অটো

  • 24 March, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 536 view(s)
  • লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
 দোয়েলের ওই গায়ের গন্ধটাকে ভালো লাগত। সকালে বেশটি করে পাড়ার কলে সাবান মেখে স্নান করে এসে উদয় যখন অটোটাকে নিয়ে বেরুত, সামনে বসাত দোয়েলকে। ওর প্রথম টিউশন থাকত যেখানে, সেই বাড়িটার সামনে ওকে নামিয়ে দিয়ে যেত। ওর গা ঘেঁষে বসে থাকতে থাকতে সাবানের মিষ্টি গন্ধটা নাক ভরে নিত দোয়েল। হাওয়া দিত হু হু করে। ... অটো’র গল্প, আর এক পরিবারের গল্প ...

‘প্রফেশন’, অর্থে ‘জীবিকা’ পড়াতে গিয়ে এমন এক জটিলতায় পড়তে হবে সুরঙ্গমা ভাবেননি। ক্লাস ফোরের সাদাসিধে বাচ্চাগুলোকে একে একে দাঁড় করিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করছিলেন তাদের বাড়িতে বাবা-মায়েরা কে কি করেন। কেউ কেউ উঠে দাঁড়িয়ে বলছিল ডাক্তার, কেউ বা লইয়ার। একজন বলল এঞ্জিনিয়র। ক্লাসের ফুটফুটে ফার্স্ট গার্ল শ্রীতমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “মিস, মাই মাদার ইজ এ জার্নালিস্ট, এ্যান্ড মাই ফাদার ইজ এ বিজনেসম্যান।” সুরঙ্গমা মিষ্টি করে হাসেন। একে একে প্রশ্নটা ক্লাসের বেঞ্চিগুলোর মাঝামাঝি অবধি পৌঁছচ্ছিল। এবারে যে উঠে দাঁড়াল তার নাম স্মৃতি। স্মৃতি চট্টরাজ। পড়াশোনায় যে ভীষণ ভালো তা নয়। কিন্তু খুব স্পষ্ট করে কথা বলে। ইংরেজিতে সামান্য কাঁচা। উঠে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করছে। বোধহয় মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাইছে শব্দগুলো। সুরঙ্গমা একটু তাড়া লাগান। ইংরেজির প্রতি এদের ভয়টাকেই আগে ভাঙা দরকার। তিনি বলে ওঠেন, “ইয়েস স্মৃতি, টেল মি হোয়াট ইজ ইওর ফাদার্স প্রফেশন ?” স্মৃতি আধোস্বরে উত্তর দেয়, “আই ডোন্ট নো মিস।” দুপাশে ঘাড় নাড়ে। সুরঙ্গমা অবাক হন, “তোমার বাবা কাজ করতে বেরোননা কোথাও ? হি স্টে’স এ্যাট হোম ?” স্মৃতি মাথা হেলায়, “মাই ফাদার ক্যানট ওয়াক মিস। বাবা বাড়িতেই থাকে। কিছু করে না।” ভারী অপ্রস্তুতে পড়ে যান সুরঙ্গমা। কিছু একটা বলে বিষয়টাকে চাপা দিতে চেষ্টা করেন। মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়, “এ্যান্ড ইওর মাদার ?” “মাই মাদার ইজ এ্যান,” স্মৃতি থেমে যায়। তারপর যেন একটু ভেবে নিয়ে বলে, “এ্যান অটো ড্রাইভার মিস।” ক্লাসের সবকটা বাচ্চাই খাতা থেকে মুখ তুলে অবাক বিস্ময়ে স্মৃতির দিকে তাকায়।

 

