এক টুকরো আকাশ (পর্ব- ২)

  • 08 October, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 132 view(s)
  • লিখেছেন : মীরা কাজী
এই কলেজে  আট  বছর আমি পড়িয়েছিলাম। এই আট  বছরে  যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল, সারা জীবনেও তা ভোলার নয়। ধীরে ধীরে এই  ছেলে-মেয়েগুলোর সাথে আমার একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমি তখন শুধু তাদের ম্যাম নই। তাদের কাছের জন, দিদি। তাদের মধ্যে কয়েকজন দ্বিধাহীন ভাবে  দিদির কাছে তাদের মনের বন্ধ দুয়ারটি খুলে দিয়েছিল।

                                                               পর্ব -   (খ)

    ইরাবতীদির ডাইরিগুলো পড়তে গিয়ে দেখলাম, মোট পাঁচটা ডাইরির মধ্যে একটায় ইরাবতীদি  নিজের প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটি-ডাক্তার দেখানোর তারিখ, ধোপার কাছে কাচতে দেওয়া শাড়ির হিসাব, মালী সুখেন কত টাকা ধার হিসেবে নিয়েছে তার হিসাব, কোন মাসে কত পেনশন তুলেছেন  ইত্যাদি লিখে রেখেছেন। বাকি চারটেয় তার ভাই-বোনেদের কথা, ফাঁকে ফাঁকে নিজের কিছু কথাও লিখেছেন। ডাইরিগুলো পড়তে গিয়ে মনে হল, যখন  থেকে তার স্মৃতি দুর্বল হতে শুরু করেছে, তখন থেকে তিনি লিখতে শুরু করেছেন। ফলে একজনের কথার মাঝখানে অন্যজন এসে পড়েছে। চিঠিতে তিনি সেকথা স্বীকারও করেছেন। ফলে চরিত্রগুলো আলাদা করতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। সমস্যাটা কাটিয়ে ওঠার জন্য ডাইরিগুলো বারবার পড়তে হচ্ছে। একটা সময় চরিত্রগুলো নিজস্ব চেহারা নিয়ে আমার কাছে রা দিল। আমি লিখতে শুরু করলাম। প্রথমে ইরাবতীদির  কথা দিয়েই শুরু করি।   

                                                         * টুকরো কিছু কথা*

    আমি তখন সোনামুখী কলেজে বাংলা পড়াই। সবে চাকরিতে জয়েন করেছি। এই প্রথম  বাড়ির বাইরে থাকা। কলেজের কাছেই একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেছি। ছোটোবেলা থেকে পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। চাকরি পেতেও বেশি বেগ পেতে হয়নি। হয়তো সেই কারণে নিজের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে মনের কোনে একটা অহংবোধ কাজ করত। কলেজে যারা মাঝারি মানের, কিম্বা যারা একটু ফাঁকি দিত, তাদের আমি দেখেও যেন দেখতাম না। আমার যা কিছু কথাবার্তা প্রথম সারির ছেলে মেয়েগুলোর সাথেই। পড়াতাম তাদের মত করেই। বাকিরা বুঝল কি বুঝল না তাতে যেন আমার কিছু এসে যায়না। সে সময় আমার জীবনে একটা মোড় এসেছিল, যা জীবন সম্পর্কে আমার ধারনা একেবারে পাল্টে দিয়েছিল। 

    বাবা অকালে চলে গেছেন। আমার টাকাতেই সংসার চলে। সেই সাথে ছোটো দুই বোনের পড়ার খরচ। কয়েকটা টিউশন খুঁজছি। কলেজের কেউ যদি বাংলা পড়ে তাহলে  সুবিধা হয়। আমার কলিগ মধুমিতার সাথে এর মধ্যে কিছুটা বন্ধুত্ব হয়েছে। তাকে বলতে সে বলল, সে ওপেন ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নেয়। তাতে বাড়তি কিছুটা টাকা এসে যায়। শনি আর রবিবার কলেজ খোলা থাকে তাই অসুবিধে হয়না। আমি চাইলে এ্যাপ্লাই করে দেখতে পারি।  কথাটা মনে ধরল। আমি দেরি না করে এ্যাপ্লাই করে দিলাম। আগেই বলেছি আমার রেজাল্ট ভাল। কাজটা  পেয়ে গেলাম। কিন্তু মন থেকে খুব একটা সায় পাচ্ছিনা। ওখানে পড়ানো মানে তো ভস্মে ঘি ঢালা! শেষ পর্যন্ত টাকার প্রয়োজনটা মনের দাবিকে দাবিয়ে গেল। 

