠতে পারে না ওই কজন মাত্র সন্ধ্যের খদ্দের দিয়ে কিভাবে চলে সত্যেনের। রাতে আবার সে নিজের বাড়িতে শুতে যায়। কুড়ুনি কখনও সে বাড়ি দেখেনি। তবে সত্যেনের কোনও পরিবার নেই। একথা সে আঁচ করতে পেরেছে। অথচ অনেক রাত্তিরে মধ্যে মধ্যে কারা যেন সব হাতে টর্চ বা লণ্ঠন নিয়ে সত্যেনের বাড়ির দিকে যায়। ফিরে আসে। কুড়ুনিকে সে ভাত দিয়েছে। কুড়ুনির তাকে সন্দেহ করতে নেই। কোনওদিন কোনওভাবে সে কুড়ুনির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। পেটভরে খেতে দিয়েছে। কাজ বলতে তো ওই দোকান পরিষ্কার, দিনের বেলা দোকানটুকু খুলে বসে থাকা। একটু বেলা হলেই দোকানে চলে আসে সত্যেন। খদ্দেরপাতি সারাদিনে যতটুকু হয় সে সত্যেনই সামলায়। রাত বাড়লে দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে। অল্প সময় পরেপরেই কুড়ুনিকে চা বানাতে হয় তখন। জোয়ারের সময় নদী এগিয়ে আসে। দিন হলে অতটা টের পাওয়া যায় না। রাতের বেলায় চাটাইতে শুয়ে থাকতে থাকতে কুড়ুনি সেই নদীর শব্দ শোনে। ঝরঝর, খসখস শব্দ। ছলাৎ জল। কুড়ুনির বুকের ভিতরটা কেমন হু হু করে ওঠে হঠাৎ।

 

কেবল বর্ষার একদিন। দুপুরের ফাঁকেই কি কারণে যেন দোকান থেকে বেরিয়ে কুড়ুনি নদীর কাছে চলে গিয়েছিল। আকাশ কালো করে বৃষ্টি এসেছিল সেদিন। অথচ কুড়ুনি যখন দোকান থেকে বেরিয়ে যায় তখন ফটফটে রোদ। কিছুতেই তার দোকানে বসে থাকতে ইচ্ছে করছিল না। হাতের ইশারায় ‘একটু আসছি’ সত্যেনকে বুঝিয়ে দিয়ে সে দোকান থেকে বের হয়ে এসেছিল। ভাটার সময়। নদী তখন আরও খানিক সরে গিয়েছে। মাঠ শেষের পরেও তাই কাদামাটির চর জেগে রয়েছে। তবু সে নদীর আয়তন দেখলে ভয় জেগে ওঠে। সোঁদরবনের পাগল নদী এসব। একূল-ওকূল দেখা যাওয়াই দায়। অনেক দূরে একদিকে কেবল সবুজ জঙ্গলের দিগন্তরেখা দেখা যায়। তার পিছন থেকেই মেঘ উঠে আসছিল। ঘন কালো, পাঁজা পাঁজা তুলোর মতো শক্তিশালী মেঘ। কুড়ুনি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। পা সরছিল না তার। বিশাল আকাশটা যেন তখন তার চোখের সামনেতেই বিরাট গোল চাপা দেওয়া বাটির মতো হয়ে উপর থেকে উপরে উঠে যাচ্ছিল। আর সেই উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে এদিক থেকে ওদিকে ছুটে বেড়াচ্ছিল ঘনবরণ কালো মেঘের দল। ভয় পেলেও কুড়ুনির মনে কিসের যেন এক অদ্ভুৎ আকর্ষণ কাজ করছিল। সে ভেজা কাদামাটির উপর একলাটি, চুপ করে দাঁড়িয়েছিল তখন। তার পায়ের আঙুলগুলো ক্রমশ ভেজা মাটিতে গেঁথে যাচ্ছিল। তার মালতীকে মনে পড়ছিল বোধহয়। হাওয়া উঠতে শুরু করেছে হঠাৎ। মেঘেরা ক্রমশ এগিয়ে আসতে আসতে গোটা আকাশটাকেই দখল করে ফেলে। দিনের বেলাতেই যেন রাতের অন্ধকার।

 