টিফিনের সময় স্টাফরুমের বাইরেটায়, বারান্দায় দাঁড়িয়ে সুরঙ্গমা মৃদুলার সঙ্গে কথা বলছিলেন। “আমার তো কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রায় সেই সময়। শ্যামলীকে দেখতে পাঠিয়েছি, কেউ যেন ওকে অটো-ড্রাইভারের মেয়ে বলে বিরক্ত না করে। যদিও আমরা বাচ্চাদের কখনও তাদের স্টেটাস বা তাদের বাবা-মায়েদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হতে শেখাই না। কিন্তু তাও,” সুরঙ্গমা একটা শ্বাস ফেলেন। কোথাও যেন তাঁরও ভিতরকার বিপরীতমুখী চিন্তাভাবনাগুলোই শব্দ খুঁজে না পেয়ে পেটের ভিতরটায় গুমরে গুমরে উঠছিল কেবল। মৃদুলা অল্প হাসেন। দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলের এই পাড়াটিকে ঠিক বড়লোক পাড়া বলা চলে না। পাড়ার আওতাতেই দু-দু’টি বস্তি অঞ্চল আছে। আবার এই পাড়াতেই একাধিক বিশিষ্টজনের বাস। মিশ্র অঞ্চল বলা যেতে পারে। স্কুলটিকেও তাই সেভাবেই গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এয়ারকন্ডিশনড ক্লাসরুম না থাকলেও, স্কুলটি যে মোটামুটি অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলেপুলেদের জন্যই তৈরি, তা খানিকটা বোঝা যায়। মাইনের ভার মধ্যবিত্তের পক্ষে অসাধ্য না হলেও, খুব সহজও নয়। স্মৃতি গোড়া থেকেই এই স্কুলে পড়েছে। তার বাড়ির বিষয়ে কেউই অতটা জানতে পারেননি। স্মৃতির বাবাকে ওঁরা কোনওদিনই দেখেননি স্কুলের কোথাও। সময়ে সময়ে ওর মা’ই এসেছেন। কথা বলেছেন। মৃদুলা যেন একবার তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে জেনেছিলেন তিনিও ইংরেজিতে এম এ পাশ করেছেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষার পাঠ্যক্রমে। তিনি সুরঙ্গমাকে বলেন, “আচ্ছা আমরাই কি একটু বেশি ভেবে ফেলছিনা সুর’দি ? ও যদি অটো না বলে এরোপ্লেন বলত, অথবা নিদেনপক্ষে ট্রেন বলত, তখন কি আমরাই সেটাকে গ্লোরিফাই করতাম না - নারীদিবস, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি গালভরা শব্দকে ব্যবহার করে?” সুরঙ্গমা এর প্রতিবাদে হাত পা নেড়ে আরও কিছু বলতে যান, কিন্তু সেই সময়েই শ্যামলী এসে পড়েন, “ও সুর’দি তুমি কিচ্ছুটি চিন্তা কোরো না গো স্মৃতিকে নিয়ে। ও দিব্যি আছে, বাচ্চারা একজনও ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। উলটে আমি তো আড়াল থেকে শুনে এলাম সূরজ স্মৃতিকে জিজ্ঞেস করছে, ‘আন্টি অটো চলাতি হ্যায় ? মেরে কো শিখায়েগি ? মেরে পিতাজি কে পাস বহৌত সারে কার হ্যায়, পর মেরে পিতাজি তো উসসে এক ভি কো ড্রাইভ নহি কর সকতা!’ বুঝলে ব্যাপার ?” শ্যামলী মিত্তির হেসে গড়িয়ে পড়ে। সূরজের বাবা নাম করা প্রোমোটার, শরীরের ওজন একশো কেজি। বাড়িতে তিনটে গাড়ি রয়েছে। দুটো ইনোভা আর একটা মার্সিডিজ।

 

[***]

 