    এখন প্রায় সব কলেজের সাথেই মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হয়েছে। যারা কোনো কারণে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেয়। সাধারনত তারাই পরবর্তীতে এখানে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করে। এখান থেকে প্রাপ্ত ডিগ্রি অনান্য কলেজের ডিগ্রির সমতুল। তবুও এই কলেজগুলোতে পড়াশোনার মান নিয়ে সবার মনে একটা প্রশ্ন চিহ্ন থেকে যায়। এখানে যারা পড়ে তারা নিজেরাও হীনমন্যতায়  ভোগে। আমার নিজের মনোভাব কেমন সে তো আগেই বলেছি। যাই হোক এখন যা বলতে এসেছি তাই বলি। 

    এখানে সেমেস্টার ভিত্তিক পড়াশোনা। প্রথম দিন আমি থার্ড সেমেস্টারের ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস’ এর ক্লাস নিতে গেছি। ক্লাসে ঢুকে দেখলাম, ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে কুড়ি-বাইশজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। তাদের চোখে মুখে হতাশা, ক্লান্তির ছাপ। সাধারণ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মত চপলতা এদের কাছে আশা করা যায়না। কেননা দু-চারজন ছাড়া প্রায় সবার বয়স কলেজে পড়ার বয়স ছাড়িয়ে গেছে। দু একজন তো বয়সে আমার থেকেও বড়।  

    বিষয়, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ, "চর্যাপদ" বা "চর্যাচর্য বিনিশ্চয়"। “কা-আ-তরুবর-পঞ্চবী-ডাল। চঞ্চল চীএ পৈঠো কাল”। আমি পড়িয়ে যাচ্ছি। কেউ  কিছু বুঝছে বলে মনে হচ্ছেনা। আমি  ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে গিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কি জানি কতদিন এদের পড়াতে পারব! 

    আমি দায়সারা ভাবে পড়াই, ওরা চুপচাপ শোনে। এভাবেই চলছে। কয়েক সপ্তাহ পরে আমার হতাশা চলে এল। শনিবার, রবিবার এলেই বিরক্তিতে মনটা তেতো হয়ে যায়। কাজটা ছেড়ে দেব কিনা ভাবছি। এমত অবস্থায় বাড়ি থেকে বোনের ফোন এল, মায়ের দুটো চোখেই ছানি অপারেশন করাতে হবে। তার জন্য  কিছু টাকার দরকার। কাজটা ছাড়া হলনা।

    একদিন একটু আগেই বোধ হয় কলেজে পৌঁছে গেছি। দেখলাম কলেজ চত্তরে একটা গাছের নীচে থার্ড সেমেস্টারের জনা দশেক ছেলেমেয়ে  বসে আছে। তাদের মধ্যেএকজন “চর্যাপদ”  নিয়ে  তাদের  কিছু বলছে। তারা বিভিন্ন প্রশ্ন করে বিষয়টি বুঝে নেবার চেষ্টা করছে। তাও ভালো!  আমি পাশ কাটিয়ে নিজের কাজে চলে গেলাম।   