বৃষ্টি শুরু হল। প্রথমে আস্তে, তারপরে মুষলধার। কুড়ুনি ভিজে গিয়েছে। তার মুখে জল। সারা শরীরে জল। গায়ের জামাটুকু ভিজে একেবারে শরীরের সঙ্গে লেপটে গিয়েছে। দিগম্বরকে তার মনে পড়ছিল। মনে পড়ছিল মালতীর একনাগাড়ে অভিসম্পাত। ঝড়ের মেয়ে কুড়ুনিই কি তাহলে ঝড় ডেকে এনেছিল সেদিন? তার শরীরের ভিতর থেকে শব্দ উঠে আসে। সে মুখ খুলে চিৎকার করতে চায়। কোনও আওয়াজ বেরোয়না। জোর বাতাসের শব্দ। সে এলোমেলো পায়ে আরও খানিক নদীর দিকে এগিয়ে যায়। মালতীর চেয়েও আগেকার কোনও অবয়ব, আবছা কণ্ঠে আরও কাউকে ‘বাবা’ বলে ডাক, নাহ – তার মনে পড়ছে না। কুড়ুনি রাগে-দুঃখে মাথা ঝাঁকায়। তার তাহলে কোনও অতীত নেই। সাদা রবারের মতো কিছু দিয়ে যেন কেউ, কাঠ-পেন্সিলে লেখা তার সামান্য, সমস্ত ইতিহাসটাকেই একধার থেকে মুছে শেষ করেছে। তারপর সেই খাতার উপরে ঢেলেছে জল। অথবা নিরমা পাউডারের বিজ্ঞাপন – টিভিতে কুড়ুনি দেখেছে। এক লহমাতেই কেমন ময়লা কাপড় ধবধবে সাদা হয়ে মলিন দাগ মিলিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। ঠিক তেমনিই কুড়ুনিরও বোধহয় আগেকার অতীত গিয়েছে সাগরে। অথবা সুদূর আকাশে মিলিয়েছে কোথাও। কুড়ুনির কাছে তার খবর আসেনি। সে ভিজতে ভিজতে আরও খানিক এগিয়ে যায়। তার পায়ে জল এসে লেগেছে। কাদামাটির জমি জলে ঢুকতে শুরু করে। সে তবুও ফিরে তাকায় না। কিসের যেন ভর হয়েছে তার উপর। আচ্ছন্ন অবস্থায় সে আরও এগিয়ে যায়।

 

কুড়ুনির কোনও ঈশ্বর ছিল না। সে নিজেই নিজেকে সেদিন, নিজের কাছটিতেই যেন সঁপে দিতে চলেছিল। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হতেও কুড়ুনি ফিরছে না দেখে টনক নড়েছিল সত্যেনের।

 

চিৎকার করে সত্যেন কুড়ুনিকে ডাকছিল। কুড়ুনির কানে সে ডাক পৌঁছয়নি। বোধহয় বৃষ্টির কারণে, বোধহয় হাওয়ার শব্দের কারণেও। কুড়ুনি সত্যেনের ডাক শুনতে পায়নি। জল-কাদা ভেঙে ছুটতে ছুটতে কুড়ুনির কাছে এসে তাকে পিছন থেকে প্রায় জড়িয়ে ধরেছিল সত্যেন। জল তখন কুড়ুনির প্রায় কোমরের কাছ অবধি এসে গিয়েছিল। তাই জোরের সঙ্গে তাকে জড়িয়ে ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে সত্যেন কুড়ুনিকে এনে ফেলেছিল কাদামাটির জমির উপর। ঝমঝম করে তখনও বৃষ্টি হয়ে চলেছে। হাওয়ার দাপটও এতটুকু কমেনি। কুড়ুনিকে টেনে এনে ফেলতে ফেলতে সত্যেনও যেন এক মুহূর্তের জন্য তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। কুড়ুনি তার জীবনে প্রথম সেদিন, সেই মুহূর্তে পরিপূর্ণ ভাবে তার নারীত্বকে অনুভব করেছিল। সত্যেন তাড়াতাড়ি নিজেকে সরিয়ে নিলেও, নিজের শরীরের সেই অনুভূতি কুড়ুনি কোনও দিনও ভুলতে পারবে না। পরক্ষণেই তার শরীরে-মনে শীত করে উঠেছিল হঠাৎ।

 