দোয়েলের ওই গায়ের গন্ধটাকে ভালো লাগত। সকালে বেশটি করে পাড়ার কলে সাবান মেখে স্নান করে এসে উদয় যখন অটোটাকে নিয়ে বেরুত, সামনে বসাত দোয়েলকে। ওর প্রথম টিউশন থাকত যেখানে, সেই বাড়িটার সামনে ওকে নামিয়ে দিয়ে যেত। ওর গা ঘেঁষে বসে থাকতে থাকতে সাবানের মিষ্টি গন্ধটা নাক ভরে নিত দোয়েল। হাওয়া দিত হু হু করে। গরমকালে অবশ্য এতটাও ভালো লাগত না। কিন্তু উদয়ের এই এক অদ্ভুৎ বিশেষত্ব আছে। প্যাচপ্যাচে চূড়ান্ত গরমেও সে বড় একটা ঘামে না। দোয়েল ওঁর কাঁধে মাথা রাখত। পিছনে প্যাসেঞ্জার থাকলে রাখত না। নিম্নবিত্ত যে সমাজ থেকে দুজনে উঠে এসেছে, তাতে দুজনের এই প্রেমকে খুব একটা অস্বাভাবিক বলা চলে না। উদয় গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই পড়াশোনায় ইতি টেনেছিল। দোয়েল তারপরেও পোষ্টগ্র্যাজুয়েশন অবধি যুদ্ধ চালাল। লাভ হল না বিশেষ। টিউশনির সংখ্যা বাড়লেও, গড় মাইনে বাড়ল না। অটো আর টিউশন মিলিয়ে যা হচ্ছিল, মিলিয়ে জুলিয়ে দুজনের সংসার ছিল মোটের উপরে স্বচ্ছল। দুই থেকে তাই তিন হতে বেশি সময় লাগল না। ঘর আলো করে ওদের ঘরে এল স্মৃতি। স্মৃতিকে দেওয়া হল ভালো ইস্কুলে। দোয়েল তখনও সকালে উদয়ের পাশে বসে টিউশনিতে বেরুত। একেকদিন পিছনে বসে থাকত দোয়েলের মা, স্মৃতিকে কোলে নিয়ে। স্কুল শুরু হলে পরে স্মৃতিকে স্কুলে পৌঁছনোরও দায়িত্ব তিনি নিলেন। হু হু হাওয়াতে, বসন্তের গন্ধ নিচ্ছিল দোয়েল। কাচা জামাতে, লাক্স সাবানের সুখ। সেও সইল না।

 

শখ বলতে তাসের নেশা ছিল উদয়ের। অটোর লাইন থেকেই তিনচারজন বন্ধু-সাগরেদ জুটেছিল। ফি শনিবারই রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনের কাছে, রেললাইনের ধার ঘেঁষে একটা জায়গাতে জমিয়ে আড্ডা বসত। সেই আড্ডাতে বাকি সকলেরই পানদোষ থাকলেও উদয়ের সে দোষ ছিল না। তার নেশাটা ছিল সম্পূর্ণ ভাবেই তাসকে কেন্দ্র করে। এই বন্ধুদের সকলকেই চিনত দোয়েল। কেবল কালুয়াকে তার পছন্দ হতো না। দশাসই চেহারা বা কালো কুতকুতে দুটো হিংসুটে নোংরা চোখ বলেই নয়, লোকটার সম্পর্কে কিসের যেন একটা ইঙ্গিত ছিল। উদয়ের আর সব বন্ধুদের মধ্যে এক এই কালুয়ার সম্পর্কেই একটু বিতৃষ্ণ ছিল সে। মুখে কিছু বলেনি কখনও। যেদিন উদয়ের পায়ের উপর দিয়ে ট্রেন চলে গিয়েছিল, দোয়েল শুনেছিল যে কালুয়াই নাকি ওকে পিছন থেকে টেনে ধরেছিল। কিন্তু কালুয়াকেও দোষ দেওয়ার উপায় ছিল না। ট্রেনে কেবল উদয়ের পা-দুটো কাটা পড়লেও, কালুয়ার পুরো শরীরটাই থেঁতলে একাকার হয়ে গিয়েছিল। বাঁচেনি সে। সংসার চালাতে গিয়ে তখন অটো ড্রাইভার হয়েছিল দোয়েল। সকালে অটোতে করেই এবাড়ি-সেবাড়ি মিলিয়ে খানচারেক টিউশনি। দুপুর থেকে রাত অবধি ট্রিপ। স্মৃতি অনেকটা বড় হয়ে গেছে। এলাকার বিধায়ক খুব প্রশংসা করেছিলেন দোয়েলের। কোন একটা কাগজ থেকে যেন তার ইন্টারভিউও নেওয়া হয়েছিল। সেই কাগজ আর দোয়েলের হাত অবধি পৌঁছয়নি। সে এখন কেবল স্মৃতিকে নিয়েই বাঁচতে চায়।

 

[***]

 