    এর মধ্যে চার মাস কেটে গেছে। থার্ড সেমেস্টারের এ্যাসাইনমেন্ট পেপার হাতে এসে গেছে। দেখলাম, প্রত্যেকেই হুবহু বই থেকে টুকে দিয়েছে। গড়ে নম্বর বসিয়ে যাচ্ছি। অবশেষে ব্যতিক্রমী একজনকে পেলাম। সে চর্যার কবি ঢেন্ডনপাদের একটি আপাত দুরূহ পদ যেভাবে নিজস্ব ভাষায়  ব্যাখ্যা করেছে, তা প্রশংসার যোগ্য। সব থেকে ভাল লাগল তার ভাষার সাবলীলতা। মেয়েটির নাম দেখলাম- রোহিনী। তাকে  কয়েক নম্বর বেশি দিতে গিয়েও দিলামনা। উল্টে দু-একজনের থেকে একটু পিছিয়েই রাখলাম।  

    কয়েকদিন পর ক্লাসে গিয়ে সবার সাথে পরিচয় করার জন্য পর পর তাদের নাম জিজ্ঞেস করতে শুরু করলাম। এতদিনেও তাদের কার কি নাম জানার প্রয়োজন বোধ করিনি। আজও নেই। কেবল রোহিনী কোনজন জানার জন্য এই কৌতূহল । 

   পর পর নাম জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে এতদিন পর এখানে পড়তে আসার কারণও জেনে নিতে লাগলাম।  

    বেশির ভাগ ছাত্রীর সমস্যা প্রায় একই রকম। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে পড়াশোনা  শেষ করা হয়নি। এখন ফের পড়াশোনা করে এস. এস. সি পরীক্ষায় বসতে চায়। দু এক জন ছাত্র-ছাত্রী আবার ছোট খাটো চাকরি করে। কিন্তু গ্রাজুয়েশনের ডিগ্রি না থাকলে প্রমোশন মিলবেনা। তাই এই সিদ্ধান্ত।   

    এতদিন পর পড়তে আসার কথা ভেবেছেন, অবশ্যই ভালো ভাবনা। কিন্তু এই ভাবনা আপনার এল কিভাবে? সবার শেষে উঠে দাঁড়ানো ছাত্রীটিকে জিজ্ঞেস করলাম।

    -ম্যাম, বয়সে আমি আপনার থেকে বড় হলেও এখানে আপনি শিক্ষিকা। তাই আপনি আমার প্রণম্য।  আমাকে তুমি করে বলবেন।

    -ঠিক আছে। আমি ভ্রু কুঁচকে, ঠোঁটে  ঈষৎ হাসির ভঙ্গী করলাম। একেই সেদিন সহপাঠীদের কাছে  “চর্যা” নিয়ে কিছু একটা বলতে দেখেছি।     

    -ম্যাম! আমি এদের মত কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পড়তে আসিনি। আমার সে বয়সও নেই। ছোটোবেলা থেকে আমার স্বপ্ন - পড়া শোনা করে শিক্ষিকা হব। পরে বুঝেছি সব স্বপ্ন সবার জন্য নয়। প্রথম জীবনে পড়াশোনা শেষ করা সম্ভব হয়নি। এতদিন পর সেই সুযোগটা পেয়ে আর ছাড়তে পারলাম না। 

    -আপনার, না মানে তোমার নাম?

    -রোহিনী সেন।

    এভাবেই চলছে। কলেজের কাছে একজনের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকি। নীচে তলার যে ঘরে আমি থাকি সেখানে প্রচন্ড মশার উৎপাত। মশারি ছাড়া রাতে শোওয়ার কথা ভাবাই যায়না। সন্ধ্যেবেলায় একটু বই-টই পড়ব, মশার জ্বালায় তারও উপায় নেই। মশা তাড়ানোর যাবতীয় সরঞ্জাম তুচ্ছ করে তারা আমার রক্ত চুষে খাচ্ছে। জায়গাটা কলেজের একেবারে কাছে।তাই ঘর পাল্টানোর কথা ভেবেও তেমন গা করছিনা।  

