বিবাহিত নারী (চতুর্থ পর্ব)

  • 31 December, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 589 view(s)
  • লিখেছেন : চন্দন আঢ্য
যুবতী মেয়েরা চেষ্টা করে যুবক ছেলেদের চেয়ে নিজেদের উৎকৃষ্ট দেখাতে। জীবনে থিতু হওয়ার জন্য তাদের জীবনে যে-পুরুষ প্রথমে আসে, তাকেই তারা বিবাহ করে। তারা সকলেই আশা করে বিয়ে করার এবং এর জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তারা সেটাই করে। একজন যুবতী মেয়ের কাছে এটা অপমানের যদি কোনো পুরুষই তাকে পছন্দ না-করে। (চতুর্থ পর্ব)

অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ এখনও অদৃশ্য হয়ে যায়নি। বুর্জোয়া চিন্তাভাবনা এই ধরনের বিবাহকে চিরায়ত করেছে। নেপোলিয়ানের সমাধিস্তম্ভের চারপাশে, অপেরাতে, বল-নাচের অনুষ্ঠানে, সমুদ্রসৈকতে, চা পানের সময় বিবাহ-ইচ্ছুক মেয়েদের দেখা যায় ফুরফুরে সিল্কি চুলে, নতুন পোশাক পরে তাদের লাবণ্যময় চেহারা মৃদুভাবে প্রদর্শন করতে এবং বিনীতভাবে কথাবার্তা বলতে। তাদের বাবারা লাঞ্ছনার স্বরে তাদের বলেন : “এই দেখা-সাক্ষাতের জন্য তুই আমার যথেষ্ট পয়সা খসিয়েছিস। এবার সিদ্ধান্ত তোর। সামনের বারে সুযোগ পাবে তোর বোন”। দুর্ভাগা মেয়েটি জানে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সুযোগ কমে যাবে। এদিকে বিবাহে-ইচ্ছুক পুরুষের সংখ্যাও বেশি নয়। একপাল ভেড়ার বিনিময়ে প্রাপ্ত একজন যুবতী বেদুইন-কন্যার মতো তার পছন্দের স্বাধীনতাও খুব একটা বেশি নয়। সেজন্যই কোলেত বলেছেন : চাকরিহীন যে-সমস্ত হতভাগ্য মেয়ে ভাইদের অধীনে থাকে, চুপ করে থেকে ভাগ্যকে স্বীকার করা বা ভগবানকে অস্বীকার করা ছাড়া তাদের কিছুই করণীয় নেই!”

কম চাঁচাছোলাভাবে বললে বলা যায়, আমাদের সামাজিক জীবনই ছেলেদের অনুমতি দিয়েছে মায়েদের নজরাধীনে নিজেদের মধ্যে মেলামেশা করতে। আরও একটু অকপটে বলা যায়, যুবতী মেয়েরা বাইরে বেরোনোকে অনেকটা বাড়িয়ে ফেলেছে, স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি পরিমাণে যাচ্ছে, এমন একটা চাকরি নিচ্ছে যা তাদের ছেলেদেরকে চেনার সুযোগ করে দিচ্ছে। ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে বেলজিয়ামের বুর্জোয়া সমাজের মধ্যে বৈবাহিক পছন্দের সমস্যা নিয়ে একটা সমীক্ষা করেছিলেন Claire Leplae। লেখক নিজেই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁর করা কিছু প্রশ্ন এবং সেই প্রশ্নের উত্তর আমি উদ্ধৃত করছি :

 

প্রশ্ন : অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ কি এখনও আকছার ঘটে?

উত্তর : এখন আর অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয় না। (৫১%)

       অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ এখন বেশ বিরল, সর্বোচ্চ ১% (১৬%)

       ১ থেকে ৩ শতাংশ বিয়ে এখনও অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ (২৮%)

       ৫ থেকে ১০ শতাংশ বিয়ে এখনও অ্যারেঞ্জ (৫%)

 