‘মেয়েদের নিরিখে’ অনেক রাত। প্রায় দশটার কাছাকাছি। পড়া সেরে ফিরতে ফিরতে আম্রপালির রাত হয়ে গেছে। আসলে আজও তিয়াসের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। পড়া সেরে ওখানে গিয়ে নোটস বুঝে নিতে গিয়েই দেরীটা আরও হয়েছে। তাছাড়া দেবাঞ্জনও তো ছিল সঙ্গে। বকবক করে আরও খানিক দেরী করিয়ে দিয়েছে। মেট্রো থেকে নেমে হন হন করে হাঁটছিল আম্রপালি। অটো পেলে হয়। টালিগঞ্জ-যাদবপুর এই র‍্যুটটাতে যদিও অনেক রাত অবধি অটো চলে। তাও সে পা চালিয়ে এগোয়। একটাই অটো দাঁড়িয়ে রয়েছে। পিছনে একদম ওপাশে একজন বসে রয়েছে। সামনে ড্রাইভারের পাশেও একজন। অটোর পিছনের সিটে দুজনের মাঝখানে চেপেচুপে বসতে বড় কষ্ট। সে একটু দাঁড়ায়। পরের জন যদি যাদবপুর অবধি যাবেন বলেন, তাহলে সে অন্তত আগে নামার অজুহাত দিয়ে বাইরে বসতে চেষ্টা করবে। লাভ হলো না। পিছনে যিনি এলেন ভারিক্কি চেহারা, হুমহাম করে বললেন যে তিনি ভারত পেট্রোলিয়াম নামবেন। অতএব আম্রপালিকেই ভিতরে বসতে হল। লোকটাকে তার ভালো লাগল না।

 

এখন টেকনিশিয়নস স্টুডিও হয়ে কবরখানার পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা গিয়েছে, সেটা সারাইয়ের জন্য বা অন্য যে কোনও কারণেই হোক, বন্ধ। অটো যাচ্ছে তাই একটু ঘুরে, শ্রুতিনন্দন গানের স্কুলের পাশ দিয়ে। রাস্তাটা অন্ধকার, অল্প নির্জন। গোটা কতক বাম্পার আছে। শোঁ শোঁ করে অটোটা ছুটছিল। একবার বাম্পারে উঠে লাফিয়ে উঠতেই, পাশের সেই লোকটার ডান হাতের কনুইটা আম্রপালির বুকের উপর দিয়ে খানিকটা ঘষটে চলে গেল। সে বিরক্ত চোখে তাকাল, কিছু বলল না। লোকটারও কোনও হেলদোল নেই। পরের বাম্পারেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবারে যেন ঘষটানিটা বেশ একটু জোরেই। আম্রপালির ভয় করছিল। গা ঘিনঘিন করছিল। জোর করে সে একবার বলল, “কি হচ্ছেটা কি! ঠিক করে বসুন!” লোকটা বিশ্রী চোখে তার দিকে তাকাল। কিছু বলল না। পরের বাম্পারে গাড়িটা লাফাতেই, এবারে যেন লোকটা তৈরি হয়েই ছিল, ঘাড় হেলিয়ে দিয়ে এমন ভাবে আম্রপালির উপরে কাত হয়ে পড়ল, সে বেশ বুঝল লোকটার নোংরামি সীমা ছাড়াচ্ছে। কিন্তু সে কিছু বলবার আগেই তাদের অটোটা এবারে দাঁড়িয়ে গেল হঠাৎ। ড্রাইভার স্টার্ট বন্ধ করে নেমে এসেছে। সটান পিছনে এসে আম্রপালির পাশে বসে থাকা লোকটাকে সে বলল, “আপনি নেমে আসুন।” লোকটা খুব বিরক্ত হয়ে প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “মানেটা কি! আমি একজন প্যাসেঞ্জার। কি বলছেনটা কি আপনি ?” লোকটার মুখের গন্ধটা যে মদের সেটা আম্রপালি এতক্ষণে টের পেয়েছে। ড্রাইভার আবারও বলল, “নেমে আসুন।” এতক্ষণ তাকেও সেভাবে লক্ষ্য করেনি কেউ। মাথায় একটা টেনিস-ক্যাপ পিছন দিক করে পরা ছিল বলেই হয়তো বা ছোট্টখাট্টো ধরণের অবয়বটাকে মেয়ে বলে কেউ ঠাহর করে উঠতে পারেনি। মেয়েটা আর কথা বাড়াল না। লোকটার হাতে একটা ব্যাগ ছিল। টান মেরে প্রথমেই সেটাকে রাস্তায় ফেলল। তারপর চুলের মুঠি ধরে মাতাল লোকটাকে রাস্তায় নামিয়ে আনল। নামিয়েই ঠাটিয়ে এক চড়। “অনেকক্ষণ ধরে মিররে আপনার কীর্তিকলাপ দেখছি। একটাও কথা বাড়াবেন না। যেখানে যাবার হেঁটে চলে যান। সামনেই কলাবাগান বস্তি। বেশি ঝামেলা করতে গেলে লোক ডেকে আনব।” লোকটা কেমন যেন মিউ মিউ করে ওঠে। এরা আসলে কাপুরুষের জাত। পিছনে তখন আরও একটা অটো এসে পড়েছে, “সেন্টুদা, এই লোকটাকে চিনে রাখো তো একটু,” এ গাড়ির ড্রাইভার হাঁক পাড়ে, “মেয়েদের সাথে নষ্টামি করছিল। আমাদের লাইনে আর একে তুলবে না। আমি একটা ছবি তুলে নিচ্ছি নাহয়।” পকেট থেকে একটা সস্তার মোবাইল বের করে মেয়েটা লোকটার একটা ছবি তুলে নেয়। টেনিস-ক্যাপটা ঠিক করে নিতে নিতে বলে, “ভাইরাল করার দায়িত্ব আমার!” ওপাশে সেন্টুর অটোটাও এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। এবারে দুজনেই রওনা হয়। আম্রপালির শরীরে আবারও সাহস ফিরে এসেছে।