    কিছুদিন এভাবে চলার পর, একদিন সকালে গা–মাথা ভার ভার মনে হল। দুদিন জ্বর জ্বর ভাব নিয়েই কলেজ করলাম। কিন্তু তিনদিনের দিন জ্বরের সাথে মাথায়, হাতে-পায়ে অসহ্য যন্ত্রনায়  বিছানা নিতে  বাধ্য হলাম। রক্ত পরীক্ষায় জানা গেল আমার ডেঙ্গু হয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শে একটা নার্সিংহোমে ভর্তি হলাম। এরপর পাঁচটা দিন কি ভাবে কেটেছে জানিনা। ছ’ দিনের দিন আমার ঘোর কাটল। শরীর খুব দুর্বল। দেখলাম, টেবিলের উপর প্রচুর ফল, বিস্কুট, হরলিক্স, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র গুছিয়ে রাখা আছে। কে এসব কিনে আনল? আমার কোনো কলিগ!  মধুমিতা ছাড়া তেমন কারো সাথে বন্ধুত্ব হয়নি।  কিন্তু মধুমিতা তো এখন  ছুটিতে আছে!

    ডিউটিতে থাকা আয়া মাসিকে জিজ্ঞেস করতে সে বলল,  “আপনার ভাই- বোনেরাই তো এসব আনে? তারাই  পালাপালি করে আপনার দেখা শোনা করেছে। সারা রাত ধরে আপনার মাথার কাছে বসে থাকে। আমাকে কিছু করতেই দেয়না”। 

    আমার ভাই-বোন? আমার কোনো ভাই নেই। দুটি বোন আছে। কিন্তু  আমি তো বাড়িতে খবর দিইনি? তাদের দুজনের কলেজে পরীক্ষা চলছে। আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম- কে তাদের খবর দিল!

    -ওই দেখুন বলতে বলতেই এসে গেল। আয়া মাসি একমুখ হেসে বলল।

    আয়া মাসীর কথা শুনে তাকিয়ে দেখি- ওপেন ইউনিভার্সিটির তিনজন মেয়ে আর একটি ছেলে মুখ কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে  আছে।

    আজ কেমন আছেন দিদি?

    -অনেকটা ভাল। তোমরা  কিভাবে খবর পেলে?

    আপনি কলেজে আসছেন না দেখে অফিসে  খবর নিতে গিয়ে জানতে পারি। 

    এই কদিন ধ’রে তোমরাই আমার দেখাশোনা করেছ? এত সবের দরকার ছিলনা। আয়া মাসি তো ছিল? 

    তা ছিল। কিন্তু আপনার নিজের কেউ কাছে নেই, তাই। আজ আপনি একটু ভাল। এখন থেকে  আর দরকার হবে না।

    এটা কেমন কথা হল? আমি যতদূর সম্ভব গম্ভীর স্বরে বললাম। ওরা এ ওর মুখের দিকে তাকাল।

    তোমরা নিজেদের আমার ভাই-বোন বলে পরিচয় দিয়েছ?

    মানে? আমরা! আপনি!

    ভাই-বোনেরা বুঝি এমন হয়?

    ওরা চুপ।

    দিদিকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের ডিউটি কি শেষ হয়?  

    দিদি!

    আমার দুচোখ ভিজে দেখে তারা আমার  কাছে ঘন হয়ে দাঁড়ালো।

    এরপর তারা যা করল তা ছিল আমার ভাবনার অতীত। নিয়ম করে নার্সিং হোমে আসা, দরকারি জিনিস কিনে দেওয়া, টাকা পয়সার কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, “দিদির জন্য এটুকু করতে পারবনা?” নার্সিং হোম থেকে ছুটির দিনে ওরা মানে সেই জনা দশেক ছাত্র- ছাত্রী হৈ হৈ করে এসে পড়ল। তারপর নার্সিং হোমের বিল মেটানো ছাড়া আমাকে আর কিচ্ছুটি করতে হলনা। আয়ার বখশিশ পর্যন্ত ওরাই দিল। আয়া মাসি বলল, “ভাগ্য ক’রে ভাই বোন পেয়েছিলেন ?” 