যে-সমস্ত লোকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাঁরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ১৯৪৫-এর আগে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের সংখ্যা অনেক হলেও বর্তমানে তা প্রায় অদৃশ্যের পথে। যদিও “নির্দিষ্ট স্বার্থ, আত্মীয়স্বজনের অভাব, ভীরুতা অথবা বয়স, একটি ভালো বিয়ে করার ইচ্ছা--এইগুলিই হল অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের মোটিফ”। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরোহিতের উপস্থিতিতেই অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সম্পন্ন হয়। কখনো-সখনো যুবতী মেয়েরা চিঠি লিখেও বিয়ে করে। “চিঠিতে নিজেদের প্রতিকৃতির বর্ণনা তারা নিজেরাই লেখে। একটি বিশেষ ধরনের পাতায় নম্বর দিয়ে তারা এই চিঠি লেখে। এই পাতাটিই ছেলেদের কাছে পাঠানো হয়। ধরা যাক, এই পাতাতে ২০০ জন বিবাহযোগ্য মহিলা ও প্রায় সমসংখ্যক বিবাহযোগ্য পুরুষের পরিচয় নথিবদ্ধ আছে। পুরুষেরাও এইভাবে তাদের যথাযথ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে। তারা সকলেই স্বাধীনভাবে একজন ঘটককে নির্বাচিত করতে পারে যার কাছে তারা এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট এজেন্সির মারফত চিঠি লিখতে পারে। 

প্রশ্ন : শেষ দশ বছরে যুব-সম্প্রদায় কোন্‌ পরিস্থিতিতে তাদের প্রণয়িনীদের খুঁজে পেয়েছে?

উত্তর : সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে (৪৮%)

       একসঙ্গে পড়াশোনা ও কাজের সূত্রে (২২%)

       অন্তরঙ্গ যোগাযোগ, কিছুদিন বেড়ানোর মধ্য দিয়ে (৩০%)

 

প্রত্যেকেই এই বিষয়ে সহমত যে, “ছেলেবেলাকার বন্ধুদের মধ্যে বিবাহ বেশ বিরল। প্রেমের জন্ম হঠাৎ করেই হয়”।

প্রশ্ন : বিয়ের সময় পাত্র বা পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে টাকা-পয়সার কি প্রাথমিক কোনো ভূমিকা আছে?

উত্তর : ৩০% বিয়েই সম্পন্ন হয় কেবল টাকা-পয়সার হিসাবের উপর (৪৮%)

       ৫০% বিয়েই সম্পন্ন হয় কেবল টাকা-পয়সার হিসাবের উপর (৩৫%)

       ৭০% বিয়েই সম্পন্ন হয় কেবল টাকা-পয়সার হিসাবের উপর (১৭%)

 

প্রশ্ন : মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য বাবা-মায়েরা কি প্রবল আগ্রহী থাকেন?

উত্তর : বাবা-মায়েরা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রবল আগ্রহী থাকেন। (৫৮%)

       বাবা-মায়ের আকাঙ্ক্ষা থাকে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য (২৪%)

       নিজেদের বাড়িতেই বাবা-মায়ের মেয়েদের রাখতে চান (১৮%)

 

প্রশ্ন : যুবতী মেয়েরাও কি বিয়ে করার জন্য প্রবল আগ্রহী থাকেন?

উত্তর :  যুবতী মেয়েরা বিয়ে করার জন্য প্রবল আগ্রহী থাকেন। (৩৬%)

        যুবতী মেয়েরা বিয়ের আকাঙ্ক্ষা করেন। (৩৮%)

        যুবতী মেয়েরা খারাপ বিয়ের চেয়ে বিয়ে না-করাকেই অগ্রাধিকার দেন। (২৬%)

 

যুবতী মেয়েরা চেষ্টা করে যুবক ছেলেদের চেয়ে নিজেদের উৎকৃষ্ট দেখাতে। জীবনে থিতু হওয়ার জন্য তাদের জীবনে যে-পুরুষ প্রথমে আসে, তাকেই তারা বিবাহ করে। তারা সকলেই আশা করে বিয়ে করার এবং এর জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তারা সেটাই করে। একজন যুবতী মেয়ের কাছে এটা অপমানের যদি কোনো পুরুষই তাকে পছন্দ না-করে। এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথমে যে-পুরুষ আসে, তাকেই মেয়েটি বিবাহ করে। যুবতী মেয়েরা বিয়ে করার জন্যই বিয়ে করে। বিবাহিত হওয়ার জন্যই বিয়ে করেন। তাদের তাড়া থাকে বিয়ে করে থিতু হওয়ার। কারণ বিবাহ তাদের অধিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে”। এই বিন্দুতে এসে প্রায় সকল সাক্ষ্যই সহমত পোষণ করে।

 

লেখক : অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক

ছবি সৌজন্য : ইন্টারনেট

0 Comments

Post Comment