দোকানের সামনে সেদিন কালো গাড়ি থেকে যে লোকটি নেমে এসেছিল তাকে কুড়ুনি আগে দেখেনি। এমন বড় গাড়ি করেও কখনও কেউ সত্যেনের দোকানে আগে এসেছে বলে কুড়ুনির মনে পড়ছিল না। সত্যেন হাত নেড়ে তাকে ভিতরে যেতে বলে। তারই মধ্যে নেমে আসা লোকটি কেমন ভাবে যেন কুড়ুনির দিকে তাকায়। চা করতে করতে হাত চলকে খানিক চা পড়ে গেল সেদিন। মনটা কু ডাকছিল। কোনও কিছুই তার ভালো লাগছিল না। এরপর দিন তিনেক না কাটতেই এক দুপুরে সত্যেন হঠাৎ তাকে কাজ ছেড়ে নিজের পাশে এসে বসতে বলে। কুড়ুনি অবাক চোখে সত্যেনের দিকে তাকায়।

 

শহর কলকাতায়! সত্যেন তাকে শহরে পাঠিয়ে দিচ্ছে? কুড়ুনি বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। সেই কালো গাড়ি করে আসা লোকটির বাড়িতেই নাকি কাজের সন্ধান রয়েছে। ওখানেই থাকা-খাওয়া সবকিছুর বন্দোবস্ত। দারুণ আরামের জীবন। কুড়ুনির কেমন যেন সব গুলিয়ে যেতে থাকে। হাবা মেয়ে বলে কিছু না বুঝলেও, এভাবে তাকে শহরে পাঠিয়ে দেওয়া – সত্যেনের আচরণে সে খারাপ কিছু দেখেনি কোনওদিন। তবু সন্দেহ থেকেই যায়। একবার শুধু সে সত্যেনের দোকানে আসা এক খদ্দেরকে বলতে শুনেছিল, “ভালোই ব্রয়লারটি বাগিয়েছ, হ্যাঁ সত্যেনদা? বছর দু’তিনেকের শুধু খোরাকির ইনভেস্টমেন্ট। তারপর সঠিক সময়ে সাপ্লাই করে দিতে পারলেই একেবারে ফুলটুস প্রফিট! কোনও দাবিদাওয়া নেই, হিস্ট্রি-জ্যোগ্রাফির বালাই নেই, পুরো ১০০% লাভ হ্যাঁ?” সত্যেন এর উত্তরে কি বলেছিল, ভিতর থেকে কুড়ুনি আর সে কথা শুনতে পায়নি। কিন্তু তার মনে হয়েছিল কথাটা যেন তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে। যদিও এই কথার অর্থ সে সবটুকু বুঝে উঠতে পারেনি। আজ কেন জানি সেই পুরনো ঘটনাটাই আবারও মনে পড়ল তার।

 

সে দু’দিকে মাথা নাড়ে। তার চোখ ফেটে জল আসতে চায়। তবু সে কাঁদেনি। কোথাও গিয়ে যেন তার মনে হয়েছিল, এতদিনে তার আত্মসম্মানে সত্যেন ঘা দিয়েছে। কোথাও যেন বড় রকমের কিছু গণ্ডগোল। তবু সে দু’দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে নিজের আপত্তি জানিয়েছিল। সত্যেন কিছু বলেনি। কেবল রোজ রাত্তিরের মতো চুপচাপ সে দোকান গুটিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিল। এরপর কুড়ুনি মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল দু’দিন পরেই সে পালাবে। দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে পথখরচের মতো সামান্য কিছু সরিয়ে নেওয়া যাবে নাহয়। তারপর কোন পথে? সে সব কুড়ুনি ভাবেনি। সে কেবল জানত আগেকার অদৃষ্ট খতিয়ে দেখলে, পথই একমাত্র তাকে পর করে দেয়নি কোনও দিন। কিন্তু পালাবার আগেই এক রাত্তিরে, খাওয়া শেষের পর কুড়ুনির দু’চোখ বেয়ে অস্বাভাবিক ঘুম নেমে এল। বুঝি বা দোকানের দাওয়ারই উপর গা এলিয়ে দিয়ে সে নিস্তেজ হয়ে গেল কেমন। অনেক দূরেকার কোনও গাড়ির শব্দ, নদীর জলের শব্দ – কিছুই আর কানে পৌঁছল না তার।

(চলবে)

 

আগের পর্বের ঠিকানা – https://nariswattwo.com/welcome/singlepost/the-siege-serialised-novelette-series-ten-

লেখক : বিজ্ঞানী, কথাসাহিত্যিক 

ছবি : সংগৃহীত 

 

 

 

0 Comments

Post Comment