    ওরা আমার জন্য একটা গাড়ি এনেছে আমাকে বাড়ি পৌছে দেবে বলে। আমার কোনো কথাই শুনছেনা। অগত্যা নিজেকে ওদের হাতে ছেড়ে দিলাম। 

    এদিকে কোথায় যাচ্ছ? গাড়ী অন্য রাস্তা ধরেছে দেখে বললাম।

    দিদি! আপনাকে বলা হয়নি। আপনি কয়েকটা দিন আমার বাড়িতে থাকবেন? ওদের মধ্যে যার নাম জয়িতা সে বলল।

    না এটা সম্ভব নয়। এ পর্যন্ত তোমাদের সব কথা শুনে চলছি। এটা পারব না। 

    জয়িতাদি একাই থাকে। আপনার কোনো অসুবিধা হবেনা। ওখানে আপনাকে যদি আবার মশা কামড়ায়? এই দূর্বল শরীরে! বাকিরা বলল।

    এবার আমি চমকালাম। এরা এতদূর ভেবেছে? যাদের আমি এই  কয়েক দিন আগে পর্যন্ত নিজের ছাত্র–ছাত্রী বলে ভাবতে লজ্জা পেয়েছি! না না করে শেষ পর্যন্ত মশার ভয়ে আমি নিমরাজি হলাম।

    ওরা আমাকে জয়িতার বাড়িতে  নিয়ে গিয়ে তুলল।  আমার যাতে কোনো রকম অসুবিধে না হয় তার সব আয়োজন এরা করে রেখেছে। রাস্তার দিকে একটা ঘরে আমার থাকার ব্যবস্থা। বেশ খোলা মেলা ঘরখানা। বিছানায় পরিষ্কার চাদর পাতা। একটা টেবিলে কাঁচের জগে জল, গ্লাস আর কিছু গল্পের বই। ফুলদানীতে কয়েকটা টাটকা ফুল। কিছুই বাদ রাখেনি। কিছু পরে সবাই চলে গেল। কাল ফের আসবে। 

    জয়িতা তার নিজের কাচা ইস্ত্রী করা শাড়ি-সায়া–ব্লাউজ আমার হাতে দিয়ে বলল,” দিদি আপনার আমার  ব্লাউজের সাইজ মনে হয় একই। আপনি চেঞ্জ করে নিন”। 

    আমি আর না করতে পারলামনা। চেঞ্জ করে বিছানায় যেতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন  ওদের  দিয়ে বাড়ি থেকে আমার দরকারি জিনিসপত্র আনিয়ে নিলাম।

    জয়িতার বাড়িতে প্রতিদিন বিকালে চায়ের আড্ডা বসে। প্রথম প্রথম সঙ্কোচ থাকলেও ধীরে ধীরে আমিও যেন ওদের একজন হয়ে গেছি। একদিন সুবীর, মানে ওদের মধ্যে একজন বলল, “দিদি ওই বাড়িতে আপনার আর না যাওয়াই ভালো। আমার সন্ধানে একটা বাড়ি আছে। “কিছুদিন পরে পুরোনো বাড়ি ছেড়ে ওদের খুঁজে দেওয়া বাড়িতে চলে এলাম। বাড়িটা জয়িতার বাড়ির কাছেই।

    এই কলেজে  আট  বছর আমি পড়িয়েছিলাম। এই আট  বছরে  যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল, সারা জীবনেও তা ভোলার নয়। ধীরে ধীরে এই  ছেলে-মেয়েগুলোর সাথে আমার একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমি তখন শুধু তাদের ম্যাম নই। তাদের কাছের জন, দিদি।  তাদের মধ্যে কয়েকজন দ্বিধাহীন ভাবে  দিদির কাছে তাদের মনের বন্ধ দুয়ারটি খুলে দিয়েছিল।

    এখানে পাঁচ জন মেয়ের কথা স্মরণ করব। ছেলেদের প্রসঙ্গে গেলামনা। সুযোগ হলে পরে  তাদের কথা বলা যাবে। 

লেখক : কথাসাহিত্যিক

ছবি : সংগৃহীত 

 

 

 

0 Comments

Post Comment