 

অটোটা থামিয়ে দিয়ে মেয়েটা আম্রপালিকে বলল, “নামুন দিদি। সাবধানে যাবেন।” আম্রপালি মনিব্যাগটা বের করছিল, “পয়সা দিতে হবে না আজ। আমার গাড়িতে এইরকমটা কিছু হলে খুব খারাপ লাগে,” মেয়েটা বলে। আম্রপালি তাও কিছু একটা বলতে যায়। “তাছাড়া আপনি বড়দিদিমণির মেয়ে। আপনাকে তো স্কুলে দেখেছি। আমার মেয়েও যে ওই একই স্কুলের স্টুডেন্ট,” মেয়েটি হাসে। আম্রপালি কোনওমতে জিজ্ঞেস করে, “আপনার নামটা ?” “আমার নাম দোয়েল। বলবেন ম্যাডামকে আমার কথা। আমার মেয়ের নাম স্মৃতি। ক্লাস ফোর, সেকশন বি। আজ আসি তাহলে,” অটোটাও গুরগুরিয়ে স্টার্ট দিয়ে ওঠে আবার।

 

[... মেয়েদের সাথে অভব্যতা করার জন্য কালুয়াকেও একদিন খুব শাসিয়েছিল উদয়। মদের ঘোরে সেদিন কালুয়া কি তারই প্রতিশোধ নিতে গিয়েছিল ? দোয়েল কোনওদিনও সেসব জানবে না। কালুয়া মরে গেছে। উদয় তাকে নিয়ে একটা কথাও বলেনি। কালুয়াকে মেয়েদের সাথে দুর্ব্যবহার করা নিয়ে শাসালেও তার যাতে অটো ইউনিয়নের লাইনটা চলে না যায়, তার জন্যও তো উদয়ই তদ্বির করেছিল। অনেক রাত্তিরে এখনও সে তার দোয়েলের জন্য অপেক্ষা করে। ন্যুব্জ হয়ে আসা উদয়ের কোলে ফিরে আসে ‘বনলতা’ দোয়েল। দোয়েলের সাবজেক্ট ইংরেজি হলেও, উদয় বাংলা নিয়ে অনার্স করেছিল। দুজনে এখনও তাই স্মৃতিকেই আঁকড়িয়ে বেঁচে থাকে। দুজনে এখনও এক পা এক পা করে এগোয়।]

লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার

অলঙ্করণ : সৃজীতা গুপ্ত

0 Comments

Post Comment